প্রমিতি আপু মারা যাবার দিনে মিষ্টি বিলানো হয়েছিলো।
সামনে এইচএসসি পরীক্ষা। রোদের ভেতর শরীর ডুবিয়ে হাইড্রোকার্বন এর চ্যাপ্টারটা ঘাটাঘাটি করছিলাম। নিচতলার আন্টি এসে বলল, ‘প্রমিতির ছেলে হয়েছে। মা আর ছেলে ভালো আছে দুজনেই।’ কেয়ারটেকার মিজান সাদা,কালো মিষ্টি দিয়ে গেল দু-প্যাকেট। দাঁতে ব্যাথা নিয়েও খেলাম সে মিষ্টি। বাড়ির গেটে দাড়ানো রাতভর গাঁজা টেনে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে থাকা রিকশাওয়ালা আর পথের ধুলোয় গা পেতে দেওয়া কুকুরগুলোও মিষ্টি খেলো ভরপেট। বাড়ি ভর্তি মানুষ। গেটের সামনে গাড়ির ভীড়। ছেলে দেখতে বাবার মতন হয়েছে এটা বলতে বলতে আনন্দে পায়চারী করতে দেখি আপুর ননদকে। পড়াশোনা মিটসেফে তুলে রেখে আমি মানুষ দেখি। টক-ঝাল-মিষ্টি গল্পের স্বাদ নেই। কেমিষ্ট্রি বইয়ের ভেতর লুকোনো ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’ উপন্যাস। দারুণ প্রেমে মন আনচান করে। সময় হাঁটি হাঁটি পা করে এগোয়। দুপুর থেকে টের পাই মানুষের ছোটাছুটি। সব নীরব তবুও জঘন্য, অগোছালো শব্দ যেন আসে কই হতে! ভীড়ের মতন একটু জায়গার এলোমেলো কথা থেকে কিছু শব্দ কুড়িয়ে নিয়ে সাজাই। বুঝি, শুনি প্রমিতি আপু মারা গেছে। হিন্দী কি যেন একটা ছবির সাথে পুরোপুরি মিলে যাওয়া গল্প। আপুর বেঁচে থাকা বড় মেয়ে নবনী ছাদে বসে কাঁদে। ব্যাডমিন্টনের মৈাসুমে একটা কর্ক এসে পড়ে তার পাশে। অন্য বাড়ির ছাদ থেকে সে কর্ক চেয়ে ডাকাডাকি করলেও নবনী জবাব দেয়না। সে কেঁদেই যায়। আমি হাইড্রোকার্বনকে বিদায় জানিয়ে টর্ক নিয়ে মেতে উঠি। সায়েন্সের যত্তসব হাবিজাবি জিনিষ। মা বকে। বই টেবিলে রেখে যেতে হয় প্রমিতি আপুর বাসায়। দেখি সকালে মিষ্টি দিতে আসা আন্টিটা কাঁদছে। আপুর চরম নাস্তিক বাবা কাছে টেনে নিয়েছে কুরআন শরীফ, টেবিলে জিরোচ্ছে গরুর শুকনো, ঝুরঝুরে মাংস, পুরনো কাছাছুল আম্বিয়া আর এতসবের ভেতর আগরবাতি জ্বেলে দেয় কে যেন! মিষ্টিগুলো চুপচাপ বিশ্রাম নেয়। তাও পারেনা। ওদের শান্তিতে ব্যাঘাত ঘটায় রাজ্যির পিপড়া। তারপর ক্যালেন্ডার বদলায়, বদলাই। নবনী বড় হয়। প্রমিতি আপুর বরটা বিয়ে করে, বেঁচে থাকা ছেলেটা স্কুলে যাবার মতন বড় হয়। আমি চাকরিতে, ফাকরিতে ঢুকেও জানালার পাশে দাড়িয়ে রোদে শরীর লুকাই। জানালা লাগোয়া নিম গাছটার পাতায় দোল েদয় বেয়ারা হাওয়া। আকুলি বিকুলি সময়ে মৃত্যুভাবনা ঘিরে ধরে। মন খারাপ করতে করতে আনন্দভ্রমনে থাকা আমিটাকে মৃত্যু না যতটা অবাক করে তার চেয়েও বেশি অবাক করে মৃত্যু আর জন্মের এমন পাশাপাশি অবস্থানে থাকাটাকে। অনেক বছর পর আবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। শুধু পাত্র-পাত্রী ভিন্ন। হাতে ইলিয়াসের ছোট গল্পের সংকলন নিয়ে পাশের ফ্লাটে গিয়ে কান্নার ভেতরেও চোঁখে পড়ে বিশ্রাম নেওয়া সাদা-কালো মিষ্টিগুলো। সেই একই মিষ্টি। একই রকমভাবে ওদের শান্তি নষ্ট করছে রাজ্যির পিপড়া। সাদা,কালো মিষ্টিতে লাল,কালো পিপড়া।
আহ্ গল্পের খনি পৃথিবী সুন্দর। নির্মম সুন্দর।
আলোচিত ব্লগ
জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।
সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর
বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছবির গল্প, গল্পের ছবি
সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!
কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন
অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?
এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন