somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোটা না মেধা ?

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জুলাই অভ্যুত্থানের সূত্রপাত হয়েছিলো কোটা প্রথার যৌক্তিক সংস্কার করে যাতে মেধাবীদের সরকারি চাকুরিতে সুযোগ বৃদ্ধি পায়। শেখ হাসিনা ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেনীতে কোটা প্রথা বাতিল করলেও তেরো গ্রেড থেকে বিশতম গ্রেডে বিভিন্ন কোটা থেকে গিয়েছিলো ।চল্লিশতম বিসিএস ছিলো প্রথম কোটা মুক্ত বিসিএস যেখান থেকে এক নতুন যুগের সূচনা হয়। কিন্তু '২৪ এর জানুয়ারিতে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা ৫৬% কোটা প্রথা আবার চালু করেছিলেন। উহার তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরাফাত ওরফে কুমড়ো পটাশ কিছু গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন কোনো কোটা না থাকায় উহার দলের লোকজনের সরকারি চাকুরির খায়েশ পূর্ণ হচ্ছে না। তাছাড়া প্রশাসন আওয়ামী লীগ মুক্ত হয়ে গেলে যে কোন সময় গণেশ উল্টে যেতে পারে। এরপর শেখ হাসিনা পুনরায় কোটা বহাল রাখার পক্ষে মত দেন এবং তরুণদের দেয়া হাতে হ্যারিকেন নিয়ে ভারতে পলায়ে যান।

জুলাই অভ্যুত্থানের পিছনে আরো কিছু বিষয় কাজ করেছিলো। আজকে যাদের প্রাইমারী ৩য় ধাপে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পরও নিয়োগ বাদ দেয়া হলো তাদের সাথে জুলাই অভ্যুত্থানের কানেকশন আছে। আবেদ আলীর প্রশ্নফাঁসের বিসিএস ক্যাডার, ৪৬ তম বিসিএস প্রিলিমিনারী প্রশ্ন, ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির ২০২১ ভিত্তিক সারকুলারের সিনিয়র অফিসার পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের নিউজ যখন পত্রপত্রিকায় আসে তখন সকল চাকুরি প্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা তীব্র ক্ষুব্ধ ছিলো সরকারের উপর। আমিও এসব ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন। একে-তো করোনার কারণে মানুষের চাকুরি চলে যাচ্ছে কিন্তু নতুন তেমন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে না অন্যদিকে সরকারি চাকুরিতে দেদারসে প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে ছাত্রলীগের পোলাপান দের চাকুরি পাওয়া দেখে তাদের ব্যাচমেটরা সরকারের উপর নাখোশ ছিলো। শেখ হাসিনা বেসরকারি কর্মসংস্থান সৃষ্টি না করে সরকারি চাকুরির প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য একটি পে-স্কেল ঘোষণা করছিলেন । শিক্ষার্থীরা দেখলো সরকারি চাকুরি মানে মান সম্মান প্রভাব ও প্রতিপত্তি তাই সকল পেশা বাদ দিয়ে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য সবাই প্রথম বর্ষ থেকে পড়াশোনা শুরু করলেন। কিন্তু দিনের পর দিন প্রশ্নফাঁস উহাদের হতাশ করেছিলো।

প্রাইমারী ৩য় ধাপের জন্য যাদের সুপারিশ করা হয়েছিলো তারা মূলত পূর্বের তৃতীয় শ্রেণী ও প্রাইমারীর কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। অভ্যুত্থানের ইমিডিয়েট পূর্বে শেখ হাসিনা যে ৯৩ শতাংশ মেধা কোটা চালু করেছিলেন উহা এখানে অনুসরণ করা হয়নি। ইন্টেরিম সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে পূর্বের সিস্টেম অনুসরণ না করে তারা ৯৩ শতাংশ মেধা কোটার সিস্টেম অনুসরণ করবেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যারা এখন রাস্তায় আন্দোলন করছে তাদের ইন্টেরিম সরকার ক্ষমতায় এসে সুপারিশপ্রাপ্ত করেছে। কিন্তু কেন ? তখন তো পুরানো কোটা পদ্ধতি বাতিল হয়ে সকল গ্রেডের জন্য মেধা কোটা ৯৩ শতাংশ বহাল ছিলো। ইন্টেরিম সরকার কেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কে নির্দেশ দিলেন না যে বর্তমানে জারীকৃত প্রজ্ঞাপন মেনে সুপারিশ করতে হবে। এখন যে আন্দোলন হচ্ছে এর দায় তাহলে কাদের ? অবশ্যই সরকার কে এর দায় নিতে হবে। আপনি চুয়াল্লিশতম বিসিএস মৌখিক ভাইভা পুনরায় নিলেন কিন্তু প্রাইমারীর ক্ষেত্রে কেন অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করে সুপারিশ করে দিলেন ? যারা সুপারিশপ্রাপ্ত হলো আগের কোটা পদ্ধতির মাধ্যমে তারা দুইভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হইলেন। প্রাইমারীর সারকুলার দিয়েছিলো ২০২৩ সালের মার্চ মাসে। পর্যায়ক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের সারকুলার হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষার্থীরা সুপারিশ প্রাপ্ত হয়ে চাকুরি করছেন কিন্তু তৃতীয় ধাপের মানুষজন সুপারিশ প্রাপ্ত হয়ে নিয়োগ হতে বঞ্চিত হলেন। সারকুলারের প্রায় একবছর পর ২০২৪ সালের মার্চ মাসে তৃতীয় ধাপের এক্সাম হয়। এত দীর্ঘসূত্রিতার কারণে ও নতুন কোটা পদ্ধতি চালু হওয়ার জন্য আজকে এত ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে সবাই কে। যারা সুপারিশপ্রাপ্ত হলেন তাদের মধ্যে নারী, পোষ্যকোটার মাধ্যমে চান্স পাওয়া অনেকে বাদ যাবেন। কারণ সে দুই কোটা এখন আর বলবৎ নেই। এতে সুপারিশকৃতদের অনেকে সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন হবেন।

প্রাইমারী তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চিটাগাং বিভাগের জন্য সারকুলার দেয়া হয়েছিলো। যখন সারকুলার দেয়া হয় তখন আমিও টেকনিক্যালি বেকার ছিলাম। আমি ফরম তুলেছিলাম। রোজার মধ্যে এক্সাম হয়েছিলো ২০২৪ সালে। আমি ভোরবেলায় যখন সাহরি খেয়ে পড়তে বসি তখন হটাৎ আমার একজন পরিচিত আমাকে whatsapp করে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর পাঠায়। সে বলে আরো লাগলে তাকে জানাইতে। আমি তখন সিদ্ধান্ত নেই এই এক্সাম আমি দিবো না। কারণ তখন প্রাইমারীতে ৮০ শতাংশ কোটায় নিয়োগ দেয়া হতো। এভাবে প্রশ্নফাঁস হলে আর এমনিতেও কোন চান্স নাই। যাই হউক সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ৩য় ধাপের যখন রেজাল্ট পাবলিশ হয় তখন আমি ১০ম গ্রেডের অন্য একটি জবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলাম। ৩য় ধাপে যারা টিকেছিলেন খুব কম সংখ্যক মেধায় নিয়োগ পেয়েছিলেন। তাই যারা কোটার সুযোগে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন নিয়োগ বাতিল হওয়াতে তাদের মাথায় হাত !
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:২৫
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এয়ার এম্বুলেন্স ও তিন বারের প্রধানমন্ত্রী’কে নিয়ে জরিপে আপনার মতামত দেখতে চাই॥

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৬:৩০

যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডন শহরে বসবাস করছেন। সেই দলের মূল নেত্রী অসুস্থ। আর তাকে চিকিৎসার জন্যে বিদেশ যাওয়ার এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দিবে কাতারের আমির। বিএনপি এবং জিয়া পরিবারের কি এতটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৭


ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

পহেল গাঁয়ে পাকিস্থানি মদদে হত্যাকান্ডের জন্য ভারত পাকিস্থানে আক্রমন করে গুড়িয়ে দেয় , আফগানিস্থান তেহেরিক তালেবানদের মদদ দেওয়ার জন্য, পাকিস্থান... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×