প্রিয় পাঠকবৃন্দ,
আমার সশ্রদ্ধ সালাম গ্রহণ করুন। পবিত্র রমজান মাস আসন্ন। রমজান শেষে শাওয়াল মাসের ১ তারিখে পবিত্র ঈদুল ফিতরের পূর্বে মুসলমানেরা সাদকাতুল ফিতরা আদায় করে থাকেন। এ বিষয়ে প্রসিদ্ধ হাদিসগুলির (পরিশিষ্ট-১) আলোকে কতিপয় সুনির্দিষ্ট দিক এখানে তুলে ধরা হলো:
সাদকাতুল ফিতরা আদায় করার দর্শন হলো:
• ক্ষুধা মানুষের আনন্দ কেড়ে নেয়। পবিত্র ঈদের দিনে কেউ ক্ষুধার্ত থাকলে সে ঈদের আনন্দ পাবে না। তাই ঈদের দিন কেউ যেন অভূক্ত না থাকে। এ উদ্দেশ্যে ধনীরা ঈদের চাদ দেখার পরে এবং ঈদের মাঠে যাবার পূর্বে গরীব লোকদেরকে খাবার দান করবে।
• ধনীদের পক্ষ থেকে সাদকাতুল ফিতরা আদায় করা ফরজ। দরিদ্রগণ তা গ্রহণ করতে পারবেন কিন্তু সাদকাতুল ফিতরা গ্রহণ করা দরিদ্রদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়।
• হাদিসগুলোতে খাদ্যদ্রব্য দান করার বিষয়টি দেখা যায়। তাই সর্বাগ্রে খাদ্য দ্রব্য দিতে হবে। নিদেন বা বিকল্প হিসাবে সমপরিমান খাদ্যের দাম দেওয়া যেতে পারে।
• হাদিসগুলোতে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য প্রদান করতে দেখা যায়। অর্থাৎ যিনি যা খেয়ে থাকেন তা দ্বারা সাদকাতুল ফিতরা আদায় করা গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে যা করা হয়ে থাকে-
1. হাদিসগুলিতে নগদ অর্থ নয় খাদ্যদ্রব্য দিতে বলা হয়েছে। অথচ খাদ্য দ্রব্যের পরিবর্তে নগদ টাকা দেওয়া হয়। ফলে পবিত্র ঈদের আহকাম ভুলে গিয়ে দরিদ্র ব্যক্তি টাকা পাবার নেশায় বেশী সংখ্যক দুয়ারে দুয়ারে দৌড়ায়। ফলে দরিদ্র ব্যক্তি আনন্দিত হবার পরিবর্তে ভিখারীতে পরিনত হয় (ভিক্ষা করা হীন পেশা)।
2. হযরত নবী করীম (সঃ) এর সময়ে এবং পরবর্তী চার খলিফা পর্যন্ত জন লোকের পক্ষ থেকে ১ (এক) সা পরিমান খাদ্যদ্রব্য দান করা হতো। এ দেশীয় ওজনে এক সা’ সমান ৩ (তিন) সের ১১ (এগার) ছটাক বা ৩ কেজি ৪৪০ গ্রাম। কিন্তু বর্তমানে হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) চালুকৃত আধা সা অর্থাৎ ১ (এক) সের ১৩.৫ (সাড়ে তের) ছটাক প্রদান করা হয়ে থাকে।
3. হযরত নবী করীম (সঃ) এর সময়ে এবং পরবর্তী চার খলিফা পর্যন্ত একজন লোকের পক্ষ থেকে তিনি যে খাবার খেতেন সেই খাবার প্রদান করা হতো। কিন্তু বর্তমানে হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) কর্তৃক চালুকৃত শুধু গমের মূল্য দ্বারা সাদকাতুল ফিতরা আদায় করা হয়। (আমরা সকলে শুধু গম খাই না। আমরা তো বিভিন্ন দামের খেজুর, কিসমিশ, পনির ইত্যাদি খেয়ে থাকি অথচ সাদকাতুল ফিতরা আদায় করার ক্ষেত্রে আমরা শুধুই গমের নিমণ পরিমাণের মূল্য দিয়ে থাকি।)
4. অনেকে ঈদের চাদ উঠার বেশ আগে সাদকাতুল ফিতরা আদায় করে থাকেন। অভাবী লোকদের হাতে টাকা থাকে না। আবার ঈদের দিন নতুন করে দেওয়া হয় না। ফলে পবিত্র ঈদের দিন অনেকের মনে আনন্দ থাকে না।
5. আমরা অনেকে দূরে বসবাসকারী গরীব আত্মীয়দের জন্য সাদকাতুল ফিতরা তুলে রাখি। অথচ প্রতিবেশী দরিদ্ররা চেয়ে চেয়েও আমাদের কাছ থেকে সাদকাতুল ফিতরা পায় না। (আত্মীয়দের সাহায্যের জন্য শুধু ফিতরার টাকা নয় নিজের যা থাকে সেখান থেকে সামর্থ অনুযায়ী সাহায্য করার বিধান রয়েছে।)
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! আমরা আপনার নিকট থেকে একটা সঠিক নির্দেশনা আশা করছি। আমাদের প্রার্থনা আপনার নির্দেশনার মধ্যে নীচের বিষয়গুলো সমাবেশ ঘটুক।
• খাদ্য দ্রব্য দিয়ে সাদকাতুল ফিতরা আদায় করার বিষয়টি উৎসাহিত করা (অবশ্যই বাধ্যতামূলক নয়)
• শুধু গমের মূল্য দিয়ে নয় যিনি যা খেয়ে থাকেন সেই খাদ্য দ্রব্য দিয়ে সাদকাতুল ফিতরা আদায় করার বিষয়টি উৎসাহিত করা (অবশ্যই বাধ্যতামূলক নয়)
• পরিমানে ভিন্নমত আছে ঠিকই তবে হযরত নবী করীম (সঃ) থেকে চার খলিফা পর্যন্ত চালু পরিমান এক সা’ সমান ৩ (তিন) সের ১১ (এগার) ছটাক বা ৩ কেজি ৪৪০ গ্রাম এর বিষয়ে উৎসাহ ব্যঞ্জক প্রচারণা করা (অবশ্যই বাধ্যতামূলক নয়)
• হুজুর বা মাওলানা নামধারী কোন ব্যক্তি যেন ধনীদেও খুশী করার জন্য নিমণ বা কমদামী দ্রব্যেও নিমণ পরিমান সাদকাতুল ফিতরা ঘোষণার সুযোগ না নেয়
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! আপনাদের নিকট থেকে আসা নির্দেশনার মধ্যে উপরের বিষয়গুলোর সমাবেশ ঘটলে (১) দ্বীনের একটা আহকাম সঠিকভাবে পালিত হবে, (২) ধনীরা দায়মুক্ত হবে ও দরিদ্ররা উপকৃত হবে এবং (৩) সাদকাতুল ফিতরা এর সঠিক শিক্ষা বিস্তার লাভ করবে।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! আমরা আপনাদের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! একটি সুখী, সমৃদ্ধশালী, সুশিক্ষিত এবং অহিংস বাংলাদেশের প্রত্যাশায় এখানেই শেষ করছি।