somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Dragon: ডিগ্রী লাভের জন্য আপনি কি পরিশ্রম করেছিলেন ?

১৩ ই মে, ২০২৫ রাত ১২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সাধারণত ভারতীয় মুভি তেমন দেখা হয় না। অনেকদিন পর গত শনিবার একটা ভারতীয় মুভি দেখলাম। আসলে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আবহে যুদ্ধের মুভির খুজতেসিলাম যে মুভিতে ভারত পাকিস্তানকে হারিয়ে দেয় সামরিক কৌশলে। নতুন কোনো মুভি দেখলাম না। হটাৎ একটা মুভির শিরোনাম দেখে খুবই অবাক হলাম। ছবির নাম "ড্রাগন" অথচ পোষ্টারে ড্রাগণের ছিটেফোঁটা নেই। কৌতুহল বশত মুভির সাব্জেক্ট বোঝার জন্য সময় করে দেখে ফেললাম। তেমন আহামরি কোনো কাহিনী নির্ভর মুভি না কিন্তু মুভিটিতে একটি শিক্ষনীয় বিষয় দেখানো হয়েছে যা প্রতিটি শিক্ষার্থীর জীবনের সাথে সম্পর্কিত। কারো হাতে অপ্রয়োজনীয় সময় থাকলে মুভিটি দেখে নিতে পারেন।

অনার্সে ফাস্ট ইয়ারে উঠে প্রথম জানতে পারলাম বাংলাদেশে সার্টিফিকেট কিনতে পাওয়া যায়। এসএসসি থেকে শুরু করে পিএইচডি পর্যন্ত সব ধরণের ডিগ্রীর সার্টিফিকেট নাকি কিনতে পারা যায়। প্রথমে এ ধরণের কথা শুনে বেশ অবাক হয়েছিলাম কারণ আমি জানতাম কেবল এসএসসি/ইন্টারের প্রাকটিক্যাল খাতা রেডিমেড কিনতে পারা যায়। একেবারে সার্টিফিকেট যে কিনতে পারা যায় এই কথা প্রথম জানলাম । আমার এক বন্ধুর সুবাদে সার্টিফিকেট কেনাবেচার ঘটনা বাস্তবে দেখার সুযোগ হয়। বন্ধু একদিন ফোনে বলে সে নাকি ধানমন্ডি যাবে দারুন ইহসান নামে একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ! আমাকেও সাথে নিতে চায়। বন্ধু আর আমি মিলে গেলাম দারুল ই্‌হসান ইউনিভার্সিটিতে !

ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের সামনে কেবল দারোয়ান বসে আছে। কোনো শিক্ষার্থী নাই। আমরা রেজিস্ট্রার স্যারের রুমে গেলাম। আমার ফ্রেন্ড তার মামার সাথে কথা বলিয়ে দিলো রেজিস্ট্রার স্যার কে । স্যার একটা বড়ো খাম আমাদের হাতে ধরিয়ে দিলেন । আমাদের জিজ্ঞাসা করলো কোথায় পড়াশোনা করছি ! সুযোগ মতো আমি স্যার কে জিজ্ঞাসা করলাম যে ইউনিভার্সিটিতে কি ক্লাস হয় না ? স্যার বলেছিলেন, দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন জায়গায় ক্যাম্পাস থাকার কারণে এবং মূল ক্যাম্পাস না থাকায় ইউজিসির চাপে তারা আপাতত ধানমন্ডি ক্যাম্পাস বন্ধ রেখেছে। আমার ফ্রেন্ড আর তেমন কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে আমাকে নিয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে চলে আসে। আমি খাম খুলে দেখি ছয়মাস মেয়াদী লাইব্রেরি সায়েন্স কমপ্লিটের একটা সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে। বন্ধুর কাছ থেকে আরো জানতে পারলাম মামা নাকি ঢাকায় এসে একদিনও ক্লাস না করে টাকার বিনিময়ে এই সার্টিফিকেট নিয়েছে। এখন এই সার্টিফিকেট ব্যবহার করে একটা জবে তিনি ঢুকবেন। সে দিন সারাদিন আমি এই ঘটনা নিয়ে ভাবতে থাকলাম। একজন লোক বিনা পরিশ্রমে একটা সার্টিফিকেট নিয়ে ফেলল আবার জব ও পেয়ে যাচ্ছে এসব নিয়ে টেনশনে আমার ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিলো। নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকিত হয়ে পড়লাম।

আমাদের পরিবারে সবাইকে দেখতাম পড়াশোনা করে,জবের জন্য এপ্লাই করে, প্রিলি-লিখিত-ভাইভা দেয়। এভাবে বাসায় বসে সার্টিফিকেট পাওয়া যায় প্রথমবার দেখলাম। আস্তে আস্তে আরো দেখলাম অনেকে একদিনও ক্লাস না করে ৬ মাস/১২ মাস মেয়াদি ককম্পিউটার সার্টিফিকেট নিচ্ছে জবের জন্য। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে দিনের পর দিন ক্লাসে এটেন্ড না করে সেমিস্টার পাশ করে যেতে দেখতাম বন্ধুদের। এদিকে মিলিটারি এফ্লিয়েটেড ইউনিভার্সিটিতে পড়ার কারণে আমাদের উপর তীব্র চাপ থাকতো পড়াশোনার ! আশেপাশে যারা প্রাইভেটে পড়তো তারা অবলীলায় প্রতি সেমিস্টারে ৩.৫ + করে পেতো। অন্যদিকে আমাদের ৩.০০ পেতেই খবর হয়ে যেত। ভালো প্রাইভেট গুলোতে যদিও পাশ করা কঠিন ছিলো কিন্তু সবার পক্ষে এসব ইউনিভার্সিটিতে পড়া সম্ভব নয়। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলো মানবসম্পদের চেয়ে নিজেদের সম্পদ তৈরির প্রতি বেশি আগ্রহী !

আমার কলেজ লাইফের এক ফ্রেন্ড আয়নুল ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি নামে এক প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়তো। তার বাবার অনেক বড়ো মুদি দোকান ছিলো। তার পড়াশোনা ছিলো জাস্ট ডিগ্রী নেয়ার জন্য আর বিয়ে করার জন্য। বাবার মাসে যে ইনকাম ছিলো দোকানে তা দিয়ে আয়নুলদের দিব্যি চলে যেত। তার কাছে শুনতাম ভার্সিটিতে কি পড়ানো হতো। তাদের ইনকাম ট্যাক্স পড়াতো একজন স্যার নাকি সেমিস্টার ফাইনালে ভাইভার পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে গান ও কৌতুক শুনে তাদের নাম্বারিং করতো। এসব শুনে আমরা খুবই অবাক হতাম। ভাবতাম এমন ভাবে পড়িয়ে কারা ডিগ্রী দেয় ? কেন দেয়?

সেই ইউনিভার্সিটির ব্যাপারে খবরে একবার নিউজ দেখেছিলাম যে সেখানে যিনি রেজিস্ট্রার স্যার উনার পিএইচডি ডিগ্রী ভুয়া। এই নিউজ দেখে আমার বন্ধুর মামার বাসায় বসে ভুয়া ডিগ্রী নেয়ার ঘটনা মনে পড়ে গেলো। বুঝতে পারলাম বাংলাদেশে চাইলে পিএইচডি ডিগ্রী নেয়া খুব কঠিন কাজ না। তেমন পড়াশোনা ও গবেষণার দরকার নেই। সাবেক র‍্যাব প্রধান বেনজীর ঢাবি থেকে যদি জালি পিএইচডি ডিগ্রী নিতে পারে তাহলে অসম্ভব বলতে আর কি বাকি আছে ? সাম্প্রতিক সময়ে দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের উকিল ড.তুরিন আফরোজের পিএইচডি ডিগ্রী ভুয়া বলে পত্রিকায় এসেছে। আরো মজার ঘটনা হচ্ছে জনপ্রশাসন সচিব মোখলেসুর রহমানের পিএইচডি ডিগ্রীও ভুয়া। তিনি অনলাইনে এলেবেলে একটা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ডিগ্রী বাগিয়ে এখন পার্টটাইম শিক্ষকতা করেন নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটিতে ! আর কত চাই এই লোকের আল্লাহ ভালো জানেন।

পাবলিক বাসগুলোতে উঠলে দেখা যায় প্রাইভেট ভাবে অনার্স/মাস্টার্স/মেট্রিক/ইন্টার পাশ করিয়ে দেয়ার বিজ্ঞাপন। এক সময় এসবের চাহিদা থাকলেও প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেড়ে যাওয়ার ফলে কেউ আর এই ধরণের বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয় না। তাছাড়া নীলক্ষেত, বনানী বাজারে পাওয়া যায় লো ক্যাটাগরির সার্টিফিকেট চার থেকে আট হাজার টাকায়। এসব সার্টফিকেট ভ্যারিফিকেশন লাগে না এমন জবে হয়তো কাজে লাগানো যায়। অনেকে বাহিরে যাওয়ার জন্য নাকি এমন সার্টিফিকেট কিনে থাকেন।

সিরিয়ায় যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এক লোক ঘরে বসে অতি কষ্টে যুদ্ধের ডামাডোল এড়িয়ে অনলাইন ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রীর জন্য কাজ করছেন। আরেকজন নারীকে দেখলাম চারজন বাচ্চা সামলিয়ে পিএইচডি ডিগ্রীর জন্য স্টাডি করছেন। তারা যদি বাংলাদেশে জন্মাতেন এত কষ্ট করা লাগতো না। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ডিগ্রী পেয়ে যেতেন।।





সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০২৫ রাত ১২:৪৫
১২টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২০ টাকার নোট খাইলো ১ টাকার......

লিখেছেন জটিল ভাই, ১৫ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৪

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)

বি. দ্র. পোস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধুনিক সভ্যতা নাকি প্রাগৈতিহাসিক বর্বরতা?

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ১৫ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ১:৪৬


একসময় মানুষ ভাবত, বিজ্ঞানের অগ্রগতি, শিল্প-সাহিত্য, নৃত্য-সঙ্গীত, দর্শন আর মানবিকতা—এসবই হবে আধুনিক পৃথিবীর প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র। এই প্রতিযোগিতা হবে কল্যাণের, সৃষ্টির, ভালোবাসার।
কিন্তু বাস্তবতা বড় নির্মম!

আজকের দিনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা হচ্ছে—কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তেনারা ডাকাতী করেছেন; স্বীকার করেন না!

লিখেছেন দেশ প্রেমিক বাঙালী, ১৫ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ২:১২


সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সংগে জড়িত এবং সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য যিনি চট্টগ্রাম-১২ এবং চট্টগ্রাম-১৩ আসনের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। তিনি ২০১৯-২০২৪ সময়কালে চতুর্থ হাসিনা মন্ত্রণালয়ে ভূমিমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি পাথর পুষো বুকে?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৫ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ২:২৮



সম্মুখে বসে আছো..... যেন এক পাথরের পাহাড়
চোখে মুগ্ধতা নেই, ঠোঁটে নেই মিহি হাসি;
কী হাহাকার বুকে জমাও কে জানে, কী চাও;
রান্না বান্নার সংসার?
নাকি খাওয়া ঘুম আর টিভির চ্যানেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেব্রুয়ারির নির্বাচন: সমঝোতা নাকি শুভঙ্করের ফাঁকি?

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ১৫ ই জুন, ২০২৫ রাত ৮:১১



"তারেক রহমান ও ড. ইউনূসের লন্ডন বৈঠকের পর ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের গুঞ্জন—সমঝোতার আলো, না কি নতুন প্রতারণার জাল? জানুন বাংলাদেশের রাজনীতির অজানা দিক, বিভক্তির বাস্তবতা ও নির্বাচন ঘিরে নতুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×