
ভাইকিংস! ইউরোপ লুটতরাজ করা এক জলদস্যুর দল। ভাইকিংসরা মুলত স্ক্যান্ডিনেভিয়া বর্তমান(ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড) এ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনগোষ্টিতে বিভক্ত হয়ে বসবাস করা একটি জাতি। মক্কায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা হওয়ার ২০০ বছর পর মানে অষ্টম শতাব্দিতে ভাইকিংসরা জলপথে ইংলান্ড আবিষ্কার করে। তৎকালীন ইংল্যান্ড কিছুটা সম্পদশালী হওয়ায় ভাইকিংসরা জলপথ দিয়ে এসে ইংল্যান্ডের চার্জ গুলো লুটপাট করতো। এ্যাংলো-সেক্সন যুগে ইংল্যান্ড কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যে বিভক্ত হয়ে শাসন করা হতো, যা পরে খুব সম্ভবত রাজা এথ্যালস্টোন সমগ্র ইংল্যান্ডকে এক করে শাসন করা শুরু করে। অষ্টাদশ শতাব্দি থেকে ১৪০০ সাল পর্যন্ত ইতিহাসবিদরা ভাইকিংস যুগ বলে থাকে। ভাইকিংদের জীবন-যাপন ও আচার-ব্যবস্হা ছিল খুবই নির্দয় এবং নিষ্ঠুর। অবাধ যৌন্যতা, ঈশ্বরের নামে নর হত্যা, মদ, কালো যাদু, লুণ্ঠন ছিল ভাইকিং সংষ্কৃতির একটি অংশ। মার্ভেল সিরিজের হাতে হাতুরে নিয়ে যেই থরকে আপনারা চিনেন সেই “থর” ছিল ভাইকিংদের দেবতা। ভাইকিংদের অবশ্য ঊনবিংশ শতাব্দীতে জনপ্রিয় করে তোলেন বৃটিশ লেখক জনস গুইন তার দ্যা ভাইকিং উপন্যাস দিয়ে। ভাইকিংস জনপ্রিয়তা সমগ্র ইউরোপ-আমেরিকা ছাড়িয়ে পৌছে যায় ভারতবর্ষে ও। ৯০ দশকে "বোম্বে ভাইংকিং" নামে ইন্ডিয়ান একটি মিউজিক ব্যান্ড ও ছিল। ওই যে-
"ছোর দো আঁচল জামানা ক্যেয়া কাহেগা" গানটা রিমেক

প্রথমে, ইংল্যান্ড দিয়ে লুটপাট শুরু করলে ও পরবর্তীতে আরো সমৃদ্ধশালী ফ্রান্স, পর্তুগাল এবং স্পেন এসে বেপক আক্রমণ চালায়। তৎকালীন পর্তুগাল এবং স্পেন উম্মায়া খেলাফতের অন্তরভুক্ত হওয়ায় উম্মায়রা ভূমধ্যসাগরে ভাইকিংদের আক্রমণ গুলো বন্ধ করে দেয়। আর অন্তত ঠান্ডার কারনে স্ক্যান্ডিনেভিয়াতে চাষাবাদ এবং জীবন-যাপন কিছুটা কঠিন হওয়ার ভাইকিংসরা ফ্রান্স, ইংল্যান্ডের এবং আয়ারল্যান্ড কিছু অংশ এসে বসবাস করা শুরু করে।পরবর্তীতে ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড গড়া বানিজ্যক রুট, সামুদ্রিক পোর্ট, নতুন শহর এবং নেভাল আর্কিটেকচারের জ্ঞান দিয়ে ভাইকিংরা ইউরোপকে অনেক সমৃদ্ধ করে। ভাইংকিসদের বানানো জাহাজগুলোর ডিজাইনের কিছুটা আধুনিক ও ব্যাতিক্রম হওয়ার কারনে উত্তাল সাগর অনায়াসে পাড়ি দিতে পাড়তো। পেগান রীতিনীতি অনুসরন করা ভাইকিংসদের ধর্ম থেকে খ্রিষ্টধর্ম কিছুটা উন্নত এবং সহিষ্ণু হওয়ায় ভাইকিংসরা খ্রিষ্টধর্ম গ্রহন করে সময়ের সাথে সাথে মুলদ্বারার ইউরোপীয়ানদের সাথে মিশে যায়। উত্তাল আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে ভাইকিংসরা প্রথম আইসল্যান্ড আবিষ্কার করে পরবর্তীতে কানাডা যায় বলে কিছু প্রমাণ পাওয়া যায়। ভাইকিংদের একটি নির্মম ক্রিয়া বা কাল্টের কথা বলি-

দ্যা ব্লাড ঈগল: খুব ভয়ংকর কোন অপরাধের সাজা দিতে হলে ভাইংকিসরা দ্যা ব্লাড ঈগল নামক ক্রিয়া করতো। জনতার সামনে বানানো একটি স্টেজে অপরাধীকে প্রথমে হাতের দুই পাশ শক্ত করে বেঁধে দাঁড়া করিয়ে রাখতো। এরপর দাঁড়ালো একটি ছুরি দিয়ে পিঠের মধ্য(মেরুদন্ড কোমর থেকে ঘাড় পর্যন্ত) ছিঁড়ে চামড়াটা দুই পাশে ভাজ করে রাখতো। স্পাইনগুলো কেটে শরীরের উপরে উঠিয়ে যেটি কিনা দেখতে ঈগল পাখির মতো। দেহকে সজ্ঞান ও আরো কষ্ট দেওয়ার জন্য চিড়ে যাওয়া অংশে লবন ছিটিয়ে দেওয়া হতো। সর্বশেষ, ফুসফুস দুইটা কেটে চিঁড়ে যাওয়া দুইটা হাঁড়ের উপর গেঁথে রাখতো। প্রথমে দিকে এটিকে ভাইংকিস দেবতা ওডিনের সম্মানে উৎসর্গ করা হলে ও পরবর্তীতে সাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। ওডিন ভাইকিংদের প্রধান দেবতা, তারা বিশ্বাস করতো যেসব ভাইকিংস যুদ্ধে মারা যাবে, মৃত্যুর পর তাদের স্থান হবে "ভালালা" নামক একটি হল রুমে। যেখানে তারা বসে ওডিনের সাথে মদ্য পান, উৎসবে, খেলাধুলায় মত্ত থাকবে।
ভাইকিংসদের জীবন-কাহিনী নিয়ে Netflix এ দ্যা ভাইকিংস নামে একটি সিরিজ ও আছে। একটি কাহিনীর মধ্য চমৎকার ভাবে ভাইকিংস আচার-ব্যবস্হা তুলে ধরা হয়েছে। সিরিজটির রেটিং ও কিন্তু ৯৮। খ্রিষ্টান ধর্মের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ থাকায় সিরিজটি ইউরোপে খুব বেশি একটা আলোড়ন তুলে নী তবে এশিয়ার অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অবশ্য ডয়িং রুমে বা টিভিতে বসে না দেখাই উওম। ভাইকিংদের অবাধ যৌন্যতার চিএ সিরিজটিতে নিখুঁত ভাবে তুলে ধরেছে।
ছবি: প্রিন্টারেস্ট থেকে,
ইউটিউব ভিডিওতে: দ্যা ব্লাড ঈগল রিচুয়াল।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:১২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



