somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সবজি চাষ : উচ্ছে চাষ পদ্ধতি আলোচনা

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উচ্ছে ও করলা এ দেশের প্রায় সব জেলাতেই চাষ করা হয়। আগে শুধু গরম কালে বা খরিপ মৌসুমে উচ্ছে ও করলা উতপাদিত হলেও এখন জাতের গুণে সারা বছরই চাষ করা যায়। যেগুলো অপেক্ষাকৃত ছোট, গোলাকার, বেশি তিতা সেগুলোকে বলা হয় উচ্ছে। বড়, লম্বা, কিছুটা কম তিতা স্বাদের ফলকে করলা বলা হয়। উচ্ছে গাছ ছোট, কম লতানো হয়। করলা গাছ বড়, বেশি লতানো এবং লম্বা লতা বিশিষ্ট। করলা গাছের পাতাও বড়। উচ্ছে ও করলা তিতা বলে অনেকে খেতে পছন্দ করে না। তবে এদের ঔষধি বা ভেষজ মূল্য অনেক বেশি। ডায়াবেটিস, চর্মরোগ, কৃমি সারাতে এগুলো এক উস্তাদ সবজি।

মাটি:
সুনিষ্কাসিত জৈব পদার্থযুক্ত দোআশ ও বেলেদোআশ মাটি উচ্ছে ও করলা চাষের জন্য ভাল। এগুলো ছায়া জায়গায় ভাল হয় না।

জাত :
বারি করলা-১ একটি উচ্চ ফলনশীল জাত। এ জাতে একটি গাছে ২৫ থেকে ৩০ টি করলা ধরে। প্রতিটি করলার গড় ওজন ১০০ গ্রাম এবং লম্বায় ১৭ থেকে ২০ সেমি। শতকে ফলন ১০০ থেকে ১২০ কেজি।
এছাড়া বাজারে এখন অনেক হাইব্রিড জাত পাওয়া যাচ্ছে। যেমনঃ বুলবুলি, টিয়া, প্যারোট, কাকলী, টাইড, গৌরব, প্রাইড-১, প্রাইড-২, গ্রীন রকেট, হীরা ৩০৪, গজনী, মনি, জয়, এসএসসি ৫, এসএসসি ৬, রাজা, তোতা, গ্রীন স্টার, প্রাচী উল্লেখযোগ্য।

বীজ বপন :
বছরের যেকোন সময়ে করলা বা উচ্ছে লাগানো যায়। তবে খরিপ মৌসুমে অর্থাৎ গ্রীষ্ম ও বর্ষা কালে এ সবজি ভাল হয়। ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত বীজ বুনলে ভাল ফলন পাওয়া যায়।

জমি ও মাদা তৈরী এবং বেসাল সার প্রয়োগ:
জমি ভাল করে চাষ দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে, প্রতি শতাংশ জমিতে পচা গোবর ৪০ কেজি, টিএসপি ৩৫০ গ্রাম, এমওপি ২০০ গ্রাম, জিপসাম ৪০০ গ্রাম, দস্তা ৫০ গ্রাম এবং বোরাক্স ৪০ গ্রাম সার আলাদা আলাদা ভাবে প্রয়োগ করে ভাল করে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। তারপর মই দিয়ে সমান করে উত্তর-দক্ষিনে লম্বা দিক রেখে ১ মিটার চওড়া করে বেড করতে হবে। দুটি বেডের মাঝে ৩০ সেমি চওড়া করে নালা রাখতে হবে। এসব বেডের উপর উচ্ছের জন্য ১ মিটার দূরে দূরে এবং করলার জন্য ১.৫ মিটার দূরে দূরে মাদা করতে হবে। বীজ রোপনের ৭ থেকে ১০ দিন আগে প্রতি মাদায় পচা গোবর ৪০ কেজি, টিএসপি ২০ থেকে ২৫ গ্রাম এবং এমওপি ১০ থেকে ১৫ গ্রাম হারে প্রয়োগ করতে হবে।

উপরি সার প্রয়োগ :
চারা রোপনের বা চারা গজানোর ১০ দিন পর ১ম কিস্তি, ৩৫ দিন পর ২য় কিস্তি, ৫৫ দিন পর ৩য় কিস্তি এবং ৭৫ দিন পর ৪র্থ কিস্তিতে ইউরিয়া ও এমওপি সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি কিস্তিতে প্রতি মাদায় ইউরিয়া ১০ থেকে ১৫ গ্রাম এবং এমওপি ১০ থেকে ১৫ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে।

খুলনাসহ অন্যান্য উপকূলীয় লবনাক্ত এলাকার কৃষকদের বিশেষ করণীয় : লবনাক্ততার ক্ষতিকর প্রভাব এড়ানোর জন্য মাদার নীচে খড় বা চাটাই এর মালচ ব্যবহার করতে হবে। মাদার উপরে গাছের গোড়ায়ও মালচ ব্যবহার করতে হবে।

বাউনি :
চারা ২০ থেকে ২৫ সেমি লম্বা হয়ে গেলে চারার সাথে কাঠি পুতে বাউনি দিয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি মাটির ১ থেকে ১.৫ মিটার উচু করে মাচা করতে হবে।

সেচ ও আগাছা পরিষ্কার :
মাদায় জো রেখে বীজ বুনতে হবে। চারা গজানোর পর মাদা শুকিয়ে গেলে সেচ দিতে হয়। সেচ দেবার পর মাদার মাটি শুকিয়ে চটা বেধে গেলে নিড়ানি দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে দিতে হবে এবং আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। গাছের গোড়া থেকে কিছু ডগা বের হয়, এগুলো ভেঙে দিলে ফলন বাড়ে।

লবনাক্ত উপকূলীয় এলাকায় যেখানে সেচের জন্য মিষ্টি পানির সল্পতা রয়েছে সেখানে কলসী পদ্ধতিতে সেচ দিলে পানির সাশ্রয় হয় এবং ফলনও ভাল পাওয়া যায়। এর জন্য প্রতি মাদায় ১ টি করে মাটির কলসী দিতে হবে। কলসীটির নীচে ১ টা ছিদ্র করে দড়ি বা পুরান ছেড়া কাপড় দিয়ে ছিদ্রটি টাইট করে কলসীতে পানি ভরে দিতে হবে। ঐ ছিদ্র দিয়ে পানি চুইয়ে বের হবে এবং মাদার গোড়ায় প্রয়োজনীয় সেচ সরবরাহ হবে।

উচ্ছে বা করলা তোলা:
চারা গজানোর ৪০ থেকে ৫০ দিন পর উচ্ছে গাছ এবং ৬০ থেকে ৬৫ দিন পরে করলা গাছ ফল দেওয়া শুরু করে।
(১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখ সন্ধ্যায় বাংলাদেশ বেতার খুলনায় পঠিত)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×