
জুলাই অভ্যুত্থানের পিছনে ক্রীড়ানক হিসাবে অনেক দেশি ও বিদেশি শক্তির হাত ছিলো বলে শোনা যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো শেখ হাসিনার প্রতি জনসমর্থন ২০১৪ সালের পরেই কমতে থাকে। ২০২৪ সালের আমি-ডামি নির্বাচনে খোদ আওয়ামী লীগের অনেক পুরাতন সাপোর্টার ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিলো। আওয়ামী লীগ টিকে ছিলো মূলত জোর জবরদস্তি, ভারত-চীন-রাশিয়া ও ভুয়া জঙ্গীবাদের ভয় পশ্চিমাদের দেখিয়ে। যুক্তরাষ্ট্র শেখ হাসিনার রাশিয়া ও চীন প্রীতি ভালো চোখে দেখে নাই। ভারতের কারণে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অসন্তুষ্টি খুব একটা প্রকাশ্যে আসতে দেয় নাই। শেখ হাসিনা ও আম্লিক যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের ঘন ঘন ঢাকায় আসাকে তেমন পাত্তা দেয় নাই। তাই দেশের মানুষ ও বিশ্ব মোড়ল কেউ শেখ হাসিনার পিছনে ছিলো না। এভাবে জনসমর্থন বিহীন সরকার বেশিদিন এমনিতেও রান করতো না।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান ভল্কনার তুর্ক সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে পিলে চমকানোর মতো তথ্য জানিয়েছেন। তার বক্তব্য থেকে জুলাই অভ্যুত্থানে জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে আমরা জানতে পারি। ছাত্র-জনতার উপর আওয়ামী লীগের পেটুয়া পুলিশ ও ছাত্রলীগ বাহিনী নির্যাতন করছে, হত্যা করছে তখন জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাথে যোগাযোগ করা হয়েছিলো। সেনাবাহিনীর উপর চাপ ছিলো যাতে শেখ হাসিনার পক্ষ নিয়ে ছাত্র-জনতার বুকে গুলি না চালানো হয়। সেনাবাহিনী কোনো পদক্ষেপ নিলে আম্লিকের পক্ষে তাদের শান্তিরক্ষী বাহিনীর মিশন বন্ধ করে দেয়া হবে। শান্তিরক্ষী মিশনে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ও জওয়ান দের বৈধ ভাবে দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর চমৎকার সুযোগ রয়েছে। সেনাবাহিনী কোনোভাবেই এমন সুযোগ হাতছাড়া করবে না। তাই তারা শেখ হাসিনার প্রতি তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করেছিলো। অভ্যুত্থান সফল হওয়ার পিছনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা ছিলো অসামান্য।
মানবাধিকার কমিশনের বক্তব্য এক-এগারো সময়কার একটি ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। একটি ফেইক চিঠিকে কেন্দ্র করে কেয়ারটেকার সরকার বাতিল করে সেনাশাসন ক্ষমতায় আসার প্রধান কারণ হিসাবে সেই ফেইক চিঠিকে দেখা হয়। কিন্তু তুর্ক সাহেবের মুখের বাণী নিশ্চয়ই ফেইক হতে পারে না।
সেনাবাহিনী ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নিস্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। শেখ হাসিনার ভুয়া জঙ্গীবাদ বয়ান শুনে পশ্চিমারা ভেবেছিলো দুর্নীতি করলেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকুক। তবে শেখ হাসিনার প্রতি সমর্থন কমে আসে যখন রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নতি হয়। রাশিয়ার উপর ইউক্রেন ইস্যু নিয়ে প্রবল চাপ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো। কিন্তু শেখ হাসিনা যে করেই হোক রাশিয়া-চীন ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভারতের সাথে ভালো রিলেশন রাখতে গিয়ে আম ছালা উভয়েই হারায়।
আওয়ামী লীগ বর্তমানে অভিযোগ করছে আমেরিকার টাকায় দেশে অভ্যুত্থান হয়েছে। এখন আবার জাতিসংঘের জুলাই অভ্যুত্থানের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হবে। আওয়ামী লীগের নিকট বিদেশি হস্তক্ষেপ খুব খারাপ লাগছে। নিজেরা যখন বিদেশি শক্তি কে তাদের পক্ষে কাজ করায়েছিলো তখন খুব আরাম লেগেছিলো। ওবায়দুল কাদের বারবার বলেছেন দিল্লী ও পশ্চিমা বিশ্বের সাথে তলে তলে সমঝোতা হয়েছে। আওয়ামী লীগ এসব কাহিনী এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেল ?
জুলাই অভ্যুত্থানের জন্য মঞ্চ অনেক বছর থেকেই তৈরি করা হয়েছিলো। বিরোধী দলগুলো পাতানো নির্বাচনে না গিয়ে শেখ হাসিনার পতন কে আরো ত্বরান্বিত করেছিলো। জাস্ট একটা ফু দিয়েছে আর অভ্যুত্থান হয়ে গেলো এমনটা নয়। সাধারণ জনগণ রাস্তায় না নামলে শুধু বিদেশি চক্রান্তে আওয়ামী লীগের পতন সফলভাবে হতো না।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:০৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


