যখন এই লেখা পাবলিসড হবে সে সময় ইরানের তেহরানে মারাত্মক হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। অবস্থাদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে ইসরায়েল অল-আউট এটাকে নেমেছে ইরান কে শেষ করে দেয়ার জন্য। ইরানও তার সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে পাল্টা হামলা করছে। প্রশ্ন হচ্ছে ইরানে এই মূহুর্তে কেন ইসরায়েল হামলা শুরু করলো ? নেতানিয়াহু আসলে কি চায় ?
গত এপ্রিল মাসের বারো তারিখ ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে পারমানবিক চুক্তি করার জন্য ৬০ দিনের সময় বেধে দেয়। এই উন্মাদ লোকটির কর্মকান্ড তৃতীয় বিশ্বের রাজনৈতিক নেতাদের সাথে মিল রয়েছে। বারাক ওবামার সময়ে ইরান যাতে পারমাণবিক কর্মকান্ড বিস্তৃত না করে সেজন্য একটি চুক্তি করা হয়েছিলো। পাগলা ট্রাম্প তার প্রথম শাসনামলে সে চুক্তি থেকে বের হয়ে আসে। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদের সময় ট্রাম্প ইরান কে আবার চুক্তি করতে চাপ প্রয়োগ করে। ইরান কিছুটা ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করেছে এবার। বারবার বৈঠকের ফলে ট্রাম্পের ঘোষিত সময়সীমা পার হয়ে যায়। ট্রাম্প দাবী করেছে ৬১তম দিনে ইরান চুক্তি না করার কারণে ইসরায়েল হামলা করেছে। ট্রাম্পের এই দাবী কতখানি সত্য? নেতানিয়াহু ও ইসরায়েলের নিজস্ব কোনো এজেন্ডা কি নেই হামলার পিছনে ? তারা কি আমেরিকার কথা অনুযায়ী চলছে?
ইসরায়েল যতই হামলা করুক ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার তেমন কোনো হবে বলে মনে হচ্ছে না। এর কারণ হিসাবে ইরাকে ১৯৮১ সালে পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার উদাহরণ কে আমরা সামনে আনতে পারি। মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ মাটির উপরে পারমাণবিক স্থাপনা নির্মাণ করবে না ইরাকের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা গুলো মাটির অনেক গভীরে থাকায় আলোচিত বাঙ্কার বোম দিয়েও কাজ হবে না। ইসরায়েল ইরানে এমন খতরনাক হামলার জন্য দীর্ঘদিন পরিকল্পনা করেছে। তারা এফ-৩৫ এর মতো ফাইটার বিমান কে মডিফাই করেছে যাতে ইরানে ডিফেন্স সিস্টেমে হামলা করে তছনছ করে আবার ইসরায়েলে ফেরত আসতে পারে কোনো প্রকার রিফুয়েলিং ছাড়া। ইসরায়েলের প্রতিটি হামলার টারগেটে এত সুক্ষ ভাবে এটাক করেছে যা পুরো বিশ্ব অবাক হয়ে দেখেছে। ইরানের উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও বৈজ্ঞানিক হত্যা করে ইরানের বুদ্ধিবৃত্তিক ও যুদ্ধ করার মানসিকতা কে পুরো ধসিয়ে দিচ্ছে ইসরায়েল। এসব ক্ষেত্রে তারা এমন সব প্রযুক্তি ব্যবহার করছে যা পিলে চমকানোর মতো। ইসরায়েলের এমন হামলার প্লান দেখেই বোঝা যাচ্ছে ইরানের ভিতর তাদের গোয়েন্দাসংস্থা কিভাবে জাল বিস্তৃত করেছে অথচ ইরানের ইনটেল কোনো খবর পেল না । এর পিছনে ইরানের প্রেজেন্ট রেজিমের সাথে জনগণের এক প্রকার দূরত্ব অনেকাংশে দায়ী।
ইসরায়েলে নেতানিয়াহুর অবস্থা খুব ভালো না। উহার বিগত শাসনামলে করাপশন ও ফ্রডলেন্ট একটিভিটেজের জন্য আদালতে মামলা চলছে। কিছুদিন আগে নেতানিয়াহু উচ্চআদালত কে প্রভাবিত করার অভিযোগে রাস্তায় নেমেছে হাজার হাজার মানুষ। নেতানিয়াহু ক্ষমতা ছাড়লেই উহাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। পাশাপাশি আইসিসিতে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হতে পারে। তাই গাজা, ইরান, সিরিয়া সহ বিভিন্ন ফ্রন্টে যুদ্ধ লাগিয়ে ইসরায়েলের জায়নবাদীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে চায় নেতানিয়াহু।
নেতানিয়াহু ও ইসরায়েল ঠিক এ সময়ের জন্যই অপেক্ষা করছিলো। ইরান মূলত সরাসরি কোথাও যুদ্ধ করে না। ইরান প্রক্সি ওয়ারের জন্য বিখ্যাত। তারা সিরিয়ায় প্রক্সি ওয়ারে জড়িত ছিলো। হিজবুল্লাহকে সামনে রেখে তারা প্রক্সি ওয়ার করেছে ইসরায়েলের সাথে। কিন্তু ইসরায়েল বেশ কিছুদিন পূর্বে হিজবুল্লাহর প্রধান নাসরুল্লাহ কে হত্যা করে তাদের মাজা ভেঙে দিয়েছে। গাজায় ইরান হামাস কে পুজি করে প্রক্সি ওয়ার করেছে। কিন্তু ইসরায়েল সেখানেও বিগত তিন বছর টানা হামলা করে হামাসের কোমর ভেঙে দিয়েছে। তাদের বড়ো বড়ো কমান্ডারদের হত্যা করেছে ইসরায়েল। এখন কেবল বাকি আছে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা যারা ইরান থেকে সাপোর্ট পেয়ে ইসরায়েলের সাথে প্রক্সি ওয়ার করছে। ইসরায়েল ও তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। ইরানের বিভিন্ন প্রক্সি ওয়ারের ফ্রন্টগুলো দূর্বল হয়ে পড়ায় ইসরায়েল এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইরান কে নাস্তানাবুদ করতে চায়।
নেতানিয়াহুর আরেকটা প্লান হচ্ছে ইরানে আমেরিকা-ইসরায়েলের পছন্দ অনুযায়ী শাসক বসানো। মধ্যপ্রাচ্যে তাহলে আর কেউ ঝামেলা করার থাকলো না। নেতানিয়াহুর ইরানে হামলার মাত্রা তীব্র থেকে তীব্রতর করছে যাতে জনগণ ইরানের প্রেজেন্ট রেজিমের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় নেমে আসে। নেতানিয়াহু বারবার ইরানের জনগণ কে সেই আহবান জানাচ্ছেন। তেহরানে হামলার মাত্রা এত বাড়িয়েছে যে মানুষজন শহর ছেড়ে পালাচ্ছে। এভাবে যদি দীর্ঘদিন ইসরায়েল চালিয়ে যেতে পারে যে কোন ঘটনাই ঘটে যেতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০২৫ রাত ১১:১০