somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোজার ফিতরা নির্ধারণ।

০৭ ই জুন, ২০১৬ রাত ১০:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় পাঠকবৃন্দ,
আমার সশ্রদ্ধ সালাম গ্রহণ করুন। পবিত্র রমজান মাস আসন্ন। রমজান শেষে শাওয়াল মাসের ১ তারিখে পবিত্র ঈদুল ফিতরের পূর্বে মুসলমানেরা সাদকাতুল ফিতরা আদায় করে থাকেন। এ বিষয়ে প্রসিদ্ধ হাদিসগুলির (পরিশিষ্ট-১) আলোকে কতিপয় সুনির্দিষ্ট দিক এখানে তুলে ধরা হলো:

সাদকাতুল ফিতরা আদায় করার দর্শন হলো:
• ক্ষুধা মানুষের আনন্দ কেড়ে নেয়। পবিত্র ঈদের দিনে কেউ ‍ক্ষুধার্ত থাকলে সে ঈদের আনন্দ পাবে না। তাই ঈদের দিন কেউ যেন অভূক্ত না থাকে। এ উদ্দেশ্যে ধনীরা ঈদের চাদ দেখার পরে এবং ঈদের মাঠে যাবার পূর্বে গরীব লোকদেরকে খাবার দান করবে।

• ধনীদের পক্ষ থেকে সাদকাতুল ফিতরা আদায় করা ফরজ। দরিদ্রগণ তা গ্রহণ করতে পারবেন কিন্তু সাদকাতুল ফিতরা গ্রহণ করা দরিদ্রদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়।

• হাদিসগুলোতে খাদ্যদ্রব্য দান করার বিষয়টি দেখা যায়। তাই সর্বাগ্রে খাদ্য দ্রব্য দিতে হবে। নিদেন বা বিকল্প হিসাবে সমপরিমান খাদ্যের দাম দেওয়া যেতে পারে।

• হাদিসগুলোতে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য প্রদান করতে দেখা যায়। অর্থাৎ যিনি যা খেয়ে থাকেন তা দ্বারা সাদকাতুল ফিতরা আদায় করা গুরুত্বপূর্ণ।

বর্তমানে যা করা হয়ে থাকে-
1. হাদিসগুলিতে নগদ অর্থ নয় খাদ্যদ্রব্য দিতে বলা হয়েছে। অথচ খাদ্য দ্রব্যের পরিবর্তে নগদ টাকা দেওয়া হয়। ফলে পবিত্র ঈদের আহকাম ভুলে গিয়ে দরিদ্র ব্যক্তি টাকা পাবার নেশায় বেশী সংখ্যক দুয়ারে দুয়ারে দৌড়ায়। ফলে দরিদ্র ব্যক্তি আনন্দিত হবার পরিবর্তে ভিখারীতে পরিনত হয় (ভিক্ষা করা হীন পেশা)।
2. হযরত নবী করীম (সঃ) এর সময়ে এবং পরবর্তী চার খলিফা পর্যন্ত জন লোকের পক্ষ থেকে ১ (এক) সা পরিমান খাদ্যদ্রব্য দান করা হতো। এ দেশীয় ওজনে এক সা’ সমান ৩ (তিন) সের ১১ (এগার) ছটাক বা ৩ কেজি ৪৪০ গ্রাম। কিন্তু বর্তমানে হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) চালুকৃত আধা সা অর্থাৎ ১ (এক) সের ১৩.৫ (সাড়ে তের) ছটাক প্রদান করা হয়ে থাকে।
3. হযরত নবী করীম (সঃ) এর সময়ে এবং পরবর্তী চার খলিফা পর্যন্ত একজন লোকের পক্ষ থেকে তিনি যে খাবার খেতেন সেই খাবার প্রদান করা হতো। কিন্তু বর্তমানে হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) কর্তৃক চালুকৃত শুধু গমের মূল্য দ্বারা সাদকাতুল ফিতরা আদায় করা হয়। (আমরা সকলে শুধু গম খাই না। আমরা তো বিভিন্ন দামের খেজুর, কিসমিশ, পনির ইত্যাদি খেয়ে থাকি অথচ সাদকাতুল ফিতরা আদায় করার ক্ষেত্রে আমরা শুধুই গমের নিমণ পরিমাণের মূল্য দিয়ে থাকি।)
4. অনেকে ঈদের চাদ উঠার বেশ আগে সাদকাতুল ফিতরা আদায় করে থাকেন। অভাবী লোকদের হাতে টাকা থাকে না। আবার ঈদের দিন নতুন করে দেওয়া হয় না। ফলে পবিত্র ঈদের দিন অনেকের মনে আনন্দ থাকে না।
5. আমরা অনেকে দূরে বসবাসকারী গরীব আত্মীয়দের জন্য সাদকাতুল ফিতরা তুলে রাখি। অথচ প্রতিবেশী দরিদ্ররা চেয়ে চেয়েও আমাদের কাছ থেকে সাদকাতুল ফিতরা পায় না। (আত্মীয়দের সাহায্যের জন্য শুধু ফিতরার টাকা নয় নিজের যা থাকে সেখান থেকে সামর্থ অনুযায়ী সাহায্য করার বিধান রয়েছে।)

প্রিয় পাঠকবৃন্দ! আমরা আপনার নিকট থেকে একটা সঠিক নির্দেশনা আশা করছি। আমাদের প্রার্থনা আপনার নির্দেশনার মধ্যে নীচের বিষয়গুলো সমাবেশ ঘটুক।
• খাদ্য দ্রব্য দিয়ে সাদকাতুল ফিতরা আদায় করার বিষয়টি উৎসাহিত করা (অবশ্যই বাধ্যতামূলক নয়)
• শুধু গমের মূল্য দিয়ে নয় যিনি যা খেয়ে থাকেন সেই খাদ্য দ্রব্য দিয়ে সাদকাতুল ফিতরা আদায় করার বিষয়টি উৎসাহিত করা (অবশ্যই বাধ্যতামূলক নয়)
• পরিমানে ভিন্নমত আছে ঠিকই তবে হযরত নবী করীম (সঃ) থেকে চার খলিফা পর্যন্ত চালু পরিমান এক সা’ সমান ৩ (তিন) সের ১১ (এগার) ছটাক বা ৩ কেজি ৪৪০ গ্রাম এর বিষয়ে উৎসাহ ব্যঞ্জক প্রচারণা করা (অবশ্যই বাধ্যতামূলক নয়)
• হুজুর বা মাওলানা নামধারী কোন ব্যক্তি যেন ধনীদেও খুশী করার জন্য নিমণ বা কমদামী দ্রব্যেও নিমণ পরিমান সাদকাতুল ফিতরা ঘোষণার সুযোগ না নেয়

প্রিয় পাঠকবৃন্দ! আপনাদের নিকট থেকে আসা নির্দেশনার মধ্যে উপরের বিষয়গুলোর সমাবেশ ঘটলে (১) দ্বীনের একটা আহকাম সঠিকভাবে পালিত হবে, (২) ধনীরা দায়মুক্ত হবে ও দরিদ্ররা উপকৃত হবে এবং (৩) সাদকাতুল ফিতরা এর সঠিক শিক্ষা বিস্তার লাভ করবে।

প্রিয় পাঠকবৃন্দ! আমরা আপনাদের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! একটি সুখী, সমৃদ্ধশালী, সুশিক্ষিত এবং অহিংস বাংলাদেশের প্রত্যাশায় এখানেই শেষ করছি।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০১৬ রাত ১০:৩৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×