somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এখন বড় দু:সময়

১৫ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এখন বড় দু:সময়
- কিঙ্কর আহ্সান

আমাদের বাড়ির কেয়ারটেকারের নাম ছিলো ক্ষিতিশ। পুজো হলেই সে আর তার মেয়ে রানী প্রসাদ নিয়ে এসে হাজির হত বাড়িতে। নারিকেলের নাড়– আর পলিথিনে মোড়ানো চিনি বড় তৃপ্তি নিয়ে খেতাম আমি আর আমার বোন। বোনের বান্ধবী এ্যানীর বাসায় দারুন কেক তৈরি হত বড়দিনে। কেকের ওপরে ক্রিম দিয়ে লেখা অক্ষরগুলো খাওয়ার মজাই ছিলো আলাদা। প্রতিবারই আন্টি ফেরার পথে আমার পকেট ভর্তি করে দিতেন চকলেটে। বৈাদ্ধ পূর্নিমায় যাওয়া হত জ্যৈাতি আপার বাসায়। তিনি চৈাপর দিন আমাদের রাঙামাটির গল্প শুনাতেন। অরন্যের কোথায় কোন গুপ্তধন লুকিয়ে আছে তা নিয়ে ভাঙা ভাঙা বাংলায় শোনা তার আজগুবি গল্পগুলো শুনতে মন্দ লাগতো না। বাচ্চাদের মতন মায়া মায়া কন্ঠে প্রায়ই গাইতেন ‘উত্তোন পেগে মেগে মেগে মেঘলা দেবাৎ তলে...।’ বুঝিয়ে দিতেন গানের অর্থ। এই তিন ধর্মের মানুষের প্রায় সবারই প্রিয় ছিলো আমাদের বাড়িতে এসে ইফতার করা। মায়ের হাতে তৈরি মুড়ি-গুড়ের শরবত, পিয়াজু, চিড়ে-বাদাম-চানাচুর ভাজা ছিলো তাদের খুবই পছন্দের। দারুন সময় ছিলো। দারুন। কারোর খুব বেশি চাওয়া পাওয়া নেই তবুও মিলেমিশে ছিলাম সুখে শান্তিতে। এখন বড় দু:সময়। এই দু:সময়ে আমার এক বড় ভাই গর্ব করে বলে, ‘ আমার কোন মালাউন ফ্রেন্ড নেই।’ এই কথা বলার সময় তার চোখে দেখতে পাই ঘৃনা। আমার জানা নেই এ ঘৃনার উৎস কোথায় ! আমার হিন্দু বন্ধু চট্টগ্রামের কোন জায়গায় মন্দির পোড়ানো হয়েছে বলে মুসলমান হবার অপরাধে আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। এ্যানী আপুর কাছে জঙ্গী হয়েছি অনেক আগেই। বসবাসের যোগ্য থাকছেনা আর এ দেশ এই দোহাই দিয়ে চলে গিয়েছেন কানাডা। জ্যোতি আপুর সাথে দেখাই হয়না তেমন আর। কোনদিন সামনাসামনি পড়লে চুপচাপ চলে যান পাশ কাটিয়ে। পাহাড়ী মানুষদের নাকি কথা বলতে নেই। তাদের দেশে থাকতে দেওয়া হয়েছে এটাই তো বেশি ! সন্দেহ নেই, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তুু আমরা আমাদের আবেগ নিয়ে পড়ছি পিছিয়ে। হয়েছি স্বার্থপর। আমি, আমি, আমি, আমি করতে গিয়ে হারাচ্ছি ক্ষিতীশ, অ্যানি, জ্যোতিদের। তখনও নামাজ পাঁচ ওয়াক্তই পড়া হতো, মন্দিরে যেতো মানুষ, গির্জা, প্যাগোডায় লেগে থাকত ভীড়। কে হিন্দু. কে মুসলমান, কে বৈাদ্ধ, কে খ্রিস্টান মাথা ঘামাতে হয়নি এসব নিয়ে। আমার মুসলমান বন্ধু আছে। হিন্দু বন্ধু আছে। আছে খ্রিস্টান, বৈাদ্ধ, আওয়ামীলিগ, বিএনপি, সুশীল, আস্তিক, নাস্তিক, কোটাধারী, কোটাছাড়া বন্ধু। তাদের সাথে চিন্তা, চেতনা বিশ্বাসে আছে বিস্তর ফারাক তবুও’তো ঘৃনার মন্ত্রে দীক্ষা নেইনি। একসাথে আড্ডা দিতে গিয়ে ইফতারের খেজুর, বড়দিনের কেক আর পুজোর নাড়ু একাকার হয়েছে। এখন সময় খারাপ। চারপাশে চলছে শুধু আমি, আমি, আমি’র খেলা। কিছু একটা হলেই বন্ধু,সম্পর্কের কথা ভুলে কেউ বনে যাচ্ছে আওয়ামীলিগ, কেউবা বিএনপি, কেউ আস্তিক, কেউবা নাস্তিক, কেউ হিন্দু, কেউবা খিস্ট্রান। নিরপেক্ষ বলে কিছু নেই। আমিও নিরপেক্ষ নেই। হয়তো কোন একটা ভালো দল আসবে বলে অপেক্ষা করছি। কিংবা মনে মনে সমর্থন করছি কোন দলকে। থাকুক এসব দল, বিভেদ। এসব থাকতেই হবে। শুধু না থাকুক মানুষের মাঝে বিভেদ, ঘৃনা, হানাহানি। কোন একটা দল, একটা গোষ্ঠী না নিয়ে নিক একটু বেশি সুবিধা। আবার ঈদে বাড়িতে আসুক আমার সব ধর্মের বন্ধুরা। তাদের উৎসবেও যেন সুযোগ হয় থাকার। ওসব বাড়াবাড়ি, লড়াই বড়দের জন্যে। আমরা আমজনতা না হয় ভালো থাকি। থাকি আনন্দে। থাকি ভালোবাসায়...।

‘গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান
মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদি গাইতাম
আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম
আমরা আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম..।’
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×