
তিন তালাক হওয়ার পর কোনো নারী আর কাউকে বিয়ে না করে থাকলে , তাহলে কি সে আবার তার প্রাক্তন স্বামীর সঙ্গে বিয়ে করতে পারবে?
উত্তর: না, পারবে না। কারণ: তিন তালাক (তালাক-এ-মুগাল্লাযা) হওয়ার পর সেই নারী তার প্রাক্তন স্বামীর জন্য স্থায়ীভাবে হারাম হয়ে যান, যতক্ষণ না :
১. তিনি অন্য কাউকে প্রকৃতভাবে বিয়ে করেন ,
২. এবং সেই বিয়ে স্বাভাবিক কারণে ভেঙে যায় (তালাক/মৃত্যু),
৩. তবেই তিনি প্রাক্তন স্বামীকে পুনরায় বিয়ে করতে পারেন ।
এটি সূরা আল-বাকারা ( ২:২৩০) এর স্পষ্ট নির্দেশ: "যদি সে তাকে (তৃতীয়) তালাক দেয়, তবে সে তার জন্য হালাল হবে না, যতক্ষণ না সে অন্য এক স্বামীকে বিয়ে করে..."। তাহলে তিন তালাকের পর কী অবস্থা দাঁড়ায়?
১- সে কি প্রাক্তন স্বামীর কাছে ফিরে যেতে পারে? উত্তর : না
২- হিল্লা ছাড়া ফিরে যাওয়ার কোনো শরিয়তি সুযোগ আছে ? উত্তর: না
৩- যদি সে আবার বিয়ে না করে ? উত্তর : প্রাক্তন স্বামীর সঙ্গে বিয়ে করা শরিয়তসম্মত নয় |
৪- যদি হিল্লা বিয়ে হয়, কিন্তু তা উদ্দেশ্য প্রণোদিত বা পরিকল্পিত হয়? উত্তর : হারাম এবং শাস্তিযোগ্য গুনাহ।
সাল ২০২২। বাংলাদেশে করোনার প্রকোপ কমতে শুরু করেছে। আর্থিক ভাবে তখন আমার খুব কাট টু কাট বাজেটে চলতে হচ্ছিলো। পাশাপাশি মাস্টার্স রানিং চালিয়ে যাচ্ছিলাম। অনার্স লাইফ থেকে ভালো এমাউন্টের টিউশান/ব্যাচ পড়ানোর কারণে একটু লাক্সারি লাইফে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। পরিবারে আমার উপর ডিপেন্ডেবল কেউ নাই। তাই যখন যেমন ইচ্ছা টাকা পয়সা দিতাম ফ্যামিলিতে। দিতেই হবে এমনটা না। কিন্তু করোনার কারণে আমার টিউশান ও ব্যাচের কপালে ঝাটার বারী পড়লো। সবাইকে বিগত আম্লিক সরকার অটোপাশ দিবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। কেউ তাই প্রাইভেট বা ব্যাচ কিছুই পড়তে চাইতো না। ব্যতিক্রম ছিলো ক্লাস ৯ম/১০ম শ্রেনীর শিক্ষার্থীরা। উহারা বেশ সিরিয়াস ছিলো পড়াশোনার ব্যাপারে। এদের কারণে আমিও কিছুটা রিলাক্স ছিলাম। বাসায় গিয়ে দুই/একটা টিউশান পড়াতাম। যাদের পড়াতাম তাদের বাসায় সবার করোনা হয়েছিলো শুধু আমার স্টুডেন্টদের বাদে। তারা এই কথা আমাকে তখন জানায় নাই। যাই হোক এই টাকায় ব্যক্তিগত ভাবে সন্তুষ্ট ছিলাম না। মাস শেষে টাকা পাওয়ার চেয়ে কোথাও কোচিং-এ পড়িয়ে নগদানগদ অর্থপাওয়ার ব্যাপারে বেশি আগ্রহী ছিলাম।
বিভিন্ন কোচিং সেন্টার করোনার ধাক্কা সামলিয়ে তখন আস্তে আস্তে খুলছিলো। স্টুডেন্ট কেবল নামকরা প্রতিষ্ঠান গুলোতে ছিলো। এমনই একটি নামকরা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস নেয়া শুরু করি সপ্তাহে তিনদিন। ডেইলি পেমেন্ট করে দিতো। প্রতিষ্ঠানে স্টুডেন্ট ছিলো প্রায় তিনশ থেকে চারশ জন। সিভি দেয়ার পর ডাইরেক্ট ভাইভা দিয়ে জয়েন করি। কোচিং-এর সব কিছুই ভালো শুধু মালিক বাদে। তিনি নিজেও ক্লাস নিতেন। উহা একচুয়ালি কোচিং সেন্টারের পাশাপাশি দ্বীনি কাজের সাথে সম্পৃক্ত ছিলো। স্যারের কোচিং-এ যারা পড়তে আসতো তাদের ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গভীর ভাবে জানার সুযোগ ছিলো। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আল কুরআনের আলো প্রবেশ করানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হতো। কারণ স্যার বিশ্বাস করতেন দুনিয়াবী পড়াশোনা কখনোই আমাদের আসল গন্তব্যে পৌছাতে পারে না। একমাত্র আখিরাতের ভয় আমাদের দুনিয়ার জীবনে সঠিক কাজ করতে সহায়তা করবে। আশেপাশে আরো অনেক কোচিং সেন্টার ছিলো যাদের মধ্যে এমন কোনো উদ্যোগ ছিলো না। এতে অল্প সময়ে স্যারের প্রতিষ্ঠানের নাম ডাক ছড়িয়ে পড়ে।
একবার টিচার্স রুমে ম্যাডামরা সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছিলেন। পেশাগত কারণে একজন ম্যাডামের সাথে যোগাযোগের প্রয়োজনে টিচার্স রুমে যাই। সেখানে গিয়ে প্রথমবারের মতো জানতে পারলাম প্রধান স্যার দুই বিবাহ করেছেন। স্যারের স্ত্রী প্রায়শই আসতেন প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু উহা স্যারের দ্বিতীয় পক্ষ তা জানা ছিলো না। যে সব ম্যাডাম দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত উহারা স্যারের পারিবারিক অনেক গোপনীয়তা জানতেন। তাদের আলোচনা থেকে বাস্তবিক ভাবে হিল্লা বিবাহের বিষয়টি জানতে পারি। হিল্লা বিবাহ নিয়ে আগে থেকে জানা থাকলেও বাস্তব প্রমাণ চোখের সামনে পড়েনি। ম্যাডামদের কাছে প্রধান স্যারের গোপনীয় অধ্যায় জানার সুযোগ হয়েছিলো।
প্রধান স্যার শুরু থেকে ধার্মিক ছিলেন না। তিনি জেনারেল লাইনে পড়াশোনা করেছেন। পড়াশোনা করেছেন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত সাব্জেক্ট নিয়ে। প্রধান স্যার ঢাকায় এসে খরচ চালানোর জন্য কোচিং সেন্টারে ক্লাস নিতেন। স্যারের ব্যবসায়িক বুদ্ধি ভালো থাকার কারণে এবং মেধাবী হওয়ার কারণে খুব দ্রুত একটি কোচিং সেন্টারের মালিক উহাকে কোচিং এর ম্যানেজার পদে উন্নীত করেন। স্যারের একটা রিলেশন ছিলো সাত বছর। পরে উহারা বিবাহ করেছিলেন অনার্স শেষ হওয়ার পূর্বেই। স্যারের ওয়াইফ ঢাবিতে জিওগ্রাফি সাবজেক্ট নিয়ে পড়তেন। ঢাবির একজন শিক্ষার্থী কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একজন ছেলেকে বিয়ে করার ঘটনা খুব একটা কমন না। অনেক সময় এই ধরণের রিলেশন টিকেই না। কিন্তু প্রধান স্যারের প্রথম ওয়াইফ ব্যতিক্রম ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিনের রিলেশনের উপর আস্থা রেখে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।
প্রধান স্যার ম্যানেজার হওয়ার পর উহার বেতন বাড়ে। পাশাপাশি নিজেই কোচিং সেন্টারে ব্যাচ পড়িয়ে ইনকাম বাড়ান। উহার মুল লক্ষ্য ছিলো নিজে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হওয়া। কিন্তু স্যারের পরিবারে ঝামেলা শুরু হয় তৃতীয় পক্ষের আগমনে। ব্যাচে পড়া একটা মেয়ের সাথে স্যারের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। সে সময় উহার সংসারে নতুন অতিথি আসার আয়োজন চলছিলো। প্রধান স্যারের কোনো হুশ ছিলো না। তিনি গভীর প্রেমে উন্মত্ত ছিলেন। প্রধান স্যার ওপেনলি সেই ছাত্রীর সাথে চলাফেরা করতেন। অভিভাবক মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সবাই প্রতিষ্ঠানের মালিক কে কমপ্লেইন দিতে থাকেন। প্রধান স্যারের ওয়াইফ তখনো বিষয়টা জানতেন না। স্যার কন্যা সন্তানের পিতা হলেন। প্রধান স্যারের প্রেম-লীলা ধীরে ধীরে এলাকার মধ্যে চাঞ্চল্যকর অবস্থা সৃষ্টি করে। প্রথম স্ত্রীর কানে পৌছায় অবশেষে। তিনি প্রধান স্যার এবং সে ছাত্রীকে হাতেনাতে পাকড়াও করেন। সেদিন নাকি ম্যাডাম কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। সাত বছর রিলেশনে থাকা একজন মানুষের এমন পরিবর্তন ম্যাডাম মেনে নিতে পারেন নাই। ম্যাডাম বাবার বাড়িতে ফিরে আসেন। প্রধান স্যারের সাথে উহার প্রথম স্ত্রীর ডিভোর্স হয়ে যায়।
প্রধান স্যার যে মেয়ের সাথে পরকীয়ায় মেতেছিলেন উহার পরিবার তাদের এরকম সম্পর্ক মেনে নেয় নি। তারা মেয়েটিকে দ্রুত বিয়ে দিয়ে দেয়। স্যার চোখে মুখে অন্ধকার দেখতে থাকেন। জীবনের প্রতি উহার সকল আকর্ষন হারায়ে যায়। তিনি দুইবার সুইসাইড করার চেষ্টা করেন। একদিন সকালে উঠে বোনের বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যান। স্যারের প্রথম স্ত্রী প্রাইমারি তে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পান। মেয়েকে নিয়ে তিনি ঢাকা থেকে নিজ গ্রামের বাড়িতে পোষ্টিং নিয়ে চলে যান।
হটাত করে বছর দুয়েক পর প্রধান স্যার বোনের বাসায় এসে উপস্থিত হন। তিনি এখন বেশ ধার্মিক হয়ে উঠেছেন। বিরাট জুব্বা ও দাড়ি রেখেছেন। বাসার সবাই স্যারের এই পরিবর্তন দেখে অবাক হয়। স্যার সবাই কে জানান তিনি দ্বীনি জীবনের ট্রেনিং নিয়েছেন। নিজেকে পরিশুদ্ধ করার জন্য তাবলীগ জামায়াতের সাথে ছিলেন। তিনি এখন ভিন্ন এক মানুষ। স্যারের ফিরে আসায় পরিবারের লোকজন বেশ খুশি ছিলো। তারা প্রধান স্যারকে বিবাহ করে নতুন জীবন শুরু করতে পীড়াপীড়ি শুরু করে। কিন্তু স্যার উহার প্রথম স্ত্রীর সাথে পুনরায় মিলনে বেশি আগ্রহী ছিলেন। তিনি ম্যাডামের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। প্রথম ওয়াইফ আর বিয়ে থা করেন নাই। স্যার উহার মান ভাঙানোর চেষ্টা করেন।
প্রধান স্যার বাচ্চার সকল দায়িত্ব নিতে চান। স্ত্রীর কাছে উহার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চান। স্যার উহার পরিবারকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য ইসলামিক বিভিন্ন স্কলারের শরণাপন্ন হন। তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অনেক ইসলামিক স্কলার কে ইমেইল পাঠান। সবাই একই উত্তর দিয়েছেন। স্যারের প্রাক্তন স্ত্রীকে হিল্লা বিবাহ করতে হবে প্রথমে। স্যার যখন প্রাক্তন স্ত্রীকে বিষয়টা জানান তিনি সরাসরি মানা করে দেন। তিনি বলে দেন, উহার সংসার করবেন না। বাচ্চাকে ম্যাডাম নিজেই প্রতিপালন করবেন। স্যারের সকল প্রচেষ্টা মাঠে মারা গেল। তিনি ঢাকায় ফিরে এলেন। কিছুদিন পর প্রধান স্যার নতুন করে ব্যবসা শুরু করেন। নিজস্ব মালিকানায় একটা কোচিং সেন্টার খুলেন তিনি। বছরখানেক পরে স্যার একজন ষোড়শী হাফেজার সাথে পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন।
এই ঘটনা শোনার পর স্যারের পর্দার ব্যাপারে কড়াকড়ি নিয়ম করার কারণ বুঝতে পারি। টিচার্স রুমে যে ম্যাডাম এই ঘটনা সবার সাথে শেয়ার করেছেন তিনি প্রধান স্যারের সাথে একই কোচিং সেন্টারে পড়াতেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০২৫ রাত ১১:১৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



