somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিজাব ইস্যু ও এরদোগানের পদক্ষেপ!

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হিজাব ইস্যু ও এরদোগানের পদক্ষেপ


১৯২৩ সালের ২৯ অক্টোবর তুরস্ককে
প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা ক হয়।
মোস্তফা কামাল পাশা প্রেসিডেন্ট
হন দেশটার। ১৩০০ বছর ধরে মুসলিম
জাহানের একতা ও সংহতির প্রতীক
হিসেবে যে খেলাফত ব্যবস্থা চালু
ছিল, সেই খেলাফতের
নিয়মতান্ত্রিক প্রধান খলিফাকে
তিনি উৎখাত করেন। শুধু তাই নয়,
তিনি ১৯২৪ সালের ৩ মার্চ গোটা
খেলাফত ব্যবস্থারই বিলুপ্তি ঘোষণা
করেন। তিনি সব শরিয়াহ আদালত ও
ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে
দেন। মহিলা সরকারি
চাকরিজীবীদের জন্য হিজাব
নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। তিনি মদের
ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে দেন।
তিনি সব ওয়াকফ ফাউন্ডেশন বাতিল
ঘোষণা করেন। হিজরি সালের
পরিবর্তে ঈসায়ী বা খ্রিষ্টাব্দ সাল
চালু করেন। শুক্রবারের পরিবর্তে
রোববারকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন
ঘোষণা করেন। তিনি আরবি
বর্ণমালার পরিবর্তে ল্যাটিন
বর্ণমালা গ্রহণ করেন তুর্কি ভাষার
জন্য। তিনি আরবিতে আজান দেয়া
বন্ধ করে দেন। আল্লাহ নামের
পরিবর্তে ‘তানরি’ শব্দ চালু করার
প্রয়াস পান। তিনি তুর্কি ফেজ টুপি
নিষিদ্ধ করে দেন। এর পরিবর্তে
পশ্চিমা হ্যাট চালু করেন। তিনি
শরিয়াহ আইনের বদলে সুইস দেওয়ানি
বিধির অনুকরণে তুর্কি দেওয়ানি
আইন এবং ইতালীয় দণ্ডবিধির
অনুকরণে তুর্কি দণ্ডবিধি প্রণয়ন
করেন। তিনি সব সুফি খানকা বন্ধ
করে দিলেন। এমনকি কুরআনের
আনুষ্ঠানিক তিলাওয়াতও কুরআনের
ভাষার পরিবর্তে তুর্কি ভাষায়
করার উদ্যোগ নেন (যদিও জনগণের
প্রচণ্ড বিরোধিতার মুখে তা
পরিত্যক্ত হয়)। এক কথায়, যা কিছু
ইসলামি, যা কিছু আরবি, যা কিছু
উসমানি সালতানাতের ঐতিহ্যÑ তা
সবই বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
কোন ব্যক্তি কতটা ইসলামবিদ্বেষী
আর কতটা পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুসারী
হলে এসব করা সম্ভব? যে দেশের
জনগণ প্রায় ১০০ শতাংশই মুসলিম, যে
দেশের উসমানি খেলাফতের প্রায়
৬০০ বছরের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস
আছে, সেই দেশের নেতা এহেন কাজ
করতে পারেন? এ কাজ করেছেন তিনি
তুরস্ককে ‘আধুনিক’ করার নামে,
পাশ্চাত্যকরণের লক্ষ্যে। দেশের
জনগণ কি তা সহজে মেনে
নিয়েছিল? না, সহজে মানেনি।
অনেক বিদ্রোহ, প্রতিবাদ, রক্তক্ষয়ী
সংগ্রামের পর জনগণ কামালপন্থী
সেনাবাহিনীর নির্যাতনের কারণে
মানতে বা চুপ থাকতে বাধ্য
হয়েছিল। কামালবিরোধী মতকে
স্তব্ধ করে দেয়ার লক্ষ্যে একদলীয়
ব্যবস্থা চালু করেন। রাষ্ট্রের সব
প্রতিষ্ঠান কট্টর ধর্মনিরপেক্ষ, তথা
কামাল পাশার অনুসারী ধর্মহীন
পশ্চিমাপন্থী ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর হাতে
চলে যায়। প্রাথমিক ‘ধাক্কা’র পর
বদিউজ্জামান নুরসি, ড. নাজমুদ্দিন
আরবাকান, ফতেহউল্লেহ গুলেন
প্রমুখের প্রচেষ্টায় বিশেষ করে ’৭০-
এর দশকে তুরস্কে ইসলাম চর্চার নতুন
করে পুনর্জাগরণ ঘটে।
কিন্তু এহেন পরিস্থিতিতে
সেনাবাহিনী দিন দিন ক্ষিপ্ত হয়ে
ওঠে। ১৯৮০ সালে তারা আবার
সামরিক অভ্যুত্থান ঘটায়। সামরিক
নেতারা ইসলামচর্চা, বিশেষ করে
হিজাবকে কড়াকড়িভাবে বন্ধ করার
জন্য উদ্যোগী হলেন। সব স্কুল, কলেজ,
বিশ^বিদ্যালয়ে এবং সরকারি
চাকরিসহ সব কিছু হিজাব পরা একজন
নারীর জন্য বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯৭
সালে ড. নাজমুদ্দিন আরবাকানের
নির্বাচিত সরকারকে পদত্যাগ করতে
বাধ্য করার পর সেনাবাহিনী আরো
কড়াকড়িভাবে হিজাব নিষিদ্ধ করার
আইন প্রয়োগ করা শুরু করে। অবস্থা
দাঁড়ায়, একজন হিজাব পরা ছাত্রী
বিশ^বিদ্যালয়ে পড়তে পারবেন না,
একজন শিক্ষিত মহিলা সরকারি
চাকরি করতে পারবেন না। দেশের
বেশির ভাগ মহিলাই সরকারি
নীতির কারণে নানা নিগ্রহ ও
বঞ্চনার শিকার হন।
অনাচার-বঞ্চনার কিছু নমুনা
১. ১৯৯৮ সালে নূরে বাজিরগান নামে
একজন কলেজছাত্রী তার ফাইনাল
পরীক্ষার সময় হিজাব (স্কার্ফ)
পরেছিল। সে কারণে তুর্কি এক
আদালত তাকে ছয় মাসের জেল দেন।
তার ‘অপরাধ’, তার স্কার্ফ নাকি
অন্য ছাত্রদের পরীক্ষা দেয়ায় বিঘœ
ঘটায়। ২. সে সময় অনেক ছাত্রীকেই
বিশ^বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে
কোথাও থেমে হিজাব খুলে ব্যাগে
রেখে দিতে হতো বা কেউ কেউ
হিজাব খুলে মাথায় পরচুলা পরে
বিশ^বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে হতো।
অথবা বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন
বাদ দিতে হতো। অবশ্য সামর্থ্যবান
ধার্মিকদের কেউ কেউ নিজেদের
মেয়েদের বিদেশে পড়ানোর ব্যবস্থা
করতেন। ৩. ১৯৯৯ সালের মে মাসে
আঙ্কারা থেকে নির্বাচিত ভার্চু
পার্টির এমপি মারভে কাবাকসিকে
স্কার্ফ পরার কারণে শপথ নিতে
দেয়া হয়নি। কাবাকসি পার্লামেন্ট
ভবন পরিত্যাগ করতে অস্বীকার করলে
সেক্যুলার এমপিরা ৩০ মিনিট পর্যন্ত
‘বের হও, বের হও’ বলে চিৎকার করতে
থাকে। তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী
বুলেন্দ এসেভিত কাবাকসিকে এই
বলে অভিযুক্ত করেন যে, তিনি
ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি ভঙ্গ
করেছেন। রাষ্ট্রীয় প্রসিকিউটর তার
ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেন, তাকে
আদালতে বিচারের আওতায় আনা
যায় কি না। কয়েক মাস পর তুর্কি
সরকার তার নাগরিকত্ব বাতিল করে
দেয়। ৩. অবস্থা এতটা খারাপ ছিল
যে, একেপি ক্ষমতায় আসার পরও
পরিস্থিতির কোনো উন্নতি ঘটেনি।
একেপি ক্ষমতায় আসার চার বছর পর
২০০৬ সালের অক্টোবরে তদানীন্তন
প্রেসিডেন্ট আহমেদ নেজেদ সিজার
তুরস্কের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে
আয়োজিত অনুষ্ঠানে একেপির সেসব
রাজনীতিবিদ, যাদের স্ত্রীরা
হিজাব পরেন তাদেরকে যোগদানের
অনুমতি দেননি। যারা অনুমতি
পাননি তাদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীও
ছিলেন। ৪. ২০০৭ সালে তদানীন্তন
প্রধানমন্ত্রী এরদোগানের হিজাব
পরা স্ত্রীকে সামরিক হাসপাতালে
প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি হিজাব
খুলতে রাজি না হওয়ায়। সে কারণে
তাকে ফিরে যেতে হয়। ৫.২০০৭
সালের মে মাসে প্রেসিডেন্ট
আহমেদ নেজাদ সিজারের মেয়াদ
শেষ হয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে
নতুন একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
করার প্রয়োজন দেখা দেয়। একেপি
তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ গুলকে
মনোনয়ন দেয় এ পদে। এ নিয়ে
সেক্যুলার মহলে বিশেষত
সেনাবাহিনীতে অস্থিরতা দেখা
দেয়। কারণ আবদুল্লাহ গুলের স্ত্রী
হিজাব পরেন। তদুপরি গুল ছাত্রজীবন
থেকেই ইসলামি আন্দোলনের সাথে
জড়িত ছিলেন। তিনি রেফাহ পার্টি,
ফজিলাত পার্টি এবং একে পার্টি
থেকে ১৯৯১, ১৯৯৫, ১৯৯৯, ২০০২ ও ২০০৭
সালে পাঁচবার এমপি নির্বাচিত
হয়েছেন। সেক্যুলার বিরোধী দলগুলো
সংসদ বয়কট করে। সাংবিধানিক
আদালত তার নমিনেশন আটকে দেন।
সব মিলিয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়।
শেষ পর্যন্ত আগাম সাধারণ নির্বাচন
অনুষ্ঠিত হলো। সেই নির্বাচনে আরো
বেশি অর্থাৎ ৪৬.৬ শতাংশ ভোট
পেয়ে একেপি নির্বাচিত হয়ে পুনরায়
সরকার গঠন করেছিল। সাধারণ
নির্বাচনের পর আবার প্রেসিডেন্ট
নির্বাচন করার উদ্যোগ নেয়া হয়।
আবদুল্লাহ গুল শেষ পর্যন্ত
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
আবদুল্লাহ গুলের শপথ অনুষ্ঠান নিয়েও
অনেক নাটক হয়েছে। তুরস্কের
প্রতিরক্ষা বাহিনীর চিফ অব স্টাফ
প্রচলিত রীতিনীতি উপেক্ষা করে
দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর
সর্বাধিনায়ক তথা প্রেসিডেন্টের
শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি।
প্রধান বিরোধী দল সিএইচপি
অনুষ্ঠান বয়কট করে। অনুষ্ঠানে গুলের
স্ত্রীও অনুপস্থিত থাকতে বাধ্য হন।
নতুন প্রেসিডেন্টের সংবর্ধনা
সন্ধ্যার স্থলে বেলা সাড়ে ১১টায়
অনুষ্ঠিত হয়। বিব্রতকর পরিস্থিতি
এড়াতে অনুষ্ঠানে কারো স্ত্রীকে
আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এভাবেই
নানা অবমাননাকর আচরণের মধ্য
দিয়ে একজন নির্বাচিত
প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠিত হয়।
এক কথায় তুরস্কে হিজাব বন্ধের
নামে চলে মহিলাদের ওপর
হয়রানি,অবিচার ও নির্যাতন। করা
হয়েছিল মানসিক নিপীড়ন। কেড়ে
নেয়া হয় হিজাব পরিহিত মহিলাদের
উচ্চশিক্ষা আর চাকরির মতো
মৌলিক অধিকার।
হিজাববিরোধী আইন বাতিলের
উদ্যোগ
নির্বাচিত হওয়ার প্রথম মেয়াদে
এরদোগান সরকার হিজাব নিয়ে খুব
একটা উচ্চবাচ্য করেনি। দ্বিতীয়
মেয়াদে অর্থাৎ ২০০৭-এর নির্বাচনের
সময় প্রতিশ্রুতি দেন, নির্বাচিত হলে
বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের হিজাব
পরার অনুমতির ব্যবস্থা করবেন।
এরদোগান নির্বাচিত হয়ে
পূর্বপ্রতিশ্রুতি অনুযায়ী হিজাব
পরার অনুমতিসংবলিত সংবিধান
সংশোধনী বিল সংসদে উত্থাপন
করেন। চার-পঞ্চমাংশ সদস্যের
ভোটে বিলটি পাস হয়। একেপি
ছাড়াও মাদারল্যান্ড পার্টির
সদস্যরা এর সপক্ষে ভোট দেন। কয়েক
দিনের মধ্যে বিলটিতে প্রেসিডেন্ট
স্বাক্ষর করেন। কিন্তু তুরস্কের
সাংবিধানিক আদালত পাস করা
বিলটি বাতিল ঘোষণা করেন। এ
কারণে হিজাব পরা ছাত্রীরা
বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ার অনুমতি
পেলেন না। এ বিষয়কে কেন্দ্র করে
পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয় যে,
আদালত একেপিকে নিষিদ্ধ ও বিলুপ্ত
করার উদ্যোগ নেন। বিভক্ত আদালতে
সামান্য ব্যবধানে একেপি নিষিদ্ধ
হওয়া থেকে বেঁচে যায়।
২০১০ সালে পার্লামেন্টে ১৯৮০-এর
সামরিক অভ্যুত্থানে জড়িত সামরিক
কর্মকর্তাদের বিচারের সুযোগ সৃষ্টি,
বিচার বিভাগের কিছু সংস্কার,
সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার
এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতাবিষয়ক
(যার মধ্যে এটিও ছিল যে নারী-
পুরুষে সাম্য প্রতিষ্ঠার এমন ব্যাখ্যা
করা যাবে না, যাতে সমতার নীতি
লঙ্ঘিত হয়) বেশ কিছু সংশোধনী
প্রস্তাব একেপি সরকার
পার্লামেন্টে পেশ করে। সংশোধনী
প্রস্তাবগুলো ৩৬০ (৬২%) ভোটে গৃহীত
হয়; কিন্তু সংবিধান সংশোধনের
মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা (৭৫%) পায়নি।
এ অবস্থায় তুরস্কের সংবিধান
অনুযায়ী বিকল্প ব্যবস্থা অনুসারে,
সংবিধান সংশোধনীর ওপর
রেফারেন্ডাম অনুষ্ঠিত হয়।
রেফারেন্ডামে সংশোধনীগুলো
গৃহীত হয়।
গণভোটের পর একেপি সরকার ঘোষণা
করে যে, হিজাব পরার কারণে যেসব
ছাত্রীর ওপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা
নেয়া হবে, তাদেরকে সরকার
সার্বিক সহায়তা দেবে।
ব্যাপকভাবে ছাত্রীরা তখন আগের
নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে হিজাব
পরা শুরু করেন। তদুপরি সাংবিধানিক
আদালতে এবং উচ্চশিক্ষা বোর্ডেও
পরিবর্তন আসে। সব মিলিয়ে
বিশ^বিদ্যালয়ে হিজাবের ওপর
নিষেধাজ্ঞা কার্যত পরিত্যক্ত হয়ে
যায়।
২০১৩ সালে বিচার বিভাগ, পুলিশ ও
সেনাবাহিনী ছাড়া সব সরকারি
চাকরিতে হিজাবের ওপর
নিষেধাজ্ঞা বাতিল করা হয়। ২০১৪
সালে হাইস্কুলেও হিজাব পরার ওপর
নিষেধাজ্ঞা বাতিল করা হয়। ২০১৬
সালে মহিলা আইনজীবীদের ওপর
থেকেও হিজাবের নিষেধাজ্ঞা
পরিহার করা হয়েছে। গত আগস্ট
মাসে মহিলা পুলিশকে হিজাব পরার
অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। এখন
বাকি আছে মহিলা বিচারপতি ও
মহিলা সেনাসদস্যের ওপর
নিষেধাজ্ঞা। আশা করা যায়, তাও
একদিন বাতিল করা সম্ভব হবে।
এভাবেই ধীরে ধীরে মহিলাদের
ধর্মীয় ও ব্যক্তিগত অধিকার
প্রতিষ্ঠায় একেপি সরকার
যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে।
সেনাবাহিনীর অন্যায় মোড়লিপনা
খর্ব করার সাথে সাথে হিজাবের
মতো সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বিষয়টির
স্বাধীনতাও নিশ্চিত করা হয়েছে।
এসব সম্ভব হয়েছে এ কারণে যে,
একেপি প্রথমবার ক্ষমতায় এসে
প্রথমে নজর দিয়েছে দেশের
অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপর, এর সাথে
ধীরে ধীরে সেনাবাহিনীর
একচেটিয়া ক্ষমতার রাশকে নিয়ন্ত্রণ
করার দিকে। এর মাধ্যমে তারা
বারবার নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্র
তৈরি করেছেন। দ্বিতীয়বার
অধিকতর জনসমর্থন নিয়ে নির্বাচিত
হওয়ার পরই হিজাব ও অন্যান্য
অ্যাজেন্ডা নিয়ে তারা এগিয়ে
গেছেন। তুরস্কে ধর্মহীন ‘কামালবাদ’
সমাজের অতি গভীরে পৌঁছে
গিয়েছিল। তার গতি ভিন্ন দিকে
ফেরাতে যথেষ্ট প্রাজ্ঞ ও
সুবিবেচনাপ্রসূত পদক্ষেপের প্রয়োজন
ছিল। একেপি সরকার বেশির ভাগ
ক্ষেত্রে এভাবেই পদক্ষেপ নিয়েছে।
এবং এখন পর্যন্ত এগিয়ে যাচ্ছে।
হয়তো একদিন কামালবাদের অন্ধকার
পথ থেকে তুরস্ক অতীতের গৌরব
পুনরুদ্ধার করতে পারবে, ইনশা
আল্লাহ।
মুসলিম দেশগুলোতে ইসলামপন্থীদের
তুরস্কের আদলে রাজনৈতিক
আন্দোলন করার ওপর মনোনিবেশ
করতে হবে। তাহলে রাজনৈতিক
সফলতা আশা করা যায়। মনে রাখতে
হবে, একটি দেশের আর্থসামাজিক
রাজনৈতিক সমস্যার বাস্তব সমাধান
পেশ না করে নিছক ধর্মীয়
দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করলে
ব্যাপক কোনো রাজনৈতিক সফলতা
অর্জনের সম্ভাবনা নেই। তুরস্কে
দীর্ঘ দিন ঐতিহ্যবাহী পথে
আন্দোলন করার পরও রাজনৈতিক
সফলতা আসেনি কিংবা কিছুটা
এলেও টেকসই হয়নি। ধর্মীয়
অ্যাজেন্ডার পরিবর্তে যখন
আর্থসামাজিক অ্যাজেন্ডা নিয়ে
একেপি নতুন কর্মকৌশলসহ মাঠে
নেমেছে, তখনই রাজনৈতিক সফলতার
মুখ দেখেছে। অনেক মুসলিম দেশের
ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য। আমরা যারা
ইসলামকে বিজয়ীর আসনে দেখতে
চাই, তাদের শিক্ষা ও সংস্কৃতি এবং
বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্রে ইসলামের
আলোকে কাজ করার পাশাপাশি
প্রাথমিকভাবে জনগণের সমস্যা ও
অধিকারকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক
আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
রাজনৈতিক সফলতা নিশ্চিত হলেই
পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে। সব
কিছুরই একটা সময় থাকে। সময়ের
আগে পদক্ষেপ নিলে বা নেয়ার কথা
বললে স্থায়ী কোনো ফলাফলের
সম্ভাবনা কম। তাই আমাদের আবেগ
পরিহার করে বর্তমান যুগের
বাস্তবতা ও মুসলিম বিশে^র জনগণের
মন-মানসিকতা বিবেচনায় রেখে
রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিতে হবে।
তাহলে হয়তো জাতির নেতৃত্ব
সেক্যুলার শ্রেণীর হাত থেকে
ইসলামপন্থী লোকদের হাতে
স্থানান্তরিত হবে। তার পরই সম্ভব
দেশকে ইসলামি রাষ্ট্র করার
পদক্ষেপ গ্রহণ, এর আগে নয়। কাজেই
এখন টার্গেট হওয়া উচিত সেক্যুলার
ধর্মহীন নেতৃত্বের পরিবর্তে আলেম-
ওলামা তথা ইসলামপন্থীদের
জাতীয় নেতৃত্বে নিয়ে আসা। আর এ
লক্ষ্যেই রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ
করা সময়ের দাবি।
লেখা; ড. আহমদ আবদুল কাদের
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:৩৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×