আমরা সর্বদাই মজলুমের পক্ষে।
জুলমের বিপক্ষে।ভারত পাকিস্তান
ভু-স্বর্গ কাশ্মীর নিয়ে যে যুদ্ধ- যুদ্ধ
ভাব শুরু হয়েছে, তাতে আমরা
শংকিত।যুদ্ধ বেধে গেলে ক্ষতিগ্রস্থ
হবে উভয় দেশ।বিশ্ব শান্তিব্যবস্থা
বিঘ্নিত হবে।লংঘিত হবে
আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা।কাশ্মীর
মুসলিমদের না হিন্দুদের এ-প্রশ্ন
অবান্তর।কাশ্মীর সে দেশের
জনগণের। কাশ্মীরে একসময় হিন্দুদের
রাজত্ব ছিল।এরপর শৈব বাদিদের
উত্থান হয় সেখানে। ১৩৪৯ সালে
সর্বপ্রথম মীরশাহ নামে একজন
মুসলিম শাসক শাসনভার গ্রহণ করেন।
শুরু হলো মুসলিম শাসনামল।চালু হলো
সেখানে সালাতিনে কাশ্মীর তথা
স্বাতি রাজবংশীয় রাজপ্রথা। এই
রাজবংশীয় শাসন ছিল কয়েকশো
বছর। ।এরপর এলো মোঘল সাম্রাজ্যের
যুগ।কাশ্মীর মোঘল সাম্রাজ্যের
অধীনে ছিল দীর্ঘদিন।১৭৪৬ থেকে
১৮২০ পর্যন্ত দুরবিনা আফগানরা শাসন
করে অঞ্চলটি। ১৮২০ সালে শিখ
সেনাপতি রঞ্জিত সিংহ যুদ্ধ করে
কাশ্মীর জয় করেন। শুরু হয় শিখ
সিংহদের রাজত্ব। ১৯২৫ সালে
হরিকিষেণ সিংহ রাজত্বে
অধিষ্ঠিত হন।তখন ভারতে চলছিল
বৃটিশ শাসন। বৃটিশ শাসন ছিল
দু'ভাগে বিভক্ত। একভাগে ছিল বৃটিশ
ইন্ডিয়া।অন্যভাগে ছিল করদ
রাজ্যসমূহ।তখনকার সময়ে করদ
রাজ্যের সংখ্যা ছিল ৫৬৫ টি। ভু-
স্বর্গ কাশ্মীরও ছিল সেই করদ
রাজ্যগুলোর একটি।১৯৪৭ সনে বৃটিশরা
যখন ;টু নেশন থিউরী বা দু'জাতি
তত্ত্বের চুক্তির ভিত্তিতে ভারত
ছেড়ে চলে যায়, তখন করদরাজ্যগুলোর
ব্যাপারে একটা শর্ত ছিল এই: দেশীয়
রাজ্যসমূহ চাইলে ভারত কিংবা
পাকিস্তান যে কোনো দেশের
অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে।চাইলে
অন্তর্ভুক্তি ছাড়া স্বতন্ত্রভাবে
নিজেরা শাসনকার্য পরিচালনা
করতে পারবে।সে হিসেবে ৪৭ এর
ভারত বিভক্তির পর কাশ্মীর রাজা
হরি সিংহ কোনোদেশের অন্তর্ভুক্তি
মেনে না-নিয়ে নিজেরা শাসন
কার্য পিরচালনার অভিপ্রায় ব্যক্ত
করলেন।কিন্তু করদ রাজ্যগুলোতে
যেহেতু রাজার একক ক্ষমতা ছিল।
প্রজাদের কোনো অধিকার ছিল না।
এ-জন্যে পূর্ব থেকেই রাজাদের
বিরুদ্ধে প্রচন্ড বিদ্রোহ চলছিল।
স্বাধীনতার লক্ষ্যে গঠিত হয়েছিল'
অল ইন্ডিয়া স্টেটস পেপলস
কনফারেন্স'।জওহর লাল নেহেরু
ছিলেন সেই কনফারেন্সের
প্রেসিডেন্ট। তিনি ঘোষণা করলেন:
রাজ্যগুলোর ভেতরে রাজাদের
ক্ষমতাচ্যুত করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা
করতে হবে। যে কোনো রাজ্য চাইলে
পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হতে
পারবে।চাইলে এন্ডিয়ার অন্তর্ভুক্ত
হতে পারবে।তবে স্বাধীন থাকতে
পারবে না" ।তাঁর এই ঘোষণায় অনেক
রাজ্যই ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।
কাশ্মীর তখনো অন্তর্ভুক্তির বাইরে
থেকে গেল। রাজা হরিসিংহের
আমলে কাশ্মিরে মুসলমানদের
কার্যত কোনো অধিকার ছিল না।
শিক্ষায় ও চাকরিতে মুসলমানরা
ছিল অনেক পিছিয়ে। মুসলমানরা
অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে অবতীর্ণ
হলেন।তুমুল বিদ্রোহ দেখা দিল।এক
পর্যায়ে সেই আন্দোলন স্বাধীনতা
সংগ্রামে রুপ নিল। কাশ্মীর রাজা
অবস্থা বেগতিক দেখে
সৈন্যবাহীনির মাধ্যমে
ভারতভুক্তির চুক্তিতে সই করে
নিলেন। এরপর থেকে ভারত দাবী
করে আসছে,পুরো কাশ্মীরই তাদের
অবিচ্ছেদ্য অংশ। অন্যদিকে কাশ্মীর
জনগণ এই নতজানু চুক্তি মেনে নিতে
অস্বীকার জানাল।একাংশ চলে গেল
পাকিস্তানের সঙ্গে। এই অংশটি
'আযাদ কাশ্মীর ' নামে পরিচিত।
আরেকটি ক্ষুদ্র অংশ চলে গেল চিনের
সঙ্গে।দেশটির নাম কাশ্মীর হলেও
এর দাপ্তরিক নাম "জম্মু এন্ড
কাশ্মীর"।জন্মু হিন্দু প্রধান অঞ্চল।
তবে গোটা রাজ্যের জনসংখ্যার
হিসাবে মুসলিমরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ ।
অর্থনৈতিক বিচারেও কাশ্মীর
দু'দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।কাশ্মীর
পেয়ে গেলে ভারত পাকিস্তান ভুখন্ড
ব্যবহার ছাড়াই আরব বিশ্বের সঙ্গে
যোগাযোগ স্থাপন করে নিতে পারে।
অন্যদিকে পাকিস্তানের জন্য
কাশ্মীর হচ্ছে ওয়াটার টাওয়ার।সব
নদীর উৎস হচ্ছে এই কাশ্মীর।এ-
কারণে দখলভুক্ত অংশের সীমানা
নিয়ে ভারত পাকিস্তানের দখল
পালটা দখল লড়াই চলছে।এ-পর্যন্ত
দু'দেশের মধ্যে ৩ বার যুদ্ধ হয়েছে।
সর্বশেষ যুদ্ধটি হয়েছে ১৯৯৯ সালে।
এই যুদ্ধে পাকিস্তান জাতিসংঘের
দেয়া লাইন অব কন্ট্রোল ক্রস করে
কার্গিল দখল করে নিয়েছিল। পরে
আন্তর্জাতিক চাপ ও ভারতের
পালটা অভিযানে পিছু চলে আসে।
এখন আবার যুদ্ধের দামামা বেজে
ওঠেছে। ভারতের সঙ্গে থাকতে
পারে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র।
পাকিস্তানের সঙ্গে থাকতে পারে
নতুন পরাশক্তি চিন ও অন্যান্য
মুসলিম রাষ্ট্র। শাসকদের এই যুদ্ধ-
যুদ্ধ খেলা দীর্ঘদিন থেকে চলে
আসছে।জাতিসংঘের সাধারণ
পরিষদেও এ-নিয়ে অনেক আলোচনা-
পর্যালোচনা হয়েছে।সমাধান
আসেনি। কিন্তু কাশ্মীরবাসী কি
চায়? এর কোনো মূল্যায়ন হয় নি
কখনো? ভারত পাকিস্তান এবং
কাশ্মীরের জনগণ কি যুদ্ধ চায়? এটি
নিয়ে কেউ ভাবতে রাজি নয়।
বিপথগামীরা চায় যুদ্ধ উস্কে দিতে।
আমরা চাই কাশ্মীরের ভাগ্য
কাশ্মিরের জনগণের হাতে ছেড়ে
দেয়া হোক।নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধানে
গণ ভোটের ব্যবস্থা করা হোক।জনগণ
যে দিকে যায়, যাক। চাইলে
নিজেরা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা
করুক।এটাই গনতন্ত্রের দাবী।
শাসকদের ইগু রক্ষার লড়াইয়ে ভু-স্বর্গ
কাশ্মীর গলন্ত লাভায় পরিণত হোক।
হারিয়ে যাক দেশটির পর্যটনশিল্প।
ভেঙ্গে যাক এর অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড
। আমরা তা কখনো চাই না।undefined
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:০৭