somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কলিমুদ্দি দফাদার
“কলিমদ্দিকে আবার দেখা যায় ষোলই ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বাজারের চা স্টলে। তার সঙ্গীরা সবাই মুক্তি, সে-ই শুধু তার পুরনো সরকারি পোশাকে সকলের পরিচিত কলিমদ্দি দফাদার।”

নারকেল জিঞ্জিরা! Beauty in Uncongenial Surrounding

০৭ ই মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সেন্টমার্টিন! বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে একমাত্র কোরাল আইল্যান্ড। প্রাকৃতিক জীব-বৈচিএ এ ভরপুর, স্বচ্ছ নীল জলরাশির ঘেরা মাএ ৮ বর্গ কিলোমিটার ছোট্ট একটি দ্বীপ সেন্টমার্টিন। আমার অবশ্য পছন্দ ছেঁড়াদিয়া ডাকতে। টেকনাফ থেকে ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এই দ্বীপ।কথিত আছে, বৃটিশ শাসনামলে এই দ্বীপটি ছিল জংগলে ভরা, সুযোগ পেয়ে বৃটিশদের থেকে ৮৮ রুপি দিয়ে দ্বীপটি কিনে নেয় ধন্যাট তোরা আলি শিকদার পরে আবার সেই একই দামে বিক্রি করে দেন ভাইরা ভাই মোহাম্মদ ইব্রাহিমের কাছে। এই ইব্রাহিম জংগল সাফ করে প্রথমে এখানে বসতি স্থাপন করেন। পর্যায়ক্রমে দ্বীপটিতে তিনি সব পেশাজীবীদের নিয়ে আসেন, সমান ভাবে জমি বন্টন করে দেন। সপ্তম শতকের আরব বনিকেরা দ্বীপটিকে বলতো "জাজিরা" বা বিরতির শ্হান, পালাক্রমে জাজিরা থেকে হয় জিঞ্জিরা। নারিকেল গাছের সারিসারি গাছ থাকাতে, পরে সবাই অবশ্য ডাকতে শুরু করে নারিকেল জিঞ্জিরা।এরপর বৃটিশ নৌবাহিনী বে অফ বেঙ্গলে জরিপ চালাতে এসে এর নাম পরিবর্তন করে রাখে সেন্টমার্টিন। হুমায়ূন আহমেদের বই দারুচিনি দ্বীপ অথবা প্যানারামা বাংলাদেশের ১৯৯৭ সালে ধারনকৃত ভিডিও দেখে যেতে ইচ্ছে হয়েছিল অনেকবার। কিন্তু বই বা ভিডিও দেখা কল্পনার সেন্টমার্টিন আর বাস্তবে দেখা নারিকেল জিঞ্জিরা আকাশ-পাতাল ফারাক। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক অর্থনৈতিক অবস্থা  বিবেচনায় সেন্টমার্টিন বা  "গোবরে পদ্মফুল" বললে ভুল কিছু হবে না। কি বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে? আচ্ছা! ১৯৯০ দিকে প্রকাশিত একটা ফিকংশনের একটা অংশ বলি। প্রিন্সেস ফিয়োনা নামে ছিল অসম্ভব সুন্দরী এক রাজকন্যা, দুধে-আলতা রং যারে কিনা আবার বন্দি করে রাখা হয়েছে আগ্নেয়গিরি লাভা দ্বারা পরিবেষ্টিত পরিত্যক্ত একটি রাজপ্রাসাদ এ। রাজপ্রাসাদ এর পাহারায় নিয়োজিত আবার নিয়োজিত বিশাল আকৃতির একটি  ড্রাগন। অসৌজন্যতা, সিন্ডিকেট, যেমন খুশি তেমন করা,‌ নৌংরা, দূষন, অপরিকল্পিত বর্ধনের মধ্য অসম্ভব সুন্দর সম্ভাবনাময় দ্বীপটিকে কে একটি গোষ্ঠী এভাবে গিলে খাচ্ছে বছরের পর বছর। ২০২২ সালের এমনি এক কাঁটাযুক্ত গোলাপ ধরার মত সেন্টমার্টিন ভ্রমনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরবো।

২০২২ এর শীতের শেষের দিকে ৫ বন্ধু ২ বড় ভাই মিলে রাতে ঢাকা থেকে রউনা দিলাম সেন্টমার্টিন এর উদ্দেশ্যে। নিজেদের ব্যাক্তিগত গাড়ি হওয়াতে কক্সবাজার এর মেরিন ড্রাইভ হয়ে  সরাসরি সকালে চলে গেলাম টেকনাফে। সকালের নাস্তা করে রওনা হবো জাহাজে করে সেন্টমার্টিন এর উদ্দেশ্যে। এটা আমার প্রথম সেন্টমার্টিন ভ্রমন, একদম নতুন অভিজ্ঞতা, আমার দুইটা বন্ধু অবশ্য আগে গিয়েছিল। যেখানে জাহাজ গুলো ছাড়বে মোটামোটি মাঝারি আকারের একটা ঘাট, যাত্রীদের বিশ্রামের জন্য তেমন কোন ব্যবস্থা নেই, মহিলা জন্য ওয়াশ রুমের পরিচ্ছন্ন কোন নেই। জাহাজগুলোতে  ঘাট থেকে উঠতে হয় একটার উপর আরেকটা দিয়ে। সমুদ্র পথে ২ থেকে ২.৫ ঘন্টার পথ জাহাজের টিকিট ভারা  আসা-যাওয়া সহ ১২০০ টাকা থেকে শুরু। জাহাজের সাইজ, ক্লাস আর পিক-সিজন অনুযায়ী ৩০০০ টাকা ও হয় টিকটি প্রতি। জি! হ্যাঁ! অনেক বেশি। ঢাকা থেকে বরিশাল নদীপথে সময় লাগে ৭ ঘন্টা ও চাঁদপুর ৪ ঘন্টা সর্বনিম্ন ভায়া ৪০০ ও ২০০ টাকা‌ পর্যায়ক্রমে। জাহাজের ওঠার পর দেখি পুরাতন কোস্ট গার্ডের ভাংগার জাহাজ গুলো কোন রকম মেরামত করে সার্ভিস দিচ্ছে‌। এর মধ্য ২ টা দেখলাম নদী পথে চলার লঞ্চ, যেগুলোরে আবার সাগরে চলাচল করছে। সোস্যাল মিডিয়াতে দেখবেন একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল, সেন্টমার্টিন থেকে ফিরে আসার পথে সমুদ্রের ঢেউ একটি নৌযান প্রায় উল্টে যাচ্ছিল। এইটাই নদী পথের সেই লঞ্চটি ছিল। যার ডিজাইন,সাইজ সমুদ্র চলার একদম উপযোগী না। জাহাজে ওঠেই দেখলাম সবাই গাঁদাগাদি করে সিট দখলে ব্যস্ত। জাহাজের ছাদের উপর টিনের চালা দিয়ে ছাউনি আর আলগা করে পাতা কিছূ চেয়ার। টিনের চালার গরম আর জাহাজ ছাড়ার পর বাম্পার দিয়ে উঠা কালো ধোঁয়ায় ছাই অসহ্য একটা অনুভুতি।


দুর্ঘটনা শিকার হওয়া ভিডিও লিংক


সবগুলো জাহাজ কিছু সময়ে মধ্য ঘাট থেকে রউনা হলো সেন্টমার্টিন এর উদ্দেশ্যে। সরু আঁকাবাঁকা নাফ নদী চিরে জাহাজ চলছে সাগরের দিকে। ইতিমধ্যে নদীর এক পাশে চোখে পড়লো বিখ্যাত মহেশখালী ঘাট আরো একটু যাওয়ার পর বার্মার বিখ্যাত মুন্ডু শহর‌। নাফ নদীর এক পাশটা বাংলাদেশ অন্য পাশটা মায়ানমারের। কিছু মাছ ধরার ট্রলার দেখা যাচ্ছে‌। সাগরের নীল জলরাশি দেখতে যতটাই নাই সুন্দর সাগরের বুকে জীবিকা নির্বাহ করা মনে হয় আরো কঠিন। জাহাজ ছাড়ার একটু পড় একঝাক গা়ংচিল কিচিরমিচির শব্দে জাহাজগুলোর পিছু ছুটছে। এমন দৃশ্য দেখে মুহুর্তের মধ্যে সকল ক্লান্তি দূর হয়ে গেল। সেন্টমার্টিন যাওয়া সকল পর্যটকদের যেন প্রকৃতির টানে গা়ংচিল গুলো অভ্যার্থনা জানাতে পিছনে ছুটে চললো। হাতে চিপস থাকলে "ছু" মেরে উরে নিয়ে যাচ্ছে গাংচিল গুলো। পরে জানলাম বন ও পরিবেশ দপ্তর থেকে নিষেধ আছে গাংচিল প্যাকেটজাত চিপস খাওয়ানো। প্রতি বছর অনেক পাখি নাকি মারা যায় এভাবে। অনেক পর্যটক বুঝে না বুঝে চিপস খাওয়াচ্ছ। আরো জনসচেতনতা প্রয়োজন ছিল আর যেহেতু সবাই পাখিকে খাওয়াতে পছন্দ করে কিছু স্বল্প মুল্যে কিছু প্যাকেটজাত খাবার বিক্রির ব্যবস্থা থাকলে মন্দ হতো না। ক্লান্তিময় আড়াই ঘন্টা ভ্রমণের পর অবশেষে দুর থেকে দেখা যাচ্ছে স্বপ্নের সেন্টমার্টিন। আর কিছু ক্ষনের মধ্যেই জাহাজগুলো ঘাটে ফিরবে। দুর থেকে সূর্যের খাঁ খাঁ আলোর মধ্য দ্বীপটি থেকে কিছুটা জ্যোতি বের হচ্ছে। একটু পড়েই  নামলাম সেন্টমার্টিনের একমাত্র জাহাজ নোঙর এর জেটি ঘাঁটে। আমাদের শহরের চিরা- চরিত ডিজাইনের ইট পাথরের একটি লম্বা সেতু! আচ্ছা সেন্টমার্টিন এর মতো একটি সুন্দর প্রবাল দ্বীপ ও কি ইট পাথরের এই বস্তি ডিজাইন ঘাট বানাতে হবে?  সম্প্রতি গুলশান, রমনায় পার্কে চমৎকার ডিজাইনের কিছু কাঠের সেতু বানানো হয়েছে। সেন্টমার্টিনে জলবায়ু আবহাওয়া,‌‌ সৌন্দর্য বর্ধনের কথা চিন্তা করে এমন কাঠের সেতু বানালো মন্দ হয় না।  



জাহাজের পিছু ছুটে চলা গাংচিল





এবার রিসোর্টে যাওয়ার পালা! সেন্টমার্টিনের ঘাট থেকে নেমে  ঠিক অপর প্রান্তে ছিল আমাদের রিসোর্ট। ওই প্লটের অধিনে অনেক বড় বিচ ছিল, এছাড়াও রাতে আড্ডা দেওয়ার জন্য বাঁশের বানানো মাচা, আউটডুর ডাইনিং,‌ ঝুলন্ত দোলনা এইতো! তো ঘাট থেকে ১ দেড় কিলো পথ, যেতে ইঞ্জিনচালীত ভ্যানে। এইটুকু রাস্তার জন্য ভাড়া নিল ৭০০ টাকা! কি ডাকাতি!!! সম্পন্ন সেন্টমার্টিন ছিঁড়ে গেছে পাথর কনক্রিটের তৈরি একটি রাস্তা। ঘাটের শুরুতেই মাছের বাজার। ট্রলারে করে মাছ এনে এখানে তুলা হয়, এরপর প্যাকেট ও বরফজাত করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। বিকালে পর্যটকদের জন্য এখানে বাজার বসানো‌ হয়। যারা সামুদ্রিক মাছ দিয়ে বারবিকিউ করতে চায় তারা এখান থেকেই নিয়ে যায়। দাম ও বেশ চওড়া। এরপর সারি সারি খাবার হোটেল, শুটকি আর বার্মিজ আচার দোকানপাটের পসরা‌। মুল রাস্তার পাশে চিপা চাপায় আধা কাঁচা পথ দিয়ে কিছু টিনের চালা দিয়ে তৈরি থাকার হোটেল‌। সেন্টমার্টিন জুড়ে অবকাঠামো গুলো জরাজীর্ণ একটি দরিদ্র জনপদের ন্যায়। সবকিছু এলোমেলো-অগুছালো  দেখতে খুব অসুন্দর‌। বুঝাই যাচ্ছে বানিজ্যিক ভাবে ব্যবসা চালু হওয়ার পর অপরিকল্পিত ভাবে বেড়ে উঠছে ঘর। কিছু ব্যাক্তি উদ্দ্যোগ তৈরি করা থাকার রিসোর্ট আর হোটেল ব্যাতীত‌। বাজারঘাট পর্যটন মৌসুমে খুবই ভীর থাকে আর অনেক বেশি নৌংরা‌ পর্যাপ্ত ডাপিং ব্যবস্থা নেই। এর মধ্যে মনোরম চোখে পড়লো শুধু সুপেয় জলাধার গুলো। পাথর দিয়ে বাধানো ছোট্ট পুকুরের পার গুলো দেখতে অনেকটা জাপানি জলাধারের মত। পুরা সেন্টমার্টিন জুরেই সারি সারি নারিকেল গাছ পথিমধ্যে দেখলাম কিছু মহিষ কাদামাটিতে গড়াগড়ি করছে। সরকারি অবকাঠামো বলতে একটি জিরনো সাইক্লোন সেন্টার, ছোট হাসপাতাল আর আর্মি ক্যাম্প‌। হ্যাঁ সেন্টমার্টিন এ ও আর্মি আছে। সন্ধ্যার পর একটা নির্দিষ্ট সময় টহল দেয়।


রিসোর্টে ঢুকলাম মুল পাকা রাস্তা শেষ হবার পর কিছুটা আধা কাঁচা চিপা রাস্তা আর অন্য কিছু হোটেলের মধ্য দিয়ে। প্রতি রুমের ভারা ৩০০০ টাকা, একটি ফ্যান আর মান্দাতের আমলের বাল্ব। কি একটা অবস্থা! যাউজ্ঞা খুদা লাগছে!!!!! রিসোর্টে থেকে গরম ভাত ডাইল আর আলু ভর্তা ওয়ার্ডার করা ছিল। দুপুরের খাওয়াটা ওইখানে করলাম।  সেন্টমার্টিনের হোটেল রিসোর্ট গুলো ব্যাটারি জেনারেটর দিয়ে চলে। ব্যাবহার করার জন্য পর্যাপ্ত পানির ও খুব অভাব। রিসোর্ট থেকে সমুদ্রের নীল জলরাশি গুলো মুহুর্তের মধ্যেই সকল ক্লান্তি দুর করে? সত্যিই এত সুন্দর স্বচ্ছ নীল পানি হয়?সারাদিন একটু জিরিয়ে সন্ধ্যায় বিচে গেলাম নতুন কিনা ফ্লোরাল শার্ট পড়ে। বাতাশের "শো শো" শব্দে সমুদ্রের বড় বড় ঢেউ গুলো আছড়ে তিরে এসে পড়ছে। লাল টকটকে সুর্যটা সমুদ্রের বিশাল নিলিমায় হারিয়ে যাচ্ছে‌। এরপর টুকটাক বাঁশের মাচায় বসে আড্ডা দিয়ে রাতে বাজারে গেলাম খাবার খাইতে। হোটেল গুলোতে বাহাড়ি রকমের পসরা সাজানো  সামুদ্রিক মাছ। "রূপচাঁদা, ভেটকি, কোরাল, পোয়া, সুরমা রিডা আরো কত কি!!!! দেশি স্টাইলে রান্না করা সামুদ্রিক মাছ খাইতে আমার তেমন‌ একটা ভাল লাগে না,‌তবে কোরালের রিভিউডা ভাল শুনে নিলাম একটা। সাথে শুঁটকি ভর্তা আর ডাইল। জমায়া একটা খাওন‌ দিলাম। প্রতি পিছ মনে হয় ১৫০ টাকা কইরা! সামুদ্রিক এলাকা! এত মাছ ধরা পড়ে, দাম তো আরো কম হওয়ার কথা আপনারা কি কন??????




রিসোর্টে কাটানো কিছু মুহূর্ত আর সমুদ্রের নীল জলরাশি।





সেন্টমার্টিন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা ছাড়া এক্টিভিটি করার তেমন কিছূই নাই। পরদিন সকালে সবাই মিলা গেলাম সমুদ্রে গোসল
করতে। সম্ভবত ভাটা চলতেছিল। এক দেড় কিলোমিটার দূরে পর্যন্ত প্রবাল গুলা দেখা যাচ্ছে। আমরা অনেক দুরে গেলাম, একটু পর পর ঢেউ এসে বাড়ি মারছে। যাক বিপদের কথা চিন্তা করে আর বেশি গেলাম না, আর সেন্টমার্টিন এ গোসল করা বেশ আন-প্লেজেনট। এই প্রবাল গুলোর উপর হাটা বেশ কষ্টসাধ্য আর ধারালো আবার অল্প পানিতে সাঁতার ও কাটা যায় না। দুপুরে‌ রিসোর্টে খাওয়া দাওয়ার পর বিকালে গেলাম জেটি ঘাট মাছ বাজারে। রাতে বারবিকিউ করবো? রিসোর্টের স্টাফরা সব করে দিবে আমরা শুধু মাছ আর মুরগি কিনা‌ দিবো। জেটি ঘাট যাইয়া একটা বড় দেইখা সুরমা মাছ নিলাম, সুরমা মাছের বারবিকিউ নাকি‌ অনেক মজা!!! বাজার থিকা মুরগী, কোকো এইতো! মুরগীর যেই দাম।! বাপ রে বাপ! সেন্টমার্টিন এর মুরগী মনে হয় সোনার ডিম দেয়?  ওহ হ্যা! জেটি ঘাট থেকে বোটে করে ছেড়াদিয়া যাওয়ার কথা ছিল,  এটা সেন্টমার্টিন এর কাছেই নাকি একটা দ্বীপ,‌ আমাদের যেতে একটু দেড়ি হয়ে যায়, বেশি সময় কাটানো যাবে না আর ফিরে আসতে হবে সন্ধ্যার আগে তাই আর যাওয়া হয় নাই। সেন্টমার্টিনে সন্ধ্যার পর কোন পর্যটকবাহী বোর্ট বা জাহাজ চলাচল করে। পুরো সন্ধ্যাটা তাই জেটি ঘাটেই কাটায়া‌। পাশে নৌঙর করে রাখা কত গুলো মাছের ট্রলার, সমুদ্রের বড় বড় ঢেউ গুলোতে দুলছে। অল্প বয়সী এক ছেলেকে দেখলাম বিড়ি টানছে আর জাল গুছাইতেছে। সমুদ্রে যায় হয়তো মাছ ধরতে।  কত এডভেনচার পুর্ন জীবন? ইস!! আমি যদি একদিন যাইতে পারতাম‌‌ গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে?????



জেটি ঘাটে কাটানো সময় তোলা কিছু ছবি।









বারবিকিউ আয়োজন

রাইতে চমলক্ক বারবিকিউ হইলো। নাচ,‌ গিটারে গান সবাই মিলে কিছু ক্ষন মাচাই শুয়ে রইলাম। ভাবছি রাতে মাচায় ই ঘুমামু,‌ মশার কোন‌ প্রকপ ই নাই, কিন্তু সমুদ্রের তীব্র বাতাস আর ঠান্ডায় কাপুনিতে ১০ মিনিট থাকা গেল না। পরের দিন ফিরে আসার পালা! ব্যাগ গুলো গুছিয়ে একটু বিচের গেলাম। অনেক দূরে পানি,‌ ভাটা চলতেছে প্রবাল গুলো রোদের আলোতে চিকচিক করছে, ঝকঝক রোদৌ উজ্জ্বল নীল আকাশ। অনেক ছবি তুললাম। আমার একটা একুয়াস্টিক একুরিয়াম আছে।কিছু প্রবাল নিয়ে আসলাম একুরিয়ামের জন্য। ছেঁড়া দ্বীপ গেলে ভাল হয়তো এইখানে আরো সুন্দর সুন্দর প্রবাল আছে। পরিশেষে যুক্ত করবো, কোন সন্দেহ নাই সেন্টমার্টিন অসাধারণ সুন্দর একটা দ্বীপ। বাংলাদেশের জলসীমায় এমন একটি দ্বীপ পাওয়া সত্যিই ভাগ্যর ব্যাপার। কিন্তু সেন্টমার্টিন কে নিয়ে আমার চাওয়া পাওয়া ছিল আরো বেশি। বাংলাদেশের জনসংখ্যা অনুপাতে পর্যটকের যে হার এবং উক্ত পর্যটন থেকে যে রেভিনিউ জেনারেট করা সঠিক পরিকল্পনা ও কিছু উদ্যোগ সেন্টমার্টিনকে অনায়াসে একটি বিশ্ব মানের পরিবেশ বান্ধব পর্যটন রুপান্তর করা সম্ভব‌‌।  কিন্তু দুঃখের বিষয় আমার প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা লগ্ন সেন্টমার্টিন ছিল,  ইয়াবা বদি, বিচ্ছু বাবুল পলাতক স্বৈরাচারের কিছূ স্থানীয় দোষর, প্রশাসনের মানুষকে জিম্মি করে টাকা উপার্জনের মাধ্যম। মোটামোটি ২০১০ এরপর থেকে একটা ভ্রমন পিপাসু জেনারেশন গড়ে উঠেছে যার ফলস্বরূপ সেন্টমার্টিন এর পর্যটন বিকাশ‌লাভ করেছে, তাই রুগ্ন জরাজীর্ণ, অব্যবস্থাপনা অপরিকল্পিত এই সেন্টমার্টিনকে পলাতক স্বৈরাচারের সিমবলিক নিদর্শন বলা যেতে পারে।




সেন্টমার্টিন কাটানো গোধূলি লগ্নে

সেন্টমার্টিন নিয়ে কিছূ রাজনৈতিক মিথ্যাচার:
পতিত স্বৈরাচার পলায়নের পর চাওর ওঠে, সেন্টমার্টিন কে আমেরিকার কাছে হস্তান্তর করা হবে। যেটি মুলত বাস্তব বহির্ভূত ধারাবাহিক আওয়ামী রাজনীতির মিথ্যাচারের একটি বহিঃপ্রকাশ। এই কল্প-কাহিনীর সুচনা করে বাংলাদেশর বাম সংগঠন গুলো আমেরিকা বিমুখ মনোভাব থেকে। পরবর্তীতে বেশ কিছু বছর ইহা নিয়ে কোন‌ আলোচনা না থাকলে শেখ হাসিনাকে ইহাকে রাজনৈতিক ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। কয়েকটি ভুয়া নির্বাচন এবং আমেরিকার সাথে স্বাভাবিক কুটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হওয়ার ফলস্বরূপ ওনি গৃহপালিত মিডিয়া দ্বারা এই মিথ্যাচারটি প্রকাশ করতে থাকেন। শেখ হাসিনার শাসনামলে থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা থেকে কি মনে হয়  "দিল্লির মসনদে বাংলাদেশর সার্বভৌমত্ব বন্ধক রেখে যিনি ক্ষমতায় বসেছেন আর  আমেরিকার মত সুপার পাওয়ার তার নিকট সেন্টমার্টিন চাইলে উনি দিতেন না!!! আমার তো মনে হয় সেন্টমার্টিন এর সাথে হাতিয়া ও সন্দীপে ফ্রি দিতেন ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য। আর ইতিহাস বলে সুপার পাওয়ার দেশ কখনো বাল্ফ করে না, তার চাওয়া-পাওয়া, স্বার্থ সে কোন‌ না কোন‌ ভাবে আদায় করে নেই। ২০২৪ শুরুতে ডোনাল্ড লুর বাংলাদেশ সফর এবং আগস্টে হাসিনার ভারতে তীর্থ যাত্রা তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। ;) সেন্টমার্টিন  যদি ঘাটি করার জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ কোন লোকেশন হইতো বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতার কোন এক মারপ্যাঁচে আমেরিকা তা আদায় করে নিতে। এছাড়া ভারত মহাসাগরের নজর দারি করার জন্য আমেরিকার দিয়াগো গার্সিয়াতে একটি নৌ ও বিমান‌ঘাটি আছে। জিওপলিটিক্যাল ও বানিজ্যক জাহাজ গুলোর নিরাপত্তার স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ রুট বিবেচনায় কোন সহান গুলোতে সামরিক ঘাঁটি বানানো উচিত তার ব্লু প্রিন্ট বৃটিশ নৌবাহিনী আঠারো শতকের দিকে করে যায়।


দিয়াগো গার্সিয়া। ভারত মহাসাগর মার্কিন ঘাঁটি।

সেন্টমার্টিন এর আয়তন ও অন্যান্য চর সহ ৪.৩ বর্গকিলোমিটার  অর্থাৎ ৪৩০০ হেক্টর। মার্কিন ঘাঁটি করার জন্য প্রয়োজন (কমপক্ষে ৪০,০০০ হেক্টর)। দ্বীপটিতে বসবাসরত জন সাধারণ এবং অবকাঠামো বাদ দিয়ে অবশিষ্ট ভুমির আয়োতন‌ কত?
দ্বীপটির মৃত্তিকা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, এর উপরিভাগে বালু থাকলেও অনধিক ৩ ফুট নিচেই মূলত প্রবাল ও শৈবাল স্তর। এ-কারণে ভবিষ্যতে এই দ্বীপের অস্তিত্ব নিয়েই ভূতাত্ত্বিকরা শংকিত। এমন দুর্বল ভূমিতে কিভাবে সি-১৩০ কার্গো বিমান ১,৫৫,০০০ পাউন্ড ফুল লোড হয়ে ওঠানামা করবে? এই আয়তনের দ্বীপে কিভাবে ১০-৪০০০০ সৈন্য থাকবে তাদের অফিস, আবাসন, অস্ত্রাগার , মিসাইল লঞ্চার ও অন্তত ২ ডজন যুদ্ধ বিমান নিয়ে?


বর্তমান প্রেক্ষাপট:
তবে আশার খবর হচ্ছে, বর্তমানে সরকারের জলবায়ু বিষয়ক উপদেষ্টা এবং বিশ্ব বরেণ্য পরিবেশবিদ সৈয়দা রিজওয়ানা হক সেন্টমার্টিন এ ভ্রমন সিমিত করেছেন। কিছু স্বার্থান্বেষী হোটেল-রিসোর্ট মালিক ও অতি লোভী স্থানীয় বসবাসকারীদের বাধা উপেক্ষা করে সেন্টমার্টিন রক্ষায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। ১০০ টন  বজ্য  ক্ষতিকর প্লাস্টিক অপসারন সহ  দ্বীপটিতে প্রাকৃতিক জীব-বৈচিএ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। গ্রীস সহ ইউরোপীয় অনেক দেশ স্পর্শকাতর এমন দ্বীপগুলোতে বছরজুড়ে পর্যটক সংখ্যা সীমিত করে দেয়। আশা করে হচ্ছে, অতি শীঘ্রই সেন্টমার্টিন অবৈধ ভাবে বেঙাচির মত গড়ে উঠা হোটেল রিসোর্ট গুলো ভেঙ্গে পরিকল্পিতভাবে সাজানো হবে আমাদের এই একমাত্র প্রবাল দ্বীপটিকে। সেন্টমার্টিনের বর্তমান অবস্থা জানতে দেখতে পারেন নিচের দেওয়া প্রতিবেদনটি।



তথ্যসূত্র:
ছবি নিজের তোলা ও সর্বশেষে টি গুগল থেকে।
ভুমিকার কিছু অংশ পেনোরামা বাংলাদেশ থেকে নেওয়া। চমৎকার ভয়েস ওভারের সাথে ১৯৯৭ সালে ধারন করা পুরো তথ্য চিত্রটি নিচের ভিডিওতে দেখতে পারেন।


এছাড়া পড়তে পারেন ঢাকা পোস্ট এর এই কলামটি।
|সেন্টমার্টিন নিয়ে সন্দেহ ও তার বাস্তবতা।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১১:৪২
২৪টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানুষের টাকা দিয়ে ইসলামি ব্যাংকগুলো কি জুয়া খেলে?

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:০৫



ইসলামি শরিয়া ভিত্তিক দেশের পাঁচ পাঁচটি ইসলামি ব্যাংকের আজ বেহাল দশা, তারা গ্রাহকের টাকা ফেরৎ দিতে পারছে না। সবগুলো ব্যাংকই এখন দেউলিয়ার পথে, বাধ্য হয়ে সরকার এই পাঁচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বি ডি আর বিদ্রোহ ও পিলখান হত্যাকান্ডের কিছু অপ্রাকাশিত সত্যঃ (পর্ব ০২)

লিখেছেন মেহেদী আনোয়ার, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৪৭

বিডিআর এর ডিজি নিহত হয় সকাল সাড়ে দশটায়। ভারতীয় টিভি চ্যানেল 'চব্বিশ ঘন্টা' বিস্ময়করভাবে অতি অল্পসময়ের মধ্যে বিডিআর ডিজি ও তার স্ত্রী নিহত হবার সংবাদপ্রচার করে সকাল এগারটায়। ভারতের আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মানুষ মানুষকে কীভাবে এত অপদস্ত করে এই ব্লগে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৪

আমি তো কারও সাতেও নাই পাঁচেও নাই। এত সময়ও নাই মানুষকে ঘাঁটার। ব্লগের ব্লগারদের সম্পর্কেও তেমন কিছু জানি না। তবে পোস্ট পড়ে কিছুটা আন্দাজ করা যায় -কে কী রকম। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ কি শিখিয়েছে?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:০৬






অপমান, অপদস্থ থেকে বাঁচার উপায় শিখাইনি? ওস্তাদ মগা শ্যামী পাহাড়ে বসেও এসবের সমাধান করতে পারে, আপনি সামান্য অসুস্থতার জন্যও ব্লগে মিলাদ দেননি, দোয়া করেছেন কার জন্য? খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৮

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

অন্তর্জাল থেকে নেওয়া সূর্যোদয়ের ছবিটি এআই দ্বারা উন্নত করা হয়েছে।

ইসলামের পবিত্র আলো ওদের চোখে যেন চিরন্তন গাত্রদাহের কারণ। এই মাটি আর মানুষের উন্নয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×