somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"গিরগিটি" (ভুংভাং থ্রিলার)

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ধরুন আপনি একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা।আপনার উপর দায়িত্ব পড়লো একটা সিরিয়াল কিলিং কেসের রিপোর্টে ইন্টারোগেশনে যেয়ে আসল কথা বের করার।আপনার এই কাজে অভিজ্ঞতা প্রায় ১০ বছরের।চোখ দেখলেই বলে দিতে পারেন কে দোষ করেছে আর কে করেনি।

এবার যে লোকটাকে ইন্টারোগেশনের জন্য আপনাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাকে বেশ খানিক্ষণ পর্যবেক্ষণের পর আপনার অভিজ্ঞতা বলে দিলো এ লোক সিরিয়াল কিলিং এর সাথে জড়িত নয়।

কিন্তু,ফিংগার প্রিন্ট,সি সি টিভি ফুটেজ সহ আরো বেশ কিছু শক্ত প্রমাণ রয়েছে যা প্রমাণ করবে লোকটাই আসল খুনী।কিন্তু,আপনার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় অন্য কিছু বলছে।আপনি ঠিক করলেন কেসটা আপনি ঘেটে দেখবেন।

প্রশ্ন ১-আপনার এই কেসে সফল হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু?

আপনি সময়মত মাঠে নেমে পড়লেন কেস সলভে।আগের মার্ডার গুলোর কেস ফাইল স্টাডি করলেন বেশ মনোযোগ সহকারে।সেখানে একটা কমন বিষয় খেয়াল করলেন প্রত্যেকটা খুন একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর হয়েছে।প্রতিটা খুনের মাঝে ৫ দিন করে গ্যাপ আছে।প্রতিটা খুন হয়েছে রাত ১০ টায়।প্রতিটা খুন করা হয়েছে চায়ের সাথে কাচের গুড়া মিশিয়ে।আরেকটা বিষয়।যারা মার্ডার হয়েছে তারা বিভিন্ন বড় বড় ব্যাবসার সাথে জড়িত।

প্রশ্ন ২- ক্লু গুলো থেকে খুনীকে কেমন মনে হচ্ছে আপনার?

যে যে ফ্যামিলির লোক মার্ডার হয়েছে তাদের সাথে কথা বললেন। তেমন কিছুই জানতে পারলেন না।প্রত্যকটা খুনের পেছনে ফ্যামিলির লোকদের যেমন কথাবার্তা থাকে ঠিক তেমনই এই কেসেও।আরো কয়েকদিন স্টাডি করলেন মার্ডার হওয়া লোকগুলোর ওপর। এবং এখানে আপনি একটা কমন জিনিস খেয়াল করলেন।সেটা হলো যে কয়জন মার্ডার হয়েছে তারা সবাই একই গ্রামের লোক।

প্রশ্ন ৩-কি মনে হচ্ছে? পূর্ব শত্রুতা সম্পর্কিত কিছু কি থাকতে পারে??

আপনি গ্রামে গিয়ে ইনভেস্টিগেশনে গেলেন।এরই মধ্যে আপনি জানতে পারলেন আরেকটা মার্ডার হয়ে গেছে।মার্ডারের ডিটেইলস শোনার পর আপনি জানতে পারলেন এবারের মার্ডারটা হয়েছে একটু ভিন্ন ভাবে।মার্ডারের সময়,প্লেস আগের গুলো থেকে আলাদা।তবে একটা মিল রয়েছে।সেটা হলো খুনের পদ্ধতি।গ্রামের লোকজনকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন মার্ডার হওয়া লোকগুলোকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িত থাকায় গ্রাম্য সালিশে তাদের গ্রাম থেকে বের করে দেয়া হয়।

প্রশ্ন ৪-কি বুঝলেন?খুনটা কে করতে পারে?যাদেরকে বের করে দেয়া হয়েছে তারা কেউ খুন করে নি এটা আপনি শিউর।কারণ,তারা যদি খুন করতো তাহলে যারা তাদের বিচার করেছে তাদেরকে খুন করা হতো।কিন্তু হয়েছে উল্টো।কাকে সন্দেহ করবেন আপনি এখন?

যে লোকটাকে আটকে রাখা আছে তাকে নিয়ে স্টাডি করা শুরু করলেন। এবং আপনি জানতে পারলেন আটক হওয়া লোকটা ঐ গ্রাম্য সালিশের বিচারক ছিলো। আপনি বুঝতে পারলেন কেউ একজন আছে যে সালিশের বিচারককে ফাসানোর চেষ্টা করছে।কেসটা গোলমেলে লাগছে আপনার কাছে।কলকাঠিটা কে নাড়ছে তা বুঝতে পারছেন না আপনি?

প্রশ্ন -৫-আপনি এখন কি করবেন?

প্রথম থেকে পাওয়া প্রমাণ গুলো নিয়ে বসলেন আপনি।বিশেষ করে ভিডিও ফুটেজ গুলো।এখানে আপনি একটা অদ্ভূত জিনিস খেয়াল করলেন।খুনী খুন করার সময় সি সি টিভি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে হাতের দুই আঙ্গুল দিয়ে নিজের চোখে ইশারা করলো।এরপর খুন করে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে "V" চিহ্ন দেখালো।কি যেনো একটা খটকা লাগছে আপনার কাছে।"V" চিহ্নের দিকে জুম করে একটা ট্যাটু দেখতে পেলেন।ডান গালে একটা কাটা দাগও আছে।পকেট থেকে ফোন বের করে আপনার সহকারীকে বললেন যাকে বন্দী করে রাখা আছে তার হাত চেক করতে।ট্যাটু আর কাটা দাগটা পাওয়া না গেলে বুঝতে হবে আটকে রাখা লোকটা নির্দোষ। তাকে ফাসানো হয়েছে।

হটাত আপনার মোবাইলে একটা মেসেজ এলো।
'Don't ever try to help the prisoner'

যে নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে সে নাম্বারে ফোন দিলেন তড়িৎ।কিন্তু ফোন বন্ধ। তারমানে খুনী সিম বন্ধ বা বদলিয়ে ফেলেছে।

প্রশ্ন ৬-এখন আপনি কি করবেন?বন্দী লোকটাকে ছেড়ে দিবেন?

আপনি বন্দী লোকটাকে ছেড়ে দিলেন।দশ মিনিট পর আপনার মোবাইলে একটা মেসেজ এলো।
'Fool,You couldn't hold me long.Hah ha ha.'
"TWIN"

মেসেজটা পড়ে মাথায় বাড়ি পড়লো আপনার।এক মূহুর্তেই ব্যাপারটা ক্লিয়ার হয়ে গেলো আপনার।যাকে বন্দী করে রাখা হয়েছিলো সেই আসল খুনী।ছদ্মবেশ ধরেছিলো নয়তো প্লাস্টিক সার্জারি করেছে।আপনি ততক্ষণে দেরি করে ফেলেছেন।লোকটা তখন ধরা ছোয়ার বাইরে চলে গেছে।

প্রশ্ন ৭-আপনি কি লোকটাকে ধরার জন্য আগাবেন??

আপনি যখন এই চিন্তা করছেন তখন আপনার মোবাইলে একটা মেসেজ এলো।
"Don't run.I'm the colour changer '

আপনি ঠিক করলেন লোকটাকে যে করেই হোক ধরবেন।সাথে সাথেই কাজে নেমে পড়লেন আপনি।এবং মাস দুয়েকের মধ্যে আপনি সফলও হলেন।লোকটাকে আপনি ধরেছেন।হাতের ট্যাটু আর ডান গালের কাটা দাগ দেখে বুঝে ফেললেন এটাই সেই লোক।এবার আর রক্ষে নেই।

সব প্রমাণের ভিত্তিতে লোকটার ফাসির রায় দেয়া হলো।কাঠগড়ায় দাড়িয়ে লোকটা নিজেকে বারবার নির্দোষ বলেই দাবি করছিলো আগের মত।কিন্তু এবার আর কোন লাভ হলো না।

মনটা বেশ ফুরফুরে আপনার।শাস্তির রায় হয়ে গেছে।বেশ সময় লেগেছে এঈ কেস সলভ করতে গিয়ে।আর ৫ মিনিট পরেই ফাসির আদেশ কার্যকর হবে।

পাচ মিনিট হওয়ার ঠিক ৩০ সেকেন্ড আগে একটা মেসেজ এলো আপনার মোবাইলে।
"Thanks for your co-operation.I take my revenge"
♦♣♦

-একটা জিনিস বুঝলাম না সাঈদ ভাই।আসল খুনী রিভেঞ্জ নিলো কিভাবে?

মুচকি হাসলো সাঈদ ভাই আমার দিকে তাকিয়ে।

-রিভেঞ্জ সে নিয়েছে গ্রাম্য সালিশের বিচারককে ফাসিয়ে।বিচারে যাদেরকে বের করে দেয়া হয়েছিলো তাদের মাঝে সবাই মারা যায় একজন বাদে।আর সেই একজনটাই হলো খুনি।আর তুমি আরেকটা জিনিস মিস করেছেন। যার জন্য তোমার বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে। আসল খুনী ছাড়া পেয়ে একটা মেসেজ দিয়েছিলো।মনে আছে?
-"Don't run,I am the colour changer"
-হুম।
-খুনী বিচারককে ফাসানোর জন্য তার সাথে যাদেরকে বের করে দেয় হয়েছিলো তাদেরকে মারলো কেনো শুধু শুধু?
-যাতে করে সন্দেহের তালিকায় ঐ বিচারকের নামটাও থাকে।
-আরেকটা কথা।"Don't help the prisoner' এই মেসেজটা কে পাঠিয়েছিলো?
-ওটা খুনিই পাঠিয়েছিলো।গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে ঘোল খাওয়ানোর জন্য।
-কিন্তু সে সেলে মোবাইল পেলো কোথায়?
-বৎস এটা বাংলাদেশের জেলখানা।এখানে সবই হয়।
-বেশ ভালোই গল্পটা।আচ্ছা সাঈদ ভাই,ঘটনাটা কি সত্যি?

আবারো মুচকি হাসলো সাঈদ ভাই আমার দিকে তাকিয়ে।তার চোখের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাম আমি।আমার কাছে কেনো যেনো মনে হচ্ছে সাঈদ ভাইয়ের চোখের রং বদলে গেছে।চোখের মণিগুলো সবুজ ছিলো একটু আগেই।আর সেখানে এখন কালো কুচকুচে মণি দেখতে পাচ্ছি।মুখের চামড়ার সাথে গায়ের চামড়ার রংয়েও কোন মিল পাচ্ছি না এখন।ডান গালে একটা কাটা দাগও দেখতে পাচ্ছি এখন।একটু আগে তো কোন কাটা দাগ ছিলো না ওখানটায়।তবে কি...
বার কয়েক ঢোক গিলে সাঈদ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,

-আপনিই তাহলে...

আমার কথা শেষ হলো না।তার আগেই মাথায় কিসের যেনো বাড়ি খেলাম।দুপ করেই অন্ধকার নেমে আসল যেনো চারপাশে।

গাড়ো কালো অন্ধকার।

(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৪৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×