সৌদি আরবে তীর্থযাত্রীর ছদ্মবেশে ভিক্ষাবৃত্তি ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে পাকিস্তান সরকার। সম্প্রতি সৌদি আরবের পক্ষ থেকে দেওয়া সতর্ক বার্তার পর পাকিস্তান সরকার তার নাগরিকদের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, তীর্থযাত্রীদের মুচলেকা নেওয়া এবং তাদের ভ্রমণের ক্ষেত্রে নতুন বিধিনিষেধ আরোপ।
সৌদি আরবের অভিযান এবং সতর্কতা
গত সেপ্টেম্বরে সৌদি আরব ভিক্ষুকদের ধরতে অভিযান চালায়। এতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পাকিস্তানি নাগরিক জড়িত ছিলেন বলে দেশটি দাবি করে। সৌদি সরকার জানায়, ওমরাহ ও হজ ভিসায় ভিক্ষুকদের কারণে রিয়াদ সমস্যার মুখে পড়ছে। এ ঘটনার পরই পাকিস্তানের ধর্ম মন্ত্রণালয়কে কড়া বার্তা দেয় সৌদি সরকার।
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তান সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে ৪,৩০০ ভিক্ষুকের নাম ‘এক্সিট কন্ট্রোল’ তালিকায় যুক্ত করেছে। এ তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। পাকিস্তানের ধর্ম মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিলে নতুন নিয়ম জারি করেছে। এখন থেকে তীর্থযাত্রীদের সৌদি যাওয়ার আগে লিখিত মুচলেকা দিতে হবে। এতে উল্লেখ করতে হবে, তারা সৌদি আরবে ভিক্ষাবৃত্তিতে লিপ্ত হবেন না।
ভ্রমণে নতুন নিয়ম
তীর্থযাত্রীদের গ্রুপ আকারে সৌদি আরব ভ্রমণ করতে হবে। ধারণা করা হচ্ছে, এতে ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িত হওয়ার সুযোগ কমবে। যারা এককভাবে ভ্রমণ করতে চায়, তাদের ভিসা অনুমোদনে আরও কঠোরতা আরোপ করা হয়েছে।
ট্রাভেল এজেন্সির ভূমিকা
তীর্থযাত্রীদের পাঠানোর দায়িত্বে থাকা ট্রাভেল এজেন্সিগুলোকেও মুচলেকা দিতে হচ্ছে। কোনো এজেন্সি যদি ভিক্ষুক পাঠায়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি এজেন্সির লাইসেন্স স্থগিত এবং জরিমানা করা হয়েছে বলে পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সামাজিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তানের ভিক্ষুক সমস্যাকে কেন্দ্র করে এমন পদক্ষেপ নেওয়া অবশ্যই একটি দুঃখজনক পরিস্থিতি। বিশেষ করে সৌদি আরবের মতো জায়গায়, যেখানে মুসলিম তীর্থযাত্রীদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের জন্য যাওয়া হয়, সেখানে এমন কর্মকাণ্ড দেশের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করছে।
পাকিস্তান সরকারের এসব উদ্যোগের মাধ্যমে ভিক্ষাবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলে তা শুধু দেশের সম্মান রক্ষাই করবে না, বরং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশটির দায়িত্বশীলতার প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে। তবে এ সমস্যার দীর্ঘমেয়াদী সমাধানে দারিদ্র্য বিমোচন এবং কর্মসংস্থানের মতো মৌলিক ইস্যুগুলোর ওপর আরও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
কার্টেসী : প্রজন্ম ক্ন্ঠ