somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঝটিকা সফরে লালন একাডেমি আর কবিগুরুর কুঠিবাড়িতে

০৩ রা মার্চ, ২০১৩ দুপুর ২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মজমগড় নেমে হাতঘড়িটার দিকে তাকাতেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো। দিনের আলো নিভে আসতে মোটে এক ঘন্টা বাকি। ঢাকা থেকে সকাল সাড়ে নয়টায় বাসে চড়লেও যানজটের কারনে দেরি হয়ে গেলো খুব। এখন এই এক ঘন্টায় কাজ সারতে না পারলে কুষ্টিয়া আর ঘুরে দেখতে হবেনা। এই প্রথম নতুন কোন শহরে একদম একা আমি। এখানকার কোন আদম প্রাণীর সঙ্গে ন্যূনতম পরিচয় নেই। তাছাড়া ঠিক আগের দিনটিতে এখানে হরতাল পালিতে হয়েছে। সেই রেশ কাটেনি এখনও । আজকেও কুষ্টিয়ার কিছু কিছু জায়গায় হরতাল চলছে। কিছুটা অস্বস্তি কিছুটা আশংকা কাজ করছে মনে। তারপরও ঠিক করলাম শেষ চেষ্টা করতেই হবে। তরিঘরি করে তাই ছুট লাগালাম খাজানগরের উদ্দেশ্যে।

দু'দফা অটো পাল্টিয়ে আর বেশ খানিকটা হেঁটে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারলাম। কাজ সেরে বের হওয়ার আগেই সন্ধ্যা নেমে আসলো। আজ আর কিছু হলোনা বটে কাল সকালে ঘুম থেকে উঠে সুপারম্যান গতিতে দু-একটা জায়গা যতটুকু সম্ভব ঘুরে দেখতে হবে। তারপরই ফিরতে হবে ঢাকা।

রাতটা কাটাবার জন্য উঠলাম শহরের বড় বাজারের হোটেল
প্রীতমে। হোটলে মালিক বেশ আন্তরিক। আমাদের অফিসের অনেককেই ভালো করে চেনেন। কুষ্টিয়ায় আমাদের সবচেয়ে বড় ক্লায়েন্টের নাম বিআরবি কেবলস। আমাদের অফিস থেকে প্রায়ই লোকজন আসে এখানে। তখন সাধারণত এই হোটলেটাতেই উঠেন সবাই। ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা বলছিলাম পরবর্তী দিনের ভ্রমণ পরিকল্পনা নিয়ে। উনি জানালেন ছেঁউড়িয়ায় লালন একাডেমিতে রাতেই ঘুরে আসতে। রাতের বেলায় সেখানে গানের আসর বসে। দিনের চেয়ে রাতেই জমজমাট থাকে বেশি। আর হোটেল প্রীতম থেকে লালন একাডেমির দূরত্ব কিলো তিনেক। আর পায় কে আমাকে! রাতেই লালনের আখড়াটা ঘুরে দেখতে পারলে কাল সকালে কিছু সময় বেশি পাওয়া যাবে। তখনই দিলাম ছুট। শীতটা কিন্তু ততক্ষণে বেশ জাকিয়ে বসেছে।

দশ মিনিটেই পৌঁছে গেলাম। দারুন একটা অনুভূতি। বহুদিন গুরুর দরবারে আসার স্বপ্ন দেখেছি । আজ সেই স্বপ্ন পূরণ হলো। পৌঁছানোর পনেরো মিনিটের মাঝেই শুরু হলো লালনের গানের আসর। আমার সনি সাইবারশট দিয়েই চলতে থাকলো ভিডিও আর ফটোসেশন। তবে রাত বলেই ছবি তুলে খুব একটা সুবিধে করতে পারলাম না।

১.
লালন একাডেমির প্রবেশদ্বার



২.



৩.
লালন শাহ্-র মাজার



৪.
লালন শাহ্-র মাজার



৫.



৬.
ছোট্ট একটা জাদুঘর আছে লালন একাডেমিতে। সেখানে ফকির লালন ও তাঁর শিষ্যদের ব্যবহৃত বেশ কিছু আসবাবপত্র ও বাদ্যযন্ত্র দর্শণার্থীদের প্রদর্শনের জন্য রাখা আছে। এই ছবিটা লালনের ব্যবহৃত দরজার।



৭.
চলছে সাধকদের গানের আসর



৮.
একাডেমির বাইরেই আছে একতারা-দোতার সহ নানা পণ্যের পসরা। দু'টো একতারা কিনে নিলাম সংগ্রহে রাখার জন্য



৯.



ঘন্টা দুয়েক ঘুরে বেড়ালাম। তারপর ফিরলাম হোটেলে। পরদিন সকালের গন্তব্য কবিগুরুর কুঠিবাড়িতে।

সকাল আটটার দিকে বেরিয়ে গেলাম কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠি বাড়ির উদ্দেশ্যে। হোটেল মালিক জানালেন হোটেল থেকে বেরিয়ে মিনিট পাঁচেক হেঁটে গেলেই গড়াই নদী। গড়াই নদীর তীরে বিকেল বেলায় হাওয়া খাওয়ার শখ ছিলো খুব। গড়াইয়ের এত নিবিড়ে রাত কাটিয়েছি জানতে পেরে অবাক হয়ে গেলাম। সেই সঙ্গে আনন্দে মনটা ধেই ধেই করে নাচতে শুরু করলো।
নদীর পেরিয়ে অটো নিতে হয়। ৮-১০ কিলো রাস্তা যাওয়ার পর দেখা মিলে রবিবাবুর কুঠিবাড়ির। কিন্তু গড়াইয়ের অবস্থা দেখে মন ও মেজাজ দুটোই খুব খারাপ হয়ে গেলো। ছোট্ট একটা খাল বললে ভুল হবেনা। বেশিরভাগ অংশ ভরাট করা হয়েছে, পড়েছে চর। X( :(

নদী পার হতে সময় লাগলো মাত্র পাঁচ মিনিট। এরপর কুঠিবাড়ি যাওয়ার জন্য অটো নিলাম। পথের ধার ঘেঁষেই গড়াইকে সঙ্গী করে রবি বাবুর কাছে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। গড়াইয়ের অবশিষ্ট যা আছে তাই দেখে নিলাম প্রাণভরে। অসম্ভব সুন্দর!

১০.


১১.


১২.


১৩.


১৪.


১৫.


১৬.



টিকিট কেটে ঢুকে পড়লাম কুঠিবাড়িতে। আমি ছাড়া আর কোন দর্শণার্থী নেই। ভেতরের জাদুঘরে ছবি তোলা নিষেধ। কুঠিবাড়ির দু'জন লোকের সঙ্গে বেশ খাতির জমিয়ে ফেল্লাম। অনুমতি নিয়েই তুলে ফেল্লাম বেশ কিছু ছবি। শেষ পর্যন্ত জাদুঘরের ভেতরেই লোকটা আমার একখানা ছবি তুলে দিলো :P

১৭.


১৮.


১৯.


২০.
কবিগুরুর ব্যবহৃত খাট


২১.
স্পিডবোটের ধ্বংসাবশেষ


২২.
সম্ভবত এটাই ছিলো কোন ফটোগ্রাফারের তোলা রবি ঠাকুরের শেষ ছবি


২৩.


২৪.
পল্টুন


২৫.
কবিগুরুর প্রিয় পদ্মা বোট


২৬.


২৭.
ঐতিহাসিক বকুল তলা। রবি ঠাকুর এখানে বসে সাহিত্যচর্চা করতেন



২৮. কাজী নজরুল ইসলামকে লেখা কবিগুরুর চিঠি



সময় স্বল্পতার কারনে মীর মশাররফ হোসেনের বাড়িটা ঘুরে দেখতে পারলাম না। আবার যাওয়ার ইচ্ছে আছে কুষ্টিয়ায়। সামনের কোন এক লালন উৎসবে।
_________________________________________________
**আমার যত ভ্রমণ ও ছবিব্লগ**
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৪১
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×