
জুলাই অভ্যুত্থানের পর সমাজে এক নতুন ধরণের প্রবণতা দেখা দিয়েছে। মব-জাস্টিস নামে নতুন পার্টির আবির্ভাব হয়েছে। এই বিষয়ে বলা রাখা ভালো মব সৃষ্টির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তিকে অথবা স্থাপনায় আক্রমণ করা কখনো জাস্টিসের নিশ্চয়তা দিতে পারে না। দেশের প্রচলিত আইন অনুসরণ করেই সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমাদের দেশে মানুষের মধ্যে নিজের হাতে আইন তুলে নেয়ার প্রবণতা রয়েছে। ছিনতাই -কারী, চোর- ডাকাত পিটিয়ে হত্যা করার ঐতিহ্য এই দেশের মানুষের রয়েছে। দেশের প্রচলিত আইন অনুসরণ করে অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করার প্রতি মানুষের আগ্রহ কম। আরেকটি কারণ হচ্ছে দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের বিভিন্ন কারণে অনীহা চলে এসেছে। সাধারণ জনগন ন্যায় বিচার পাবেন কিনা অথবা অপরাধীর আইনের ফাঁক ফোকরে বের হয়ে এসে তাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করবে কিনা সে আশঙ্কায় সাধারণ মানুষ মব-জাস্টিসের আশ্রয় নেয়।
মব-জাস্টিস পার্টি জাস্টিসের নামে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে । এই মব-জাস্টিস পার্টি আসলে কারা? দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকতে কেন তারা মব সৃষ্টি করে জাস্টিস করতে চায় ? ছাত্র-জনতার সম্মেলিত প্রচেষ্টায় একটি সফল গণঅভ্যুত্থান হয়েছে দেশে। অভ্যুত্থানের পর দেশের আইনশৃংখলা বাহিনী বিশেষত পুলিশ বাহিনীর চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে। বিগত সরকারের আজ্ঞাবহ দাসে পরিণত হয়েছিলো পুলিশ বাহিনী। তারা ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। তাই অভ্যুত্থান সফল হওয়ার পর পতিত স্বৈরাচারের সহযোগী হিসাবে পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছিলো। পুলিশ বাহিনীর মোর্যালিটি ভেঙে পড়েছে এসব কারণে। তারা আগের মতো ভূমিকা রাখতে পারছিলো না আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার। অন্যদিকে পতিত স্বৈরাচারের প্রতি পুলিশের সহনশীল মনোভাবের কারণে ক্রিমিনালদের গ্রেফতার নিয়ে সংশয়ের মুখে অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী প্রধান শক্তি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা আইনশৃংখলা বাহিনীকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। এতে বিগত সরকারের মদদপুষ্ট অনেক ক্রিমিনাল কে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছিলো।
ইন্টেরিম সরকার ক্ষমতা গ্রহণের তিনমাস পর্যন্ত ছাত্র-জনতার মাঠে থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সাহায্য করার উদ্যোগ সর্ব মহলে প্রশংসা পেয়েছিলো। কিন্তু ছয়মাস পার হলেও যখন ছাত্র-জনতা ঘরে ফিরে গেলো না এবং মব-জাস্টিসের নামে মানুষ পিটিয়ে হত্যা করার প্রবণতা বন্ধ হলো না জনমনে একটি প্রশ্নই উঁকি দিচ্ছে সরকার কেন ছাত্র-জনতা ও মব-জাস্টিসের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না ? সরকারের পক্ষ থেকে খালি হুমকি ধামকি ব্যতীত আর কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় নি। এদিকে মব-জাস্টিস যেন থামছেই না। সর্বশেষ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় কতিপয় লোক মব সৃষ্টি করে দুইজন ইরানি নাগরিক কে মিথ্যা অভিযোগে মারধর করে। এই ঘটনা মিডিয়ায় আসায় সরকার আ্যাকশন নিতে বাধ্য হয়। সরকার যদি পূর্বে মবের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতো তবে বিদেশি নাগরিকদের এমন ন্যাক্কারজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় না।
অনেকে সন্দেহ পোষণ করছেন এসব মব-জাস্টিসের সাথে সরকারের কোনো একটি অংশ জড়িত। কারণ পূর্বে সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে ছাত্র-জনতা মব সৃষ্টি করে পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে অপসারণের অভিযোগ রয়েছে। ছাত্র-জনতা পরিচয়ে কেউ মব সৃষ্টি করে কারো প্রাইভেট প্রপার্টি তল্লাশি করলে আইনশৃংখলা বাহিনীর নিরব ভূমিকা দেখা যায়। হলুদ সাংবাদিকরা খবরের কাগজে মব-জাস্টিস পার্টিকে ছাত্র-জনতা হিসাবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে নৈরাজ্য কে বৈধ করার মিশনে নেমেছে। ছাত্র-জনতার পরিচয়ে মব সৃষ্টি করলে যেন সাত খুন মাফ! গতকাল মধ্যরাতে এমনই এক ঘটনা ঘটেছে গুলশান শাহাবুদ্দিন পার্ক এলাকায়। গায়েবি ক্ষুদে বার্তার উপর নির্ভর করে একদল লোক ছাত্র-জনতার পরিচয় দিয়ে সাবেক এমপি তানভীর ইমামের সাবেক স্ত্রীর ফ্ল্যাটে বিপুল পরিমাণ টাকা ও অস্ত্র আছে এই দাবী করে তল্লাশি করে। রোজা রমজান মাসে তাদের এনার্জি লেভেল দেখতে সাধারণ মানুষের ঘুম হারাম। নিজেদের ছাত্র-জনতা হিসাবে পরিচয় দেওয়ার কারণে আইনশৃংখলা বাহিনী তাদের কোনোরূপ বাধা দিতে দেখা যায় নাই। মিডিয়ার সামনে 'ছাত্র-জনতার' পরিচয় দেয়া মব-জাস্টিস পার্টির আস্ফালন ছিলো চোখে পড়ার মতো। এই ঘটনায় সারাদেশে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সরকারের নিস্ক্রিয় ভূমিকার সমালোচনা করছেন অনেকে। দেশে শাসন ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার ছয় মাস পরেও কেন আইনশৃংখলা বাহিনী ব্যতীত অন্য কেউ মানুষের বাড়ি তল্লাশি করছে তা নিয়ে জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। সরকার কি দেশ চালাতে পারছে না ?
দেশে পরিকল্পিত ভাবে নৈরাজ্য সৃষ্টির পিছনে অনেক গ্রুপ কাজ করছে। এক পক্ষ চায় নৈরাজ্যের সুযোগ নিয়ে দেশে সামরিক শাসক আসুক। অন্য পক্ষ চায় দেশে একটি বিল্লবী সরকার গঠন করে নিজেদের বাসনা পূর্ণ করতে। উভয় পক্ষ যে কোনো মূল্যে জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে তাই তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ১২:৫০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


