

ইন্টেরিম সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার ও নির্বাচন বিষয়ে মতানৈক্য দূর করার জন্য ঐক্যমত কমিশন গঠন করেছে। এই কমিশনের প্রধান হচ্ছেন মুহাম্মদ ইউনূস সাহেব। বিভিন্ন সেক্টরে সংস্কারের জন্য ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। সংস্কার কমিশন গুলি কতকগুলো সুপারিশ করেছে যার মাধ্যমে জুলাই চার্টার নামক পেপার তৈরি করা হবে। এই পেপারে লিপিবদ্ধ থাকবে রাজনৈতিক দলগুলো কি কি বিষয়ে একমত প্রকাশ করেছেন এবং কোথায় সংস্কার দরকার। নির্বাচনের পূর্বে সংস্কার কাজ কতটুকু সম্পাদন করা যাবে ও নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই চার্টার অনুযায়ী কতটুকু সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পাদন করলো তাও জুলাই চার্টার থেকে বোঝা যাবে।
ইন্টেরিম সরকারের বাস্তবিক অর্থে এত তাড়াতাড়ি ঐক্যমত কমিশন গঠন করে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠকে বসার ইচ্ছা ছিলো না। কিন্তু প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির চাপে ও কিছুটা বিদেশি চাপে পড়ে সরকার বাধ্য হয়ে মিটিং ডেকেছে। বিএনপি শুরু থেকেই জাতীয় নির্বাচনের জন্য ইন্টেরিম সরকার কে চাপে রেখেছে। কারণ বিএনপির ভয় ১/১১ এর সরকারের মতো ইন্টেরিম সরকার যদি বিদেশি শক্তির মারপ্যাচে বিএনপিকে আবার ক্ষমতায় যেতে বাধা দেয় সে জন্য। তাছাড়া বিএনপির সাথে বৈষম্যবিরোধীদের কয়েকটি বিষয় নিয়ে মতানৈক্য দেখা দেয়। বৈষম্য বিরোধীরা চেয়েছিলো সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান লেখা হোক। কিন্তু বিএনপি তাতে বাধা দেয়। আবার রাষ্ট্রপতি অপসারণ করা নিয়েও দুই পক্ষের মধ্যে ঝামেলা হয়। বিএনপি জাতীয় সরকার গঠনে সরাসরি ভেটো দেয়। এভাবে জুলাই অভ্যুত্থানের কিছু অংশীদারের সাথে বিএনপির দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির বাধার কারণে জুলাই ঘোষণাপত্র কারো মতামত না নিয়েই ঘোষণা করতে গিয়েও বাধার মুখে পড়েছে বৈষম্য বিরোধীরা। এসব কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কারের বিষয়ে ঐক্যমতে পৌছানো জরুরি বলে মনে করছে সরকার।
প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক দল মিলে মোট ১০০ জন গিয়েছিলেন ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে। প্রথম দিন সবাই একসাথে যাওয়ার কারণ হচ্ছে সরকার আসলে দেখাতে চেয়েছে যে ঐক্যমত কমিশনের ব্যাপারে সবাই একমত কিনা ! প্রাথমিক ভাবে তারা সফল কিন্তু মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে যখন সংস্কারের জন্য সুপারিশ করা বিষয়াদি নিয়ে আলাদা আলাদা ভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা হবে। ইন্টেরিম সরকার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কোন কোন রাজনৈতিক দল কতগুলো সংস্কারের বিষয়ে একমত ও দ্বিমত হয়েছে তা সংরক্ষণ করবেন। জনসাধারণ চাইলে তা ওয়েবসাইট ভিজিট করে দেখতে পারবেন।
নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে ইন্টেরিম সরকার সংস্কারের প্রতি মনোযোগী বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু তারা নির্বাচিত সরকার নয়। তাই বিএনপির পক্ষ থেকে দাবী উঠেছে সংস্কার কেবল নির্বাচিত সরকারের পক্ষে করা সম্ভব। সংস্কারের মূলা দেখিয়ে ইন্টেরিম সরকার কিংস পার্টি গঠন করছে বলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্য থেকে অভিযোগ উঠেছে। দেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি উন্নয়নে সরকারের কোন সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে না। এই সুযোগে অনেকে বলা আরম্ভ করেছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি না হলে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে না। ইন্টেরিম সরকার জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে আসলে কতটা আগ্রহী তা নিয়েও সন্দেহ আছে। অথচ শুধু শুধু ক্ষমতায় বসে কোথাও আইনশৃংখলা পরিস্থিতি অবনতি হলে শুধু ধমকে কাজ সারতে চাইছে। বাস্তবিক ভাবে কোন ব্যবস্থা সরকার নিতে পারছে না। এভাবে আর কতদিন চলবে ?
বাংলাদেশের সমাজে বহুকাল আগেই ভাঙন ধরেছে। আমরা কোন একটি ঘটনার ভালো ও মন্দ বিচার করি কেবল তা নিজের সাথে ঘটলে। জুলাই অভ্যুত্থানের সময় মোটামুটি সবাই এক হয়ে স্বৈরাচার পতনে মাঠে নামলেও অভ্যুত্থানের পর আবার যেই লাউ সেই কদু। শুধু সাধারণ চাকুরি প্রত্যাশী বাদে জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া বেশিরভাগ মানুষ নিজ নিজ এজেন্ডা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছিলো। এখন তাদের মধ্যে শুরু হয়ে হয়েছে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট ! এতে ভুক্তভোগী হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সবচেয়ে বেশি সমস্যার মধ্যে পড়েছে বেকার সমাজ। আওয়ামী লীগের নেতাদের শিল্পকারখানা দেনার দায়ে বন্ধ হয়ে প্রায় ১ লাখ নতুন বেকার সৃষ্টি হয়েছে। অথচ সরকারের প্রধান কাজ ছিলো এটলিস্ট পুরাতন কর্মসংস্থান গুলো ঠিক রাখা। সরকার কোন চেষ্টাই করেনি। আবার দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক না হওয়ার ফলে সরকারি চাকুরির পরীক্ষা সব স্থগিত হয়ে আছে। প্রায় ৭/৮ লাখ বেকার যুবককে হীনমন্যতায় দিনানিপাত করতে হচ্ছে। শেয়ার বাজার গত ছয়মাসে এতটাই খারাপ অবস্থায় যে মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছে। সরকার এই ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নিয়েছে ?
সরকারের সামনে নতুন সমস্যা হিসাবে আবির্ভাব হয়েছে ' ইসকন' নামক নতুন উগ্রবাদী জনতা। তাদের আচরণে দেশবাসী আতঙ্কিত ! কোনদিন বইমেলায় হামলার হুমকি দিচ্ছে, কোথাও রেস্টুরেন্ট বন্ধের জন্য হুমকি দিচ্ছে কিন্তু সরকার তাদের বকুনি দেয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারছে না। সরকারের এক অংশের সাথে তাদের যোগাযোগ আছে এবং জুলাই অভ্যুত্থানে তারা অংশ নিয়েছিলো সরকারের সেই অংশের পৃষ্ঠপোষকতায়। সরকার যদি মনে করে থাকে এদের কে প্রশ্রয় দিবে আবার জুলাই অভ্যুত্থানের ঐক্য জনসাধারণের মধ্যে জাগ্রত থাকবে তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। বাংলাদেশের মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধ ভুলে গিয়েছে যখন '৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ হয়েছে। নিজেদের চলাফেরা ও বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ আসতে শুরু করলে জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিটও ভুলে যাবে। এতে সুযোগ সৃষ্টি হবে পতিত স্বৈরাচারের। মানুষ নতুন আযাবে অতিষ্ঠ হয়ে পুরাতন আযাব বেশিদিন মনে রাখবে না। তখন কোথায় যাবে সরকার আর কি দশা হবে এসব ঐক্যমত কমিশনের ?
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:২২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



