
গতকাল বাংলাদেশে নতুন একটি রাজনৈতিক সংগঠনের আবির্ভাব হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি (NCP)। একশত একাত্তর সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল কমিটি ঘোষণার পর নতুন রাজনৈতিক দল নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে এনসিপি একটি কিংস পার্টি হতে যাচ্ছে। আবার অনেকে তাদের রাজনৈতিক আদর্শ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কেন তারা দেশীয় নেতাদের বাদ দিয়ে বিদেশ নেতাদের অনুসরণ করতে চান তা নিয়ে অনেক রাজনৈতিক নেতারা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। এসব ছাপিয়ে নতুন যে বিতর্ক নাগরিক পার্টি কে নিয়ে শুরু হয়েছে তা হচ্ছে বহুত্ববাদ ও সমকামী ইস্যু।
সংবিধান সংস্কার কমিটি সুপারিশ করেছে বাংলাদেশের চারটি মূলনীতি সংশোধন করে এতে কিছু যোগ-বিয়োগ করতে হবে। ধর্ম নিরপেক্ষতা বা সেক্যুলারিজম বাদ দিয়ে 'বহুত্ববাদ' যুক্ত করার জন্য সুপারিশ করেছেন তারা । শব্দটি অনেকের নিকট বিভ্রান্তিকর। জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের বৈঠকে ইন্টেরিম সরকারের সাথে যখন রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক হয় তখন ইসলামিক রাজনৈতিক দলগুলো 'বহুত্ববাদ' শব্দটির ব্যাপারে আপত্তি তুলেন। তাদের বক্তব্য হচ্ছে নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশে 'বহুত্ববাদ' কেন সংবিধানে যুক্ত করতে হবে? মুসলিম মানেই আল্লাহর এক আনুগত্য ছাড়া অনা কোনো এনটিটির কাছে মাথা নত করে না। কিন্তু বহুত্ববাদের মানে হচ্ছে আল্লাহর পাশাপাশি অন্য কারো আনুগত্য মেনে নেয়া। ইহা ইসলামের দৃষ্টিতে ঘৃণ্য অপরাধ। ইসলামিক দলগুলোর অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রবীণ রাজনীতিবিদ মাহমুদুর রহমান মান্না গণতান্ত্রিক বহুত্ববাদের ব্যাখ্যা প্রদান করেন । যেহেতু সেক্যুলারিজম বা ধর্ম নিরপেক্ষতা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে নিরাপত্তা দিতে পারেনি তাই বহুত্ববাদ শব্দটি সংবিধানে সংযুক্ত করা জরুরি। এর মাধ্যমে সকল ধর্ম, দলিত, সংখ্যালঘু, এথনিক মাইনোরিটি, থার্ড জেন্ডারদের অধিকার সংরক্ষণ হবে যথাযথ ভাবে।
সমকামী ইস্যু মূলত ধর্ম চর্চার সাথে জড়িত। ইসলাম ধর্মে সমকামিতা ভয়াবহ অপরাধ। লুত সম্প্রদায় সমকামিতার জন্য ধ্বংস হয়ে গেছে। যখন বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন অফিস খুলতে চেয়েছিল তাওহীদ বাদীরা বাধা দেয়। তাদের সন্দেহ প্রকাশ করে যে জাতিসংঘ মানবাধিকারের নামে দেশে সমকামিতা প্রমোট করবে। ঢাবির একজন শিক্ষিকা সামিরা লুৎফা সমকামিদের অধিকার নিয়ে ৪/৫ বছর পূর্বে সফট কর্ণার দেখানোর জন্য উনার বিরুদ্ধে তাওহীদ বাদিরা আন্দোলন করেছে। এনসিটিবিতে দেশের শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে কাজ করার জন্য যে সব সম্মানিত নাগরিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিলো তাদের মধ্যে লুৎফা ম্যাডাম অন্যতম। কিন্তু ম্যাডাম কে যাতে কমিটিতে নিয়োগ না দেওয়া হয় সে জন্য প্রধান উপদেষ্টার নিকট চিঠি লিখে আপত্তি জানিয়েছিলো তাওহীদ বাদীরা। এরই প্রেক্ষিতে লুৎফা ম্যাডাম কে কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়।
সমকামী ইস্যু নিয়ে দেশে পুনরায় বিতর্ক শুরু হয়েছে। গতকাল আত্নপ্রকাশ করা নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির একজন যুগ্ম সদস্য সচিব মো মুনতাসীর রহমানের বিরুদ্ধে সমকামীতার অভিযোগ উঠেছে। দাবী করা হচ্ছে সে একজন গে-রাইট একটিভিস্ট। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানে বিপ্লবীদের সেইফ হোমে শেল্টার দিয়েছিলো মুনতাসীর রহমান। মুনতাসীরের সেক্সসুয়াল একটিভিটি যখন জনসম্মুখে এসেছে তখন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সংগঠন, জাতীয় নাগরিক কমিটি সহ বিভিন্ন স্থান থেকে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কেন একজন সমকামী কে জাতীয় নাগরিক পার্টি দলে শীর্ষ পদ দিয়ে জায়গা দিয়েছে তা নিয়ে বেশ হইচই হচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে মুনতাসীর কে দল থেকে বহিস্কারের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। নাগরিক পার্টির শীর্ষস্থানীয় দুই নেতা সারজিস ও হাসনাত তাদের অবস্থান জানিয়েছেন ওই ঘটনায়। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, তারা সর্বপ্রথম মুসলিম তারপর রাজনৈতিক দলের কর্মী। ধর্মীয় বিধিনিষেধের বাইরে তারা যাবে না।
জাতীয় নাগরিক পার্টি সমালোচনার মুখে মুনতাসীরের বিরুদ্ধে যে ধরণের পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবছে তা সংবিধান সুপারিশ কমিটির প্রস্তাবের সাথে সাংঘর্ষিক। কারণ এতে জাতীয় নাগতিক পার্টি বহুত্ববাদের যে শর্ত সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ তার বিপক্ষে দাঁড়াচ্ছে। মুনতাসীরের সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে দেশে রাজনীতি করার। জাতীয় নাগরিক পার্টি যেহেতু নিজেকে গণতান্ত্রিক শক্তি হিসাবে দাবী করেছে তাহলে ভিন্ন সেক্সসুয়ালিটির জন্য মুনতাসীর কে বাদ দেয়া গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী। জাতীয় নাগরিক পার্টি নিজেদের কোনো ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল হিসাবে পরিচিত করিয়ে দেয় নাই। তাহলে সমকামী ইস্যু নিয়ে কেন জাতীয় নাগরিক পার্টি এমন স্ববিরোধী অবস্থান নিচ্ছেন ?
সংবিধান কমিশনের প্রধান হিসাবে আলী রিয়াজ সাহেব কে নিয়োগ দেয়া সঠিক হয় নাই। তিনি একজন আমেরিকান সিটিজেন। আমেরিকান সোসাইটির কালচার বাংলাদেশে প্রবেশ করাতে চাইলে কাজের কাজ কিছুই হবে না। অন্যদিকে ভবিষ্যতে দেশে এই বহুত্ববাদ ও সমকামী ইস্যু নিয়ে সমাজে সংঘাত ছড়িয়ে পড়তে পারে। বহুত্ববাদ বাদ দিয়ে পূর্বে যা ছিলো তাই বহাল থাকা উচিত।
আফ্রিকায় গতমাসে একজন স্বঘোষিত সমকামী ইমাম কে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ইমাম সাহেব সমকামীদের জন্য আলাদা মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। একজন নারীকে বিয়ের দীর্ঘদিন সংসার করার পর তার কাছে মনে হয়েছে সে সমকামী। ইমাম সাহেবের দুইজন সন্তান রয়েছে। মুনতাসীরের সেক্সসুয়াল আইডেন্টিটি প্রকাশিত হওয়ায় তার জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে। মুনতাসীরের কাছের মানুষজনের উচিত কোনো আলেমের শরণাপন্ন হওয়া। ইসলামিক লাইফ স্টাইল অনুসরণ করলে যথাযথ ভাবে তার মনের এই ভ্রান্তি দূর হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ ।


সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০২৫ রাত ১১:৩৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


