somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেনাপ্রধানের ভাষণ নিয়ে তোলপাড়: চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ !

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গতকাল ২৫শে ফেব্রুয়ারি মহাখালীর RAWA ক্লাবে সেনাবাহিনীর প্রধান ওয়াকার উজ জামান গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছেন। সেনাপ্রধানের এই বক্তব্য যেন সমাজে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যে এক ধরণের উদ্বেগ ও চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। সব জায়গায় কেবল সেনা প্রধানের বক্তব্যের চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। সোশ্যাল ইনফ্লুয়েঞ্জাদের আয় উন্নতির পথ হয়েছে। বিগত ১৬ বছর বাংলাদেশের গুজব মিডিয়ার সংবাদ শুনে বাঙালির চিন্তা ভাবনায় জং ধরেছে । বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পেইড ইনফ্লুয়েঞ্জাদের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ শুনে তারা যে কোন বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে থাকেন। এক শ্রেণীর লোক ওয়াকারের উপর ভয়ানক ক্ষিপ্ত কারণ তারা যাদের অনুসরণ করেছে তারা মাইক্রোস্কোপ দিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে ওয়াকার আসলে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। যখনই নিজের মতের সাথে অন্যের মতামত মিলে না তখন আমরা অন্যকে মতলব-বাজ, ফ্যাসিবাদের দোসর বলিয়া প্রভূত আনন্দ লাভ করি।

সেনাপ্রধানের ভাষণ থেকে আমরা মোটা দাগে যা জানতে পারি :

১- সেনাপ্রধান একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন যাতে ইন্টেরিম সরকার আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে আয়োজন করে তার ব্যাপারে কাজ শুরু করার আহবান জানিয়েছেন। এই ধরণের বক্তব্য দেশের ভিতর বিভিন্ন শক্তিকে ক্ষুব্ধ করেছে। যারা জুলাই অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য লালায়িত হয়ে পড়েছেন তাদের জন্য গতকালের ভাষণ হতাশাজনক। দেশে নির্বাচন হলে নতুন সরকার আসবে যার ফলে তাদের বিদ্যমান সুযোগ, সুবিধা আগের মতো থাকবে না। বিপ্লবী সরকার গঠনের স্বপ্নেও সেনাপ্রধানের বক্তব্য এক ধরণের চপেটাঘাত। সেনাপ্রধানের অন্তর্ভুক্তিমূলক শব্দ উচ্চারণ করার মধ্য দিয়ে তিনি সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন দেখতে চান বলে জানিয়েছেন। সেনাপ্রধানের সুরের সাথে জাতিসংঘ ও এম্বাসীগুলোর সুরের মধ্যে আমরা ঐকতান খুজে পাই।

২- রাজনৈতিক দলগুলো ও ইন্টেরিম সরকারের প্রতি এক ধরণের কড়া বার্তা দিয়েছেন সেনাপ্রধান। রাজনৈতিক দল ও তাদের অংগসংগঠন গুলো নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। জুলাই অভ্যুত্থানের ঐক্য এখন আর নেই। সবাই এখন সবার প্রতিপক্ষ হয়ে গেছে। এই বিভেদের সূত্রপাত মূলত গণঅভ্যুত্থানের সকল ক্রেডিট সমন্বয়কদের হাতে তুলে দেওয়ার মাধ্যমে শুরু হয়েছে। এরসাথে আছে কিংস পার্টি নিয়ে ক্যাচাল। এভাবে সবাই বিভক্ত হয়ে পড়েছে।

ইন্টেরিম সরকারের জন্য ওয়াকারের ভাষণের মূল বক্তব্য হচ্ছে, দেশের সামরিক বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা ও বেসামরিক বাহিনীর মধ্যে থাকা আওয়ামী লীগের দোসরদের জেল, ওএসডি ও মামলা রয়েছে যা বাহিনী গুলোর মানসিক চাপ বাড়িয়ে তুলেছে। ইন্টেরিম সরকারের প্রতি তিনি আহবান জানিয়েছেন যে বাহিনী গুলোকে অযথা প্যানিক না দিয়ে তাদের সহজাত কাজে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হোক। সামরিক ও বেসামরিক বাহিনীর মধ্যে যারা অপরাধী শুধু তাদের বিচার হউক কিন্তু বাহিনীগুলোর গৌরব উজ্জ্বল দিকও বিবেচনা করা উচিত বলে মনে করেন সেনাপ্রধান।

৩- সেনাপ্রধানের শারীরিক ভাব ভঙ্গিমা খুবই সিরিয়াস ছিলো। ভাষণের মাঝে যখন তিনি প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাতের প্রসঙ্গ তুলে আনলেন তখন তিনি মোহাম্মদ ইউনূস কে প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে এড্রেস করেন নাই। প্রধান উপদেষ্টাকে কেবল ড. ইউনূস বলে সম্মোধন করেছেন ওয়াকার। যারা ওয়াকার উজ জামান কে দেখতে পারে না তাদের বক্তব্য হলো প্রধান উপদেষ্টা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালীন উনাকে যথাযথ সম্মান না দেয়ায় বেয়াদবি হয়েছে।

অন্যদিকে আরেক পক্ষ বলছে প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রপতির সাথে অত্যন্ত বাজে আচরণ করে আসছিলেন বেশ কিছুদিন ধরে। বিদেশ সফরের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতিকে না জানানো, একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে সম্মান জানানোর সময় রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা নিজেদের মধ্যে মুখ দেখাদেখি ছিলো বন্ধ। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার মনে রাখা উচিত তিনি রাষ্ট্রপতির নিকট শপথ নিয়েছেন । সেনাপ্রধান হয়তো প্রধান উপদেষ্টার এধরণের কাজকর্মে অসন্তোষ থেকে এমন আচরণ করেছেন।

৪- সেনাপ্রধান দেশের ভিতর ও বাহিরে থাকা বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের উপর বিরক্ত। ইন্টেরিম সরকার দেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারা, কিংস পার্টি গঠনের পর তাকে এসটাবলিশ করার জন্য জাতীয় নির্বাচন বাদে স্থানীয় নির্বাচন আলাপ মাঠে ছাড়া সহ নানা বিষয়ে তিনি ও বাহিনী বিরক্ত হয়ে পড়েছেন। সেনাপ্রধান বিরক্তি লুকিয়ে রাখতে না পেরে এনাফ ইজ ওনাফ বলে সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছেন।

সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামানের প্রতি আওয়ামী লীগ ও ফরহাদ মজহার গং ক্ষুব্ধ। কারণ সেনাপ্রধানের কারণে বিপ্লবী সরকার গঠন করা সম্ভব হয় নি। সেনাপ্রধান যখন নির্বাচনের জন্য আঠারো মাস সহযোগিতা করার কথা বলেছেন তখন অনেকের মন খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। এত দ্রুত নির্বাচন হলে এক পক্ষের সকল প্লান ভেস্তে যেতে পারে এমন আশংকা রয়েছে। তাছাড়া দেশে অনির্বাচিত সরকার থাকলে কারো কারো সুবিধা হয়। সকলের বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছেন সেনাপ্রধান। ভবিষ্যতে সেনাপ্রধানের শত্রু সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে।



সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১২:১৩
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানুষের টাকা দিয়ে ইসলামি ব্যাংকগুলো কি জুয়া খেলে?

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:০৫



ইসলামি শরিয়া ভিত্তিক দেশের পাঁচ পাঁচটি ইসলামি ব্যাংকের আজ বেহাল দশা, তারা গ্রাহকের টাকা ফেরৎ দিতে পারছে না। সবগুলো ব্যাংকই এখন দেউলিয়ার পথে, বাধ্য হয়ে সরকার এই পাঁচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বি ডি আর বিদ্রোহ ও পিলখান হত্যাকান্ডের কিছু অপ্রাকাশিত সত্যঃ (পর্ব ০২)

লিখেছেন মেহেদী আনোয়ার, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৪৭

বিডিআর এর ডিজি নিহত হয় সকাল সাড়ে দশটায়। ভারতীয় টিভি চ্যানেল 'চব্বিশ ঘন্টা' বিস্ময়করভাবে অতি অল্পসময়ের মধ্যে বিডিআর ডিজি ও তার স্ত্রী নিহত হবার সংবাদপ্রচার করে সকাল এগারটায়। ভারতের আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মানুষ মানুষকে কীভাবে এত অপদস্ত করে এই ব্লগে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৪

আমি তো কারও সাতেও নাই পাঁচেও নাই। এত সময়ও নাই মানুষকে ঘাঁটার। ব্লগের ব্লগারদের সম্পর্কেও তেমন কিছু জানি না। তবে পোস্ট পড়ে কিছুটা আন্দাজ করা যায় -কে কী রকম। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ কি শিখিয়েছে?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:০৬






অপমান, অপদস্থ থেকে বাঁচার উপায় শিখাইনি? ওস্তাদ মগা শ্যামী পাহাড়ে বসেও এসবের সমাধান করতে পারে, আপনি সামান্য অসুস্থতার জন্যও ব্লগে মিলাদ দেননি, দোয়া করেছেন কার জন্য? খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৮

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

অন্তর্জাল থেকে নেওয়া সূর্যোদয়ের ছবিটি এআই দ্বারা উন্নত করা হয়েছে।

ইসলামের পবিত্র আলো ওদের চোখে যেন চিরন্তন গাত্রদাহের কারণ। এই মাটি আর মানুষের উন্নয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×