somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কেন দিন দিন অবনতি হচ্ছে ?

১০ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশের মানুষ বর্তমানে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশে প্রতিদিন ঘটছে নানা ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা। সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা সরকারের পক্ষে নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই খুন, ধর্ষণ, মব কালচার ও চরমপন্থীদের কার্যক্রম পড়তে হচ্ছে। দেশে সরকার নামক কোনো অভিভাবক আছে তা মনে হচ্ছে না। দেশকে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিয়ে যেতে হলে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অতি দ্রুত প্রয়োজন। কিন্তু দেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি অবনতির দোহাই দিয়ে অনেক পক্ষ নির্বাচন দেরিতে হউক সে চেষ্টায় মাঠে নেমেছে। সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কার, ঐক্যমত্য ও নির্বাচন প্রসঙ্গে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে নারীদের উপর যৌন নিপীড়নের অসংখ্য নিউজ সংবাদ মাধ্যম গুলোতে এসেছে। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে দেশের সর্বস্তরের মানুষ। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণ কেবল এক/দুই মাসে বেড়েছে এমনটি নয়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রচুর নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা মিডিয়ায় এসেছিলো। জুলাই অভ্যুত্থানের পরও গতবছর নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা পেপারে পড়েছিলাম।তন্মধ্যে একটি ঘটনা আমার মনে গভীর ভাবে দাগ কেটেছিলো। একটি আট/নয় বছরের শিশুকে বাসায় ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেছিলো একজন মুখোশ ধারী ভদ্দরলোক। শিশুটি রাস্তায় ঘুরে ঘুরে খালি বোতল কুড়াতো । শিশুটির অবস্থা এতই খারাপ হয়েছিলো যে তার যোনি ও মলদ্বার একসাথ হয়ে গিয়েছিলো। শিশুটি মলত্যাগ করতে পারছিলো না। এই ঘটনা যখন ঘটে প্রথম আলো বাদে অন্য কোনো মিডিয়া নিউজ করেনি। সে সময় কাউকে আজকের মতো প্রতিবাদ করতে দেখিনি। মেয়েদের দেখেনি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে মিছিল করতে। রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ কে দেখিনি বয়ান দিতে। সবাই তখন ব্যস্ত ছিলো পতিত স্বৈরাচার কে নিয়ে। বিভিন্ন আন্দোলনে ছদ্মবেশে পতিত স্বৈরাচার ফিরে আসতে পারে সে জন্য সবাই সজাগ ছিলো। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে নারীদের উপর যে সব সহিংসতা হচ্ছিলো তা নিয়ে এক/দুইটি গোষ্ঠী ছাড়া কেউ প্রতিবাদ করেনি। এর কারণ মিডিয়া তখন এসব নিউজ বেশি বেশি কভার করে নাই। তাহলে এখন কেন করছে ?

মাগুরায় ছোট শিশু আছিয়ার উপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে একদল হায়েনা। মেয়েটা জীবন মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। যারা আছিয়ার সাথে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের অতীতেও নারী কেলেঙ্কারির মামলা ছিলো। কিন্তু দেশের দূর্বল আইনের মারপ্যাচ ও ভিকটিমের পরিবারকে কিছু আর্থিক সহায়তা দিলেই খুব সহযে এসব মামলা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। আছিয়ার ঘটনায় সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা শুরু হওয়ায় নতুন আইন প্রণয়নের পথে হাঁটছে তারা। ধর্ষণের তদন্ত পনেরো দিনের মধ্যে শেষ করা ও নব্বই দিনের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া সমাপ্ত করার কথা ভাবছে সরকার। এই সময়ে সম্ভাব্য অপরাধীকে জামিন না দেয়ার চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। পূর্বে তিরিশ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ ও ছয়মাসের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া শেষ করার বিধান ছিলো।

সরকার সাধারণ জনতার দাবীর মুখে এমন আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে যা সমর্থন যোগ্য নয়। সাধারণ মানুষ তিনদিন/সাতদিনের মধ্যে বিচার করে আসামীকে ফাঁসি দেওয়ার দাবী জানালে তা সরকার কে মেনে নিতে কেন হবে ? আবেগ দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করা যায় না। বাংলাদেশের মানুষজন যে খুবই সুনাগরিক আমরা তা বলতে পারি না। ধর্ষণের ক্ষেত্রেও এই কথা প্রযোজ্য। দেশের মানবাধিকার সংস্থা গুলোর তথ্য মতে আশি ভাগ নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের মামলা ভুয়া। এখন কেউ যদি ভুয়া মামলায় আটক হয়ে জামিন ব্যতীত তিনমাস জেলে থাকে তবে তার সাথে অন্যায় করা হবে। অনেক সময় নারীরা ধর্ষণ মামলায় স্বামী, বয়ফ্রেন্ড বা প্রতিদ্বন্দিকে ফাঁসাতে পারে। তাই সরকারের উচিত যেসব প্রতিষ্ঠান এসব বিষয় নিয়ে কাজ করে তাদের সাথে আলোচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া। সেটা যদি জনসাধারণের মতের বিপরীতে যায় শুধুমাত্র ইনসাফের জন্য সরকারকে তার নিজ সিদ্ধান্তে অটল থাকতে হবে।

ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় গণপিটুনি ও তাদের পক্ষে আইনজীবী দাড়াতে না দেয়া উভয় ঘটনা নিন্দনীয়। একজন ব্যক্তি আদালত কতৃক দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাকে দোষী ভেবে মারধর করলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না। অভিযুক্ত ব্যক্তির রাষ্ট্রের নিকট ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার রাখে। এক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই যাতে আইনজীবী নিয়োগ দিতে পারে তার জন্য সরকার কে সহযোগিতা করতে হবে। অন্যথায় দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা অসম্ভব।

গত কয়েকসপ্তাহ ধরে দেশের মব কালচার নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে যখন তীব্র সমালোচনা হচ্ছিলো তখন ঢাবির এক নারী শিক্ষার্থীকে একজন দাইয়ুস ব্যক্তির যৌন নিপীড়নের ঘটনা বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। দাইয়ুস ব্যক্তির পক্ষে কোনো প্রকার অনুসন্ধান ব্যতীত তৌহিদি জনতা দাঁড়ালে ঘটনা অন্য দিকে মোড় নেয়। দাইয়ুস ব্যক্তির জামিনের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়ে জনতা। সাধারণ মানুষ মনে করছে সরকার তৌহিদি জনতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। অনেকে সরকারের দেশ পরিচালনার এক্তিয়ার নেই বলে মনে করছে। সব মিলিয়ে যখন পরিস্থিতি হযবরল তখন একের পর এক ধর্ষণের খবর সামনে আসতে থাকে আর চাপা পড়ে যেতে থাকে পুরাতন ইস্যু। গত শুক্রবার হিজবুত তাহরীরের জমায়েত নিয়ে সাধারণ মানুষ যখন সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছিলো তাও চাপা পড়ে গেছে। বিশ্ব মিডিয়ায় বেশ ঘটা করে হিজবুত তাহরীরের মিছিল নিয়ে নিউজ কভার করেছে। দেশি ও বিদেশি চাপে যখন সরকারের নাভিশ্বাস উঠছে ঠিক তখনই ধর্ষণের সকল নিউজ সারাদেশ খুজে খুজে বের করছে সাংবাদিকেরা । একই কাজ যদি তারা সারাবছর করে যেতেন তবে অনেকেই উপকৃত হতো।

দেশের সামাজিক নিরাপত্তা ও আইনশৃংখলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়লে কারা লাভবান হবে ? জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশে এক শ্রেণীর লোক জোট বেধেছে যে করেই হোক আগামী সংসদ নির্বাচন যাতে দ্রুত না হয়। কখনো সংস্কারের নামে, স্থানীয় নির্বাচনের নামে তারা বর্তমান সরকারের মেয়াদ দীর্ঘায়িত করতে মাঠে নেমেছে। নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থা তেমন সুসংগঠিত নয় বলেও তারা এমন ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। অনেকে খোয়াব দেখে সেনা শাসন আসবে আবার কেউবা খোয়াব দেখে বিপ্লবী সরকারের। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকলে এসব গোষ্ঠীর ফায়দা আছে বলেই তারা দ্রুত নির্বাচন চায় না। কারণ দ্রুত নির্বাচন হলেই তাদের সুযোগ সুবিধা কমে যাবে। তাই আইনশৃংখলা পরিস্থিতি অবনতি হতে থাকলে জনগণ নির্বাচন বিমুখ হয়ে পড়বে। এভাবেই ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে ব্যস্ত অনেকে। সেনাপ্রধান তাদের এই উদ্দেশ্য বুঝতে পেরেই আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সরকার কে প্রস্তুতি নিতে বলেছেন ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ১:২৫
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগ কি শিখিয়েছে?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:০৬






অপমান, অপদস্থ থেকে বাঁচার উপায় শিখাইনি? ওস্তাদ মগা শ্যামী পাহাড়ে বসেও এসবের সমাধান করতে পারে, আপনি সামান্য অসুস্থতার জন্যও ব্লগে মিলাদ দেননি, দোয়া করেছেন কার জন্য? খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন হাদিসই যদি মানতে হবে তবে আল্লাহ ফিকাহ মানতে বললেন কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৪৬




সূরাঃ ৫ মায়িদা, ৬৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৬৭। হে রাসূল! তোমার রবের নিকট থেকে তোমার প্রতি যা নাযিল হয়েছে তা’ প্রচার কর। যদি না কর তবে তো তুমি তাঁর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৮

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

অন্তর্জাল থেকে নেওয়া সূর্যোদয়ের ছবিটি এআই দ্বারা উন্নত করা হয়েছে।

ইসলামের পবিত্র আলো ওদের চোখে যেন চিরন্তন গাত্রদাহের কারণ। এই মাটি আর মানুষের উন্নয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তারেক রহমানের হঠাৎ ‘জামায়াত-বিরোধী’ উচ্চারণ: রাজনীতির মাঠে নতুন সংকেত, নাকি পুরোনো সমস্যার মুখোশ?

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৯

তারেক রহমানের হঠাৎ ‘জামায়াত-বিরোধী’ উচ্চারণ: রাজনীতির মাঠে নতুন সংকেত, নাকি পুরোনো সমস্যার মুখোশ?

বিএনপি রাজনীতিতে এক অদ্ভুত মোড়—অনেক বছর পর হঠাৎ করেই তারেক রহমান সরাসরি জামায়াতকে ঘিরে কিছু সমালোচনামূলক কথা বললেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন থাপ্পড় খাবি!

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৩



ঘটনাঃ ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দামের পতনের সময়।
চৈত্র মাস। সারাদিন প্রচন্ড গরম। জামাই তার বউকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে। সুন্দর গ্রামের রাস্তা। পড়ন্ত বিকেল। বউটা সুন্দর করে সেজেছে। গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×