somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিদেশি শক্তির ভূরাজনৈতিক খেলার উর্বর ভূমিতে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ ।

৩১ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিন ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য দেশের অভ্যন্তরে অনেক ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। অনেক ধরণের অ্‌শুভ শক্তি শেখ হাসিনার সময়ে নিজেদের শক্তি বাড়িয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনার গোয়েন্দা সংস্থার মানুষজন দুর্নীতির মধ্যে ব্যস্ত থাকায় দেশের ভিতর কি ঘটছে তা দেখার সময় ছিলো না। খোদ আওয়ামী লীগ নিজেদের দলের ভিতর কারা প্রবেশ করছে তা নিয়ে সজাগ ছিলো না। তারা ব্যস্ত ছিলো ৫০ লাখ/ ১ কোটি টাকার বিনিময়ে পদপদবী বিক্রির ধান্দায়। নিজেদের দলের ক্ষতির মধ্য সীমাবদ্ধ থাকলে মানা যেত কিন্তু রাষ্ট্রের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য বিদেশি শক্তিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল শেখ হাসিনা। উন্নয়ন সহযোগী হওয়ার নামে প্রতিটি বিদেশি শক্তি বাংলাদেশের উপর নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে মরিয়া! শেখ হাসিনা এসব বিদেশি শক্তিকে ম্যানেজ করার জন্য বিভিন্ন প্রজেক্ট দিয়ে তাদের খুশি রাখার চেষ্টা করতেন। ধীরে ধীরে দেশের মাটিতে বিদেশি শক্তি গুলো একে অপরের মধ্যে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিল।

শেখ হাসিনার পতনের পর আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছিল কিছু বিদেশি শক্তি এবার পিছু হটতে পারে কিন্তু বর্তমানে তেমন কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ভারতের কথা ধরা যাক ; ভারত শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের পুরাতন মিত্র। সেই পুরাতন মিত্র কে ব্যবহার করে শেখ হাসিনা ২০১৪ সালে অজনপ্রিয় হয়েও ভোটে জিতে যান। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অংশ না নিলেও ভারতের সহায়তায় টিকে যান হাসিনা। বাংলাদেশ মৌলবাদিদের হাতে যাবে এই অজুহাতে ভারত ও পশ্চিমা বিশ্ব শেখ হাসিনার ক্ষমতায় থেকে গেলেও তারা তেমন টু শব্দ করেনি। জুলাই অভ্যুত্থানের পর ভারতের বাংলাদেশের উপর একক আধিপত্য বিস্তারের স্বপ্নে আঘাত লাগে। ইন্টেরিম সরকারকে বিশ্বের কাছে জঙ্গীবাদ ও মৌলবাদিদের সরকার হিসাবে প্রমাণ করতে গোদি মিডিয়া কে ব্যবহার করছে ভারত। তাদের বিভিন্ন মিথ্যা দাবীর কারণে বারবার ইন্টেরিম সরকারকে বিব্রত হতে হয়েছে। ভারতের পক্ষে লবি হিসাবে কাজ করেন মাইকেল ক্যুগমেন ২৮/২৯ জানুয়ারি ডেইলি স্টারের একটি অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। তিনি একজন পাক্কা ভারতের দালাল। তার ভাষ্যমতে ইন্টেরিম সরকার নাকি চীনের সাথে সখ্যতা বাড়িয়েছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সরকার কে চীনের থেকে দূরে থাকার কথা বলতে পারে। মাইকেল ক্যুগমেন আরো আশা করছেন বিএনপি ও জামায়াত এখন আলাদা হয়ে গেছে। ভারত জামায়াত কে মৌলবাদি সংগঠন মনে করে। নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় যাবে। অর্থাৎ জাতীয় নির্বাচনের বহুদিন পূর্বে এই ধরণের বক্তব্য বিএনপির জন্য বিপজ্জনক। দেশে অনেক পক্ষ সৃষ্টি হয়েছে যারা বিএনপির সাথে ভারতের গুড রিলেশনের অভিযোগ তুলে বিএনপিকে ফ্যাসিবাদের সহযোগী তকমা দিতে চায়। কিন্তু ভারত তার নিজের ও আওয়ামী লীগের স্বার্থ হাসিল করার জন্য ক্রমাগত এমন বক্তব্য দিয়ে বিএনপিকে বিব্রত করছে।

আমেরিকা বাংলাদেশের ইন্টেরিম সরকারের নিকট সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে। কারণ ড. ইউনূসের সাথে আমেরিকার ডেমোক্রেটিক দলের ভালো সম্পর্কের কথা সবাই জানে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে বারবার চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। শেখ হাসিনা রেজিমের প্রতি আমেরিকার নেগেটিভ মনোভাব ছিলো ২০০৮ সালের ক্ষমতায় বসার পর থেকেই। বাংলাদেশে যখন চীনের বিনিয়োগ বেড়ে যাচ্ছিল তখন ভারত ও আমেরিকা সতর্কতার সাথে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিল। জুলাই অভ্যুত্থানের পরও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার চীন সফর নিয়ে কৌতুহলী ছিলো ভারত-যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে রিপাবলিকান দল ক্ষমতায় এবং ক্ষমতায় এসে ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের উপর শুল্ক বাড়িয়ে দেয়ার পদক্ষেপ নিবেন বলে ঘোষণা করেছেন। বাংলাদেশ যাতে চীনের দিকে ঝুকে না পড়তে পারে সেই বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প সোচ্চার হতে পারেন ভবিষ্যতে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রোহিঙ্গা অনুদান বাদে বাকি সব অনুদান স্থগিত করেছেন। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় এলএনজি চুক্তির পাশাপাশি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ট পারিবারিক বন্ধু বাংলাদেশে এসে ড. ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। আমেরিকার একদিকে অর্থসহায়তা বন্ধ অন্যদিকে বিনিয়োগের জন্য প্রাইভেট ব্যবসায়ীদের হটাত করে বাংলাদেশে সফর অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। দেশের ভিতর রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিনিয়োগের পরিবেশ নেই বলে অনেক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদেশি বিনিয়োগ প্রথম ছয়মাসে আগের অর্থবছরের তুলনায় অনেক কম।

চীন শেখ হাসিনার পতনের পর তিন মাস কোন ঋণ দেয়নি। তাছাড়া চীনা বিনিয়োগে তৈরি প্রজেক্ট নিয়ে নানা রকম অসন্তোষ রয়েছে। চীন ভারতের আকস্মিক বাংলাদেশের উপর প্রভাব কমে যাওয়ার সুযোগ নিতে চাইলেও বিবিধ কারণে নিজেদের ঋণ ফেরত পাবে কিনা তা নিয়েও সন্দিহান রয়েছে। অন্যদিকে চীনের ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়াতে অনুরোধ জানিয়েছিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। চীনে এতে সম্মতি জানায়। চীন শেখ হাসিনা জানুয়ারি মাসে নির্বাচনে জয়ী হলেও ভারতের প্রভাব সরকারের উপর প্রকট হওয়াতে খুশি ছিলো না। তবে দেশের রাজনীতিকে কলুষিত করতে ২০১৮ সালে শেখ হাসিনাকে নির্লজ্জের মতো সাপোর্ট দিয়েছিল চীন । বর্তমানে চীন বাংলাদেশে নিস্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।

বাংলাদেশে বিদুৎ কেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার উপস্থিতি শেখ হাসিনার ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার অন্যতম কূটকৌশল ছিলো। শেখ হাসিনার এসব দিনের ভোট রাতে করার নির্বাচন নিয়ে আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন খুশি ছিলো না। তাই চীন ও রাশিয়ার দিকে ঝুকে পড়ে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ধরে রাখতে চেয়েছিলেন। তবুও শেষ রক্ষা হয় নি। রাশিয়া বর্তমানে রুপপুরের পেমেন্ট নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা বাংলাদেশ থেকে পেমেন্ট নিতে পারছে না। চীনের মতো রাশিয়াও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।

জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের এনগেজমেন্ট বেড়েছে । ভারতীয় মিডিয়া প্রোপাগাণ্ডা চালিয়েছিলো যে সিআইএ-আইএসআই মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে শেখ হাসিনা কে উৎখাত করা হয়েছে। কিন্তু আমেরিকার পক্ষ থেকে বরাবর অস্বীকার করা হয়েছে। পাকিস্তান বাংলাদেশের সাথে জাহাজে বাণিজ্য শুরু করে। পাকিস্তানের শিল্পীরা বাংলাদেশে অনেক বছর পর গান গাইতে আসে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল পাকিস্তানে যায়। শোনা যাচ্ছে পাকিস্তান সাথে মহড়ায় অংশ নিতে পারে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী। পাকিস্তানের সাথে এনগেজমেন্ট শুধু ব্যবসায়িক পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকলেই ঠিক হতো তবে সাম্প্রতিক সময়ে একটি ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে ইন্টেরিম সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সাথে পাকিস্তানের রাজনৈতিক যোগাযোগ রয়েছে। অন্য কোন ব্লগে তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।

বিদেশি শক্তিগুলোর শক্ত উপস্থিতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলছে। বিভিন্ন দেশের চাহিদা মত কাজ করতে গিয়ে বারবার হোচট খাচ্ছে ইন্টেরিম সরকার। দেশে সুষ্ঠু রাজনীতির জন্য যা অশনি সংকেত হিসাবে দেখা দিতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:৩১
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৭


ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

পহেল গাঁয়ে পাকিস্থানি মদদে হত্যাকান্ডের জন্য ভারত পাকিস্থানে আক্রমন করে গুড়িয়ে দেয় , আফগানিস্থান তেহেরিক তালেবানদের মদদ দেওয়ার জন্য, পাকিস্থান... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×