
২০২৪ সালের জুলাইয়ের সেই উত্তাল দিনগুলো আজো আমার স্মৃতিতে যেন আগুনের রেখা এঁকে গেছে। বাসার জানালার বাইরে ভেসে আসা স্লোগান, ফেসবুক নিউজফিডে ছড়িয়ে পড়া লাইভ ভিডিও, এবং প্রতিটি তরুণ চোখে যে আগুন আমি দেখেছিলাম তা ছিল এক জাতির জেগে ওঠা।
তবে এটা শুধুই রাজনীতি ছিল না। এটা ছিল চেতনার পরিবর্ত
যখন আমি থেকে আমরা হলাম
আমার বন্ধুদের মধ্যে আগে যারা রাজনীতির নাম শুনলেই বিরক্ত হতো, তারা এখন গভীর রাতেও সড়কে ছিল।
একজন বলেছিল,
আমরা আর চুপ করে থাকলে ইতিহাসে নিজের নাম লিখতে পারব না।
এটা ছিল এমন এক সময়, যখন পরিচয় রাজনীতি ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পাশে ছিল গার্মেন্টস কর্মীর।
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রী হাত ধরেছিল মাদ্রাসার ছাত্রের।
সেক্যুলার ব্লগার হাঁটছিলেন ধর্মভীরু যুবকের পাশে।
কেউ কারো পরিচয় জানতে চাইছিল না। কারণ পরিচয়ের চেয়ে বড় হয়ে উঠেছিল লক্ষ্য, একটা ভাঙা দেশকে নতুন করে গড়ার স্বপ্ন।
তবু প্রশ্ন থেকে যায়
আমরা কি প্রস্তুত ছিলাম এই বিপ্লবের জন্য?
নাকি আমরা শুধু ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলাম?
হ্যাঁ, আমরা সরকার বদলাতে পেরেছিলাম। কিন্তু নিজেকে বদলানো কি সহজ?
পুরনো সিস্টেম শুধু রুলিং পার্টি নয়, আমাদের মনের ভেতরেও বাসা বেঁধেছিল।
আমরা কি যথেষ্ট পরিণত হয়েছি মতভেদকে আলাপের জায়গায় পরিণত করতে?
আমার ভয় হয়। কখনও কখনও রাস্তার যে সংহতি দেখেছিলাম, তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ফিরে আসে বিষে ভরা ভাষায়।
আমার আশা হয়। যখন দেখি, একদল যুবক সেচ্ছাশ্রমে কোন গ্রামে স্কুল খুলে বসেছে,
যখন দেখি, একজন নারী শিক্ষার্থী নিজের পরিবার হারানোর পরও উঠে দাঁড়ায় শিক্ষাদানের কাজে।
এই যে নতুন বাংলাদেশ, এর ভাষা কি আমরা শিখতে পেরেছি?
এই দেশের গল্প এখন আর শুধু রাজধানীতে থেমে নেই।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক তরুণ কবিতা লেখে
আমার দেশ এখন কষ্টে জন্ম নেয়, কিন্তু জন্ম নেয়।
সেটাই আসল কথা।
গণতন্ত্র জন্ম নেয় প্রতিদিন, আমাদের আচরণে, আমাদের সিদ্ধান্তে, এবং আমাদের প্রতিরোধে।
কেন এই গল্প আমাদের সবার হওয়া দরকার
বাংলাদেশ এখন এমন এক সময়ে দাঁড়িয়ে আছে যেখানে পিছিয়ে যাওয়ার চেনা পথ আবার ডাকছে।
কিছু নতুন মুখ পুরনো অভ্যাস নিয়ে ফিরতে চায়।
কিছু ব্যবসায়ী গণতন্ত্রের নামে চুক্তির রাজনীতি করতে চায়।
আর কিছু সাধারণ মানুষ ক্লান্ত, বিভ্রান্ত, নিঃসঙ্গ।
তবু আমি বিশ্বাস করি এই গল্প থামেনি।
কারণ যারা রক্ত দিয়েছে, গান গেয়েছে, কারাগারে গেছে তারা আমাদের কাছে ঋণ রেখে গেছে।
এই ঋণ শুধু ভোট দিয়ে নয়, সচেতন থেকে, প্রতিদিন ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে শোধ করতে হবে।
আসুন এইবার আমার বকর বকরের উপসংহার টানি,
বিল্পব মানে শুধু পতন নয়, প্রস্তুতি।
জুলাইয়ের সেই উত্তাল সময়ে আমরা পতনের দৃশ্য দেখেছি।
এখন সময় নির্মাণের।
ভবিষ্যৎ নিশ্চয় অনিশ্চিত।
কিন্তু যে আগুন একবার জ্বলে উঠেছে,
সে সহজে নিভে না।
আমরা যদি থেমে না যাই,
এই দেশ শুধুই টিকে থাকবে না সে নতুন করে জাগবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


