
রাজশাহীর পবা উপজেলার বামনশিকড় গ্রামের একটি ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে - আমরা কতটা ভুল পথে হাঁটছি। পহেলা আগস্ট মিনারুল ইসলাম তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যা করেন। কারণ? ঋণের দায় আর খাদ্যাভাব। তার চিরকুটে লেখা ছিল - "এত কষ্ট আর সহ্য করতে পারছি না।" মাত্র এক মাস পরে তার বাবা রুস্তম আলী এক লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ১২০০ মানুষকে চল্লিশার খাওয়া দিলেন। জীবিত ছেলেকে বাঁচাতে পারলেন না, কিন্তু মৃত নাতি-নাতনিদের জন্য লাখ টাকা খরচ করলেন।
৩৬ বছরের মিনারুল ইসলাম একজন দিনমজুর। জুয়া খেলার নেশায় পড়ে একাধিক এনজিও ও ব্যক্তিগত ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েন। প্রতি সপ্তাহে কিস্তি দিতে হতো। খাবার কিনতে পারতেন না। ৭-৮ বছর আগে বাবা রুস্তম আলী দেড় লাখ টাকার ঋণ পরিশোধ করতে জমি বিক্রি করে ছেলেকে একবার বাঁচিয়েছিলেন। কিন্তু শিক্ষার অভাবে মিনারুল বুঝতে পারেননি জুয়ার ভয়াবহতা। আবার একই গর্তে পড়লেন। মৃত্যুর তিন দিন আগে ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে বলেছিলেন, "বাড়িতে খাবার নেই।" সামান্য টাকা পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই টাকায় পুরো পরিবারের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হয়নি।
মিনারুলের মৃত্যুর পর স্থানীয় মানুষরা রুস্তম আলীকে বললো: "চারজনের মরার কারণে বাড়ি ভারী ভারী লাগছিল । ছোট ছিলেপিলেরা ভয় পাচ্ছিল; চল্লিশা করলে ভয় ভাঙবে"। ৭০ বছরের বৃদ্ধ রুস্তম আলী বলেন, "বাপ-দাদার আমল থেকেই দেখে আসছি। আমিও মনের আবেগে করলাম''। রুস্তম আলী চল্লিশার জন্য এক লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। শোধ করবেন কীভাবে, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, ''১৫-১৬ কাঠা জমি আছে। এক কাঠা বেচব, বেচে ধার শোধ করব। তা ছাড়া তো আর কোনো উপায় নেই''।
ইউপি চেয়ারমান সাঈদ আলী মোর্শেদ স্বীকার করেন, "ইসলামের দৃষ্টিতে এটা নাই। কিন্তু কেউ মারা গেলে এটা করতে হয়।" নিজেও জানেন ভুল, তবুও করতে হয় ! যেখানে জীবিত মানুষ খাবার পাচ্ছে না, কিন্তু মৃতদের জন্য হাজার হাজার টাকা খরচ হচ্ছে । ধর্মীয় নেতারাও জানেন এসব অনুষ্ঠানের কোন ভিত্তি নেই ; তবুও সমাজের চাপে করতে হয়।
রুস্তম আলী এখন আবার জমি বিক্রি করবেন। এবার মৃত নাতি-নাতনিদের চল্লিশার ঋণ শোধ করতে। যে টাকা দিয়ে তিনি হয়তো জীবিত ছেলে ও পরিবারকে বাঁচাতে পারতেন। মিনারুলের শেষ আর্তনাদ ছিল: "আর কারও কাছে হাত পাততে হবে না।" কিন্তু আমাদের অশিক্ষা ও কুশিক্ষার কারণে তার বাবাকে আবার হাত পাততে হলো। এবার মৃতদের জন্য। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে !
ঋণের দায়ে আত্মহত্যা’ করেছিলেন মিনারুল, ঋণ নিয়ে ১২০০ জনের জন্য চল্লিশা- Prothom Alo
আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে-খাওয়ার অভাবে-Desh Rupantor
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



