


জুলাই অভ্যুত্থান বাঙালি জাতির জীবনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। সবার মনে আশা সঞ্চার করেছে এবার বুঝি সত্যিকারের বৈষম্য হীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। আর এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের মূল কারিগর হিসাবে যাদের ভাবা হয়েছিল তারা হচ্ছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সংগঠনের নেতাদের। মানুষ ভেবেছিল এবার বুঝি আমাদের দেশের ছেলেরা কথায় না বড়ো হয়ে কাজে বড়ো হবেন! আগের প্রজন্ম যা পারেনি তাই এই প্রজন্মের কান্ডারী রা করে দেখাবেন।
জুলাই অভ্যুত্থানের চারমাস পার হওয়ার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনের নেতাদের নিয়ে শঙ্কা ও হতাশা দেখা যাচ্ছে। এরজন্য দায়ী কিছু ছাত্র উপদেষ্টা এবং সমন্বয়ক। তাদের কথা বার্তা, আচরণে অহংকার, অপরিণামদর্শী চিন্তা ভাবনা, সমালোচনা সহ্য করতে না পারার মানসিকতা, অপরের উপর দায় চাপানোর কিছু ঘটনা নিয়ে পরাজিত শক্তি যেমন ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের সুযোগ পাচ্ছে একই সাথে পক্ষের শক্তিগুলোও তাদের উপর ভরসা রাখতে পারছেন না।
তথ্য উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব নেয়ার পর সবচাইতে প্রমজিং লেগেছিল নাহিদ ইসলাম কে। ঠান্ডা মাথায় আলোচনা-সমালোচনা,কথার উত্তর ও ঠান্ডা মেজাজের জন্য অল্পকিছু দিনের মধ্যে সবার মধ্যে নাহিদের ব্যাপারে পজেটিভ ভাবনা তৈরি হয়। মানুষের এমন ধারণার বিচ্ছেদ ঘটে যখন কতিপয় অজ্ঞাত লোকজন প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয়ের সামনে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সৃষ্টি করে। উপদেষ্টা নাহিদ বারংবার গণ মাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বললেও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সময় নাহিদ কোন মন্তব্য করেনি। সে প্রতিক্রিয়া দেখায় তিন দিন পর যখন বিশ্বে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের উপর চাপ বাড়ায়। তাছাড়া গণহারে সাংবাদিকদের আ্যাক্রিডেশন বাতিল করা নিয়েও নাহিদ এবং তার মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা হচ্ছে। নাহিদ রাজনৈতিক দলগুলোকে দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছে যা মূর্খতার সামিল। এভাবে কেবল সংঘাত বাড়ে কাজের কাজ কিছুই হয় না। নাহিদ একটি দায়িত্বশীল পদে থেকে শেখ হাসিনা দেশে ফেরত আসলে তাকে ফাঁসি দেওয়া হবে এমন কথা বলে কেবল শেখ হাসিনার ন্যায় বিচারের পথে বাধা সৃষ্টি করছে যা তার অপরিণত মস্তিষ্কের প্রমাণ দেয়।
উপদেষ্টা মাহফুজ আলম শুরু থেকেই নানা ভাবে বিতর্কিত ছিলো। ড. ইউনূস মাহফুজ আলম কে আমেরিকায় মাস্টারমাইন্ড হিসাবে পরিচিয় করিয়ে দেয়ার পর থেকে দেশে এবং বিদেশে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু হয়। মাহফুজ আলম হিজবুত তাহরীর সদস্য বলে বারবার অভিযোগ করা হয়েছিল। সে সব ধোপে টিকে নাই। অবশেষে মাহফুজ আলমের আসল পরিচয় প্রকাশ পায়। সে একজন পালনবাদের অনুসারী এবং তার রাজনৈতিক গুরু হচ্ছেন মহান লাল বিপ্লবী নেতা মাওলানা ভাসানী! মাস্টারমাইন্ড মাহফুজ আজ যা চিন্তা করেন বাঙালি সেটা বুঝি ৫০ বছর পর চিন্তা করবেন এমন টাইপ ইনটিলিজেন্ট পারসন বলে সবার মধ্যে ধারণা ছিলো। কিন্তু মাহফুজ কি করলেন? উল্টোপাল্টা ফেইসবুক স্টাটাস এবং কর্মকান্ডে মানুষকে বিভ্রান্ত করা শুরু করলেন। তিনি গৃহযুদ্ধ প্রাথমিক ভাবে সামাল দেয়ার কথা বোঝাতে চাইল্রন কিন্তু উনার কথায় অধিকাংশ মানুষের মনে হইলো তিনি দেশে গৃহযুদ্ধের আহবান জানিয়েছেন। মাহফুজ আরো বলেছেন পুরাতন প্রজন্ম সবাই খরচের খাতায় চলে গিয়েছে। এই ধরণের মন্তব্য দেশের প্রবীণ রাজনীতিবিদদের আহত করে। সর্বশেষ বিজয় দিবসের সময় মাহফুজ ফেইসবুকে স্টাটাস দিয়ে বৃহত্তর বাংলা গড়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। কিন্তু এতে করে পাশের দেশ ভারতের কিছু অংশ বাংলাদেশের মধ্যে চলে আসে যা তীব্র বিতর্কের জন্ম দেয়। মাহফুজ আলম অবস্থা বেগতিক দেখে আবার সেই স্টাটাস মুছে ফেলে। ভারতের পক্ষ থেকে এর তীব্র নিন্দা জানানো হয়।
হাসনাত আবদুল্লাহ এবং সমন্বয়করা মূলত বর্তমান সরকারের প্রধান সাপোর্ট হিসাবে কাজ করে। কিন্তু হাসনাতের আচরণ শুরু থেকে বিতর্কের জন্ম দেয়। যখন আনসার সদস্যরা সচিবালয় ঘেরাও দেয় তখন হাসনাত সচিবালয়ে ছিলো। সচিবালয়ে হাসনাতের কি কাজ থাকতে পারে তা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছিল সে সময়। হাসনাতের উপর সচিবালয়ে হামলা হয়। হাসনাত আব্দুল্লাহ কটাক্ষ করে অনেক সময় রাজনীতিবিদ দের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন যা দৃষ্টিকটু। তাছাড়া আদালত পাড়ায় বলপূর্বক বিচারক অপসারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক অপসারণ হাসনাতের ইমেজ সংকটে ফেলে। হাসনাত আব্দুল্লাহ সবশেষ সময় টিভির ১০ জন সাংবাদিক কে হুমকি দেয় তার বিরুদ্ধে ভুল।নিউজ করার জন্য। হাসনাত এবং কতিপয় শিক্ষার্থী সময় টিভির মালিক সিটি গ্রুপের অফিসে গিয়ে সময় টিভির সাংবাদিকদের অপসারণে চাপ দেয়। সিটি গ্রুপ পাঁচজন সাংবাদিক কে চাকরিচ্যুত করে। দুঃখের বিষয় হলো এই নিউজ অন্য কোন মিডিয়া প্রচার করে নাই। অথচ উপদেষ্টা নাহিদ বলেছিলেন মিডিয়ার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা তার সরকার নিশ্চিত করতে বদ্ধ পরিকর।
সময় টিভি আওয়ামী লীগের অন্যতম দালাল মিডিয়া হিসাবে পরিচিত। গত ১৫ বছরে গ্রামেগঞ্জে আওয়ামী লীগের অতিরঞ্জিত উন্নয়নের গল্প প্রচারে সময় টিভি সিদ্ধহস্ত ছিলো। মানুষ নিউজ চ্যানেল দেখে টিভিতে সময় টিভি চালিয়ে রাখতো। আওয়ামী লীগের যত প্রোপাগাণ্ডা সব সময় টিভি প্রচার করতো। সঠিক নিউজ না পাওয়ায় মানুষের মধ্যে সচেতনা তৈরি হতে অনেক সময় লেগেছে। কিন্তু একটি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকদের এইভাবে ভয় ভীতি দেখিয়ে চাকুরিচ্যুত করা সমাজের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। মিডিয়া কারো না কারো পক্ষেই থাকে। সারাবিশ্বেই এমন চল রয়েছে। লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে মিডিয়ার মাধ্যমে ডিজইনফরমেশন এবং ফলস ইনফরমেশন না ছড়ায়। হাসনাত চাইলে সময় টিভির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করতে পারতেন। কিন্তু তিনি গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ পিলারে আঘাত করেছেন। বিদেশে বিভিন্ন মিডিয়ায় এই ঘটনা নিয়ে সংবাদ করেছে। এই ঘটনায় অনেকে সরকারের দায় দেখছেন। কারণ হাসনাতের সাথে সরকারের বাকি ছাত্র উপদেষ্টা আরো স্পেসিফিক ভাবে বললে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদের কানেকশন রয়েছে। নাহিদ পারতেন এই সমস্যার সমাধান করতে। তা না করে অনেকটা গুন্ডাদের মতো হুমকি ধামকি দিয়ে সাংবাদিকের চাকুরি খাওয়া ছাত্রদের জন্য লজ্জার।
কোথায় থামতে হবে,সেটা শেখা বড্ড জরুরী।
নতুবা চলার পথটা জটিল হবে
নিশ্চিত থাকুন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


