somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কুশন
আলো –অন্ধকারে যাই- মাথার ভিতরে স্বপ্ন নয়,- কোন এক বোধ কাজ করে! স্বপ্ন নয়- শান্তি নয়-ভালোবাসা নয়, হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়! আমি তারে পারি না এড়াতে, সে আমার হাত রাখে হাতে; সব কাজ তুচ্ছ হয়,-পণ্ড মনে হয়। -জীবনানন্দ দাশ

তালগাছ

০৩ রা নভেম্বর, ২০২১ রাত ২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এটা একটা কিশোরী মেয়ের গল্প। আমার গ্রামের গল্প। অথবা বলা যেতে পারে এটা সব গ্রামের গল্প। সব গ্রামেই কিশোরী মেয়ে আছে। তালগাছ আছে। পুকুর আছে। হাটবাজার আছে। স্কুল আছে। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে আমার কাছে বাংলাদেশের প্রতিটা গ্রাম একই রকম লাগে। মাটির রাস্তা, রাস্তার দুই পাশে বিশাল ধানক্ষেত। পুকুর। স্কুল মাঠে ছেলেরা ফুটবল খেলে, সপ্তাহে একদিন হাঁট বসে, গ্রামের পাশ দিয়ে খাল বয়ে গেছে। সেই খালে নৌকা চলে। কৃষক জমিতে কাজ করে। ছোট্র চায়ের দোকান। বউ ঝিরা সারাদিন সংসারের কাজ করে বিকেলে উঠোনে বসে গল্প করে, কেউ কারো চুলে তেল দিয়ে দেয়। এগুলো বাংলার প্রতিটা গ্রামের চিত্র। কাজেই বলা যেতে পারে- এটা সব গ্রামের গল্প।

কিশোরী মেয়েটার নাম শিরীন। শিরীনের বাবা একজন পল্লী চিকিৎসক ছিলেন। গ্রামে বেশ নাম ডাক আছে তার। আশে পাশের গ্রাম থেকেও তার কাছে অনেক রোগী আসতো। শিরীন এর ভাই বোন আছে। মা আছেন। স্কুলের বন্ধুরা আছে। অন্য সব ছেলেমেয়ের যা নেই, শিরীনের তা আছে। তা হলো একটা তালগাছ। অন্য ছেলেমেয়েরা যখন খেলাধূলা করে, গল্প করে, শিরীন তখন তার প্রিয় তালগাছের সামনে বসে থাকে। ঘন্টার পর ঘন্টা সে একা বসে থাকে। তাল গাছের ডান পাশে বেশ বড় একটা পুকুর আছে। তাল গাছের সামনে বসে থাকতে শিরীনের খুব ভালো লাগে। গ্রামের লোকজন বলাবলি করতো এটা শিরীনের তালগাছ। আজও শিরীনের সেই তাল গাছটার কথা প্রায়ই মনে পড়ে। তখন সে দারুন বিষন্ন বোধ করে।

শিরীন দেখতে বেশ সুন্দর। গ্রামের মেয়েরা সাধারনত ফর্সা হয় না। কিন্তু শিরীন দুধে আলতায় রঙ পেয়েছে। এজন্য তার মধ্যে কিছুটা অহংকার রয়েছে। বাংলাদেশে যেসব মেয়ের গায়ের রঙ ফর্সা তাদের মধ্যে এক ধরনের অহংকার কাজ করে। সুন্দরের পেছনে সব সময় প্রেমিকেরা ঘুর ঘুর করে। স্কুলের বহু ছেলে শিরীনের সাথে ভাব জমাতে ব্যর্থ হয়েছে। সাহসী কয়েকজন ছেলে শিরীনকে ভুল বানানে চিঠিও দিয়েছে। চিঠি পেয়ে শিরীন বিরক্ত হয়েছে। প্রেম ট্রেম নিয়ে শিরীনের কোনো মাথা ব্যথা নেই। তার সমস্ত মনোযোগ লেখাপড়ায়। লেখাপড়ায় শিরীন ভালো। এজন্য শিক্ষকেরা শিরীনকে ভালোবাসেন। শিরীন ছোটবেলাতেই বুঝতে পেরেছিলো- শিক্ষাই সম্পদ। তবে শিরীনের একটা ইচ্ছা ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। তার সেই ইচ্ছা পূরন হয়নি।

শিরীন তার জীবনে প্রথম আঘাত পায় তার বাবার মৃত্যুতে। তখন শিরীন স্কুলের গন্ডি পার হতে পারে নি। বাবার মৃত্যুর পরই শিরীন মন খারাপ হলেই তালগাছের সামনে বসে থাকতো। তালগাছের গায়ে হেলান দিয়ে নানান রকম কথা ভাবতো। নিজের মনের গভীর গোপন প্রশ্ন গুলোর উত্তর সে নিজের কাছেই খুজতো। বাবা মারা যাওয়ার পর পুকুর ধারের তালগাছটাই তার বন্ধু হয়ে গিয়েছিলো। যেন কাছের কোনো বন্ধু। যাকে বিনা দ্বিধায় সব বলা যায়। বিশ্বাস করা যায়। ভালোবাসা যায়। আসলে, এই গল্পের শিরীন আমার বন্ধু। বেশ ভালো বন্ধু। যাকে মন উজার করে সমস্ত কথা বলা যায়। পুরোপুরি বিশ্বাস করা যায়। ভালোবাসা যায়। কাঁধে মাথা রেখে কান্না করা যায়। আবদার করা যায়। শিরীন আমাকে খুব ভালো বুঝে। শিরীনের মতোন করে আর কেউ আমাকে বুঝে না।

লেখাপড়া শেষ করার আগেই শিরীনের বিয়ে হয়ে যায়। শিরীনের বিয়েতে আমি থাকতে পারি নি। তখন আমি আমেরিকা চলে আসি। আমেরিকা আসার পর শিরীনের সাথে আমার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। শিরীন হয়তো সংসারের চাপে আমাকে ভুলেই গেছে। এরকমটাই আমি ভাবতাম। টানা আট বছর তার সাথে আমার কোনো যোগাযোগ হয়নি। অথচ আমাদের সাথে কোনো ঝগড়া হয়নি। শিরীনের কথা আমার অসংখ্য বার মনে পড়েছে। তার সাথে যোগাযোগ করার জন্য মন আনচান করেছে। তবুও কেন জানি আর যোগাযোগ করা হয়ে উঠেনি। যাই হোক, বিয়ের পরের বছর শিরীনের প্রথম সন্তান আসে দুনিয়ায়। তখন শিরীন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছে। বাচ্চাকে একটু পরপর বুকের দুধ খাওয়াতে হয়। সেই শিশু বাচ্চা এখন অনেক বড় হয়ে গেছে।

শিরীনের সাথে আমার সমস্ত ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে। শব্দটা 'ভুল বোঝাবুঝি' হবে না। অন্য কিছু হবে। যাই হোক, আমাদের পুরোনো সম্পর্ক আবার ঠিকঠাক হয়েছে। বলা যায় আগের চেয়ে মজবুত হয়েছে। বর্তমানে শিরীন একটা স্কুলের শিক্ষিকা। শিরীন স্কুল সামলাচ্ছে। ঘর সামলাচ্ছে। তার দুই সন্তান। এই তো কয়েক বছর আগে শিরীনরা ডেমরাতে বাড়ি করেছে। স্বামী সন্তান নিয়ে শিরীন সুখে আছে। বিয়ের পর শিরীন আগারগাও ভাড়া বাড়িতে থাকতো। শিরীনের দক্ষতার কারনেই তার স্বামী ব্যবসায় সফলতা পায়। শিরীনের দুটা বিড়াল আছে। একটা বিড়ানের নাম মন্টু। কি অদ্ভুত নাম মন্টু! শিরীন তার বিড়ালের ছবি আমাকে মেইল করেছে। দুটা বিড়াল শিরীনের কাছে বেশ সুখেই আছে। গ্রামের সেই কিরোশী মেয়েটা এখন শহরে থাকে। আমি অন্য শহরে থাকি। তবুও আমাদের রোজ কথা হয়। ঝগড়া হয়। ভাব হয়। মান অভিমান হয়।

শিরীন ভালো থাকুক। সুস্থ থাকুক। ভালো থাকুক তার সমস্ত প্রিয় মানুষেরা। তার জন্য এটাই আমার প্রার্থনা।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০২১ রাত ২:৪৭
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×