মনকে এক নিমেশে উদাস করে দেওয়া ছবি। সেই নাবিকের চোখ আর মন দিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করে – “ অতিদুর সমুদ্রের পারে হাল ভেঙ্গে যে নাবিক হারিয়েছিল দিশা ” অথবা দিশা না হারালেও যাত্রাপথের ক্লান্তিতে অবসন্ন সে হয়তো জানে ওই আলকবর্তিকারিই তার গন্তব্য। সেই রোমাঞ্চ অনুভব করতে ইছে করে নিজের রক্তধারায়।
আমি চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পাই – বিশাল সমুদ্র আর আকাশ মিলে মিশে একাকার। ঢেউয়ের জোর যে খুব বেশি তা নয়। একলা নাবিকের অজানা দিশের জাত্রা, পালে সীমিত হাওয়া। আকাশে শঙ্খচিল। না আছে কোন গন্তব্য , না আছে ঘরে ফেরার ডাক। “চারিদিকে জিবনের সমুদ্র সফেন” সুদূর দারুচিনি দ্বীপও তেমন কোন মায়া কাজল পরায় না চোখে। শুধু পারি দেয়া, স্রোতের টানে কখনো বা এগোনো। কখনো স্থির থাকা আবার কিছুটা পিছিয়ে পরা। মাথার উপর দিয়ে উরে যাওয়া পাখির দানার ঝাপ্টানিতে ঘোর কাটে যখন, তারা গুলো একে একে ফুটছে আকাশে। দিগন্ত রেখায় শেষের সুর্যটার একটু ছোয়া রেখে গেছে। সেই আলোর আবেশ নিয়ে চাদ উঠে সিন্ধুপাড়ে। চাদের দিকে তাকিয়ে হয়তো মনে পরে ফেলে আসা কোন প্রিয় মুহুর্ত। এভাবেই দেখা হয়ে যেতে পারে কোন ওবাক করা প্রবাল দ্বীপ। আবার অতলান্ত সমুদ্রের গোপন গভীরে থাকা কোন ডুবো পাহারে ধাক্কা লেগে নিশ্চিত হয়ে যাওয়াটাও অসম্ভব কিছু নয়।
সেই নাবিকের যাত্রাপথে চলতে গিয়ে আমার দেখা মিলেছে আমার দারুচিনির দ্বীপের সাথে। আমার ভাবনাগুলোর মতোই এই সমুদ্রটাও একান্তভাবে শুধু আমার। আমার সমুদ্রে আমি বালির উপর শুয়ে দেখি আকাশের লাল কেমন জলে মিষে যাচ্ছে। শান্ত সমুদ্রের ছোট ছোট ঢেউ এর মাথায় সেই অরুন প্রভার ঝিকিমিকি। পাড়ের নারিকেন গাছ গুলোর পাতায় বাতাসের ফিস ফিস। দুপাশে যতদুর তাকাই দষ্টিপথে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। কেও কোথাও নেই। সমুদ্র আর আমি। আস্তে আস্তে আকাশের লাল এ বারতে থাকে তিব্রতা। লালের সঙ্গে সোনা রঙের মিশেল দিয়ে ক্যানভাসে যেন ছবি একে চলছে কেও আরাল থেকে। এমন সময় হঠাৎ করে চারপাশ উজল করে সূর্য উদয় হয়। সেই আলোতে স্পশ্ট হতে থাকে বহুদুরে মাছ ধরা ছোট ছোট নৌকা গুলো। ওদেরকে ওদের মত ফেলে আমি এগোই সমুদ্রের আরো কিছু কাছে। পা মেলে বসে থাকি, ঢেউরা এসে পায়ের পাতায় আদর করে দিয়ে যায়। পার ধরে হাটি, ভেজা বালির উপরে পায়ের ছাপ ফেলতে ফেলতে যাব যতদুর যাওয়া যায়। আকাশে দল বেধে উরে যাওয়া পাখিরে হয়তো একটু অবাকই হয়, নিজেদের মনে হাসে। এভাবে বসে বসে সূর্য ডোবা দেখা, জলের রঙ কে ঘন হতে দেখা। বাতাশ এসে এলোমেলো করে দিয়ে যায় চুল আর সেই সঙ্গে ভাবনাগুলোকে। তারপর তারার ফুল ফোটা শুরু হয়- একটা, দুটো, তিনটে করে হঠাৎ করে দেখা যায় এক আকাশ তারা নিয়ে চাঁদ হাজির। আকাশে একটা চাঁদ আর সমুদ্রে লক্ষ্য ঢেউ এর লক্ষ্য চাঁদের মেলা। বালির উপর শুয়ে, জলে পা ভিজিয়ে আর মমো জোছনায় শরীর ভিজিয়ে চোখের পাতায় রাত্রি নামাই।
~ পৌষ ৬ , ১৪১৪
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ সকাল ৯:১০