


শিক্ষকেরা বর্তমানে সব সচাইতে অসহায় জনগোষ্ঠী। জুলাই অভ্যুত্থানের পর তাদের উপর বিভিন্ন ফর্মে নির্যাতন চলছেই। কতিপয় দালাল ও অসৎ শিক্ষককে জোর করে পদত্যাগের করানোর পর সমগ্র শিক্ষক গোষ্ঠী যেন বিপদের মধ্যে পড়েছেন। শিক্ষকেরা এখন ছাত্রদের হাতে মাইর খান, তাদের তোয়াজ করে চলেন; রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষকের হাতে ভিন্ন মতাদর্শের শিক্ষকেরা নির্যাতিত হওয়ার পাশাপাশি নিরীহ শিক্ষকগণ রেহাই পাচ্ছেন না। সবশেষ শিক্ষকদের কপাল নতুন কলঙ্ক যুক্ত হইলো! কুমিল্লার চান্দিনায় একটি স্কুলে ফাইনাল পরীক্ষার চলাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়ে ১৫ জন শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে ঢুকে হামলা চালায় অভিভাবকরা। এসময় বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ অপর তিন সহকারী শিক্ষককে পিটিয়ে লাঞ্ছিত করেন অভিভাবকরা।
রবিবার (৮ ডিসেম্বর) উপজেলা সদরের চান্দিনা ডা. ফিরোজা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে এ ঘটনা ঘটে। আহত শিক্ষকরা হলেন- বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাদেকুল ইসলাম কিরণ, বাংলা বিভাগের শিক্ষক আবু ইউনুছ, হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সাইদুর রহমান সুজন ও ধর্মীয় শিক্ষক মো. ইলিয়াছ। তাদেরকে কিল, ঘুষি ও লাঠির আঘাতে আহতসহ শার্ট ছিঁড়ে লাঞ্ছিত করা হয়েছে।
জানা যায়, রবিবার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সকল শ্রেণীর গণিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণীর পরীক্ষা চলছিল। ৯নং কক্ষের অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। সহপাঠীসহ শিক্ষকরা তাকে পৃথক কক্ষে নিয়ে মাথায় ও চোখে মুখে পানি দিয়ে বিশ্রামের ব্যবস্থা করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই কক্ষের আরও ১৪জন ছাত্রী একই ভাবে অসুস্থতা বোধ করায় তাদেরকে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ১১ জনকে বাড়িতে পাঠিয়ে ৪ জনকে ভর্তি করা হয়। দুপুর ২টা থেকে দ্বিতীয় শিফটের পরীক্ষা শুরু হলে ১৫-২০জন অভিভাবক বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে শিক্ষকদের ওপর হামলা চালায়। তারা পুরো বিদ্যালয়ের প্রতিটি পরীক্ষার হলে শিক্ষার্থীর মৃত্যুর গুজব রটিয়ে সকলকে পরীক্ষার হল থেকে বের করে দেয়। চান্দিনা থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। একজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
চান্দিনা ডা. ফিরোজা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. সাদেকুর রহমান কিরণ জানান, অসুস্থ শিক্ষার্থীদের আমরা তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নেয়ার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেন তারা ‘প্যানিক অ্যাটাক’ আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়। চিকিৎসা শেষে তাদের সকলেই সুস্থ আছে। দ্বিতীয় শিফটের পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর আমরা কয়েকজন শিক্ষক অফিস কক্ষে পরীক্ষার খাতা গুছানোর সময় ১৫-২০জন লোক এসে আমাদেরকে মারধর শুরু করে। এতে চারজন শিক্ষক আহত হন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরিফুর রহমান জানান, হাসপাতালে আগত অসুস্থ ছাত্রীরা ‘প্যানিক ডিজঅর্ডারে’ আক্রান্ত হয়ে এমনটি ঘটেছে। মূলত এটি কোন বড় সমস্যা নয়, একজনের দেখাদেখি অন্যরাও আক্রান্ত হয়। তাদের মধ্যে ১১ জনকেই প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। বাকি ৪ জনকে এখনও পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
দেশ গড়ার কারিগর হচ্ছেন শিক্ষকেরা। কতিপয় অসৎ শিক্ষক অসৎ উপায়ে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে পুরো শিক্ষক জাতিকে লজ্জায় ফেলে দিয়েছে। রাজনৈতিক দলের লেজুড় বৃত্তি, জোর করে প্রাইভেট পড়ানো, টাকার জন্য বিপথগামী শিক্ষার্থীদের অন্যায় কাজ সমর্থন করে এখন সকল শিক্ষকের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। অভিভাবকেরা সন্তানদের সঠিক ভাবে নৈতিক শিক্ষা দিতে পারছেন না। নিজেরাই অনেকে অসৎ কাজের সাথে জড়িত। দীর্ঘদিন একটি ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতায় থাকায় মানুষের মনোজগতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। অনেকে সমাজে অবৈধ ভাবে টাকা কামিয়ে প্রভাবশালী বনে গেছেন। এরা শিক্ষকদের দুই পয়সা দাম দেয় না। ফ্যাসিস্ট সরকার বাচ্চাদের বেত্রাঘাত করা যাবে না এমন নিয়ম চালু করে শিক্ষকদের সর্বনাশ করেছেন। সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে গুরুজন ও শিক্ষকদের প্রতি ছাত্রদের তেমন সম্মান ও ভয় কাজ করে না। শিক্ষকদের উপর সকল প্রকার নির্যাতন বন্ধ হউক। কোন শিক্ষক অপরাধী হলে তাকে আইনী প্রক্রিয়ায় শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। কোন অবস্থাতেই জোর পূর্বক অথবা শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত করা যাবে না। তা না হলে শিক্ষক পেশার প্রতি আগ্রহ কমে যাবে এবং অনৈতিক পন্থায় খারাপ লোক শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় অনুপ্রবেশ করবে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:১৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



