ক্রমশ-২
বাংলা অনুবাদক ছাবের রেজা কর্তৃক অনুবাদে বাংলাদেশের বাংলা লেখনির গতিশীলতা ব্যহত হয়েছে বলে আমার মনে হয়েছে। বাংলা বিভক্তি ব্যবহারে অনেক বেশী দুর্বলতা রয়েছে। ফলে সৌন্দর্য তো হারিয়েছে এবং তার সাথে অনেক সময় বাক্যের কর্ম ও সম্মন্ধ পদকে আলাদা করা মুশকিল হয়ে পড়ে। আর এ ক্ষেত্রে পাঠকের কাছে অর্থের দোতনা পরিষ্কার হয় না। আবার জ্যোতি চিহ্ন ব্যবহারেও দুর্বলতা দেখা গেছে।
বাংলা বিভক্তি ব্যবহারের দুর্বলতার নমুনা:
(১) ভুল: তুমি আমাদের সরল পথে প্রতিষ্ঠিত রাখ। (১:৬)
শুদ্ধ: তুমি আমাদেরকে ............. (১:৬)
(২) ভুল: তাদের পথে যাদের তুমি (স্বীয়) নিয়ামত দান করেছ, ....... (১:৭)
শুদ্ধ: তাদের পথে যাদেরকে তুমি (স্বীয়) ............. (১:৭)
(৩) ভুল: যারা অদৃশ্যে বিশ্বাসী এবং নামাজ প্রতিষ্ঠা করে ও তাদের যা প্রদান করেছি তা থেকে (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে। (২:৩)
শুদ্ধ: যারা অদৃশ্যে বিশ্বাসী এবং নামাজ প্রতিষ্ঠা করে ও তাদেরকে যা প্রদান করেছি তা থেকে (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে। (২:৩)
(৪) ভুল: নিশ্চয় যারা অবিশ্বাস করেছে তাদের (হে রাসুল!) তুমি সতর্ক কর আর না কর, তাদের জন্য উভয়ই সমান; তারা বিশ্বাস করবে না। (২:৬)
শুদ্ধ: নিশ্চয় যারা অবিশ্বাস করেছে তাদেরকে (হে রাসুল!) তুমি সতর্ক কর আর না কর, তাদের জন্য উভয়ই সমান; তারা বিশ্বাস করবে না।(২:৬)
(৫) ভুল: যারা বিশ্বাস করেছে ও সৎকর্ম করেছে তাদের (হে রাসুল!) সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য (বেহেশতে) এমন বাগিচাসমূহ রয়েছে যার নিম্নদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত; তা (বাগিচাসমূহ) থেকে তাদের যখনই কোন ফল-মূল জীবিকা স্বরূপ দেওয়া হবে, তারা বলবে, ‘এ তো পূর্বেও আমাদের জীবিকা হিসেবে দেওয়া হয়েছে’, অথচ তাদের তা (জীবিকা) থেকে শুধু এর সদৃশই দেওয়া হয়েছে। .... (২:২৫)
শুদ্ধ: যারা বিশ্বাস করেছে ও সৎকর্ম করেছে তাদেরকে (হে রাসুল!) সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য (বেহেশতে) এমন বাগিচাসমূহ রয়েছে যার নিম্নদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত; তা (বাগিচাসমূহ) থেকে তাদেরকে যখনই কোন ফল-মূল জীবিকা স্বরূপ দেওয়া হবে, তারা বলবে, ‘এ তো পূর্বেও আমাদেরকে জীবিকা হিসেবে দেওয়া হয়েছে’, অথচ তাদেরকে তা (জীবিকা) থেকে শুধু এর সদৃশই দেওয়া হয়েছে। ... (২:২৫)
(৬) ভুল: নিশ্চয় আল্লাহ মশা অথবা এর থেকেও ক্ষুদ্রতর কোন জিনিষের উপমা দিতে বিন্দুমাত্র সংকোচবোধ করেন না। সুতরাং যারা বিশ্বাস করেছে তারা নিশ্চিতরূপে জানে যে, এ সবই তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে সত্য ও সঠিক। কিন্তু যারা অবিশ্বাস করে তারা বলে, ‘এ উপমা দ্বারা আল্লাহ কী বুঝাতে চেয়েছেন?’ এর (উপমার) দ্বারা তিনি (আল্লাহ) বহু সংখ্যক লোককে বিভ্রান্তিতে ছেড়ে দেন, আবার বহু সংখ্যক লোককে পথ প্রদর্শন করেন। এবং অবাধ্যরা ব্যতীত অন্য কাউকে এর দ্বারা বিভ্রান্ত অবস্থায় ত্যাগ করেন না। (২:২৬)
শুদ্ধ: নিশ্চয় আল্লাহ মশা অথবা এর থেকেও ক্ষুদ্রতর কোন জিনিষের উপমা দিতে বিন্দুমাত্র সংকোচবোধ করেন না। সুতরাং যারা বিশ্বাস করেছে তারা নিশ্চিতরূপে জানে যে, এসবই তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে সত্য ও সঠিক। কিন্তু যারা অবিশ্বাস করে তারা বলে, ‘এ উপমা দ্বারা আল্লাহ কী বুঝাতে চেয়েছেন?’ এর (উপমার) দ্বারা তিনি (আল্লাহ) বহু সংখ্যক লোককে বিভ্রান্তিতে ছেড়ে দেন, আবার বহু সংখ্যক লোককে পথ প্রদর্শন করেন। এবং অবাধ্যদেরকে ব্যতীত অন্য কাউকে এর দ্বারা বিভ্রান্ত অবস্থায় ত্যাগ করেন না। (২:২৬)
এ রকম বিভক্তি ব্যবহারে ভুলের উদাহরণ আরও অনেক রয়েছে।
জ্যোতি চিহ্ন ব্যবহারে ভুলের উদাহরণ:
ভুল: ...........। তিনি বললেন, ‘নিশ্চয় আমি জানি যা তোমরা জান না।’
শুদ্ধ: ....... তিনি বললেন, ‘নিশ্চয়ই আমি জানি, যা তোমরা জানো না।’
{ অর্থবোধক শব্দগুচ্ছে আল-কুরআন [বিষয়ভিত্তিক আয়াত অভিধানসহ]; মূল ইংরেজী অনুবাদ: সাইয়েদ আলী কুলী ক্বারাঈ; বাংলা অনুবাদ: মুহাম্মাদ ইরফানুল হক ও এ. কে. এম. রাশিদুজ্জামান; ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস, ২৭৯/৫, মাসকান্দা, ময়মনসিংহ।}
অথবা
............. আল্লাহ বলিলেন, আমি উহা জানি, যাহা তোমরা জান না।
{বঙ্গানুবাদ নূরানী কোরআন শরীফ মূল: হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র; তরজমা: মাওলানা নূরুর রহমান এম, এম; এফ, আর; ভাইস প্রিন্সিপাল, আলীয়া মাদ্রাসা, রায়পুর, নোয়াখালী; এমদাদিয়া পুস্তকালয়, বাংলা বাজার: ঢাকা}
অথবা
............. তিনি বললেন, নি:সন্দেহে আমি জানি, যা তোমরা জান না।
{ পবিত্র কোরআনুল করীম (বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তফসীর); মূল: তফসীর মাআরেফুল ক্বোরআন, হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ শাফী’ (রহঃ); অনুবাদ ও সম্পাদনাঃ মাওলানা মুহিউদ্দীন খান}
জানি না বাংলা অনুবাদক মাওলানা শেখ ছাবের রেজা কোন দেশের আলেম । তিনি বাংলাদেশের না ভারতের বাসিন্দা অথবা জন্ম সূত্রে বাংলা ভাষা-ভাষি না কি জন্মসূত্রে উর্দু ভাষা-ভাষি ও পরে বাংলা ভাষা কিছু শিখেছেন। এরকম মনে হবার কারণ নুরুস সাকালায়েন জনকল্যাণ সংস্থা কয়েকজন বিহারী লেখকের লেখা বাংলা বই প্রকাশ করেছে যার মান খুবই নিম্ন। এ অনুবাদের প্রকাশক বা সম্পাদক কেউই বাংলা অনুবাদকের কোন পরিচয় তুলে ধরেন নি। সুতরাং মাওলানা শেখ ছাবের রেজা সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারছি না। তবে সম্পাদক সাহেব জন্মসূত্রে বাংলাদেশী উচ্চ শিক্ষিত। তিনি অনেক বই বা প্রকাশনা সম্পাদনা করেছেন। আমি বলব তার এ কাজ মান সম্মত হয় নি। তার নামে এ কাজ শোভা পায় না।
(মহান আল্লাহ আমাদের কবুল করুন। আমাদের সকলকে বেশী বেশী কাজ করার তৌফিক দান করুন। আমাদের সকলের ভুলত্রুটি মার্জনা করুন। পরস্পরকে সহযোগিতা করার তৌফিক দান করুন।)
(ক্রমশ-৩)
(আল কুরআনুল কারীমের এক অনুবাদের উপর আলোচনা করা হচ্ছে।)
প্রকাশিত অনুবাদের শিরনাম: আল কুরআনুল কারীম
সংক্ষিপ্ত তাফসীর সহ বাংলা অনুবাদ
দু খন্ডে সমাপ্ত। প্রথম খন্ডে সূরা ফাতিহা থেকে সূরা কাহ্ফ পর্যন্ত। দ্বিতীয় খন্ডে সূরা মারইয়াম থেকে নাস পর্যন্ত।
মূল: মাওলানা ফরমান আলী সাহেব কর্তৃক উর্দু অনুবাদ
বাংলা অনুবাদ: মাওলানা শেখ ছাবের রেজা
সম্পাদনা ও পুনর্লিখন: মোহাম্মাদ আনোয়ারুল কবীর
প্রকাশক: ঈমান ফাউন্ডেশনের পক্ষে
নুরুস সাকালায়েন জনকল্যাণ সংস্থা
৫/১, গোলাম মোস্তফা লেইন, বেগম বাজার, ঢাকা
প্রকাশকাল: জমাদিউস সানী ১৪৩২
জুন ২০১১, আষাঢ় ১৪১৮
প্রাপ্তি স্থান: প্রযত্নে হুজ্জাতুল ইসলাম সাইয়্যেদ রাশেদ হোসেন যায়দী
হোসেনী দালান, ঢাকা, বাংলাদেশ
মোবাইল নং ০০৮৮০২৭৩০০০২৬
মুদ্রণ: মাল্টি লিংক প্রিন্টার্স
৬৮, ফকিরাপুল, ইসলাম ভবন (২য় তলা)
ঢাকা-১০০০, ফোন: