somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'চোরাবালি' দিয়েই শুরু হোক চোরাবালি থেকে চলচ্চিত্র শিল্পের উত্তরন

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



চোরাবালি দেখার জন্য ছবিটি মুক্তি পাওয়ার আগে থেকেই মুখিয়ে ছিলাম। জয়া আহসানের ছবি আমি মিস করিনা। এখন পর্যন্ত জয়া অভিনীত প্রতিটি ছবিই আমি মুক্তির প্রথম দিনই প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখে এসেছি। ভবিষ্যতেও এই রেকর্ড ধরে রাখার ইচ্ছে আছে ;) তবে চোরাবালি শুধুমাত্র জয়ার জন্যই আকৃষ্ট হইনি। ছবিটির প্রমো, গান, পোস্টার সবকিছুই খুব আকর্ষণীয় ছিলো । আরেকটা বড় কারণ ছবির পরিচালকের নাম রেদওয়ান রনি। ফারুকীর ভাই বেরাদারদের মধ্যে ইফতেখার ফাহমি আর রেদওয়ান রনির কাজ বেশ ভালো লাগে।

২১ ডিসেম্বর ছবিটি মুক্তি পাবে শুনে সিনেপ্লেক্সে টিকেট কাটার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম। ছবি মুক্তির দিন থেকে পরবর্তী দুই দিনের টিকেট সল্ড আউট! দর্শকদের বিশাল লাইনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে নাকি টিকেট কাটতে হয়েছে। অনেকেই টিকেট না পেয়ে মন খারাপ করে বাড়ি ফিরেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলা সিনেমার ইতিহাসে এমনটি আর ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। আমারও মন খারাপ হলো টিকেট পেলাম না বলে। কিন্তু ছবিটা দেখার জন্য তর সইছিলোনা। খুঁজে বের করলাম ঢাকায় স্টার সিনেপ্লেক্স ছাড়াও বলাকা, মধুমিতা আর সনিতে ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। তাই ঠিক করলাম দুপুরে খেয়েই বেরিয়ে পড়বো, যে হলে টিকেট পাবো সেখানেই ছবিটা দেখে ফেলবো। এরই মধ্যে ব্লগার স্নিগ দারুন একটা খবর দিলো। বলাকায় নাকি আগে থেকে কোন টিকেট বিক্রি হয়না। ছবি শুরু হওয়ার এক ঘন্টা আগে টিকেট বিক্রি শুরু হয়। আমাকে আর পায় কে!! ছুট লাগালাম বলাকায় এবং দীর্ঘ এক ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে সাড়ে ছয়টার শোয়ের টিকেট পেয়ে গেলাম :) । লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার সময়ই পরিচালক রেদওয়ান রনিকে সাড়ে তিনটার শো শেষ করে বেড়িয়ে আসতে দেখলাম ।



নয়টার দিকে শো শেষ হলো । নীল ক্ষেতের তেহারি পেটে চালান দিয়ে বাসায় ফিরে আসতেই ছবিটা মন থেকে মুছে যাওয়া শুরু করেছে। ভুল বুঝবেন না। ছবিটা মনে গেঁথে রাখার মত কিছু ছিলোনা ঠিকই কিন্তু হলফ করে বলতে পারি প্রায় আড়াই ঘন্টা নির্মল বিনোদনের মধ্য দিয়েই সময় কাটিয়েছি। তাই ছবিটা আমার মনে এ মূহুর্তে কোন আন্দোলন সৃষ্টি করছে কিনা তা মুখ্য নয় মোটেও।

এ ছবির সিনেমাটোগ্রাফি সুন্দর, এডিটিং সুন্দর, প্রিন্ট সুন্দর, মেকিংও যথেষ্ট সুন্দর। আর অভিনয়? অভিনয়ের দায়িত্বটা বুঝি একাই কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন শহীদুজ্জামান সেলিম! কিছু স্থূল রসিকতাপূর্ণ জায়গা ছাড়া সেলিম ছিলেন অনবদ্য। পুরো ছবি জুড়ে সেলিম এতটাই আলো ছড়িয়েছেন যে বাকিদের উজ্জ্বল উপস্থিতিও ফিকে হয়ে গিয়েছিলো। মূল চরিত্রটি একজন পোষা খুনীর আর সেই চরিত্রে অভিনয় করেছেন কলকাতার ইন্দ্রণীল। কলকাতার বর্তমান প্রজন্মের অভিনেতাদের কাজ আমার খুব একটা ভালো লাগেনা। ইন্দ্রনীলের অভিনয়ও ছিলো কাজ চালানোর মত। তবে এই চরিত্রের জন্য যে ধরনের অ্যাপিয়ারেন্স দরকার সেটা ইন্দ্রণীলের মাঝে ছিলো। তাই তাকে শেষ পর্যন্ত বেশ ভলোভাবেই মানিয়ে গেছে। স্বল্প সময়ের জন্য মাসুদ পারভেজ , এটিএম শামসুজ্জামান আর ইরেশ জাকের ছিলেন সপ্রতিভ। তবে জয়া আহসান অভিনয়ের চেয়ে ছবির শোভাবর্ধনেই বেশি ভূমিকা রেখেছেন। তার চরিত্রটি খুব বেশি বিকশতি হয়নি। কিন্তু জয়াকে চোরাবালিতে অপূর্ব লেগেছে। ওয়েস্টার্ন গেটআপে চোখ ফেরানো ছিলো দায়। তবে শেষ পর্যন্ত কিন্তু বাঙ্গালীপনারই জয় হলো! ছবির শেষের দিকে শাড়ি পরিহিত জয়ার কাছে হেরে গেলো জিন্স-টপস-ধূতি পড়ুয়া জয়া । ছবিটা মনে গেঁথে না গেলেও শাড়ি পরিহিত জয়াকে কিছুতেই মন ও মস্তিষ্ক থেকে নামাতে পারছিনা। :P



ছবির গানগুলো দুর্দান্ত না হলেও বেশ ভালো। আইয়ুব বাচ্চুর কেয়ারফুলি কেয়ারলেস আর মিলন মাহমুদের মা গানটা বেশি ভালো লাগলো। আর আবহসংগীত খুব ভালো হয়েছে।
ছবির কাহিনী খুবই সাদামাটা এবং প্রেডিক্টেবল। ছবির সংলাপে গভীরতা ছিলোনা। আসলে ছবির ধাঁচ অনুযায়ী প্রয়োজনও ছিলোনা। সাদামাটা বাক্যালাপ দিয়েই তাই ছবির সংলাপ সাজানো হয়েছে। চোরাবালির সবচেয়ে বাজে দিক অ্যাকশন দৃশ্যগুলো। ছবিটার ভালো দিকগুলো টেনে নীচে নামিয়ে আনতে অ্যাকশন দৃশ্যগুলোই যথেষ্ট ছিলো। পরিচালক এ দিকটাতে আরেকটু মনোযোগী হতে পারতেন। আর আইটেম গানটার চিত্রায়ন আরো উপভোগ্য হতে পারতো। গানের সঙ্গে নাচের সমন্বয়টা মোটেও ভালো লাগেনি যদিও আইটেম গার্ল (সিন্ডি রোলিং) নাচে যথেষ্ট পারঙ্গম বলেই মনে হয়েছে। রেদওয়ান রনি বলেই প্রত্যাশাটা বেশি ছিলো। তাই অস্বীকার করবোনা, ছবিটা আরো ভালো হবে বলে আশা করেছিলাম।

সবমিলিয়ে চোরাবালি কেমন ছবি?
পারফেক্ট কর্মাশিয়াল ফিল্ম ফর অল ক্লাসেস অফ পিপল অফ বাংলাদেশ। আমার মনে হয় এটাই চোরাবালি ছবির সবচেয়ে বড় সাফল্য। বাংলাদেশের সব শ্রেণীর দর্শককে টার্গেট করেই এ ছবিটি নির্মিত হয়েছে পরিচালক এমন ঘোষণা আগেই দিয়েছিলেন। আমার মনে হয় রনি তার কথা রাখতে সক্ষম হয়েছেন। আমাদের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে সুদৃঢ় করতে এ মূহুর্তে তথাকথিত গুরুগম্ভীর আর্ট ফিল্মের চেয়ে চোরাবালি-র প্রয়োজন বেশি। নয়তো গোটা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিটাই চিরজীবনের জন্য চোরাবালিতে ফেঁসে যাবে।
সবাইকে প্রক্ষাগৃহে গিয়ে ছবিটি দেখার অনুরোধ করছি।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১১:০২
৭২টি মন্তব্য ৭২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×