ভারতের পুনে থেকে কলকাতা আসবো! সময় ২০১৮, সেপ্টেম্বরে মাস। চলে আসলাম পুনে রেল স্টেশন এ। বিশাল বড় রেল জংশন; কয়েক রাজ্যের ট্রেন এখানে এসে অদল-বদল হয়। প্রথম ভারত সফরে গোয়া থেকে পুনে হয়ে কলকাতা আসছিলাম। সেবার প্রপার রিসার্চ না থাকায় অর্থ সংকটে পুনে থেকে কলকাতা হাওরা দুরন্ত এক্সপ্রেসের সেকেন্ড ক্লাস করে আসতে হয়েছে। আহ! কি দুর্বিসহ সেই জার্নি? শুনলে এখন ও 'গা শিউরে' উঠে। যাক এবারে আর সেই ভুল করলাম না।

পুনে এসেছিলাম একটা কাজ+ঘুরাঘুরি। কলকাতা থেকে আসছি বাই এয়ারে। পুনে খুবই সুন্দর চমৎকার পরিকল্পিত ইকোফ্রেন্ডলি একটি শহর; রাস্তার ধারে সারি সারি সবুজ গাছ। শুধুই তাই না, পুনেতে মাষ্টার কার্ড সহ মাল্টিন্যাশনাল অনেক কোম্পানির অফিস দেখে বেশ অবাক হয়েছি। ছিল স্টারবাক্স সহ অন্যান্য ইন্টারন্যাশনাল ফুড ও ফ্যাশন চেইন ও। পুনে এয়ারপোর্টে ও ছিল শহরের খুব কাছেই। অটো তে হোটেল পর্যন্ত ভাড়া মনে হয় ৪০ কি ৬০ রুপী। মুসলিম বয়স্ক ড্রাইভার, মাথায় হিন্দি ছবির আলী ভাইয়ের মত টুপি। তখন একটু মানুষিক ডিস্টার্ব ছিলাম আর একটু পর পর সিগারেট ধরাতাম। হোটেল এ চেক ইন করে সেই অটো দিয়েই সিগারেট কিনতে গেলাম। মালবরো গোল্ড ৪০০ রুপির কাছাকাছি দাম নিল, ভারতে সিগারেট এর দাম অনেক বেশি। সেখানকার বেশিরভাগ মানুষ খায় "পান মসলা" যারা বিড়িখোড় তাড়া ও খায় গোল্ড ফেল্ক ৪০ রুপি প্যাকেট। কলকাতার অবস্থা আরো ভয়াবহ; সেখানে পাতার বিড়ি ও চলে। অটো ড্রাইভার আমার থেকে নিয়ে একটা সিগারেট ধরালো।

পুনেতে তখন গনেশ পুজা চলছিল। হোটেলের বাইরে রাস্তায় বিশাল এক গনেশ প্যান্ডেল। সারারাত ঢোল ব্যান্ড পার্টি বাজিয়ে পোলাপান যে কি উৎসব আর নাচানাচি করলো!!! কি যে বিভৎস আওয়াজ বলার মতো না! তাঁদের পুজার আয়োজন, আনন্দো দেখলাম অন্য লেভেলের; মানুষিক ভাবে ডিস্টার্ব থাকায় যে একটু নাচানাচি করবো, ওই ইচ্ছাটা আর হচ্ছিলো না। হোটেলে রুমের টিভিতে কিছুক্ষণ বাংলাদেশ- ভারতের সেই ঐতিহাসিক এশিয়া কাপের ফাইনাল ম্যাচটা দেখলাম। পুনেতে প্রথম ব্রেকফাস্টে দোসা খাইছি; তেমন আহামরি কিছু না!




ফিরে আসবো! ফাষ্ট ক্লাস এসি কম্পার্টমেন্ট বসলাম, মোটামোটি সবটাই খালি। আমারা সাথে বসলো কিছু ভারতীয় জাওয়ান। এদের পোস্টিং সম্ভবত কলকাতায়। চমৎকার আলাপচারিতায় পরিচয় হলো এদের সাথে। জাওয়ানদের রেলের টিকিট অনন্যা সরকারি অনেক কিনাকাটায় সরকারী ভৌতুকি দেওয়া হয়; কোন প্রকার জিএসটি বা ট্যাক্স কাটে না। আরো জানতে চাইলাম যারা কাশ্মীর সহ ঠান্ডা বা অন্যান্য ওয়্যারজোন ডিউটি করে তারা ও কি সমান সুযোগ সুবিধা ভোগ করে নাকি? তারা জানালো না!!! এই সমস্ত এলাকায় কর্মরত জাওয়ানদের লাইফ রিস্কের মতো বেতন ও সুযোগ-সুবিধা ও কয়েকগুণ বেশি। আলাপচারিতায় একজন কইলো আমার কাছে ইউএস ডলার আছে কিনা? সে জীবনে ডলার দেখে নাই। মানিব্যাগ থেকে অবশিষ্ট থাকা ৫০ ডলারের একটা নোট দেখাইলাম তারে। আরেক স্টেশন এক ফ্রেন্চ সলো ট্রাভেলার সাথে ও পরিচয় হইলো।


ভারতের রেল বা প্লাটফর্ম বিড়ি খাওয়া নিষেধ; অনেক টাকা ফাইন করে শুনছি। আমি সহ ভুটানের দুই পুলিশ লুকায়ে ট্রেনের ওয়াশ রুমে বিড়ি খাইতাম। ভুটানীরা আসছে ট্রেনিং নিতে; তাঁদের পুলিশরা নাকি ভারতেই ট্রেনিং করে। এসি কেবিন আরামদায়ক জার্নি হওয়ায় ২৮ ঘন্টার লম্বা পথ বেশ স্বস্তিতে চলে এলাম। আর হ্যাঁ!! ট্রেনের ফাষ্ট ক্লাস এ টিকিটের সাথে খাবার ফ্রি। মান বেশ ভাল! নামার কয়েক ঘন্টা পুর্বে স্টাফরা সবাই মিলে বকসিস নেয় আর কি?
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


