somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আওয়ামী লীগ কি আবার ফিরে আসবে?

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গত কয়েকদিন ধরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ইউটিউবার এবং সামু ব্লগের অনেকে খুব এক্সাইটেড ভারতের বিদেশ মন্ত্রী জয়শংকরের আমেরিকা সফর নিয়ে। সেই সফরে নাকি ফয়সালা হবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ও আওয়ামী লীগের বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফিরে আসা। ইহা কোন নতুন বিষয় নয়। ক্ষমতায় থাকার সময় আওয়ামী লীগের অনেক বড়ো বড়ো নেতার মুখে শুনেছিলাম দিল্লী আছে আওয়ামী লীগ আছে, তলে তলে সব ম্যানেজ হয়ে গেছে , ভারত কে অনুরোধ করা হয়েছে যাতে আওয়ামী লীগ কে ক্ষমতায় রাখে টাইপ কথাবার্তা। একটা দল কতটা জনবিচ্ছিন্ন হলে দেশের মানুষের সমর্থন বাদ দিয়ে বিদেশি শক্তির মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকতে চায়। আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের রাগ ক্ষোভ এমনি এমনি আসে নাই। আওয়ামী লীগের সাপোর্টার দের ভাবখানা এমন খুব জনপ্রিয় একটা দলকে ফু দিয়ে কেউ ফালায় দিয়েছে। ইহা মহা অন্যায় হয়েছে। নিজেরাই নিজেদের জনবিছিন্ন করেছে । এখন যখন বিরোধী পক্ষ সুযোগ দেখতে পেয়েছে তা কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগ কে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। এই নিয়ে খুব সম্ভবত তিনবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হয়ে আন্ডার গ্রাউন্ডে চলে গেল। এখন কোটি টাকার প্রশ্ন হচ্ছে আওয়ামী লীগ কি আবার ফিরে আসবে দেশের রাজনীতিতে?

আওয়ামী লীগ প্রথমবার যখন আন্ডারগ্রাউন্ডে তখন তাদের ভালো জনসমর্থন ছিলো। মূলত ছাত্র ও তরুণদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিলো। মওলানা ভাসানীর মতো নেতা ছিলেন। আওয়ামী লীগ সকল ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে সেবার রাজনীতিতে ফেরত আসে।

দ্বিতীয়বার আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হয়ে আন্ডার গ্রাউন্ডে চলে যাওয়ার ঘটনা মূলত দেশি-বিদেশি চক্রান্তের কারণে ঘটেছে। দেশ স্বাধীনের পর খোদ আওয়ামী লীগের অনেক স্টেক হোল্ডার শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে চলে যান। আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন গুলোর বেপরোয়া মনোভাব, বামপন্থী দের বিদ্রোহ শেখ মুজিবুর রহমান কে খুব বেকায়দায় ফেলে দেয়। তাছাড়া শেখ মুজিবুর রহমান শাসক হিসাবে দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেন নি। ১৯৭৪ সালের দূর্ভিক্ষ, বাকশাল কায়েম করতে গিয়ে আমেরিকার বিরাগভাজন হওয়া সহ নানা ধরণের কর্মকান্ড আওয়ামী লীগ কে দ্রুত অজনপ্রিয় করে তুলে জনসাধারণের মাঝে। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান কে পরিবার সহ হত্যার ঘটনা বিদেশি শক্তির ইন্ধন ছাড়া সম্ভব ছিলো না। এরপর জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে মোটামুটি আওয়ামী লীগ কে নেতৃত্বশূন্য করে দেয়ার চেষ্টা হয়। দীর্ঘদিন না চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ১৯৮১ সালে শেখ পরিবারের বড়ো কন্যা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হন। তখন হাসিনা বেশ তরুণ বয়সী ছিলেন, আওয়ামী লীগের ছাত্র নেতারা তখন বেশ পরিণত রাজনীতিবিদ হয়ে গিয়েছিলেন ততোদিনে। সবাই মিলে আবার আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠনে পুরোদস্তুর কাজ শুরু করেছিলেন। অবশেষে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় দেশের মানুষের জনসমর্থন নিয়ে দেশের ক্ষমতায় যায়।

২০০৯-২০২৪ সাল বাংলাদেশের ইতিহাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময় ছিলো। এসময় বাংলাদেশের সাথে বাইরের দেশের কানেক্টিভিটি প্রচুর পরিমাণ বেড়ে যায়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন চরমপন্থী দের ব্যাপক তৎপরতা ছিলো। শেখ হাসিনার মূল দায়িত্ব ছিলো দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা যাতে আন্তর্জাতিক মানের হয় সেদিকে খেয়াল রাখা, দেশের তরুণদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি করা, বিদেশি বিনিয়োগ যাতে বেশি পরিমাণে দেশে আসে সেদিকে নজর দেয়া। কিন্তু শেখ হাসিনা এসবে নজর না দিয়ে বড়ো বড়ো সেতু নির্মাণ ও মেট্রোরেল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। জ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের কথা বেমালুম ভুলে গেলেন। এতে সমাজে অশিক্ষা ও কুশিক্ষা বেড়ে গেল। শেখ হাসিনা বেসরকারি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে সরকারি চাকুরিকে জনপ্রিয় করে তুললেন। নিয়োগ বাণিজ্য, প্রশ্ন ফাঁসের মহাউৎসবে তরুণদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ অনেক কমে গিয়েছিল। সমাজে দুর্নীতি, ঘুষ, অন্যায় ও আনাচার বেড়ে গিয়েছিল। ধনী-গরীবের বৈষম্য বেড়ে যাওয়া ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছিল। সমাজে একধরণের সেন্সর ছিলো যা মুক্ত চিন্তার পক্ষে সহায়ক নয়। তাছাড়া আওয়ামী লীগের প্রোঢ নেতারা প্রায় সবাই দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েছিলেন, ছাত্র সংগঠন গুলো সাধারণ ছাত্র ও বিরোধী ছাত্র সংগঠন গুলোর উপর সীমাহীন অত্যাচার করেছে। তাই জনসাধারণ ও তরুণদের মধ্যে আওয়ামী লীগের জনসমর্থন আ্‌শঙ্কা জনক ভাবে কমে গিয়েছে। তাছাড়া দীর্ঘ ১৫ বছর একটানা ক্ষমতায় থাকার ফলে পরিস্থিতি আগের মতো নেই। তরুণদের মধ্যে সেক্যুলার মনোভাবের রাজনীতির তুলনায় ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতির প্রতি বেশি ঝোঁক দেখা যাচ্ছে। সেক্যুলার দল হিসাবে আওয়ামী লীগ নিজেকে পরিচয় দিতে চাইলেও ক্ষমতার প্রয়োজনে ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বারবার নেগোসিয়েশন করতে দেখা গিয়েছিল। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পতনে এবার ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর অবদান রয়েছে। বামপন্থী ও সুশীলেরা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যায়। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের পক্ষে এমন কোন পজেটিভ সিগন্যাল নাই যা তাদের ফিরে আসতে সহায়ক হবে। আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের অবস্থা এতই করুণ যে বিরোধী ছাত্র সংগঠনের নেতারা ছাত্রলীগে পদ পদবী নিয়ে রাজনীতি করতো। তাই ছাত্রলীগ থেকে সহায়তা পাবে এমনটাও ভাবা যাচ্ছে না।

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফিরে আসার ক্ষীণ যে সম্ভাবনা রয়েছে তা হলো বিরোধী পক্ষ ও বর্তমান সরকার যদি দেশ চালাতে ব্যর্থ হয়।আওয়ামী লীগের প্রবীণ অনেক নেতা জেলে, অনেকে ভারতে আছেন। বাংলাদেশের মানুষের আবার একটা সিনটোম আছে যে দল নিপীড়নের শিকার হয় তখন সে দলের প্রতি সিমপ্যাথি বাড়ে। অতীতে এমন ঘটনা অনেকবার ঘটেছে। এছাড়া বিদেশি শক্তিগুলোর আওয়ামী লীগের প্রতি কেমন মনোভাব ধরে রাখে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ ।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:২৫
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুহূর্ত কথাঃ সময়

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



সামুতে সবসময় দেখেছি, কেমন জানি ভালো ব্লগাররা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়! যারা নিয়মিত লেখে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রচণ্ড নেগেটিভ স্বভাবের মানুষ। অন্যকে ক্রমাগত খোঁচাচ্ছে, গারবেজ গারবেজ বলে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

NVR (No Visa Required) এর জন্য জেনে রাখা দরকার

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৯
×