somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কলিমুদ্দি দফাদার
“কলিমদ্দিকে আবার দেখা যায় ষোলই ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বাজারের চা স্টলে। তার সঙ্গীরা সবাই মুক্তি, সে-ই শুধু তার পুরনো সরকারি পোশাকে সকলের পরিচিত কলিমদ্দি দফাদার।”

ব্যাংককের অলি গলিতে! পর্ব-১

০১ লা মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো আমার বরাবরই খুব ভাল লাগে। জীবন ধারন ব্যায় তুলনামুলক কম, মানুষের আচার ব্যবহার আন্তরিকতা আমাকে বরাবরই মুগ্ধ করে। এছাড়া উন্নত দেশ যেমন কোরিয়া-জাপান বা পশ্চিমাদের মত এরা এত ফরমাল আর প্রিন্টেডিং না, মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা, রেস, আউটভিট দেখে এত বাধ-বিচার করে না, তাদের কথাবার্তা আচার ব্যবহার কেজুয়াল, পর্যটকদের মানুষের মতোই দেখে।। এটা অবশ্যই আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই প্রাপ্ত শিক্ষ্যা। ভ্রমণে একটি দেশের কৃষ্টি-কালচার,  কুইজিন, মানুষের সাথে পরিচয়ের যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়, তা জীবনে চলার পথে খুব সাহায্য করে‌‌। কর্মব্যস্ত জীবনে মনটাকে ও অনেক সতেজ আর প্রফুল্ল রাখে। ভ্রমণ যদি একবার নেশা হয়ে যায়, কিছুদিন পরপর কোথায় না গেলে আর ভাল লাগে না।

এইবার আসি মুল প্রসঙ্গে! থাইল্যান্ডকে ভ্রমণকারীদের জন্যে ভেটিকান বলতে পারেন। এক ঋতুর দেশ, উষ্ণ আবহাওয়া, তুলনামূলক সস্তা থাকা-খাওয়া, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, অসাধারণ সব দ্বীপ, স্বচ্ছ পানি, পরিচ্ছন্ন বিচ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই দেশটি ভ্রমন পিপাসুদের স্বর্গ রাজ্য বলতে পারেন। থাইল্যান্ডে ভ্রমণের কোন পিক সিজন বলে কিছু নাই, সারাবছর ই পর্যটকদের মেলা। পর্যটকদের টার্গেট করে বছরজুড়ে থাইল্যান্ডে নানারকম উৎসবের আয়োজন করা হয়। পর্যটকদের কেমন ভির একটা ধারনা দেই? দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বড় এয়ারপোর্ট গুলোর একটি ব্যাংককের সুবর্নভুমি, বছরে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি যাত্রী এটি ব্যবহার করে। যখন থাইল্যান্ড থেকে ফিরে আসবেন যাত্রীদের এত চাপ যে চেক-ইন, ক্লিয়ারেন্স, ইমিগ্রেশন, শেষ করতে দেড় থেকে ২ ঘন্টা লেগে যায়।



ব্যাংকক আসলে অবশ্যই ডাব খাবেন। এত মিষ্টি পানি আর কোথায় আছে কিনা জানি না?

থাইল্যান্ডে প্রথম গেছিলাম ২০১৬ তে। এরপরে ও কয়েকবার যাওয়া হইছে। কিন্তূ প্রতিবার সংক্ষিপ্ত  ভ্রমন ব্যাংকক আর পাতায়ায় মধ্য সীমাবদ্ধ ছিল। ভাবলাম এভাবে ট্যূর হয় না, এবার নিজের জন্য বেড়াবো, থাইল্যান্ডের অলি গলি, প্রান্তিক অঞ্চল, ইচ্ছেমত খাব-দাব, এক্টিভিটিস করবো, কোনরকম পেরেশানি নিব না, যতদিন মন না ভরে থাকবো।

"মানুষ আমি আমার কেন পাখির মত মন
তাইরে নাইরে, নাইরে গেল সারাটা জীবন"

যেই কথা সেই কাজ,‌ কোন লাগেজ-ফ্যাগেজ ছাড়া শুধু হ্যান্ড ব্যাগ এ প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস নিয়ে চলে গেলাম থাইল্যান্ডে। কিছু লাগলে এইখানে থেকেই কিনে নিব অযথাই ভারি জিনিস চেঁচায়ে কোন  লাভ নাই। ব্যাংকক যেয়ে পৌঁছালাম ভোর রাতে। এয়ারপোর্টে ছাড়া ও ব্যাংককে প্রচুর বাংলাদেশি পর্যটক পেলাম।  বাংলাদেশ থেকে এখন প্রচুর মানুষ বিদেশে ভ্রমণ করে, এর বেশিরভাগই মধ্যে বয়সে তরুন। এই জেনারেশন মধ্য সঞ্চয়ের আগ্রহ খুবই কম। তারা জীবনকে উপভোগ করতে চাই, বিশ্ব দেখতে চায়। আমার মনে হয় নিম্নবৃত্ত দেশ ও লাইফস্টাইল থেকে কিছুটা আপডেট হওয়ার পর যে ফেস অতিবাহিত হয়, আমাদের জেনারেশনটা এখন তার মধ্যদিয়ে যাচ্ছি। ভাল রেস্টুরেন্টে খাওয়া, ব্যান্ডের স্টোরে থেকে জামাকাপড় পড়া, বিদেশ ভ্রমন এখন আর বিলাসীতা বলা হয় না বরং এইগুলো  এখন অতি সাধারণ প্রাত্যহিক জীবনের একটা অংশ। যাইহোক এয়ারপোর্ট কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে, আকাশে কিছুটা আলো ফোটার পর চলে গেলাম রিসোর্ট এ। সকালবেলা কি সুন্দর মনোমুগ্ধকর ব্যাংকক শহর। শহরজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা টেম্পল আর বুদ্ধের মূর্তি গুলো স্পিরিচুয়াল একটা অনুভুতি দিচ্ছিল।


থাইল্যান্ডে গ্রীষ্মে যে গরম পড়ে, নিজেকে ডিহাইড্রেটেড রাখতে সেভেন ইলেভেনের এই ড্রিংকস ছিল আমার ভরসা। সাথে এক্সটা আইস আর জার নিয়ে নিবেন।

রিসোর্ট এর লবিতে বসে আছি, গ্রামীন পরিবেশে খোলামেলা অসাধারণ একটা জায়গা। পাখি কি সুন্দর কিচিরমিচির করছে,‌ কৃত্রিম ঝরনার ফোয়ারা থেকে পানি উঠছে। এদিকে ঘুমে আমার অবস্থা শেষ।রুমে ও এখন যেতে পারবো না, ১২ টার আগে খালি হবে না‌। আমি আগে চলে আসছি। রিসিপসনে বসে থাকা ছেলেটা অনেক ভাল, ইংলিশ কম বুজে কিন্তূ আমাকে একটা সোফা দেখায়ে বললো তুমি এখানে একটু ঘুমাও।এতো আলোতে কি আর ঘুম আসে, তার উপর গরম আবার গান বাজছে। লবিতে আস্তে আস্তে কিছু গেস্ট বের হয়ে  চা- কফি খাচ্ছে কেউ আবার লেপটপ-মোবাইলে বসে কাজ করছে। হালকা একটু শুয়ে বুঝলাম ঘুম আসবে না, কফি খাওয়া দরকার। দুপুর পর্যন্ত এভাবে জেগে থাকতে হবে।


ব্যাংকক মেট্রো।

কফি নিয়ে বসে আছি। পাস থেকে একটা সুন্দরী কন্যা বলে উঠলো "তোমারে দেইখা মনে হচ্ছে রাতে খুব পার্টি করছো" মুচকি হেসে কইলাম আমি একটু আগে আইসা চেক ইন দিলাম , রাতে ঘুম হয় নাই। আলাপচারিতা জানতে পারলাম ভারতীয় মেয়ে দিল্লি থাকে পাঞ্জাবি ডিসেন্ট নাম ইয়াশিকা। আলাপচারিতা খুবই ভাল লাগলো  ফ্রেন্ডলি, ডাউন টু আর্থ পারসন উইথ নো ইগো। দুইদিন হইলো ব্যাংকক আসছে, সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যায় ফুকেট চলে যাবে। আমাকে জিজ্ঞেস করলো ওর সাথে বের হবো কিনা? ভাবলাম এখানে বসে থেকে কি আর করবো? তাই এরচেয়ে বরং ওরসাথে বাইরে থেকে ঘুরে আসি! একটা কনভিনিয়ানট স্টোর থেকে দুইজন হালকা পাতলা খাবার নিলাম, আমার জন্য তো একটা আমেরিকানো কম্বলসারি! নাইলে সারাদিন টিকে থাকা যাবে না! প্রথমে মেট্রোতে করে গেলাম চায়না টাউন। ব্যাংকক এর মেট্রো মোটামোটি সহজলভ্য, সব জায়গায় যাওয়া যায়। দুপুর পর্যন্ত চায়না টাউন ঘুরলাম। রাস্তায় থাকা অনেক স্টিট ফুড খেলাম। কাঁচা আমের সাথে লবন মরিচের মত কিছু একটা ছিল, অসাধারণ খেতে! একটা দোকানে দেখলাম অনেক ভির, লাইন ধরে খাবার খাচ্ছে, আগ্রহ নিয়ে গেলাম, দেখি শুকরের কোন একটা আইটেম। চায়না টাউনের পাশে থাকা একটা বুদ্ধো মন্দিরে গেলাম। ব্যাংককে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অসংখ্য মন্দির আছে। থাইরা দেখলাম বৌদ্ধ ভিক্ষু আর রাজাকে খুব শ্রদ্ধা করে। রাজাকে তারা ঈশ্বরের দূত মনে করে। এরপর দুইজন মিলে আসে পাসে এরিয়াগুলোতে অনেক হাঁটলাম, একটু পার্ক যেয়ে রেস্ট নিলাম। তারপর আবার হাটা শুরু করলাম, একটু যাওয়ার পর দেখি লোকাল কমিউনিটিতে কিছূ বয়স্ক রাস্তায় বক্স বাজায়ে নাচ-গান করছে। যেমনটা বলেছি থাইরা অনেক আন্তরিক তেমন কোন ভনিতা করে না, আমাদের কে নিয়ে টেবিলে বসালো। ওদের কিছু খাবার কোমল পানীয় খাইতে দিল, একটু আলাপচারিতা এক পর্যায়ে জোর করে নিয়ে ওদের সাথে নাচাইলো।


চায়না টাউন।


ঐতিহ্যবাহী একটি বুদ্ধ মন্দির। ছবিতে প্রয়াত থাই রাজা।


লোকাল কমিউনিটির সাথে কাটানো কিছু মুহূর্ত।



লেখাটি বেশি বড় হয়ে যাচ্ছে, পর্ব আকারে পরে লিখবো। তবে ব্যাংককে আমার প্রথমদিনে মুগ্ধতা ছিল ইয়াশিকার সাথে পরিচিতি। অনেক কিছুই শিখেছি বুঝেছি। ইয়াশিকা সারাদিনের ঘুরাঘুরিতে দামী বা হেভি কোন খাবার খায় নী। আর্তসম্মানবোধ প্রচুর কোন কিছু কিনতে গেলে ভারতীয় একসেনটে বলে "ওকে ইউ পে ফিফটি আই পে ফিফটি"। সারাদিন ঘুরে ফিরে আসার সময় তার জুতার সোল খুলে যায়, হাঁটার সময় উদ্ভট একটা শব্দ আসছিল। বিব্রতকর অবস্থায় যাতে না পরে আমি বুঝে না বুঝার ভান করে আসছি। এইটা বলার কারন হচ্ছে মেয়েটি যে আর্থিক ভাবে অসচ্ছল ভাল খাবার কিংবা জুতা কিনার টাকা নেই এমন না, বরং আরো বেশি ঘুরাঘুরি বা দুই একটা এক্টিভিটি বেশি করাটাকে বেশি প্রাধান্য দেয়। আমি যেমন নিজের একটা নির্দিষ্ট কমফোর্ট জোন ছাড়া কোথায় যেতে চায় না, বাজেট এর চিন্তা ভাল ছবি, ক্যামেরা, মোবাইল নিয়ে ব্যাস্ত সেখানে একদল নিজের সামর্থ্যর মধ্য সুন্দর করে দুনিয়াকে ঘুরে দেখছে , অভিজ্ঞতার ঝুলি সমৃদ্ধ করছে। মানুষকে আসলে অসাধ্যকে সাধন করে তার ইচ্ছেশক্তি দিয়ে।


রাতের ব্যাংকক।


এই সেই বিখ্যাত পেড থাই। সাথে ডিম দেয় না, এইটা আমি এক্সট্রা এড করছি।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০২৫ রাত ৩:২৫
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×