

ড. ইউনূস একজন নোবেল বিজয়ী ব্যক্তিত্ব। উনি তার কথার জাদুতে হাজারো মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের দিকনির্দেশনা মূলক বক্তব্য দিয়ে থাকেন ড. ইউনূস। সেই ব্যক্তিটি এখন আমাদের দেশের ক্ষমতায় সবচেয়ে পাওয়ারফুল পজিশনে আছেন। চাষাভুষার দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন দেখে সবাই খুব আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েছিল। তাই সকলে ড. ইউনূসের জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণ গুলো মনোযোগ দিয়ে শুনে থাকেন। প্রথমের দিককার ভাষণ গুলো খুবই অনুপ্রেরণা দায়ক ছিল। বিগত স্বৈরশাসক হাসিনা যখন জনসম্মুখে ভাষণ দিতেন তখন তিনি জনসাধারণকে খাবার কম খেতে উৎসাহ দিতেন, উদ্ভুট রেসিপি শেয়ার করতেন, বিরোধী দল কে পদ্মা নদীতে গোসল করানোর হুমকি দিতেন, বিদুৎ বন্ধ করে দেয়ার কথা বলতেন, তার পরিবার দেশ স্বাধীন করেছে সেজন্য জনগণ কে শ্রদ্ধাশীল হওয়ার পরামর্শ দিতেন। ড. ইউনূস এমন কিছুই বলেন নাই। খুব সিম্পল ভাষায় অভ্যুত্থানের পর সংস্কার কার্যক্রম করতে চান জনগণের কাছে সে ইচ্ছা তুলে ধরেছিলেন। আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত প্রফেসর ইউনূসের ভাষণ গুলোতে এমন কিছুই পাওয়া যেত।
ড. ইউনূস একজন অর্থনীতিবিদ। শেখ হাসিনা ও তার দলের লোকজন উন্নয়নের নামে দেশের অর্থনীতির বারোটা বাজিয়ে গেছেন। একে তো ঋণের বোঝা তার মধ্যে কাজ নাই অনেকের। দেশে প্রায় ১৯ লাখ তরুণ বেকার। তাছাড়া দ্রব্যমূল্যের দামের তুলনায় মানুষের আয় তেমন বাড়েনি। এমন ঘোলাটে পরিস্থিতিতে দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন ড. ইউনূস। সারাবিশ্বের সাথে যিনি কানেক্টেড এমন একজন লোক দেশের ক্ষমতায় আসার পর নিশ্চয়ই বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ার কথা ? আশ্চর্যজনক হলেও সত্য বিনিয়োগ তেমন আসেনি। ড. ইউনূস নির্বাচিত সরকার নন এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে এমনটি হইতে পারে। ড. ইউনূস যখন বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে মোটেভেশনাল স্পীচ দিতেন তখন খুব বেশি কর্মসংস্থানের কথা বলতেন। তরুণদের ব্যবসা করতে আইডিয়া দিতেন। অথচ ক্ষমতায় আসার ৫ মাস পরও জাতির উদ্দেশ্যে কোন ভাষণে দেখি না তিনি কর্মসংস্থান নিয়ে, কারখানার শ্রমিক নিয়ে তেমন কোন কথা বলেন। ইউনূস সাব শুধু তরুণদের আত্নত্যাগের কথা, জুলাই অভ্যুত্থানের কথা বলে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক সংস্কার চান কিন্তু দেশের অর্থনীতির কি সংস্কার করবেন, বন্ধ কারখনার শ্রমিকদের কিভাবে কাজে ফিরিয়ে আনা যায়, গার্মেন্টস কেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, অভ্যুথানের পর অনেকে কারখানা আগুনে পুড়ে গেছে যার ফলে মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে এসবের সমাধান নিয়ে কোন কথা বলতে শোনা যায় না।
ড. ইউনূসের বাকি উপদেষ্টাদের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত মানুষের কর্মসংস্থানের পথ আরো রুদ্ধ করে দিয়েছে। এক উপদেষ্টা ফুটপাত অবৈধ উচ্ছেদ করতে যান, অন্যজন ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা বন্ধ করতে চান এবং পোশাক শ্রমিকদের ক্রমাগত আন্দোলনে সকল পক্ষ নিয়ে বসার পরিবর্তে ফ্যাসিবাদের দোসর উপাধি দিয়ে উপদেষ্টারা নিজেদের দায়িত্ব পালন করা হয়েছে বলে মনে করেন। ড. ইউনূস ও কি এমনটাই মনে করেন নাকি? ছাত্ররা আরো স্পেসিফিক ভাবে বললে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা ড. ইউনূসের কাছে বিশেষ প্রিয় কিন্তু যখন তিনি দেশের দায়িত্ব নিবেন তখন সকলের কথা উনার ভাবতে হবে। ৪/৫ মাসে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা অত্যন্ত কঠিন কিন্তু আগের কর্মসংস্থানগুলো কেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সে জন্য কি কোন ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার ? দেশের অর্থনীতি সংস্কারের কি কোন কমিশন গঠন করা হয়েছে অর্থনীতিবিদদের নিয়ে ? দেশের ইকোনমি যদি ঠিক না থাকে তবে বাকি সংস্কারের কি মূল্য থাকবে জনগণের কাছে?
ড. ইউনূস আবার নোবেল পেতে পারেন উনার three zero তত্ত্বের কারণে। তিনি বিদেশে অনেক পুরস্কার পান বিভিন্ন নতুন ব্যবসার আইডিয়ার জন্য কিন্তু বাংলাদেশের জন্য উনি কি আইডিয়া দিয়েছেন? উনার থ্রি জিরো তত্ত্ব চাকুরি প্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা মুখস্থ করছেন চাকুরি পাওয়ার জন্য। ইহা কি শুধুই মুখস্থ করার বিষয় প্রয়োগ করার বিষয় নয়? আসলে এলিট শ্রেণী থেকে যারা দেশের শাসন ক্ষমতায় আসেন তাদের পক্ষে এলিট ক্লাসের সাথে যোগাযোগ স্থাপন যতটা সহজ সাধারণ মানুষের সাথে ততটা নয়। ড. ইউনূস যাস্ট সে বিষয় টি আবারো প্রমাণ করলেন!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।

