somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালোবাসার সেরা পাঁচ : বলিউড পর্ব

১৩ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রেম শাশ্বত। যুগে যুগে নর-নারীর মাঝে প্রেম এসেছে, জন্ম দিয়েছে নানা কিংবদন্তীর। সাহিত্য বা চলচ্চিত্রে আমরা প্রেমের নানা উপাখ্যান দেখতে পাই। এগুলো কতটুক সত্য তা নিয়ে হয়ত বিতর্ক আছে কিন্তু বাস্তব জীবনে ভালোবাসার অসাধারন সব নজির যে আমাদের চারপাশেই রয়েছে তা সবাই এক বাক্যেই মেনে নিবে। প্রেম মানে না বয়স, সামাজিক পদমর্যাদা বা কোন শৃঙ্খল। তা না হলে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাশীল রাজকুমার সাধারন এক নারীকে তার ঘরনী হিসেবে বেছে নিতেননা। পঁচিশ বছরের তরুন প্রেমে পড়ত না চল্লিশ বছর বয়সের নারীর। কোন নারী নিজের যৌবনকে শেষ করে দিত না স্বামীর ফেরার প্রতীক্ষায়। তাই আজও মানুষের বিশ্বাস পৃথিবী থেকে সত্যিকার ভালোবাসা হারিয়ে যায়নি।
ধান ভানতে শিবের গীত অনেক হলো। আসুন দেখে নেই বলিউড ও হলিউডে ভালোবাসার ছবির তালিকায় কোন ছবিগুলো প্রথম পাঁচটি স্থান দখল করে আছে। এ পর্বে থাকছে বলিউডের সেরা পাঁচ। তালিকাটি প্রকাশ করেছে একটি ভারতীয় অনলাইন বিনোদন পত্রিকা (বলিউড মন্ত্র)। আর আইএমডিবি এ তালিকাকেই রেফারেন্স হিসেবে দিচ্ছে।

১.মুঘল-ই-আজম (১৯৬০)

পরিচালক: কে আসিফ
তালিকার প্রথম এ ছবিটিকে বিবেচনা করা হয় ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসের মাইলফলক হিসেবে। দীর্ঘ দশ বছর লেগেছিলো এ চলচ্চিত্রটি তৈরিতে। খরচ হয়েছিলো দেড় কোটি রূপি যা তখনকার দিনের গড়পড়তা বলিউডি চলচ্চিত্রের চেয়ে দশ গুণ বেশি। মুঘল-ই-আজম মোঘল সম্রাট সেলিম আর নর্তকী আনারকলির ব্যর্থ প্রেমের উপাখ্যান। প্রেমের জন্য পুত্র সেলিম পিতা সম্রাট আকবরের বিরুদ্ধে ঘোষনা করেছিলো যুদ্ধ। সেলিম চরিত্রে ট্র্যাজেডি কিং খ্যাত দিলীপ কুমার, আনারকলি চরিত্রে মধুবালা আর সম্রাট আকবর চরিত্রে পৃথ্বিরাজ কাপুরের অভিনয় ছিলো চোখ ধাঁধানো। অত্যন্ত শক্তিশালী সংলাপের পাশাপাশি ছিলো নওশাদের পাগল করা সঙ্গীত। কে আসিফ তার এ চলচ্চিত্রকে নিখুঁতভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তোলার জন্য তৎকালীন সময়ের সকল সেরা মাথাকে এক করেছিলেন। মজার বিষয় চলচ্চিত্রটির কাজ যখন শুরু হয় তখন সবাই আসিফকে পাগল ঠাওড়েছিলো। ছবি মুক্তির পর সবাই মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলো আগামী পঞ্চাশ বছরেও এমন একটা ছবি নির্মাণ সম্ভব হবে কিনা সন্দেহ। তাদের সন্দেহ অমূলক নয়। আজ পঞ্চাশ বছর পর প্রযুক্তি এগিয়ে গেছে, এগিয়ে গেছে বলিউডের চলচ্চিত্র। কিন্তু মুঘল-ই আজম তালিকার শীর্ষ স্থানটি সগৌরবে ধরে রেখেছে।

*** মেঘদূত ভাইয়ের চমৎকার বিস্তারিত একটি লেখা আছে এই চলচ্চিত্রটি নিয়ে। আগ্রহীরা এখানে ক্লিকান

২.দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে (১৯৯৫)

পরিচালক: আদিত্য চোপড়া
রাজ-সিমরান জুটির এই প্রেম কাহিনী মুক্তির পর বলিউডের বক্স অফিসের সব রেকর্ড ভেঙ্গে দেয়। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ব্যবসা সফল হিন্দি চলচ্চিত্রের তালিকায় সবার উপের ডিডিএলজে। এ ছবির শেষ দৃশ্যে রেল স্টেশনে ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার সময় কাজল আর শাহরুখের দৃশ্যটিকে বিবেচনা করা হয় বলউিডি সর্বকালের অন্যতম সেরা রোমািন্টক দৃশ্য। মুম্বাইয়ের একটি প্রেক্ষাগৃহে আজও সগৌরবে এ চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হচ্ছে যা বিশ্বরেকর্ড। চলচ্চিত্রটি সেই বছর শ্রেষ্ঠ জনপ্রিয় চলচ্চিত্র বিভাগে সেরা চলচ্চিত্রের জাতীয় পুরষ্কার পায়। তালিকায় কেন এই চলচ্চিত্রটি দ্বিতীয় স্থানে থাকবে না তা বোধকরি আর বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

৩.দেবদাস (১৯৫৫)

পরিচালক: বিমল রায়
শরৎচন্দ্র চট্টপাধ্যায়ের অমর প্রেম কাহিনী দেবদাস। এ উপন্যাসটি পড়েননি এমন বাঙ্গালী মনে হয় একজনও খুঁজে পাওয়া যাবেনা। শরৎবাবু শুধু বাঙ্গালীদের হৃদয়ই জয় করেননি। অবাঙ্গালীরাও তার রচনার প্রেমে হয়েছিলেন মুগ্ধ। আর তারই ফলাফল হিসেবে তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছে দেবদাস।
১৯২৭ সালে প্রমথেশ বড়–য়া প্রথম বাংলায় দেবদাস চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন। এরপর বহু সময় দেবদাসের রিমেক হয়েছে বলিউড, হলিউড আর টালিউডে। কিন্তু বিমল রায়ের দেবদাস ছিলো সবার থেকেই আলাদা। সামজিক পদমর্যাদা আর ধণী-গরীবের ভেদাভেদ কীভাবে একটি প্রেমিক যুগলের জীবনকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয় এ চলচ্চিত্রটি ছিলো তারই উপাখ্যান। শরৎচন্দ্র বরাবরই তার লেখায় তৎকালীন হিন্দু সামাজিক ব্যবস্থার তীব্র সমালোচনা করেছেন। এ উপন্যাসটি ছিলো সেই সমাজ ব্যবস্থাকে আক্রমণ করেই তার প্রতিবাদের স্বরূপ। দেবদাস চরিত্রে আবারও ট্র্যাজেডি কিং দিলীপ কুমার, পার্বতী চরিত্রে বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী অভিনেত্রী সূচিত্রা সেন আর চন্দ্রমুখী চরিত্রে বৈজন্তীমালা।

৪.কাগজ কে ফুল (১৯৫৯)

পরিচালক: গুরু দত্ত
ষাটের দশকের তিনটি ছবিই তালিকার প্রথম পাঁচটি চলচ্চিত্রটির মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। ষাটের দশক রোমান্টিক চলচ্চিত্রের জন্য স্বর্ণযুগ নাকি তখনকার প্রেমগুলো ছিলোই এমন দৃষ্টান্তমূলক সেটা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। সে যাই হোক। তালিকার প্রথম তিনটি ছবির জয়জয়কার শুনলেও এ চবির শুরুটা কিন্তু ভালো ছিলোনা। ছবির কাহিনী এবং গল্প বলার ঢং ছিলো ভিন্ন আঙ্গিকের যা হিন্দি ফিল্ম এর আগে দেখেনি। তাই বাণিজ্যিকভাবে চলচ্চিত্রটি চরমভাবে ব্যর্থ হয়। এ চরচ্চিত্রটির প্রথম প্রদর্শনীতে প্রধান অতিথি ভারতের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ বিরক্ত হয়ে প্রেক্ষাগৃহ ত্যাগ করেন। চলচ্চিত্রে ধীরলয় উপস্থাপনার জন্য উপস্থিত দর্শকরা ক্রুদ্ধ হয়ে পাথর ছুড়ে মারে। ছবির পরিচালক ও প্রধান অভিনেতা গুরু দত্ত এ ঘটনায় খুব মনোক্ষুন্ন হন। পরবতীতে তিনি ফিল্মফেয়ারে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন ‘চলচ্চিত্রটি এতটাই ধীর লয়ের ছিলো যে দর্শকদের মাথার উপ্রে দিয়ে গেছে।’ ১৯৮৪ সালে ছবিটি পুনরায় মুক্তি দেওয়া হয় এবং এবার বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়। কিন্তু ছবিটি গুরু দত্তের মনে এমনই বাজে প্রভাবে ফেলেছিলো যে এরপর অনেক অনেক হিট ছবির নায়ক হিসেবে অভিনয় করলেও পরিচালক হিসেবে তিনি আর কখনই কাজ করেননি। ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনী নিয়ে নির্মিত এ চলচ্চিত্রটিতে গুরু দত্তের সঙ্গে অভিনয় করেন ওয়াহিদা রহমান। দাম্পত্য জীবনে অসুখী একজন চলচ্চিত্রকার নতুন এক অভিনেত্রীকে খ্যাতি পাইয়ে দেয়। নিজেও চলচ্চিত্রনির্মাতা হিসেব নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে। কিন্তু এই খ্যাতিই তাদের ব্যক্তিগত জীবনে ঝড় হয়ে আসে।

৫.ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া (১৯৮৯)

পরিচালক: সুরজ আর বারজাতিয়া
এ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর ‘কবুতর যা যা’ গানটি ছিলে সবার মুখে মুখে। শুধু এটিই নয় চলচ্চিত্রটির প্রত্যেকটি গানই ছিলো তখনকার সময় সুপার ডুপার হিট। মিষ্টি প্রেমের কাহিনী নিয়ে সালমান খান আর ভাগ্যশ্রী তখন বলিউডে নতুন জুটির আগমনী বার্তা শুনিয়েছিলেন। ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ও শ্রেষ্ঠ সংগীত বিভাগে চলচ্চিত্রটি পুরষ্কার জিতে নেয়। নব্বই দশকে ঝড় তোলা এ প্রেমের ছবিটি সবচেয়ে বেশি সাড়া ফেলেছিলো টিনেজারদের মধ্যে। মজার বিষয় সমীক্ষায় দেখা গেছে এ চলচ্চিত্রটি মুক্তির পর ভারতে নাকি টিনেজ প্রেম আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গিয়েছিলো।

___________________________________________
উৎসর্গ: ভালোবাসার সেরা পাঁচ এর দুটো পর্বই শেলী বেলী'র নামে
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৪৩
৬০টি মন্তব্য ৬০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×