
মোহাম্মদ শামি একজন ভারতীয় ক্রিকেটার। বর্তমানে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নামে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলছে আটটি দেশের অংশগ্রহণে। টুর্নামেন্টের প্রথম সেমিফাইনালে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয়েছিলো। মোহাম্মদ শামি একজন বোলার হিসাবে সে খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। ম্যাচ চলাকালীন সময়ে শামিকে কোমল পানীয় পান করতে দেখা যায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতের মুসলিম কমিউনিটির মধ্যে ব্যাপক হাঙ্গামা শুরু হয়েছে। সারাবিশ্বের মুসলমান রা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে রোজা পালন করছেন এখন। কিন্তু শামি রোজা না রেখে কেন কোমল পানীয় খাচ্ছে তা নিয়ে চলছে সারা ভারতে আলোচনা-সমালোচনা। শামির ভক্তরা এই ঘটনায় নাখোশ হয়েছে। তাদের অভিযোগ শামী কেন রোজা রাখছে না ? অনেক মুসলিম ক্রিকেটার ও ফুটবলার রোজা রেখে খেলেছেন। শামী ভুল কাজ করেছে। ইসলামের নিয়ম ভেঙেছে।
ভারতীয় মৌলভীরা শামির রোজা না নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। অল ইন্ডিয়া মুসলিম জামাতের সভাপতি মাওলানা শাহাবুদ্দিন রিজভী শামির রোজা না রাখা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এই কাজ করে শামী নাকি সমাজে ভুল বার্তা দিয়েছেন। সে শরীয়াহ আইন ভঙ্গ করেছে। এর জন্য তাকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। রাজভী সাহেবের বিরোধিতা করেছেন মৌলভী খালিদ রশীদ সাহেব। তিনি দাবী করেছেন যেহেতু শামী তার বাড়ি থেকে হাজার কিলোমিটার দূরে সফরে রয়েছে তার জন্য রোজা রাখা ইসলামিক বিধি অনুসারে অত্যাবশ্যক নয়। শিয়াদের ধর্মগুরু মাওলানা মির্জা ইয়াসুব আব্বাসও শাহাবউদ্দিন রাজভির কথার বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘মোহাম্মদ শামিকে লক্ষ্য করে বারেইলভির একজন মাওলানার দেওয়া বক্তব্য কেবল সস্তা প্রচারের জন্য। যেখানে বাধ্যবাধকতা আছে, সেখানে কোনো ধর্ম নেই। যেখানে ধর্ম আছে, সেখানে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। প্রত্যেক মুসলিম জানেন যে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তাঁকে রোজা রাখতে হবে। যদি কেউ রোজা রাখতে না পারেন, তাহলে এটি তাঁর ব্যক্তিগত ব্যর্থতা। এর সঙ্গে সম্প্রদায় বা ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা রমজানে রোজা রাখেন না। তিনি তাঁদের সম্পর্কে কিছু বলেননি কেন? রোজা ও রমজানকে বিতর্কে জড়ানো ভুল।’
মৌলভীদের মধ্যে কেন বিতর্ক হচ্ছে ? শামী ক্রিকেট খেলে অর্থের বিনিময়ে যেখানে অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে ক্রিকেট খেলা সহী নয় যদি না উহাতে টাকার সংযোগ থাকে। সব মৌলভীরা একমত যে ক্রিকেট একটি অপ্রয়োজনীয় খেলা। এর চেয়ে নিভৃত ঘরে ইবাদত করা শ্রেয়। ক্রিকেটে মানুষের কল্যাণ নিহিত নেই। একটি ক্রিকেট ম্যাচ হাজারো লাখো মানুষের অর্থ ও সময় অপচয় করে। নামাজ বিনষ্ট করে। শামী যেহেতু এমন কাজের সাথে জড়িত থেকে অর্থ আয় করে শরীয়াহ মতে সে পরিপূর্ণ মুসলিম নয়।তার রোজার মধ্যে খাওয়া না খাওয়া নিয়ে কেন বিতর্ক হবে ?
বর্তমান সময়ে এক শ্রেণীর মানুষ নিজেদের মর্ডারেট মুসলিম দাবী করে। পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তারা পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতির ভুল ধরে। এরাই আবার পাশ্চাত্য সংস্কৃতি উপভোগ করে বিভিন্ন ফর্মে আবার সেখানে ইসলামের বিধিবিধান প্রয়োগ করতে চায়। সর্বশেষ বিপিএলে এমনটাই দেখেছিলাম আমরা। স্বনামধন্য ওয়াজী মিজানুর রহমান আজহারী রংপুর রাইডার্সের সাথে ফটোসেশন করেন। আজহারী সাহেবের এমব অপ্রয়োজনীয় কাজে অংশ নেয়ার কি দরকার ছিলো? দরকার ছিলো কারণ তিনি মর্ডারেট মুসলমান দের আইডল। ভারতীয় মৌলভিরা এখন মর্ডারেট মুসলিমদের তুষ্ট করার দায়িত্ব নিয়েছেন । মওলানা রাজভী সাহেব তাই শামীর রোজা না রাখা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যেখানে শামী যে কাজের সাথে যুক্ত উহাই নিষিদ্ধ। বাকি দুই মওলানার বক্তব্যও মর্ডারেট মুসলিমদের তুষ্ট করার জন্য সামনে আনা হয়েছে। যারা শামী ভক্ত তারাও মর্ডারেট মুসলিমই হবেন। তাদের ক্ষোভ প্রশমনের জন্য মৌলোভীরা এমন বক্তব্য দিয়েছেন।
শামীর পরিবারও মর্ডারেট মুসলিম সাজার ঢং ধরেছে। তার ভাইয়ের দাবী সে নাকি সবদিন রোজা রাখে কেবল ম্যাচের দিন বাদে। অন্যদিকে শামীর কাজিন প্রশ্ন তুলেছে পাকিস্তানের অনেক খেলোয়াড় রোজা রাখে না কিন্তু তাদের নিয়ে কোনো সমালোচনা হতে দেখা যায় না। শামীর বেলায় কেন এমন হচ্ছে ? শামী দেশের জন্য দায়িত্ব পালন করছে। তাই সে রোজা ভঙ্গ করছে। শামীর পরিবার যদি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে তাহলে কি তাদের কোনো ক্ষতি আছে? কেন তারা নিজেদের ইসলামিক প্রমাণে ব্যস্ত আবার পাশ্চাত্য সংস্কৃতি ধারণ করছে একই সাথে ? শামী ঠিকমতো নামায পড়ে কিনা, হালাল খাবার খায় কিনা কেউ তা সঠিক ভাবে জানে না। এমন লোকের রোজা রাখা না রাখা নিয়ে মাতামাতির কি আছে ? শামীর ভক্তরা কি শামী মুসলিম শুধু তার জন্য সাপোর্ট করে? নাকি সে খেলে ভালো তার জন্য সাপোর্ট করে ? শামী যদি ধর্মান্তরিত বা নাস্তিক হয়ে যায় ভক্তরা শামীকে ত্যাগ করবে ?
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


