ভেতরে তখনো অনেক মানুষ...
গত শনিবার (২৬ অক্টোবর) ধানমন্ডির এক বহুতল ভবনে (১) আগুন লেগে ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে একজন মারা গেছেন। যেহেতু মাত্র একজন মারা গেছেন, এবং যেহেতু মৃত নারী একজন গৃহকর্মী ছিলেন, তাই এই বহুতল ভবনের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য হচ্ছে না। অথচ সাত মাস আগে এফ আর টাওয়ারে আগুন লাগার পর খুব হৈচৈ হয়েছিল। কারণ তখন ২৬ জন মানুষ মারা গেছিলেন, যাদের মৃত্যুর একমাত্র কারণ ছিল ভবনে অগ্নি নিরাপত্তার অভাব। তখনই প্রথম জানা গেছিল, রাজধানীর অভিজাত এলাকায় কাঁচ ঘেরা সুন্দর এই দালানখানিতে অগ্নি নিরাপত্তার কোন ব্যবস্থা ছিল না, এটা ছিল আসলে একটা মৃত্যু কূপ। জানা গেছিল, ঢাকা শহরের অধিকাংশ ভবনই এমন মৃত্যু কূপ হিসেবে তৈরি হয়েছে।
নানা অভিযোগের মুখে রাজউক চেয়ারম্যান তখন ঘোষণা দিয়েছিলেন, ঢাকা শহরের সমস্ত বহু তল ভবনগুলো ( দশতলা বা তদূর্ধ্ব) পরিদর্শন করে তার নিরাপত্তা ত্রুটি নির্ণয় করবে রাজউকের ২৪টা টীম। যেসব ভবনে অগ্নি সিঁড়ি, অগ্নি সতর্কতা ও নির্বাপণ ব্যবস্থা ইত্যাদিতে কোন ত্রুটি পাবেন, সেসব ভবনের মালিককে প্রথমে নোটিশ দেবেন, তারপরও ত্রুটি না সারালে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে, অর্থাৎ বহুতল বাড়িগুলোতে আগুন যেন না লাগে, এবং লাগলেও যেন প্রাণহানি না ঘটে তার ব্যবস্থা করা হবে। ঢাকায় এমন বাড়ির সংখ্যা ৩০০০/৪০০০ মাত্র, তাই এই জরীপ কাজ সম্পন্ন হল তুরন্ত গতিতে, মাত্র সাত দিনে। (যদিও গৃহায়ন ও গণপূর্ত অধিদপ্তর ১৫ দিন সময় দিয়েছিল)। জরীপ শেষ হল ৭ই এপ্রিল, তারপর প্রায় সাত মাস কেটে গেছে; জানা যায়নি এই শহরে এফ আর টাওয়ারের মতো ভবন আর কয়টা আছে...
ধানমন্ডির ১৪ তলা যে বাড়িটিতে আগুন লাগলো, মানুষ মারা গেল, সেটি কি রাজউকের জরীপে ছিল! রাজউক বাড়িটির অগ্নি নিরাপত্তা নিয়ে কি বলেছিল! আদৌ জরীপ করেছিল?
শুধু এটা না, রাজধানীর কোন ভবনেরই অগ্নি নিরাপত্তা রাজউক আসলে পরীক্ষা করেনি! রাজউকের এই জরীপের কাজকে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা বলছেন লোক দেখানো, প্রতারণামূলক। কারণ এই জরীপের দলগুলোতে কোন বিদ্যুৎ, ভূমিকম্প, নির্মাণ এবং অগ্নি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ রাখা হয়নি। (২)
বিশেষজ্ঞদের অভিযোগের পর রাজউকের কর্মকর্তারা বলছেন, জরীপের উদ্দেশ্য ছিল বিল্ডিং কোড মেনে বাড়ি বানানো হয়েছে কিনা তা যাচাই করা; অর্থাৎ কোন বাড়িতে নকশার বাইরে তলা বাড়ানো, পার্কিংয়ে ঘর তোলা এসব হয়েছে কিনা তা যাচাই করেছেন এই ২৪ দল! অথচ এটা নতুন করে যাচাইয়ের কোন দরকারই ছিল না! গতবছর জানুয়ারি মাস থেকে অগাস্ট মাস পর্যন্ত করা এক জরিপেই দেখা গেছে ২ লাখ ৪১০৬ টি ভবনের মধ্যে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬২৫ টি ভবন নির্মিত হয়েছে নিয়ম ভঙ্গ করে, অর্থাৎ দুই-তৃতীয়াংশ ভবনই ত্রুটিযুক্ত; হয় নকশা মেনে নির্মাণ করা হয়নি অথবা অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। সাত তালা বা তার উঁচু ভবনের জন্য ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক, কিন্তু ফায়ার সার্ভিস থেকে পাওয়া তথ্যনুযায়ী দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ভবনের অগ্নি নিরাপত্তা ছাড়পত্র নেই!! এফ আর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডের পর ফায়ার সার্ভিস দেখেছে, বনানী সুপার মার্কেট, হোটেল সুইট ড্রিম, হাদী টাওয়ারসহ কামাল আতাতুর্ক এভিন্যুর অধিকাংশ বাড়িতেই অগ্নিকাণ্ড থেকে বাঁচতে কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এই ভবনগুলোর সম্পর্কে রাজউক নিশ্চুপ!
বোঝাই যাচ্ছে রাজধানীবাসী আমরা বেশিরভাগই আগুনে মরার ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছি; আগুনে পুড়ে বা ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে মৃত্যু। যেমন আমি থাকি নয়তলায় ফ্ল্যাটে, বাড়ির পেছনের অংশে। এই বাড়ির তিনপাশেই অন্য বাড়ি। সবতলায় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র আছে, কিন্তু বেশিরভাগই ডেট এক্সপায়ার্ড, তাছাড়া কেউই জানেই না কি করে এগুলো ব্যবহার করতে হয়। জরুরী নির্গমন সিঁড়ি বলে একটা সিঁড়ি আছে, (বিল্ডিং কোড মানার কথা বলে বানানো হয়েছে) সেটা একতলায় ৫ ফিট চওড়া কিন্তু ৪ তলা থেকে হয়ে গেছে ২ ফিট। এই সিঁড়িতে বিভিন্ন ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা অদরকারী জিনিসপত্র জমা রাখেন। যদি আগুন লাগে, দাহ্য পদার্থ দিয়ে ভরা এই সরু সিঁড়ি জ্বলতে থাকবে, নামা যাবে না। আরেকটা যে বড় সিঁড়ি আছে, সেটা দিয়ে নামারও উপায় থাকবে না; সেটাও তখন হবে গনগনে চিমনি! কারণ ধোঁয়ায় থাকা বিষাক্ত কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড, আর জলীয়বাষ্প বাতাসের চেয়ে হালকা হওয়ায় সবসময় উপর দিকে উঠার পথ খুঁজতে থাকে, পেয়ে যায় সিঁড়িকে! এজন্যই দমকল বাহিনীর মতে, আগুনে পোড়ার চাইতে বেশি মৃত্যু হয় ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে। ঘরেই বসে থাকব? তিন দিকের বাড়ির চিপা দিয়ে দমকলের গাড়ি ঢুকতে পারবে না, তাও ধরলাম কেউ একজন নীচে থেকে ৮০ ফিট উঁচু মই লাগালো, অথবা আমার জন্য হেলিকপ্টার থেকে একটা মই নামানো হলো, কিন্তু তাও বের হতে পারব না; কারণ আমার বাসার বারান্দা গ্রীল দিয়ে খাঁচার মত বন্ধ, যেভাবে ঢাকার বেশিরভাগ বহুতল বাড়ির বারান্দা গ্রিল দিয়ে বন্ধ থাকে।
বলতেই পারেন, শুধু শুধু বাড়িতে আগুন লাগবে কেন! আসলে আগুন কবে, কেন, কিভাবে লাগবে সেটা আগে থেকে
বলা যায় না। ধানমন্ডিতে যে আগুন লেগেছিল, সেটা শর্ট সার্কিট থেকে। জাপান গার্ডেন সিটিতে আগুন লেগেছিল জ্বলন্ত সিগারেটের থেকে; একটা খালি ফ্ল্যাটে কাঠের কাজ হচ্ছিল। কোন একজন মিস্ত্রি সিগারেট ঠিকমতো নেভায় নি, তারপর কাজ শেষে চলে গেছে... সেটা থেকেই আগুন, দমকল আসার আগেই ধোঁয়া, সেই ধোঁয়ায় সিঁড়িতে মারা গেলেন ৭ জন। কখনো তড়িৎ সামগ্রী সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণেও অনেকেই ভুল সংযোগ নেন, ফলে শর্ট সার্কিট হয়। আবার আজকাল নতুন তৈরি বাড়িগুলোতে দেখা যায়, বিভিন্ন তালায় ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডারগুলো একতলায় লাইন দিয়ে রাখা। এগুলো থেকেও আগুন লাগতে পারে।
আগুন থেকে বাঁচার জন্য অবশ্য বাংলাদেশ জাতীয় ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, বাস্তবে যার কিছুই মানা হয় না খরচ কমানোর জন্য। বিধিমালায় বহুতল বাড়ির অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে:
১) সমস্ত বাড়িতে তাপ নির্ণায়ক, আগুন, ধোঁয়া নির্ণায়ক যন্ত্র বসাতে হবে। যদি কোথাও তাপমাত্রা ৬২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের উপরে উঠে, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্প্রিংকলার চালু করার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
২) যথেষ্ট পরিমাণ অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ফার্স্ট এইড ব্যবস্থা এবং অগ্নি নির্বাপনের দক্ষ কর্মী রাখা অত্যাবশ্যকীয় করা হয়েছে এসব ভবনে।
৩) সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়েছে জরুরী নির্গমন ব্যবস্থা বা ফায়ার এক্সিটের ওপর। এটা একটা সিঁড়ি, কিন্তু দেয়াল ঘেরা এবং অগ্নি নিরোধক দরজা দেয়া থাকবে। আগুন আর ধোঁয়ামুক্ত থাকার জন্য এই সিঁড়িতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকবে (৩)
এই বিধিমালায় বলা আছে, কোন ভবন নির্মাণের পর ফায়ার সার্ভিসসহ ১১টা দপ্তরের ছাড়পত্র পেলে রাজউক অকুপেন্সি সার্টিফিকেট দেবে। এটা ছাড়া ভবন ব্যবহার বা বসবাস করা যাবে না। এই বিধিমালা পাশের পরে রাজউক ৪০,০০০ ভবন নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে, যেগুলোর মধ্যে মাত্র ১৬২ টিতে এ সনদ আছে!! এই গাফিলতির বিষয়ে রাজউকের কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি! (৪)
রাজউক যে কেবল শুধু এভাবেই বিধিমালা লঙ্ঘন করে মৃত্যুকূপ তৈরিতে সহায়তা করছে তা না, তারা অনেক নিরাপদ এলাকাকে দমকলের গাড়ির জন্য অগম্য করে তুলেছে। যেমন ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় পর্যাপ্ত রাস্তাসহ এক বিঘার প্লটগুলো এমনভাবে করা হয়েছিল, সেখানে দমকল পৌঁছাতে কোন অসুবিধা ছিল না। কিন্তু এখন এসব প্লটের অনেকগুলোতে একাধিক বহুতল বাড়ি উঠেছে; প্লটের একপাশে সরু রাস্তা করে পেছনের বাড়িতে পৌছাবার ব্যবস্থা। সেই সব বাড়িতে ছোট গাড়ি পৌঁছাতে পারলেও দমকলের গাড়িরা পৌঁছাতে পারবে না। একটা সুন্দর আবাসিক এলাকাকে এভাবে বিপজ্জনক করে তোলার দায় ১০০% রাজউকের। এছাড়া রাজউকের অনুমোদন দেয়া বাড়িগুলোর ডিজাইনও বিপজ্জনক; ইদানিং নির্মিত সব বাড়ি হয় দুধরনের: (১) সরু বারান্দায় গ্রীলের খাঁচা দেয়া আবাসিক ভবন (২) আগাগোড়া কাঁচে মোড়া বানিজ্যিক ভবন। বাণিজ্যিক ভবনগুলোর এই কাঁচগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ। আগুন লাগলে বা ভূমিকম্প হলে এই কাঁচ বড় বড় টুকরা হয়ে ভেঙে পড়ে বিপদ ঘটাতে পারে। এই কাঁচ হবার কথা অগ্নিসহ, যা বড় বড় টুকরা হয়ে না ভেঙে গুঁড়া গুঁড়া হয়ে ভাঙ্গবে, যেমনি ভাবে ভাঙ্গে গাড়ির বা ওভেনের কাঁচ। অগ্নিসহ কাঁচ না লাগিয়ে বিপজ্জনক কাঁচ লাগানোর অনুমতি রাজউক কেন দিল? বোঝা খুব কঠিন কিছু না!
এই কাঁচের বাক্স টাইপ ভবনগুলোর ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা হয় খুবই খারাপ, শুধু এই ভেন্টিলেশনের অভাবের কারণে এসব ভবনে আগুন লাগলে নেভানো কঠিন হয়ে যায়। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় শপিং মল বলে খ্যাত বসুন্ধরা শপিং মলে সাত বছরে চারবার আগুন লেগেছে- ২০০৯ সালের ১৩ মার্চে,( সাত জন হত, আহত শতাধিক) ২০০৯ এর আগস্টে, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর আর ২০১৬ এর আগস্ট। এখানে যেমন অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল, তেমনি প্রশিক্ষিত বাহিনীও ছিল অগ্নি নির্বাপনের জন্য। কিন্তু তাও আগুন ছড়িয়ে যাবার কারণ হিসেবে ভেন্টিলেশনের অভাবকে দায়ী করেছে ফায়ার সার্ভিস।
আবাসিক আর বাণিজ্যিক ভবনের পর হাসপাতাল গুলোর অবস্থা দেখি! বেসরকারি কয়েকটা হাসপাতালে দেখেছি এমন জরুরি নির্গমন সিঁড়ি ঘর আছে, ভেতরে অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জামও আছে। সত্যি সত্যি বের হবার ব্যবস্থা আছে কিনা সেটা জানতে পারিনি। সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে ইনস্টিটিউট অফ নিউরো সাইন্সে আমি যাই। এই বহুতল ভবনের মাঝখানে দেখি অদ্ভুত ভাবে কিছুটা ফাঁকা যায়গা; সেখানে দেয়ালে কিছু অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম লাগানো। দেখে বুঝলাম এখানে জরুরী নির্গমন সিঁড়ি হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু হয়নি...
এই হাসপাতাল দেখে রাজউকের ২৪ দল কি ব্যবস্থা নিল, বড় জানতে ইচ্ছা করে!
No one killed Jessica- সাত মাস পর এখন মনে হচ্ছে এফ আর টাওয়ার অগ্নিকাণ্ড বলে কিছুই হয়নি। তবু পুরনো কিছু কথা মনে পড়ে যায়। যেমন এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের পর পর পূর্তমন্ত্রী স ম রেজাউল করিম বলেছিলেন,
"আপাত অবস্থায় আমার নিকট প্রতীয়মান হয়েছে যে, দায়িত্ব অবহেলার কারণে এই মানুষগুলির জীবন গিয়েছে। কারও দায়িত্বের অবহেলার কারণে যদি কোনো মানুষের মৃত্যু হয়, সেটাকে দায়িত্বে অবহেলাজনিত কারণে হত্যাকান্ড হিসেবে গন্য করার সুযোগ রয়েছে। আমরা প্রাথমিক অনুসন্ধানের পরই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।" (৫)
প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজউকের কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলার কারণেই এতগুলো প্রাণহানি আর আহত হবার ঘটনা ঘটেছে। এই কর্মকর্তাদের দায়িত্ব ছিল, এই ভবনটির নকশায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে কিনা তা দেখা, তারপর নকশা অনুযায়ী ভবন তৈরি হয়েছে কিনা তা তদারকি করা; তারা তাদের সেই দায়িত্ব পালন না করে বরং অবৈধভাবে অনুমতি দিয়েছেন নকশায় ব্যত্যয় করে ভবন নির্মাণ করার। প্রাথমিক এই অনুসন্ধানের পর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেই কমিটির করা তদন্ত প্রতিবেদন ২২শে মে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম সংবাদ সম্মেলন করে প্রকাশ করেন। তদন্তে এফ আর টাওয়ারের অনিয়মের সঙ্গে রাজউকের ৫১ কর্মকর্তা-কর্মচারীর জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রমান পাবার পর অবশ্য কারো বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি; তারা বহাল তবিয়তে রয়েছেন নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে, অথবা অবসর গ্রহণ করে ফেলেছেন! অভিযুক্ত সকলেই কোটিপতি! অথচ অগ্নিকাণ্ডে যারা হতাহত হয়েছে এরা সাধারণ চাকুরিজীবী, অনেকেই পরিবারের প্রধান উপার্জনক্ষম; এই পরিবারগুলো এখন কি অবস্থায় আছে তার কোন খবর নেই। মৃত্যুকূপে এতজন পুড়ল, অথচ এই মৃত্যুকূপ রচনাকারীদের গায়ে কোনরকম আঁচই লাগলো না!!
রাজউকের দায়ী লোকেদের বিরুদ্ধে যেমন কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি তেমনি ভবন নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। রূপায়ণের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুল আদালতে আত্মসমর্পণ করে মাত্র ২০ হাজার টাকা মুচলেকা দিয়ে জামিন নিয়েছেন ২৩ শে জুন তারিখে। এর আগে ভবনের দুই মালিক এস এম এইচ আই ফারুক ৬ই মে এবং তাসভিরুল ইসলাম ১১ এপ্রিল জামিন নেন। ২৬ জন মানুষের মৃত্যুর দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিন মাত্র ২০ হাজার টাকা হলে, একজন মানুষের মৃত্যুর দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিন হওয়া উচিত (২০০০০/২৬) ৭৬৯.২৩ টাকা!!
যারা একটা ভবন বানিয়ে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেন, তাদের কাছে ১০/২০ হাজার টাকা কিছুই না। ধারণা করা যায়, ভবিষ্যতেও তারা এমন ভবন তৈরি করবেন, আবারো কিছু মানুষ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারাবে, আবারো কিছুদিন হইচই হবে, তারপর সব চুপচাপ হয়ে যাবে... যাদের পকেট ভারী হবার, তাদের পকেট ভারীই রইবে!
ছবি: অন্তর্জাল
সূত্র:
১) ধানমন্ডির ১৪ তলা ভবনে আগুন
২) জরীপের নামে প্রতারণা
৩) অগ্নি নিরাপত্তা বিধিমালা
৪) অকুপেন্সি সার্টিফিকেট মাত্র ১৬২টি
৫) পূর্তমন্ত্রীর নির্দেশ
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৭