somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কুশন
আলো –অন্ধকারে যাই- মাথার ভিতরে স্বপ্ন নয়,- কোন এক বোধ কাজ করে! স্বপ্ন নয়- শান্তি নয়-ভালোবাসা নয়, হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়! আমি তারে পারি না এড়াতে, সে আমার হাত রাখে হাতে; সব কাজ তুচ্ছ হয়,-পণ্ড মনে হয়। -জীবনানন্দ দাশ

লাবণ্য

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সমস্ত সন্দেহ থেকে হৃদয়কে সরিয়ে এবার
শান্ত স্থির পরিষ্কার করে
চেয়ে দেখি মাছরাঙা সূর্য নিভে গেছে;
অন্য প্রেমিককে পাবে অন্য এক ভোরে।

---জীবনানন্দ দাশ

কোনো এক বিকেল বেলার গল্প। প্রথম দেখাতেই আমি মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম- তোমার নাম কি? মেয়েটি উত্তরে বলেছিলো- রবীন্দ্রনাথের 'শেষের কবিতা' উপন্যাসের নায়িকার নামে আমার নাম। 'শেষের কবিতা' আমি পড়েছি। কিন্তু তাৎক্ষনিকভাবে আমি নায়িকার নামটা মনে করতে পারলাম না। এই অভ্যাস আমার আছে। দরকারের সময় জানা বিষয়ও কিছুতেই মনে আসে না। আমি আমার এক বন্ধুকে ফোন দিলাম। বন্ধু খুব গল্প উপন্যাস পড়ে। বন্ধু বলল, ফোন দেওয়ার আর সময় পেলি না। আমি অফিসে বসের সাথে জরুরী মিটিং এ আছি। আমি বললাম, আস্তে করে নামটা বলে দে দোস্ত। বন্ধু রেগে গিয়ে বলল, এঞ্জেলিনা জোলি।

সামনে যতদূর চোখ যায় সবুজ ধানক্ষেত। চারিপাশে বেশ মিষ্টি বাতাস। বাতাসে ধানেরশীষ গুলো নদীর ঢেউয়ের মতো দুলছে। দেখতে ভাল লাগে। দূরে বংশি নদীর কিছুটা দেখা যায়। অতি মনোরম বিকেল। মেয়েটা লাল শাড়ি পড়েছে। পুরো শাড়ি জুড়ে ছোট ছোট লতাপাতা আঁকা। শাড়িটা খুব সুন্দর করেই পড়েছে। কুচি কুচি গুলি সব সমান। অনেকখানি পেট দেখা যাচ্ছে তা নিয়ে মেয়েটার কোনো সংকোচ নেই। বাঙ্গালীরা মেয়েরা শাড়ি পড়লে পেট দেখা যায়, পেট ঢাকতে গিয়ে শাড়িতে এত এত সেপটিপিন লাগায় তাতে শাড়িতে নারীর সৌন্দর্য অনেকখানি কমে যায়। মেয়েটার মাথা ভরতি চুল বাতাসে উড়ছে। সাথে শাড়ির লম্বা আঁচলও মেয়েটার কথা শুনছে না। হয়তো অতি সাধারণ দৃশ্য। অথচ আমি মুগ্ধ হয়ে দেখছি। এক মুহুর্তের জন্যও চোখ সরাতে ইচ্ছা করছে না।

কিছু কিছু মেয়ে আছে খুব সুন্দর হয়। তাদের দেখলেই মনে হয় পৃথিবীর কোনো পাপ স্পর্শ করেনি আজও। ঝর্নার মতো সহজ সরল সুন্দর। একটা জীবন মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে পার করে দেওয়া যাবে। তার সরলতা চারপাশকে যেন পবিত্র করে দেয়। মেয়েটার প্রতি মুগ্ধতা আমার কাটছে না। প্রকৃতির চেয়ে মেয়েটাকে বেশি সুন্দর লাগছে। আমরা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। মুখে মুখে কোনো কথা না বললেও মনে মনে হাজার কথা লেনদেন হচ্ছে। হায় রবীন্দ্রনাথ আমাকে সাহায্য করো। মনে করিয়ে দাও তোমার 'শেষের কবিতা'র নায়িকার নাম। নামটা জানা ভীষন দরকার। নাম না বললে রাজকুমারী আমার সাথে কথা বলবে না। দয়া করো। দয়া করো রবীন্দ্রনাথ। তোমার নামে তিনজন ভিক্ষুক খাওয়াবো।

মেয়েটা বলল, তাড়াতাড়ি করুন। এখনই সন্ধ্যা নামবে। আমায় চলে যেতে হবে। আমি বললাম, দেরী হোক যায়নি সময়। সামান্য নামের জন্য এত উতলা হচ্ছো কেন? মেয়েটা বলল, নাম সামান্য নয়। নাম অনেক বড় বিষয়। এই যে আপনি নামটা মনে করতে না পারলে আমি আপনার সাথে কথা বলব না। তিন সত্যি। আমি বললাম, কথা না বললেও সমস্যা নেই। আমার বুকের গভীর থেকে যে কথা উঠে আসবে তা তোমার হৃদয়ে ঠিক পৌঁছে যাবে। মেয়েটা বলল, আপনি কথা তো খুব সুন্দর বলেন! আমি বললাম, সুন্দর মানুষ সুন্দর কথা বলে। জটিল কুটিল কথা বলে মন্দ লোকেরা। আমি সহজ সরল মানুষ। তুমি চেষ্টা করলে সেটা অনুভব করতে পারবে।

যদিও সন্ধ্যা ঘনায়মান। মেয়েটা এখনই চলে যাবে। আমি ব্যর্থ মানুষ মেয়েটার হাত ধরতে পারলাম না। চুমু তো দূরের কথা। মেয়েটাকে বলতে পারলাম না- তুমি দেখতে ভীষন মিষ্টি। তোমার চোখ, তোমার নাক, তোমার ঠোঁট এমনকি তোমার মসৃন মেদহীন কোমর অতুলনীয়। মেয়েটা চলে যাওয়ার আগে একবার পূর্ন চোখে আমার দিকে তাকালো। মেয়েটার চোখে এক আকাশ অভিমান। আমি তার নামটা মনে করতে পারিনি। হায় রবীন্দ্রনাথ তুমি আমার বড্ড ক্ষতি করে দিলে। আমার এত রাগ হলো- এখন যদি রবীন্দ্রনাথকে সামনে পেতাম তাহলে নিশ্চয়ই তার গলা টিপে ধরতাম। আমার চোখের সামনে সূর্যটা ডুবে গেলো। চারিপাশ মুহুর্তে অন্ধকারে ঢেকে গেলো। ঠিক তখন আমার 'শেষের কবিতা' উপন্যাসের নায়িকার নামটা মনে পড়ে গেলো।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১:০৪
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×