somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ও মোর রমজানেরও রোজার শেষে......

৩০ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলা গানের ভাণ্ডারে কাজী নজরুল ইসলাম এক অনন্য নাম। তিনি বাংলা সাহিত্যে ইসলামী সংগীতের এক শক্তিশালী ধারা তৈরি করেছেন। তারই লেখা কালজয়ী গজল "ও মোর রমজানেরও রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ" বাংলা মুসলিম সমাজে ঈদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছে। আজও ঈদের দিনে এই গান না বাজলে যেন ঈদের আমেজই পূর্ণ হয় না। কিন্তু কীভাবে এই গানটি জন্ম নিল, এবং কিভাবে এটি ঈদ সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠল? চলুন, জেনে নেওয়া যাক এর ইতিহাস।

কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন নিছক একজন কবি বা গীতিকার নন, বরং তিনি ছিলেন এক জননন্দিত বিপ্লবী। তবে তার সৃষ্টিতে ইসলামী ভাবধারা, বিশেষত ইসলামী সংগীতের প্রতি গভীর ভালোবাসার প্রকাশ পাওয়া যায়। ১৯৩০-এর দশকে ব্রিটিশ ভারতের মুসলিম সমাজে ইসলামী গান ও গজলের প্রচলন থাকলেও তা মূলত আরবি-ফারসি বা উর্দু ভাষায় সীমাবদ্ধ ছিল। নজরুল বাংলা ভাষায় ইসলামী গজলকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে অসংখ্য গান ও কবিতা লিখতে থাকেন। তিনি মনে করতেন, বাংলাভাষী মুসলিমদের জন্য এমন সংগীত প্রয়োজন, যা তাদের ধর্মীয় আবেগ ও সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে। ঈদুল ফিতরের আনন্দকে ঘিরে "ও মোর রমজানেরও রোজার শেষে" গানটি রচনা করেন নজরুল। এটি সম্ভবত ১৯৩১-৩২ সালের দিকে লেখা হয়েছিল। গানটির মূল সুরারোপ করেছিলেন তিনি নিজেই। পরবর্তীতে এটি বিভিন্ন শিল্পীর কণ্ঠে পরিবেশিত হয়েছে।

গানটির প্রতিটি চরণ রমজানের সংযম ও আত্মশুদ্ধির বার্তা বহন করে। এটি শুধু ঈদের আনন্দ উদযাপনের গান নয়, বরং রোজার শিক্ষা ও ত্যাগের মাধ্যমে ঈদের মাহাত্ম্য ফুটিয়ে তোলে।

গানটিতে বলা হয়েছে—

"ও মোর রমজানেরও রোজার শেষে
এলো খুশির ঈদ
তুই যত পাপী, যত গুণহী,
তোরে আদর করিব খোদা তুই রেহাই পাবি রে!"

এই কথাগুলো ইসলামের ক্ষমাশীলতা ও দয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়। পুরো মাসব্যাপী রোজা রেখে সংযম ও আত্মশুদ্ধির পর ঈদ আসে এক মহা আনন্দ হিসেবে। কিন্তু এই আনন্দ শুধু ধনীদের নয়, বরং গরিব-দুঃখী, পাপী-তাপী সকলের জন্য। নজরুল এই গানে ইসলামের সাম্যের আদর্শকে চিত্রিত করেছেন।

গানটি প্রথমদিকে গ্রাম্য মক্তব-মাদ্রাসায় ও ইসলামিক জলসাগুলোতে গাওয়া হতো। কিন্তু ১৯৫০-এর দশক থেকে এটি বেতার ও টেলিভিশনে প্রচারিত হতে থাকে, এবং ধীরে ধীরে বাংলাদেশের ঈদ উৎসবের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে। আজও ঈদের আগের রাত বা ঈদের দিন সকালে রেডিও-টিভিতে এই গানটি প্রচার করা হয়, যা একপ্রকার ঈদের আগমনী ধ্বনি হিসেবে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে ঈদের সময় এই গান গাওয়া এবং বাজানো এখনো প্রচলিত রয়েছে। এটি বাংলা ইসলামী গানের ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। নজরুলের লেখা আরও অনেক ইসলামী গান রয়েছে, তবে ঈদের জন্য লেখা গান হিসেবে এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বহুল প্রচারিত।

"ও মোর রমজানেরও রোজার শেষে" শুধুমাত্র একটি গান নয়, এটি ঈদ উৎসবের আবেগ ও ধর্মীয় অনুভূতির প্রতিচিত্র। কাজী নজরুল ইসলাম তার অসামান্য প্রতিভা দিয়ে বাংলা ইসলামী সংগীতকে সমৃদ্ধ করেছেন, আর এই গান তার অন্যতম সেরা উদাহরণ। প্রতিবছর যখন ঈদের চাঁদ ওঠে, তখন এই গান আমাদের মনে করিয়ে দেয় ঈদের প্রকৃত শিক্ষা—সাম্য, সংযম, ক্ষমা ও আনন্দের মিলন। তাই এই গান কেবল সুর আর বাণীর নয়, বরং ঈদের আবেগ ও অনুভূতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪২
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগ কি শিখিয়েছে?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:০৬






অপমান, অপদস্থ থেকে বাঁচার উপায় শিখাইনি? ওস্তাদ মগা শ্যামী পাহাড়ে বসেও এসবের সমাধান করতে পারে, আপনি সামান্য অসুস্থতার জন্যও ব্লগে মিলাদ দেননি, দোয়া করেছেন কার জন্য? খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন হাদিসই যদি মানতে হবে তবে আল্লাহ ফিকাহ মানতে বললেন কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৪৬




সূরাঃ ৫ মায়িদা, ৬৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৬৭। হে রাসূল! তোমার রবের নিকট থেকে তোমার প্রতি যা নাযিল হয়েছে তা’ প্রচার কর। যদি না কর তবে তো তুমি তাঁর... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ধর্ম অবমাননার ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:২৯


ঢাকায় এসে প্রথম যে স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম, সেটা ছিল মিরপুরের একটা নামকরা প্রতিষ্ঠান। লটারির যুগ তখনো আসেনি, এডমিশন টেস্ট দিয়ে ঢুকতে হতো। ছোট্ট বয়সে বুঝিনি যে স্কুলের টিচাররা কোন মতাদর্শের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৮

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

অন্তর্জাল থেকে নেওয়া সূর্যোদয়ের ছবিটি এআই দ্বারা উন্নত করা হয়েছে।

ইসলামের পবিত্র আলো ওদের চোখে যেন চিরন্তন গাত্রদাহের কারণ। এই মাটি আর মানুষের উন্নয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এডমিন সাহেব আমাকে নিয়ে অনেক বক্তব্য দিতেন এক সময়।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:০৯



আমার "চাঁদগাজী" নিকটাকে উনি কি জন্য ব্যান করেছিলেন, সেটা উনি জানেন; আসল ব্যাপার কখনো আমি বুঝতে পারিনি; আমার ধারণা, তিনি হয়তো নিজের দুর্বলতাগুলো নিয়ে ভয়ে ভয়ে থাকতেন; মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×