

ঢাকার মিরপুর ১এ অনেকবার যাতায়াত করেছি বিভিন্ন কারণে। ২০১৪ সালের পর হঠাৎ মিরপুর ১ এর পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে শুরু করে। অনেক লাক্সারিয়াস ভবন নির্মিত হতে দেখা যায়। দারুন সব রেস্টুরেন্ট, ফুড কোর্ট হয় সেখানে। ব্যক্তি মালিকানাধীন অনেক ভবন চোখের সামনে হতে থাকে। একবার এমন একটি বিল্ডিংয়ে কোন এক আত্নীয়ের জন্য বাসা ভাড়া নিতে গিয়ে জানতে পেরেছিলাম একজন এসআই এই সুউচ্চ ভবনের মালিক। আমাদের পরিচিত অনেক এসআই কে দেখতাম সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে আর এই ভদ্রলোক দেখি বিশাল অট্টালিকার মালিক। মাথা আমার ভনভন করে উঠে। মিরপুর একে এমন অনেক ভবন, রেস্তোরাঁর মালিক বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হতে শুরু করে আমলারা। সরকার আমলাদের যে কি পরিমান দুই হাত ভরে কামানোর সুযোগ করে দিয়েছিল তা চিন্তার বাইরে। এক এএসপি চাকুরিতে জয়েনের ৫ বছরে ৫ কোটি টাকার মালিক হয়েছিল যা আমরা কেবল বসে বসে ভাবতে পারি কিভাবে সম্ভব কিন্তু সে এএসপি অনন্ত জলিলের মতো অসম্ভব কে সম্ভব করে ফেলেছেন। যাই হউক এসব ভবন, রেস্তোরাঁ নির্মাণে প্রচুর শ্রমিক লেগেছে, রড-বালু-দিমেন্ট লেগেছে, এখনও এসব জায়গায় অনেকে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এইভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দেশের অর্থনীতি কে সচল রেখেছিল আওয়ামী লীগের হালুয়া রুটির ভাগ পাওয়া লোক।
মিরপুর ২ তে একটি রেস্তোরাঁয় বসেছি বন্ধুদের নিয়ে ! অনেকক্ষণ ধরে খেয়াল করলাম রেস্তোরাঁয় কোন লোকজন দেখলাম না। এত বড়ো রেস্টুরেন্ট কিন্তু কাস্টমার নাই বিষয় টি হজম হলো না। রেস্টুরেন্টের ম্যানেজারের সাথে আলাপ করে জানতে পারলাম এনবিআরের একজন কর্মকর্তার রেস্টুরেন্ট এটি। তিনি কেন এমন লস প্রজেক্টে ইনভেস্ট করে রেখেছেন সেটা জানার তীব্র বাসনা হলেও ম্যানেজার যেন মুখে কুলুপ এটে ছিলো। ম্যানেজারের কথায় বোঝা গেল রেস্টুরেন্টে ইনকাম হোক বা না হোক কর্মচারীদের বেতন মাসের ১ তারিখের মধ্যে দিয়ে দেয়া হয়। পারসোনাল অনুসন্ধান করে এমন অনেক রেস্টুরেন্ট, শোরুম ও কোম্পানি পেলাম যাদের মালিক র্যাবের কর্মকর্তা, বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারী, পুলিশ-আর্মির উচ্চপদস্থ লোকজন। সব গুলোতে বেচা বিক্রি আশানুরূপ না হলেও বেতন ঠিকঠাক মতো পায় কর্মচারী। আসলে আয়ের উৎস ও কালো টাকা সাদা করতে এসব লাক্সারিয়াস জিনিসপাতি খুলে রাখা যায় হয়েছিল। আওয়ামী লীগ ও হালুয়া রুটির ভাগ পাওয়া লোকজন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছিল। অনেক তরুণ যুবক এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে এখনো।
বন্ধুদের নিয়ে সিনেমা দেখতে গিয়েছি । সিনেমার নাম ' টিকটকে ভালোবাসা ' এবং অভিনয় করেছে মোটামুটি পরিচিত নায়ক-নায়িকারা। দেশের সিনেমা অঙ্গনের অবস্থা এমনিতেই খারাপ। তার মধ্যে কাজ না থাকায় অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী তৃতীয় শ্রেণীর চলচ্চিত্রে অভিনয় করে। এসব ছবিতে হাউসফুল তো দূরে থাকা দশজন লোক হয় না। মূলত সেখানে ডেটিং করতে যায় কপোত-কপোতীরা। এসব সিনেমার আয় যাই হোক নির্মাণ খরচ দেখে আমার চোখ কপালে উঠে যেত ! ৫/১০ কোটি টাকা এক একটি ছবি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে। কিন্তু স্বল্প আয় দেখলে আপনি ভাবতে শুরু করবেন প্রযোজক কেন এসব ছবি বানাচ্ছেন! কিন্তু আরো একটু গভীরে অনুসন্ধান করলে দেখা যায় এসব ছবির লগ্নির পিছনে আছেন সরকার দলের এমপি, পাতি নেতা ও সরকারি আমলারা ! কালো টাকা সাদা করার সুন্দর মাধ্যম হিসাবে বিগত ১৫ বছর সিনেমা ইন্ড্রাষ্টিকে তারা ব্যবহার করে। এসব সিনেমার পিছনে কাজ করেছে অসংখ্য লোকজনের জীবিকা ও রুটি রুজির ব্যবস্থা হয়েছিল যা এখন আপাতত বন্ধ আছে
বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের যাদের কে একছত্র ভাবে দূর্নীতির সুযোগ করে দিয়েছিল তারা হচ্ছে এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো, সামিট ও বসুন্ধরা গ্রুপ। এরা কিন্তু নিজের থেকে একটাকা ইনভেস্ট করেনি। হাজার হাজার কোটি টাকা লোন নিয়েছে ব্যাংক থেকে। বড়ো ব্যবসায়ী তাই ব্যাংক লোন পেতে পারে কিন্তু তারা ব্যাংক লোনের ২০ ভাগ দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নির্মাণে ব্যয় করেছে আর ৮০ ভাগ বিদেশে পাচার করেছে। এই ২০ ভাগ ইনভেস্টমেন্ট আবার এমন ভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণে ব্যয় করা হয়েছিল যাতে কোনদিন আওয়ামী লীগ সরকার পতন হলে কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। লোকজন কাজ হারিয়ে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে ; আসলে হয়েছেও তাই। জুলাই অভ্যুত্থানের পর এসব ব্যবসায়ী দের অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে এবং মানুষ কাজ হারাচ্ছে। বর্তমান সরকার কে চাপে ফেলতে একের পর এক কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, মানুষ কাজহীন হয়ে পড়ছে।
পুরো ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ মানুষের টাকা লুটপাট করে মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছিল। অর্থনীতি কে এমন ভাবে সাজানো হয়েছিল কোনদিন আওয়ামী লীগের পতন হলে যাতে অর্থনীতিতে ডিজাস্টার দেখা যায়। তাদের এই মেটিকুলাস ডিজানের বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে যার ফলে সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে !

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।

