
এই যে ৬০ সেকেন্ডে এক মিনিট, ৬০ মিনিটে এক ঘণ্টা, এই ধারণা এলো কোথা থেকে?
বিগত সহস্রাব্দের অসংখ্য বিজ্ঞানীর নিরলস প্রচেষ্টায় সেকেন্ড, মিনিট, ঘণ্টা, দিন, বছরের হিসেব তথা সময়ের হিসাব নির্ধারণ করা হয়েছে বটে। তবে মজার ব্যাপার হলো, এই সময়ের হিসাবের রুট কিন্তু মেসোপটেমিয়া সভ্যতায়। এই সভ্যতার সম্মানিত এক দেবতা 'আন'র প্রিয় সংখ্যা ৬০। তাই পবিত্র ৬০ সংখ্যার থেকেই ৬০ সেকেন্ড ও মিনিটের হিসেবের গোড়া পত্তন ঘটে। রোর বাংলায় প্রকাশিত এস এন ক্রেমারের বইয়ের ভিত্তিতে লেখা একটি প্রবন্ধে এটা পেলাম।
সময়ের হিসেবের পাশাপাশি এই মেসোপোটেমিয়া সভ্যতার উদ্ভাবিত জোতির্বিদ্যা, কৃষি, চাকা, গণিত, নগরায়ণসহ কত কিছুর ধারণা যে এখনকার মানব সমাজে জ্ঞান-বিজ্ঞান হিসবে প্রচলিত রয়ে গেছে তার ইয়াত্তা নেই। শুধু তা-ই নয়, মধ্যপ্রাচ্যে গড়ে ওঠা আধুনিক ধর্মতত্ত্বগুলোতেও এই মেসোপটেমিয় সভ্যতার সৃষ্ট ধর্মের অমে আচার, বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও মিথেরও সাদৃশ্য দেখা যায়। সুমেরীয়রাই কিন্তু চন্দ্রবর্ষ গণনার প্রবর্তক, সেই চন্দ্রবর্ষ আজও মুসলিম বিশ্বে ইসলাম ধর্মীয় দিন-ক্ষণ গণনায় ব্যবহৃত হচ্ছে।
সামুতে এই সিরিজের প্রথম পর্বে বলেছিলাম, স্রষ্টা সম্পর্কিত ধারণায় প্রাচীন ইরানীয় ধর্ম জরথ্রুস্টবাদের সঙ্গে ইব্রাহিমীয় বা সেমেটীয় ধর্মগুলোর (ইহুদিবাদ, খ্রিষ্টানবাদ ও ইসলাম) অনেক মিল। রোর বাংলায় প্রকাশিত ওই লেখায় মেসোপটেমিয়া সভ্যতার প্রাচীন ধর্মসংক্রান্ত বিশ্বাস, আচার, মিথোলজিক্যাল কাহিনী, প্রচলিত মিথগুলো সেই ধারণা আরও পাকাপোক্ত করলো। যেমন- ইহুদিবাদ ও খ্রিষ্টানবাদে যা নোয়াহ, ইসলামে যা নূহ, প্রাচীন মেসোপটেমিয় মিথে তা জিশুদ্র। তফাৎটা কেবল স্রষ্টায়। মেসোপটেমিয় ধর্মে দেবতা একাধিক, সেখানে ইব্রাহিমীয় ধর্মসমূহ একেশ্বরবাদী।
(লেখা দুটোর লিংক নিচে সংযুক্ত আছে...)
রোর বাংলার ওই লেখায় মেসোপটেমিয়া সভ্যতায় প্রচলিত ধর্মসংক্রান্ত অনেক কথাবার্তাই উঠে এসেছে। মনুষ্যজাতি ও মহাবিশ্ব সৃষ্টি, বেহেস্ত-দোজখ, নূহের মহাপ্লাবন প্রভৃতি বিষয় আশয়ের মূল সুর প্রায় ৬ হাজার বছর পূর্বে গড়ে ওঠা মেসোপটোমিয়া সভ্যতার ধর্মব্যাখ্যার সাদৃশ্যপূর্ণ বলে এই লেখায় অনুভূত হচ্ছে। এও দেখা যাচ্ছে, মেসোপটোমিয়ার ধর্মীয় মাইথোলজি অনেকাংশে মিশরীয় ও গ্রীক মাইথোলজিকেও প্রভাবিত করেছে বলে মনে হচ্ছে। এই লেখায় যে সামান্য তথ্য দেয়া হয়েছে, তাতে গ্রীক দেবতাদের সঙ্গে মেসোপটেমিয়ান দেবতাদেরও খানিকটা সাদৃশ্য দেখা যাচ্ছে। (বিস্তারিত লিখলাম না, নিচে বিস্তারিত লেখাটির লিংক দেয়া আছে।)
সামাজিকবিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষের জ্ঞান, মূল্যবোধ, বিশ্বাস, সংস্কৃতি বংশপরম্পরায় প্রজন্মান্তরে প্রবাহিত হয়। এটা কোনো বিশ্বাস-প্রসূত ধারণা নয়, দীর্ঘকালের সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণার ফসল। প্রজন্মান্তরের এই ধারণাটি ধরে যদি আমরা প্রাচীনকালে ধীরে ধীরে এগোতে থাকি, তাহলে হয়ত একটা সময় দেখা যাবে আসলে আমাদের বর্তমান পৃথিবীর যাবতীয় কিছুর মূলে আছে কোনো কোনো সমাজের জ্ঞানীয় উৎকর্ষ। প্রাচীনকালে গিয়ে এই উৎকর্ষতার বিবর্তন দেখতে পারাটাও একটা রোমাঞ্চকর ব্যাপার হবে। যেহেতু টাইমমেশিন বাস্তবে নাই, আপাতত প্রাচীণ পাঠ্যপুস্তক, লেখাজোখা, তাম্রলিপি, দেয়ালচিত্র, খোদাইচিত্র আর মাইথোলজি সংক্রান্ত বইপত্রই ভরসা।
[বিঃদ্রঃ মিথোলজি পর্ব ০১ এ পাঠকদের মন্তব্য ও উৎসাহে এই দ্বিতীয় লেখাটি প্রকাশে প্রেষিত হয়েছি। যদিও এটি একটি ক্ষুদ্র লেখা বটে, অত তথ্য সমৃদ্ধও নয়। তা সত্বেও সামুর পাঠকদের সঙ্গে ভাবনা বিনিময়ে লেখাটি প্রকাশ করলাম। ইচ্ছে আছে, এরকমভাবে ছোট ছোট ভাবনা হোক, বা বৃহৎ পরিসরে আরও তথ্য সমৃদ্ধ করেই হোক, মাইথোলজি সিরিজটা অব্যহত রাখবো।
খুর্শিদ রাজীব
২৩ জুলাই ২০২২
প্রথম পর্ব পড়তে চাইলে Click This Link
রোর বাংলার লেখাটি পড়তে চাইলে Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০২২ রাত ১২:৫৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



