somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছবিব্লগ: নারায়ণগঞ্জ (হাজীগঞ্জ দুর্গ, সোনাকান্দা দুর্গ, বিবি মরিয়মের সমাধি, কদম রসুলের দরগাহ)

১৮ ই জুলাই, ২০১২ রাত ৯:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কদিন আগে ঘুরে এলাম নারায়ণগঞ্জ। আমি আর আমার তিন সহকর্মী মিলে বেরিয়ে এলাম নারায়ণগঞ্জের হাজীগঞ্জ দুর্গ, সোনাকান্দা দুর্গ, বিবি মরিয়মের সমাধি ও কদম রসুলের দরগাহ। আমার নানা ও দাদাবাড়ি নারায়ণগঞ্জ হওয়ায় নিয়মিত এখানে আসা হয়। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখার সুযোগ হয়নি কখনো। তাই এবার পরিকল্পনা করেই যাওয়া। আমরা বাংলাদেশিরা কীভাবে নিজেদের সম্পদ, ঐতিহ্য আর গৌরবকে অনায়েসেই ভূলন্ঠিত করতে পারি তার জলজ্যান্ত উদাহরণ হাজীগঞ্জ আর সোনাকান্দা দুর্গ। জায়গা দুটি এখন পরিত্যক্ত। পরিচর্যাহীন, অসম্ভব নোংরা আর অসামাজিক কার্যকলাপের তীর্থস্থান। দেশের অন্যান্য পুরাকীর্তিগুলোতে সরকার দেখভালের জন্য অন্তত:দু-একজনকে নিয়োগ দিয়েছে। টিকিট কেটে প্রবেশ করার ব্যবস্থা করে দিয়েছে যাতে অভ্যন্তরীণ পরিবেশ ঠিক থাকে । অন্তত:পক্ষে কোন রকমে টিকে তো আছে! কিন্তু এ জায়গাগুলোতে এসবের বালাই নেই। ভেতরে গরু-ছাগল চড়ে বেড়াচ্ছে, জায়গায় জায়গায় পশু-পাখির মলমূত্র, চারিদিকে দুর্গন্ধ। আর মূল স্থাপনাগুলো তো ধ্বংসের পথে! জানা যায়, সোনাকান্দা ও হাজীগঞ্জ দুর্গ দুটি ১৯৫০ সালে জাতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আওতায় নিয়ে সংস্কার করা হয়। ১৮৯৬ সালে প্রকাশিত ‌'লিস্ট অব অ্যানসিয়েন্ট মনুমেন্টস ইন বেঙ্গল' গ্রন্থের সূত্রে জানা যায়, একসময় হাজীগঞ্জ দুর্গটি প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। পরে সংস্কার করতে গিয়ে এর অনেক রদবদল করা হয়।

হাজীগঞ্জ দুর্গ
হাজীগঞ্জের দুর্গটি মূলত জলদুর্গ। তৎকালীন সময়ে ঢাকাকে রক্ষা করতে নির্মাণ করা হয় “ট্রায়াঙ্গল ওয়াটার ফোর্ট” বা “ত্রিভুজ জলদুর্গে” । ১৬৫০ সালের কিছু আগে-পরে নির্মিত হয়েছিল এই সব দুর্গ। এই তিনটি জলদুর্গের একটি হচ্ছে হাজীগঞ্জ দুর্গ। অপর দুটি হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের সোনাকান্দা জলদুর্গ ও মুন্সীগঞ্জের ইদ্রাকপুর জলদুর্গ। শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত এই জলদুর্গটি কে নির্মাণ করেছেন তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। মুন্সি রহমান আলী তাঁর এক গ্রন্থে লিখেছেন, মীর জুমলা দুর্গটি নির্মাণ করেন। অন্যদিকে আহম্মাদ হাসান দানি তার 'মুসলিম আর্কিটেক্টচার ইন বেঙ্গল' গ্রন্থে বলেছেন, ইসলাম খান ঢাকায় রাজধানী স্থাপন করার পর এটি নির্মাণ করেন। তাছাড়া দুর্গে কোন শিলালিপি না থাকায় বিষয়টি অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
প্রায় দুই কিলোমিটার জায়গা নিয়ে এই দুর্গটি বিস্তৃত। একটা সময় এই দুর্গের নাম ছিলো খিজিরপুর দুর্গ। পাঁচ কোণাকার এই কেল্লা বা দুর্গটি দৈর্ঘ্যে পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ২৫০ ফুট আর উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ২০০ ফুট । দুর্গের ভেতরে দক্ষিণ কোণে একটি উঁচু মানমন্দির বা ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে যা আজ প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত।
১.

২.

৩.

৪.

৫.

৬.

৭.

৮.



বিবি মরিয়মের সমাধি ও মসজিদ
হাজীগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত বলে এ মসজিদটি হাজীগঞ্জ মসজিদ নামেও পরিচিত। ঐতিহাসিকদের মতে, শায়েস্তা খাঁ ১৬৬৪ থেকে ১৬৮৮ সালের মধ্যবর্তী একটি সময়ে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন । মসজিদের কাছে তাঁর কন্যা বিবি মরিয়মের সমাধি রয়েছে বলেই মসজিদটির নাম বিবি মরিয়ম মসজিদ এবং এ নামেই এটি বেশি পরিচিত।







খেয়া ঘাট পার হয়ে উঠলাম নৌকায়। নৌকা থেকে শীতলক্ষ্যা


কদম রসূলের দরগাহ
শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব পাড়ে নবীগঞ্জে অবস্থিত কদমরসুল দরগা। এখানে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর কদম মোবারকের ছাপ সংবলিত একটি কালো পাথর রয়েছে। জানা যায়, সম্রাট আকবরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণাকারী আফগান নেতা মাসুম খান কাবুলি মহানবীর পদচিহ্ন সংবলিত এ পাথরটি একজন আরব বণিকের কাছ থেকে কিনে নেন। ঢাকার জমিদার গোলাম নবী ১৭৭৭-১৭৭৮ সালে এ সৌধটি নির্মাণ করেন। আর কদম রসুল দরগার প্রধান ফটকটি গোলাম নবীর ছেলে গোলাম মুহাম্মদ ১৮০৫-১৮০৬ সালে নির্মাণ করেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মিরাজের রাত্রে বোরাকে উঠবার র্পূবৈ পাথরে তার পায়ের কিছু ছাপ অংকতি হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত পাথরটি আছে জেরুজালেমে। এছাড়া ইস্তাম্বুল, কায়রো এবং দামেস্কে অনুরূপ পাথর সংরক্ষিত আছে। বাংলাদেশে নবীগঞ্জ ছাড়াও চট্টগ্রামে আরও একটি কদম রসুল দরগাহ রয়েছে। তবে আদৌ এটি মহানবী (সাঃ) পায়ের ছাপ সংবলিত পাথর কিনা তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।



সোনাকান্দা দুর্গ
এটিও একটি জলদুর্গ। ইদ্রাকপুর আর হাজীগঞ্জের চেয়ে এ দুর্গটি বেশ বড় এবং দুর্গটির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও অন্য দু'টির চেয়ে সুদৃঢ়। সোনাকান্দা দুর্গের অবস্থান নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে । সোনাকান্দা নাম নিয়ে বেশ কিছু প্রচলিত জনশ্রুতি রয়েছে, তবে এগুলোর ঐতিহাসিক কোন ভিত্তি নেই। সবচেয়ে প্রচলিত জনশ্রুতিটি হচ্ছে, বার ভূঁইয়াদের অধিপতি ঈশা খাঁ বিক্রমপুরের জমিদার কেদার রায়ের বিধবা কন্যা সোনা বিবিকে জোরপূর্বক বিয়ে করে এই দুর্গে নিয়ে আসেন। সোনা বিবি সেই কষ্টে দুর্গে বসে রাত-দিন কাঁদতে থাকেন। সেই থেকে দুর্গের নাম হয়ে যায় সোনাকান্দা। জানা যায়, এই দুর্গের স্থাপত্যকাল সতেরো শতকের মাঝামাঝি সময়। ইটের তৈরি এ দুর্গের দৈর্ঘ্য প্রায় ৮৬ মিটার, প্রস্থ ৫৮ মিটার। দুর্গটি মোগল স্থাপত্যরীতিতে তৈরি। সোনাকান্দা দুর্গের একটু ভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা অন্য দুটি দুর্গের মধ্যে নেই। এ দুর্গটি দুটি অংশে বিভক্ত। একটি হলো বুরুজবিশিষ্ট আয়তকার ফোকরযুক্ত অংশ আর অন্যটি পশ্চিম দিকে সিঁড়িপথ খিলানযুক্ত উঁচু বেদি। অন্য দুর্গ দু'টিতে এমন খিলানসহ প্রবেশপথ নেই। সোনাকান্দা দুর্গের প্রতিরক্ষা প্রাচীরের চূড়ায় মারলন নকশা এবং বুরুজ রয়েছে। উঁচু প্রাচীর থেকে বন্দুকের গুলি ও কামানের গোলা ছোড়ার জন্য রয়েছে ফোকর।
১.

২.

৩.

৪.

৫.

৬.

৭.


যেভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার । ঢাকার গুলিস্থান বা যাত্রাবাড়ি থেকে এসি বা নন এসি বাসে করে নারায়ণগঞ্জ যেতে পারবেন । ভাড়া পরবে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। যানজট না থাকলে ঘন্টাখানেকের মাছে নারায়ণগঞ্জ পোঁছানো যাবে। আর কমলাপুর থেকে ট্রেনে গেলে ভাড়া ১০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। নারায়ণগঞ্জ চাষারায় নেমে অথবা বাস বা ট্রেন স্টেশন থেকে ১৫/২০ টাকা রিক্সা ভাড়ায় পৌঁছে যাবেন হাজীগঞ্জ জলদুর্গের সামনে। হাজীগঞ্জ জলদুর্গের যাওয়ার পথেই পড়বে বিবি মরিয়েমের সমাধি । দুর্গের সাথেই খেয়া ঘাট। নৌকা করে শীতলক্ষ্যা পার হবেন। ৫ মিনিটের মত লাগবে। ঘাটে পৌঁছে হেঁটে বা ১০টাকা রিক্সা ভাড়ায় চলে যেতে পারবেন কদম রসূলের দরগাহতে। দরগাহ পরিদর্শন শেষে বেবিট্যাক্সি, রিক্সা বা ব্যাটারি চালিত টমটমে করে যেতে পারবেন সোনাকান্দা দুর্গে। ভাড়া পড়বে ২০/৩০টাকা।

(তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট ও বিভিন্ন পত্রপত্রিকা)
_____________________________________________
নারায়ণগঞ্জ ভ্রমণ নিয়ে আরো দু'টি পোস্ট
ছবিব্লগ: ঘুরে এলাম বাংলার তাজমহল
ছবিব্লগ: পানাম নগর (সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০১২ সকাল ৯:৫৭
৩৯টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×