
ব্রিটিশ আমলে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য নিয়ম চালু ছিল।
সে সময় গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া হতো শুধু যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষিত যুবক যুবতীদেরই নয়, বরং তাদের পারিবারিক বংশীয় সম্ভ্রান্ততাও বিচার করা হতো। প্রার্থীদের আভিজাত্য যাচাইয়ের জন্য বিশেষ পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল। এই নীতি প্রণয়ন করা হয়েছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ যুক্তির ভিত্তিতে সম্ভ্রান্ত পরিবার থেকে আগতরা নিজের সম্মান রক্ষার দায়ে সহজে দুর্নীতির পথে পা বাড়াবে না। অর্থলোভ তাদের থাকতে পারে, তবে সেটি সীমাহীন হতো না। আত্মসম্মান বাঁচানোর তাগিদে তারা কোনো অনৈতিক কাজে জড়ানোর আগে বারবার ভাবত।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে
এতে কি দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের জন্য সুযোগ সীমিত হয়ে যায়? বিষয়টি একটু গভীরভাবে ভাবতে হবে। দারিদ্র্য ও সম্ভ্রান্ততা এক নয়। সমাজে বহু পরিবার আছে যারা যুগ যুগ ধরে সম্ভ্রান্ত বংশ থেকে এসেছে, কিন্তু অর্থনৈতিক চাপে তারা নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। তারা দরিদ্র হলেও তাদের সামাজিক মর্যাদা ও পারিবারিক সম্মান অক্ষুণ্ণ রয়েছে। অর্থ বৈভব মানুষকে ধনী করতে পারে, কিন্তু সম্ভ্রান্ত করতে পারে না। সম্ভ্রান্ততা বংশপরম্পরায় টিকে থাকে, যেন রক্তের সঙ্গে প্রবাহিত এক অদৃশ্য উত্তরাধিকার।
অন্যদিকে, যদি রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় চরিত্রহীন ও অসৎ মানুষ দিয়ে তাহলে দুর্নীতি, ঘুষ, মিথ্যা অভিযোগ ও চুরির মতো ব্যাধি স্বাভাবিক নিয়মেই চলতে থাকবে।
ভারতের উদাহরণ টানলে দেখা যায়
আজও গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে অধিকাংশ সময় উচ্চবংশীয়দেরই নিয়োগ দেওয়া হয়। মুখার্জি, ব্যানার্জি, চট্টোপাধ্যায় প্রভৃতি পরিবার দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার আসনে আসীন। সেখানে নিম্নবংশীয় কেউ যত বড় বিদ্বানই হোক না কেন, তার জন্য সুযোগ প্রায় শূন্য। এর ব্যতিক্রম ঘটেছে নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহর ক্ষেত্রে। কিন্তু এই দুই নেতার বিরুদ্ধেই দাগী আসামির অভিযোগ রয়েছে, আর ভারতের বর্তমান পরিস্থিতি তার এক বাস্তব প্রতিচ্ছবি।
বাংলাদেশেও আমাদের ভাবতে হবে
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে কারা বসছে? অজাত, কুজাতদের হাতে যদি ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়, তারা অর্থের জোরে কীভাবে বর্ণবাদী, স্বার্থপর ও সমাজবিধ্বংসী হয়ে উঠতে পারে, তা অনুধাবন করা জরুরি। বিশৃঙ্খলা, বিভাজন ও নৈতিক অবক্ষয়ের প্রধান কারণই হলো অযোগ্য ও অসৎ লোকদের প্রভাবশালী আসনে বসানো।
এই বক্তব্য হয়তো অনেকের কাছে তিক্ত শোনাবে। কেউ কেউ গালি গালাজও করবেন। তবু আমি আমার অবস্থানে অটল থাকব। কারণ সত্যকে না বললে সমাজ ও রাষ্ট্র দুটিই ধ্বংসের দিকে এগোবে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১১:৪১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


