somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"Unexpected" ("ভালোবাসার ডাকপিয়ন" পরিবার নিয়ে থ্রিলার

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(১)


ধানমন্ডি ৩২।বিকাল ৬.৩০।
২৮/০৯/১৪


লেকের পাড়ে বসে হাওয়া খাচ্ছিলো আনাস।হাওয়া খাওয়ার পাশাপাশি সুন্দরী মেয়ে দর্শন আর নতুন গল্পের প্লট নিয়েই ভাবছিলো সে।কিন্তু,গল্পের প্লট ম্যাকিং এ কোন ভাবেই মনযোগ দিতে পারছে না।বারবার মেয়েটার কথা মনে পড়ছে।
"আচ্ছা,মেয়েটা এমন করতে পারলো কেমন করে?" মনে মনে বলে উঠে আনাস।


আবার পরক্ষণেই বলে উঠে,
"ধূর,ঐ মেয়ের জন্য এতো ভাবনা কিসের!চলে তো গেছেই।ঐসব নিয়ে ভেবে কোন লাভ আছে নাকি!"
নিজেকেই যেনো সান্ত্বনা দেয় আনাস।


সন্ধ্যা হয়ে গেছে এরই মধ্যে।বসা থেকে উঠে ঘুরে দাড়াতেই মিষ্টি একটা স্মেল ভেসে আসলো।কালো আল্লাখেল্লা পড়া একজনকে।দেখলো কিছুক্ষণের জন্য।মাথাটা হাল্কা ঘুরছে।হটাত করেই চোখে ঘুম এসে হানা দিলো।আস্তে আস্তে টলে পড়লো গভীর ঘুমে।


পশ্চিম রাজাবাজার,রনদা ফার্মেসি।রাত ৯.০০।
২৯/০৯/১৪


অফিস শেষ করে বাসায় ফিরছে আকিব।অনেক ধকল গেছে আজকে।মতিঝিল-উত্তরা আবার উত্তরা-মতিঝিল।লোকাল বাসে ঝুলতে ঝুলতে জান প্রায় ওষ্ঠাগত।বাড়ির গলিতে ঢুকেই মেজাজ খারাপ হয়ে আকিবের।কারেন্ট নেই।বাসায় যেয়ে কোথায় একটু রেস্ট নিবে সেই অবস্থাও নেই।মনে মনে কারেন্টের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে ফেলতে লাগলো।


বাড়ির সামনে এসে সিগারেট বের করে ধরিয়ে বড় করে টান দিলো।সিগারেটের ধোয়া ছাড়তেই মনে হলো কে যেনো ডাকছে তাকে।শব্দের উৎসের দিকে তাকাতেই দেখলো একটা গাড়ির কাছে একজন দাড়িয়ে আছে।অন্ধকার থাকায় চেহারা দেখা যাচ্ছে না।


-কে?
আস্তে আস্তে আগাতে থাকে লোকটার দিকে।আর সেটাই কাল হয়ে দড়ালো আকিবের।নাকে মিষ্টি একটা স্মেল ভেসে আসলো।কিছু বুঝে উঠার আগেই জ্ঞান হারালো আকিব।


শাহবাগ।
৩০/০৯/১৪


বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাসায় ফেরার বাস ধরলো তুষার।৯.৩০ বেজে গেছে,তাই বাসে ভীড়ও কম।একেবারে পেছনের সিট খালি আছে।খালি সিটে যেয়ে বসে পড়লো।
তুষারের বসার সাথে সাথেই আরেকটা লোক এসে বসলো ওর পাশে।লোকটার বেশ ভূসা দেখে অবাকই লাগলো ওর কাছে।এই গরমের মাঝে কেউ এরকম কালো ওভারকোট পড়ে থাকতে পারে?লোকটার চেহারাও দেখা যাচ্ছে না।বড় সর একটা হ্যাট দিয়ে পুরো মাথা ঢাকা।


আস্তে আস্তে বাস খালি শুরু করলো।সামনের দুই স্টপেজ পড়ে তুষারও নেমে পড়বে।পাশে বসা লোকটার দিকে বেশ কয়েকবার তাকিয়েছে।কেমন যেনো সন্দেহ লাগছে ওর মনে।
"মরুক শালা,আমার কি!" মনে মনে বলে উঠে সে।


লাস্ট স্টপেজে আসার পর বাস থেকে নেমে গেলো তুষার।ওর নামার সাথে সাথে লোকটাও নেমে গেলো।হাটার মাঝে কয়েকবার পেছন ফিরে তাকিয়েছে।
লোকটা তার পেছন পেছন আসছে।আশেপাশে কেউ নেই।হটাত করেই হাটার গতি থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো সে।


পেছনে তাকাতে দেখতে পেলো লোকটা এখনো হাটছে।লোকটা যদি আসলেই তাকে ফলো করতো তাহলে ওর দেখাদেখি লোকটাও থেমে যেতো।lলোকটা কাছে আসতেই ডাক দিয়ে থামালো তুষার।
-"আচ্ছা,আমি আপনাকে ......


কথাটা শেষ করবার আগেই মাথা টলে উঠলো তুষারের।গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো টুপ করে।



(২)


বোরিং সময় কাটছে তুষারের।পেইজের ইনবক্সে একগাদা গল্প জমে আছে।এতোগুলো কবে পড়ে জায করা হবে সেটা ভেবেই কুল পাচ্ছে না তুষার।তারওপর কয়েকটা গল্প পড়ে মেজাজটা সপ্তমে চড়ে বসলো।
"*** গল্প" বিড়বিড় করে বলে উঠলো তুষার।


ফোনের আওয়াজে চমকে উঠলো তুষার।এই অসময়ে কে ফোন দিলো আবার?নাম্বারটাও অপরিচিত।নতুন নাম্বার জানে তো মাত্র দুই জন।তাহলে কে ফোন দিতে পারে?
এসব ভাবতে ভাবতে ফোনটা রিসিভ করে তুষার।


-হ্যালো।
-তুষার বলছেন?ডাকপিয়নের এডমিন?
-জি বলছি।আপনি কে?
-আমাকে আপনি চিনবেন না।আপনাকে একটা খবর দেয়ার জন্যই ফোন দেয়া।
-কি খবর?
-আপনার পেজের নিয়মিত লেখকদের মধ্যে তিনজনকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।
কথাটা শুনেই চমকে উঠলো তুষার।লোকটার কথা সুবিধার ঠেকছে না তার কাছে।
-আপনার পরিচয়টা জানতে পারি?
-আমার পরিচয় জানতে পারবেন সময় হলেই।
-আপনি যা বললেন তা আমি বিশ্বাস করবো কেনো?
-আমি জানি আপনি আমার কথায় বিশ্বাস করবেন না। তাই আপনার কাছে একটা পার্সেল পাঠিয়েছি।সেটা খুললেই বাকিটুকু বুঝতে পারবেন।আমি সত্য বলছি নাকি মিথ্যা বলছি তা তখনই বুঝতে পারবেন।পাচ মিনিট পরফোন করবো আমি।আর হ্যা,পুলিশে জানাবেন না।তাতে সমস্যা বাড়বে বৈ কি!


ফোন কেটে যাওয়ার সাথে সাথেই কলিংবেল বেজে উঠলো।চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে দড়জা খুলতেই এক লোক লাল খামের প্যাকেটটা বাড়িয়ে দিলো তুষারের দিকে।তুষারকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই লোকটা চলে গেলো।
দড়জা আটকিয়ে খাম ছিড়ে ভেতর থেকে একটা সিডি বের করে আনলো তুষার।পিসিটে অন করেই চমকে উঠলো সে।আনাস,আকিব আর তুষার তিনজনকে বেধে রাখা হয়েছে।দেখে মনে হচ্ছে ঘুমাচ্ছে।
ভিডিও দেখার সাথে সাথেই ফোনটা বেজে উঠলো।কাপা কাপা হাতে রিসিভ করে কানে ধরতেই লোকটা বলে উঠলো,


-কি বিশ্বাস হলো?
-কে আপনি?এরকম করার মানে কি?
-জাস্ট ফর ফান।
-What??
-যা শুনেছেন ঠিকই শুনেছেন।অক্টোবরের ২ তারিখের জন্য প্রস্তুত থাকুন মিঃ তুষার।
ফোনের লাইন কেটে গেছে।তুষার চিন্তায় পড়ে গেছে।অক্টোবরের দুই তারিখের কথা বললো কেনো লকটা?চিন্তা করতেই হটাত মনে পড়লো অক্টোবরের ২ তারিখ তো ডাকপিয়নের জন্মদিন।ঐদিন কি হবে?আর লোকটার জাস্ট ফর ফান কথার মানেই বা কি?


মেসেজ টোনে চমকে উঠলো তুষার।মেসেজ বক্স অন করতেই লেখাটা দেখে আরেকবার চমকে উঠলো তুষার।


"An unexpected murder on Dakpiyons 3rd birthday party"


পরক্ষণেই হাসি ফুটে উঠলো তুষারের মুখে।ফোনটা কে করেছে বুঝে ফেলেছে সে।"শালা,পিচ্চি লুল" বলে বিড়বিড় করে উঠলো তুষার।


(৩)


হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর,ঢাকা।রাত ১২.০১।
০১/১০/১৪


প্রায় ছয় মাস পর দেশের মাটিতে পা রেখে কেমন যেনো ফুরফুরে লাগছ জাহেদের।দেশে আসা হটাত করেই।
সামনে ডাকপিয়নের জন্মদিন।তিন বছর পূর্তি হবে ২ তারিখ।অবশ্য আরেকটা কাজে এসেছে সে।প্রিয়তমার সাথে দেখা করা।বউ ছেড়ে বিদেশ বিভুইয়ে থাকা যে কত কষ্টের তা যে থাকে সেই বুঝে।
একটা ট্যাক্সি ডেকে উঠে পড়লো জাহেদ।আজকের রাতটা বন্ধুদের সাথে কাটিয়ে কালকে ডাকপিয়নের এডমিনের সাথে দেখা করতে হবে।অনেক দিন ধরেই বলে আসছে দেখা করবে ,কিন্তু সময় আর হয় না।এবার যেহেতু সময় হয়েছে সুযোগটা কেনোই বা মিস করবেন?


মোবাইলে অন করে তুষারের নাম্বারে ডায়াল করলো জাহেদ।ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে।ছেলেটা যে কি না!!কয়েকদিন পর পর সিম চেঞ্জ করে।পাগল একটা।
মাঝপথে ট্যাক্সি ড্রাইভারকে ডাক দিলো জাহেদ।


-খবর কি ঐদিকের?
-সব করে রেখেছি।জাস্ট আপনার আসার অপেক্ষায়ই ছিলাম।
-কুশলদা,মাহমুদ এদেরকে কিভাবে এনেছিস?
-কুশলদা বরিশালে ছিলেন।গতকাল এনেছি উনাকে।আর মাহমুদ ভাইকে আজকে সকালে নিয়ে এসেছি।একটু কষ্ট হয়েছে উনাকে আনতে।হাজার হোক ক্যাপ্টেন মানুষ।
-হুম,এছাড়া আর কোন প্রবলেম হয় নি তো?
-নাহ।
-গুড।এখন আমরা যাচ্ছি কোথায়?
-ফার্মগেট।
সিটে হেলান দিয়ে বসলো জাহেদ।আগামীকাল কি হবে সেটা ভেবে মুচকি হাসছে সে।



(৪)


ফেসবুকে ঢুকতে না ঢুকতেই তুষার ভাইয়ের মেসেজ পড়ে চমকে উঠলো তাম্মিন।একটা নাম্বার দিয়েছেন।বলেছেন,মেসেজ পাওয়ার সাথে সাথেই যাতে ফোন করে।
বেশ বড় করে হাই তুললো তাম্মিন।ডায়াল প্যাডে নাম্বার উঠিয়ে ডায়াল করলো।


-তাম্মিন, বলছি ভাই।
-তুই কই?
-আমি তো ভাই সিফাতের বাসায়।
-তোরা দুই বদমাইশ একলগে কি করোস?
-ফিফা খেলতে আইছিলাম ভাই।
-এখন আসল কথায় আসি।যা করতেছস তা কি ঠিক হইতেছে?
-কি করতাছি ভাই?
-ভাব লস তাই না?ভিডিও সিডি পাঠাইয়া আমারে ভয় দেখাস তাই না?
-কিয়ের সিডি কিয়ের কি?
-তুই আমার লগে অখনি দেখা কর।
-কই আইবেন?
-ফার্মগেট আয়।
-আইচ্ছা আইতাছি।


এমনিতেই গতকাল রাতে ঠিকমত ঘুম হয় নি তাম্মিনের।তারওপর তুষার ভাইয়ের আজগুবী কথা।সিফাতকে ঠেলা দিয়ে ঘুম ভাঙ্গালো।


-কি হইলো ভাই?এতো ঠ্যালা দিতেছো ক্যান?
-তুষার ভাই ফোন দিয়া দেখা করতে কইছে।
-কখন?
-এখনই।
-অ্যাঁ!!
-অ্যাঁ না হ্যা।ওঠ এখন।


ফ্রেশ হয়ে ফার্মগেটের বাসে উঠলো তাম্মিন আর সিফাত।যেতে যেতে তুষার ভাইয়ের সাথে কি আলাপ হয়েছে তা আলোচনা করতে লাগলো।কপালে চিন্তার ভাজ ফুটে উঠলো সিফাতের।


-ভাই,আপনে কই?
-আমি সিনেমা হলের নিচে।
-আইচ্ছা খাড়ান,আইতাছি।
-তাড়াতাড়ি আয়।


ফোন রেখে সিনেমা হলের দিকে পা বাড়ায় তাম্মিন আর সিফাত।হাটতে হাটতে তুষার ভাই যে কারণে তলব করেছে সেটা নিয়ে আলাপ করতে লাগলো দুজনে।
সিনেমা হলের নিচে এসে তুষার ভাইকে খুজতে থাকে দুজনে।একটু খুজতেই দেখতে পেলো তুষার ভাইকে।লেবুর শরবত খাচ্ছে।দেখে মনে হচ্ছে যেনো অমৃত খাচ্ছে।


-খালি একলাই খাইয়া গেলেন আজীবন।কোনদিন ডাক দিয়া কইলেনও না কি খাবি খা।


খোচা দিয়ে কথাটা বলে উঠে তাম্মিন।তুষার ভাইয়ের সাথে কেনো যেনো তার খোচা দিয়ে মজা করতে ভালো লাগে।


-চুপ থাক,পিচ্চি লুল।
-ভাই,আমি কি লুলামি করলাম আবার!আমার মত ভালো একটা আছে নাকি এই দুনিয়ায়?
-আইছে আমার ভালা পুলা!ঐ সিফাত কই রে?
-আপনের সামনে তো আর বিড়ি টানতে পারবো না,তাই চিপায় যাইয়া মারতাছে।
-পুলাপাইন গুলারে নিয়া যে কই যাই!ডাক দে অ্যাস্ট্রোনটরে।


বি আর টি সি কাউন্টারের পাশ থেকে ডাক দেয় সিফাতকে।শেষ কয়েক টান দিয়েই বিড়ি ফেলে দেয়।


-খাওয়া শেষ?
-হ ভাই,এক্কেরে কিলিয়ার।
-হাসিস না বেশি।কাজের কথায় আসি।তাম্মিন,এদিকে মনযোগ দে।


পকেট থেকে মোবাইল বের করে সিফাতের দিকে বাড়িয়ে দেয় তুষার।


-মেসেজটা পড়।
-কেডায় পাঠাইছে?
-তাম্মিন।


নিজের নাম শুনে চমকে উঠে তাম্মিন।অনেকটা চিল্লিয়ে বলে উঠে,


-আমি কি পাঠাইছি!!
-ভাব ধরতাছস মনে হয় কিছুই জানোস না।
-ভাই,আপনের কথার আগা মাথা আমি কিছুই বুঝতাছি না।


তাম্মিনের কথা আমলে না নিয়ে একটা ছবি বের করে সিফাতকে দেখায় তুষার।সিফাত একবার তাম্মিনের দিকে আরেকবার মোবাইলের দিকে তাকাচ্ছে।


-কিরে,আমার দিকে এমনে তাকাস ক্যান?
-তামা ভাই,তুষার ভাইয়ের একটা স্ট্যাটাসে তুমি একটা কমেন্টস করছিলা ইংলিশে।ঐটার হুবহু মেসেজ।
-আমি মেসেজ করি নাই,বিশ্বাস কর ভাই।


তুষার ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে তাম্মিনের দিকে।তাম্মিনের কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে ও মেসেজ পাঠায় নি।তাহলে পাঠালো কে?


-তাইলে মেসেজটা পাঠাইলো কে?তাম্মিনরে ফাসানোর মানে কি?
-আরেকটা জিনিস।যে ফোন দিছে সে "জাস্ট ফর ফান" এই কথাটা দিয়া কি বুঝাইতে চাইছে?
-আল্লায় জানে ভাই।


তাম্মিন এতোক্ষণ চুপচাপ শুনছিলো।তুষার থামার পর বললো,


-তুহিন ভাই,সানভি ভাই,অর্ণব ভাই এরা ঢাকায় আছে।যতদূর জানি তারা এক সাথেই আছে।ফোন দিয়া ডাকি?
-এগোরে ডাক দিয়া কি করবি?
-সবাইরে জানাই।ডাকপিয়নের ৩ জন রাইটার মিসিং।এইটাকি হেলা ফেলার বিষয়?
-তা অবশ্য ঠিক বলছিস।ফোন দে।


রিক্সা ঠিক করে তিনজন উঠে বসে।উপরে সিফাত আর নিচে তাম্মিন আর তুষার।সানভি ভাই,অর্ণব ভাই আর তুহিন ভাইকে ফোন দিয়ে ল্যাবএইডের সামনে আসতে বলে তাম্মিন।
রিক্সা পান্থপথ সিগন্যাল ক্রস করতেই তুষারের চোখ কালো কাপড় দিয়ে বেধে ফেলে সিফাত।হাত নাড়াচাড়া করার আগেই তা চেপে ধরে তাম্মিন।চোখ বেধেই তুষারের মুখে কাপড় গুজে দেয় সিফাত যাতে চিল্লাতে না পারে।
আশেপাশের মানুষ দেখলে মনে করবে ফ্রেন্ডরা মিলে মজা করতে করতে যাচ্ছে।সিফাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে তাম্মিন।হটাত দুজনে গলা মিলিয়ে গান গাওয়া শুরু করে।


"আমরা করবো জয়
আমরা করবো জয় একদিন...."


(৫)


হাত ছাড়ানোর কোন সুযোগই পাচ্ছে না তুষার।মনে মনে তাম্মিন আর সিফাতকে ছাড়া পেলে কি করবে সেটা ভাবতে লাগলো।কোথায় যে নিয়ে যাচ্ছে কে জানে!রিক্সা থামিয়ে কিছুক্ষণ হেটে তারপর সিড়ি দিয়ে উঠতে লাগলো।মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে তুষারের।এভাবে বেধে রাখলে হাটা যায় নাকি!


প্রায় পাচ মিনিট সিড়ি বেয়ে উঠার পর তাম্মিন আর সিফাত মিলে একটা জায়গায় বসায় তুষারকে।প্রবল বাতাসে তুষারের শরীরটা হটাত করেই জুড়িয়ে গেলো তার।
তুষার ভাইকে বসিয়ে দিয়েই সটকে পড়ে তাম্মিন আর সিফাত।


হাত ছাড়া পেয়ে চোখের বাধন খুলতে শুরু করে তুষার।বাধন খুলতেই তীব্র আলোতে চোখ ধাধিয়ে উঠে কিছুক্ষণের জন্য।আস্তে আস্তে চোখের সাথে মানিয়ে যায় আলো।কোথায় আছে বুঝার চেষ্টা করতেই কারা যেনো সমস্বরে বলে উঠলো,


"Happy birthday Dakpiyon"


পেছন ঘুরে তাকাতেই চমকে গেলো তুষার।যেনো বিশ্বাসই হচ্ছে না ওর।ডাকপিয়ন ফ্যামিলির রেগুলার রাইটার সব একসাথে।সাথে কিছু নতুন রাইটারও আছে।মাহমুদ ভাই,কুশলদা,জাহেদ ভাই,সুষমা আপু,সালমা আপু,মৃন্ময়ী আপু,আনাস ভাই,মুন্না ভাই,আকিব ভাই,হাসান তুষার ভাই,তুহিন,অর্ণব,নাভিদ,নাফী সামী,সানভি,ইশরা,মুখর,নবীন,শাফকাত,তারেক।আরো কয়েকজন আছে।যাদেরকে তেমন একটা চিনে না।সবাই মুচকি হাসছে তুষারের দিকে তাকিয়ে।তুষারের বিশ্বাস হচ্ছে না এখনো।একসাথে সবাই!!কিভাবে?


অনেক কষ্টে মুখে কথা খুজে পেলো যেনো তুষার।


-সব একসাথে!!কার প্ল্যান এইগুলা?
-আমার।


সবার পেছন থেকে কে যেনো বলে উঠলো কথাটা।সবাই সরে দাড়াতেই পেছনের মানুষটাকে দেখে চমকে উঠলো তুষার।


-আয়েশাপু,তুমি?
-হ্যা,অবাক হওয়ার কি আছে?
-তুমি দেশে কখন,কবে?
-কাউরেই জানাই নাই।এই সারপ্রাইজ প্ল্যানের জন্য শুধু তাম্মিন আর সিফাত ছাড়া কাউরে কিছু বলি নাই।দেশে আইসা কয়েকজনরে বলছি।প্ল্যানের সারমর্ম বলতেই তারা হাজির।
-ঐ সিডির মানে কি?
-ঐটা এমনেই।তোরে ভয় দেখানোর লাইগা।আনাস,আকিব আর তুষার এরা তিনটারে অজ্ঞান কইরা আনতে হইছে।কারণ এরা কাজের কারণে বিজি হইয় গেছে।সিফাতরে দিয়া ফোন দেয়াইছিলাম প্রথমে।২তারিখ মিট আপের কথা কওয়ার পরও তারা শিউরিটি দিতে পারে নাই।তাই মাঝখানে ঐ কাজ করা লাগছে।
-অজ্ঞান করাইছো কারে দিয়া?
-সানভি,নাভিদ আর অর্ণবরে দিয়া।তিনটা লম্বা চূড়া শক্ত সামর্থ্য বান।
-আর ঐ ফোন কল?
-ঐটা মাহমুদ ভাইরে দিয়া বলাইছি।আর্মির মানুষ তো।কন্ঠস্বর শুইনা ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক।
- তাম্মিন আমার স্ট্যাটাসে যে কমেন্ট করছিলো,মেসেজ হিসেবে পাঠানোটা কার বুদ্ধি?
-ঐটা তাম্মিনেরই বুদ্ধি।তোরে একটু ঘোল খাওয়াইছে।যাতে কিছু বুঝতে না পারোস।


তাম্মিন আর সিফাতের দিকে তাকিয়ে দেখে মুচকি হাসছে।তুষারও হেসে দিলো ওদের হাসি দেখে।


-অনেক কথা হইছে।এখন চল কেক কাটবো সবাই মিলে।


সবাই একসাথে হুররে বলে চিতকার করে উঠে।টেবিলের উপর বেশ বড়সড় একটা কেক রাখা।তুষারকে ঠেলে সবার মাঝে দাড় করিয়ে ছুড়িটা হাতে ধরিয়ে দেয় আয়েশাপু।ইশারায় কেক কাটতে বলে।


-সবাই হাত দেও।আমি একলা কাটুম নাকি!


একে একে সবাই হাত দেয়।কেকের ওপর ছুড়ি বসাতেই সবাই একসাথে বলে উঠে,


-Happy birthday
Happy birthday to DAKPIYON


তুষারের চোখ জোড়া হটাত করে ভিজতে শুরু করেছে।সবার অলক্ষ্যে চোখ জোড়া মুছে নিলো।



----------


-কি ছাই পাস লেখছস এইগুলা?আমি আবেগে কাইন্দা দিছি!!আমার চোখের পানি কি এতোই সস্তা??


কথাটা তাম্মিনকে বলে তুষার।তুষার ভাইয়ের কথা শুনে ভেতরে ভেতরে হাসতে লাগলো তাম্মিন।ভাব দেখিয়ে ভ্রু কুচকে বললো,


-আপনের কাছে তো সবই ছাই পাস।আপনেরে আর জীবনেও কিছু পড়ামু না।সবাইরে ট্যাগ দিয়া পড়ামু।আপনে না পড়লেই কি??


তাম্মিনের কথা শুনে মুচকি হাসে তুষার।কল্পনা করতে থাকে গল্পের মত একটা দিনের।যেদিন ডাকপিয়নের সব রাইটার একসাথে হবে।
এমন দিন কি আসবে????


"সমাপ্ত"

উৎসর্গঃ ডাকপিয়ন ফ্যামিলির সকল লেখক ও পাঠক।


{গল্প লেখার পিছনের ইতিহাসঃ ডাকপিয়নের জন্মদিন ছিলো ২ তারিখ।সত্যি কথা বলতে কি এক প্রকার ভুলেই গিয়েছিলাম।এটা নিয়ে তুষার ভাই(বরফ) একতা স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন যেটাতে তার আক্ষেপ প্রকাশ পাচ্ছিলো।
অনেকটা জিদের বসেই গল্পটা লেখা।আমরা ডাকপিয়নকে ভুলি নাই।ভুলবোও না।

হাবিজাবি মার্কা গল্প হয়ে গেছে।যেমনতা চেয়েছিলাম তেমনটা হয় নি।তারপরো চেষ্টা করেছি।

ডাকপিয়ন ফ্যামিলিকে নিয়ে লেখা প্রথম গল্প।ভুলগুলো খমাযোগ্য আশা করি।অনেকের নাম বাদ পড়ে গেছে। সেজন্য স্যরি :P }
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৪৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×