somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক-এগারোর মতো সরকার দেশে আর আসবে না কিন্তু.....

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এক-এগারোর সরকারের কথা আশা করি সবার মনে আছে। বিএনপি-আওয়ামী লিগের প্রধান নেত্রী ও তাদের পরিবারদের মাইনাস করে সংস্কার পন্থী দের দিয়ে রাজনৈতিক দল গঠনের ব্যর্থ চেষ্টা মাইনাস টু'র অংশ ছিলো। আবার এক-এগারোর সরকারের অপর নাম সামরিক সরকার বললে ভুল হবে না। রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ীদের এক ঘাটে জল খাওয়ানোর জন্য এক-এগারো সরকার বিখ্যাত। মোটা ডোনেশন দিয়েও অনেক সময় পার পেতে হিমশিম খেয়ে গিয়েছিল তৎকালীন সামরিক সরকার। তাই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও ব্যবসায়ীদের কাছে এক-এগারোর সরকার একটি দুঃস্বপ্নের মত!

জুলাই অভ্যুত্থানের পর গঠিত সরকার কি ধরণের সরকার? ইহা কি তত্ত্বাবধায়ক সরকার? কিন্তু বিগত ফ্যাসিবাদী সংগঠন আওয়ামী লীগ তার শাসনআমলে কেয়ারটেকার সরকার বিধান বাতিল করেছে। তাই বর্তমান সরকারকে কেয়ারটেকার সরকার বলা উচিত হবে না। তাহলে এই সরকার কি বিপ্লবী সরকার? কিন্তু বিগত সংবিধানের আলোকে শপথ নেয়া ও সরকার পরিচালনায় এমন সব লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে যারা জুলাই অভ্যুত্থানের মুল অংশীদার ছিলো না। মূলত সংবিধানের মারপ্যাচে ইন্টেরিম সরকার গঠিত হয়েছে। এই সরকারে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ছাত্রদের প্রতিনিধি, আমলাদের প্রতিনিধি, আলেম সমাজের প্রতিনিধি, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি রয়েছে। মজার ব্যাপার হইলো এই সরকারও অনেকটা সেনাবাহিনীর উপর নির্ভরশীল সরকার বলা যাইতে পারে। তার প্রমাণ মিলে সেনাবাহিনীর প্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের বক্তব্যে। বারবার তিনি তার বক্তব্যে এই সরকারের প্রতি তার সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। সরকারকে সেনাবাহিনী ১৮ মাস পর্যন্ত সহযোগিতা করে যাবে বলে তারা প্রতিশ্রুতি বদ্ধ। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা সরকারের প্রধান মাঠের শক্তি হিসাবে বিবেচিত হলেও তাদের প্রটেকশনে সেনাবাহিনী সব সময় তাদের পাশে রয়েছে।

বেশ কয়েকদিন ধরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আবার এক-এগারোর সরকারের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। বিএনপির মহাসচিব ফখরুল সাহেবের একটি সাক্ষাৎকারে সবার ভিতর তোলপাড় শুরু হয়েছে। তবে সবার আগে এই সাক্ষাৎকারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম । উনাকে ঠান্ডা মাথার অধিকারী ও বিচক্ষণ ব্যক্তি হিসাবে জুলাই অভ্যুত্থানের শুরু থেকে জানতাম। কিন্তু তিনি আচমকা ফখরুল সাহেবের সাদামাটা বক্তব্যের প্রতিবাদে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠবেন তা স্বপ্নেও চিন্তা করি নাই। ফখরুল সাহেব কেবল বলেছেন যে, ছাত্র উপদেষ্টারা নতুন রাজনৈতিক সংগঠনে যোগ দিলে ইন্টেরিম সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে ফখরুল সাহেবের বক্তব্য একবারে যথার্থ মনে হয়েছে। শুধু তাই নয় কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক আরো এগিয়ে বলেছেন, রাজনৈতিক দল গঠনের পর ছাত্র উপদেষ্টারা দলে যোগ দিক অথবা না দিক তাদের পদত্যাগ করা উচিত। কারণ ছাত্র উপদেষ্টারা বর্তমানে যে সব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন সবগুলো অতি গুরুত্বপূর্ণ। তারা রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত না হয়েও নির্বাচন কে প্রভাবিত করতে পারবেন উপযুক্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থেকে। উদাহরণ হিসাবে ছাত্রদের কথিত রাজনৈতিক সংগঠন নাগরিক কমিটি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় কাউন্সিলর দের নিয়ে সভা ডেকেছিল এবং তাদের সহযোগিতা করতে অনুরোধ জানিয়েছিল। এমন কথাও শুনেছি নাগরিক কমিটিকে সহযোগিতা করলে তাদের পূর্বে আওয়ামী লীগ কে সহযোগিতা করার অপরাধ থেকে অব্যহতি দেয়া হবে। উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ফখরুল সাহবের বক্তব্যের রিয়াকশনে পাল্টা বলেছে বিএনপি নাকি এক-এগারোর সরকার চায়। ছাত্র প্রতিনিধিরা সরকারে আছে বলে ইহা এক-এগারোর সরকার হয় নি। নাহিদের পুরো বক্তব্য অস্পষ্ট ও ধোঁয়াশা। জামায়াতের বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যখন একই ধরণের কথা বলে তখন ছাত্র উপদেষ্টারা নিরব থাকে। কিন্তু বিএনপি কিছু বললেই তারা প্রচুর এগ্রেসিভ আচরণ করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নাহিদের বক্তব্য নিয়ে জোরেশোরে সমালোচনা চলছে।

জুলাই অভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড হিসাবে খ্যাত মাহফুজ আলম তার নিজ এলাকায় সমাবেশে যোগ দিয়ে পুনরায় এক-এগারো সরকার নিয়ে কথা বলেছে। তার বক্তব্য হচ্ছে, দেশে আর এক-এগারো কোনদিন ফিরে আসবে না। বিদেশি শক্তির তাবেদারি আর মেনে নেয়া হবে না। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হবে না। অর্থাৎ এক-এগারো ফিরে না আসলেও মাইনাস ওয়ান ফরমুলা অটো কমপ্লিট । অবশ্য আওয়ামী লীগ যে পরিমাণ নির্যাতন করেছে তাদের প্রতি দেশের মানুষের ঘৃণা সহজে যাবে না। একই সাথে আওয়ামী লীগের সাপোর্টারদের নির্বাচনের সময় বাসায় বসে টিভি দেখা ও পরিবারের সাথে খানা খাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে । সেজন্য আওয়ামী লীগ কে তারা ধন্যবাদ জানাতে পারে।

নাগরিক কমিটির নেতা নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী সাম্প্রতিক সময়ে কমেডিয়ানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। নিত্য নতুন শব্দ আবিস্কার করে তিনি বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করে চলছেন। তিনি তার সাম্প্রতিক বক্তব্যে বলেছেন, তাদের দল নাকি মুজিববাদ ও জিয়াবাদ কাউকে দেশের ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তার এই বক্তব্যের জবাব বিএনপি নেতারা সুন্দরভাবে দিয়েছেন। তারা যদি নাহিদের মতো বলতো যে দেশে আবার দুই নেত্রী কে মাইনাস টু'র ফরমুলা ও এক-এগারো চালু করার চেষ্টা চলছে তখন রিয়াকশন কেমন হতো? বিএনপিকে কেন আওয়ামী লীগের সাথে ট্যাগ দেয়া হচ্ছে ? খালেদা জিয়া যখন চিকিৎসার উদ্দেশ্যে বিদেশে যায় সেদিন বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের ফেইসবুক পেইজ থেকে পোস্ট করা হয়েছিল, আলহামদুলিল্লাহ! দেশ আপা মুক্ত হলো। পরে অবশ্য সেই পোস্ট মুছে দেয়া হয়। অর্থাৎ ছাত্রদের মস্তিষ্কে মাইনাস টু ফরমুলা স্মৃতি এখনো ভাস্বর। সেই ছাত্রদের প্রতিনিধিরা যখন বিএনপিকে ১/১১ ফিরিয়ে আনার জন্য অভিযোগ করছে তখন বিষয়টি ভূতের মুখে রাম নামের মতো শোনায়।



সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১২:০৩
৮টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×