
ইন্টেরিম সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে নাটকীয় ভাবে দেশের পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হতে শুরু করে। জুলাই অভ্যুত্থানের ধাক্কা জাতি সামলানোর আগেই মব জাস্টিস মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছিল। এরপর শুরু হয় আন্দোলন। একে একে দাবী দাওয়া নিয়ে রাস্তায় নামতে দেখা যায় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের। ইন্টেরিম সরকার প্রথম দিন থেকে আজ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। সরকারের প্রশাসন ঠিকভাবে ফাংশান করতে পারছে না। অন্যদিকে বিরোধী দল গুলো জাতীয় নির্বাচনের জন্য চাপ জারী রেখেছে। লিন্তু সরকার দেশে যাতে আর কোন ফ্যাসিস্ট তৈরি না হয় তার জন্য সংস্কার করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। পরাজিত শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকার কে সেই কাজটুকু ঠিকভাবে করতে দিচ্ছে না। নানা রকম উসকানি দিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ জাগিয়ে তুলেছে। তারই প্রেক্ষিতে গতকাল থেকে ধানমন্ডি ৩২ সহ অনেক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িঘর ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে বিরোধী প্রতিপক্ষ। ধারণা করা যায় সরকারের নিরব সম্মতিতে বি-জাত ও বৈবিছা সহ তাদের পকেট সংগঠন গুলো এই কাজে যোগ দিয়েছিল।
গতকালের ভাঙচুর ও আগুন দেয়ার আজও অনেক আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়ি আগুন দেয়া হয়েছে। একজন সমন্বয়ক হান্নান মাসুদ যিনি ভবিষ্যতে এমপি হতে চান তার ফেইসবুক স্টাটাসে আওয়ামীলীগের ৩০০ এমপিদের বাড়ি দখল করে সেখানে শহীদদের জন্য ফ্ল্যাট করার দাবী জানান। অর্থাৎ ঘৃণা ও প্রতিহিংসা মূলক পদক্ষেপ নেয়ার জন্য তিনি রাজনৈতিক দলের ছাত্রদের উসকানি দিচ্ছেন। কিন্তু সমস্যা হলো আওয়ামী লীগের একজন ওয়ার্ড কমিশনার যিনি তার এলাকায় মানুষের উপর জুলুম করেছে আপনি কি তার বাড়িঘরও ফ্যাসিবাদের প্রতীক হিসাবে ভেঙে ফেলবেন ? অনেকে গোপালগঞ্জে গিয়ে আরো ভাংচুরের আহবান জানাচ্ছে যা গৃহযুদ্ধের শামিল। সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উপরের নির্দেশে পুরোপুরি নিস্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই ব্যাপারে অবশ্যই যুক্তিসঙ্গত পদক্ষেপ নিবেন বলে দেশের মানুষ আশাবাদী। সরকার আজকে বিবৃতি দিয়েছে যে সব কিছুর জন্য দায়ী শেখ হাসিনা। তার উসকানি মূলক বক্তব্যের কারণে আজ এত ভাংচুর হয়েছে। ভারত সরকারের কাছে অনুরোধ জানানো হয় যাতে শেখ হাসিনার মুখ বন্ধ রাখা হয়।
দেশের ভিতরে জনমনে এখন নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। একশ্রেণী বলছে সরকার কে ব্যর্থ দেখাতে এতসব ঘটনা সুপরিকল্পিত ভাবে ঘটনা হচ্ছে। সরকার কে কারা ব্যর্থ দেখাতে চায় ? ১- সরকার ব্যর্থ হলে দ্রুত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। এতে লাভবান হবে বিএনপি কারণ তাদের আগামী নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার গতকালের ঘটনায় বিএনপির মধ্যে নিরবতা ও কর্মীদের মধ্যে উৎসব ভাব ছিলো। কারণ তারা ভাবছে খালেদা জিয়াকে বাসভবন ফিরোজা থেকে বের করে দেয়ার প্রতিশোধ নেয়া গেল। তাই সরকারের সহায়তা প্রদানকারী ছাত্র সংগঠনের সাথে তারাও বিপুল বিক্রমে যোগ দিয়েছিল। ২- রাজনৈতিক দলের পকেট হিসাবে পরিচিত ছাত্ররা ও তাদের গুরুরা তখন জোর করে বিপ্লবী সরকার গঠনের চেষ্টা করবে বলে শোনা যাচ্ছে। সংবিধান বাতিল করে নিজেদের ইচ্ছামত অর্ডিন্যান্স ও ডিক্রি জারী করে ইচ্ছামতো দেশ চালানোর স্বপ্ন রয়েছে তাদের। কিন্তু এতে করে বিএনপির সাথে তাদের কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট দেখা দিবে। বিএনপির সাথে এই ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে তারা সংঘাতে যাবে না। তাহলে কি ১/১১ অথবা আইয়ুব খান স্টাইলে সামরিক শাসন আসবে ?
১৯৫৬ সালে পাকিস্তানে পাটের কারখানা গুলোতে আগুন লাগিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলা হয়েছিল। বাংলাদেশে এখন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এরকম অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সাধারণত ক্ষমতার পটপরিবর্তন ঘটে যায়। পাকিস্তানে এরকম অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে আইয়ুব খান ১৯৫৮ সালে দেশের ক্ষমতা দখল করেন। এরপর থেকে পাকিস্তানে শুরু হয় দীর্ঘ সময় ধরে সেনাবাহিনীর শাসন। বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য বলতে গেলে ১/১১ এর মতো সামরিক সরকার একবার দেশে শাসন ক্ষমতায় ছিলো। কিন্তু সেই শাসন ব্যবস্থা রাজনৈতিক দলগুলোর কারণে ব্যর্থ হয়। এবার এই ধরণের সামরিক সরকার চাইলে শুরু থেকেই ক্ষমতা নিতে পারতো। কিন্তু তা না করে সেনাবাহিনীর সমর্থনে ইন্টেরিম সরকার গঠিত হয়। কিন্তু দেশের শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে না পারলে তখন সাধারণ জনগণ অনিচ্ছাকৃত ভাবে সামরিক শাসন দেখতে চাইলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।
দেশে সামরিক শাসন আসলে বিএনপির তেমন লাভ দেখি না। বাকি দলগুলো কিভাবে রিয়েক্ট করে সেটাও বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু এবার দীর্ঘদিনের জন্য সামরিক সরকার আসতে পারে। কারণ যোগ্য কোন রাজনৈতিক দল নেই এই অজুহাতে সেনাশাসনের সময়কাল দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। আর এমন কিছু ঘটলে পাকিস্তানের ভাগ্য বাংলাদেশ কে বরণ করতে হবে।
পাকিস্তানে সামরিক শাসনের কুপ্রভাব থেকে জনগণ আজো মুক্তি হতে পারেনি। সেখানে এখনও গণতান্ত্রিক দলগুলোর ক্ষমতায় যাওয়া নির্ভর করে সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার উপর। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার মদদে প্রতিদিন গুম খুনের শিকার হতে হচ্ছে জনগণ কে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রত্যক্ষ মদদে পাকিস্তানে চরমপন্থীরা একে অপরের উপর হামলা করছে। পুরো দেশে সেনাবাহিনী ছাড়া পাকিস্তানের আর কেউ শান্তিতে নেই। বাংলাদেশে বর্তমানে আইয়ুব খানের ক্ষমতা গ্রহণের সময় যে ধরণের ইলিমেন্ট ছিলো তার কিছু অংশ প্রতীয়মান হচ্ছে। সামরিক শাসন আসলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের তীব্র সংকট দেখা দিবে। সেনাবাহিনীর ক্ষমতা প্রলম্বিত হলে তারা নানা ধরণের অপরাধ কর্মে জড়িয়ে পড়বে। এর প্রমাণ বিগত ছয়মাসে পত্র পত্রিকা খুললে আমরা দেখতে পাবো। সেনাবাহিনী দেশের ক্ষমতা নিতে চাইলে বাংলাদেশের জনগণ সাধুবাদ জানাবে। তারা কোনদিন দক্ষিণ কোরিয়ার মতো সেনাবাহিনীর বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়াবে না।
ইন্টেরিম সরকারের এই মূহুর্তে কি করণীয় ? আপাতত তারা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য স্থাপন করতে কাজ করতে পারে। ন্যুনতম কিছু সংস্কার করে তারা আগামী বছর জানুয়ারি মাসে নির্বাচন দিতে পারে। দিন যত যাচ্ছে ইন্টেরিম সরকারের দূর্বলতা তত প্রতীয়মান হচ্ছে। যে সরকারের দেশের প্রশাসনের উপর নিয়ন্ত্রণ নাই তাকে আর যাই হউক সরকার বলা চলে না। কিন্তু সরকারের নিজস্ব ইন্টারেস্ট আছে রাজনৈতিক দল গঠনের। তাই তারা সময়ক্ষেপণ করার চেষ্টা করবেই। আর দেশের অস্থিতিশীল অবস্থার অজুহাতে নির্বাচন পেছাতে চাইলে চরম লাঞ্চনার মধ্যে দিয়ে এই সরকারের পতন ঘটবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


