
একটি সমুদ্র সৈকতে ঝড়ের পর হাজার হাজার তারামাছ বালিতে পড়ে আছে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে তারা মারা যেতে শুরু করবে। এমন সময় একটি ছেলে এসে একটি একটি করে তারামাছ তুলে সমুদ্রে ছুঁড়ে দিতে শুরু করে। একজন বয়স্ক লোক তাকে দেখে বলল, "পাগল ছেলে, এত হাজার তারামাছ! তুমি কী পার্থক্যই বা করতে পারবে?" ছেলেটি আরেকটি তারামাছ তুলে সমুদ্রে ছুঁড়ে দিয়ে শান্তভাবে বলল, "এই একটার জন্য তো পার্থক্য হলো।"
এই বিখ্যাত গল্পটি আজ বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক হয়েছে BIDA এবং BEZA-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী-র প্রকাশিত "Our Performance Report"-এর কারণে। তাঁর রিপোর্টটি ঠিক সেই বয়স্ক লোকটির মতো। তিনি ৩০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের দাবি, ১০,০০০ কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিকল্পনা এবং নানাবিধ সংস্কারের কথা বলছেন: হাজার হাজার "তারামাছের" বিশালতা নিয়ে ভাবছেন। কিন্তু এই বিশালতার আড়ালে তিনি তাঁর অফিসের সামনে পড়ে থাকা মাত্র ৪টি "তারামাছকে" বাঁচাতে পারছেন না।
আশিক চৌধুরী একজন অত্যন্ত মেধাবী এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তি। তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা (IBA ঢাবি , লন্ডন বিজনেস স্কুল, CFA) নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তিনি ২০২৪ সালের জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের ফলস্বরূপ দেশে ফিরে এসে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসেছেন। যে আন্দোলনের মূল দাবিই ছিল মেধার ভিত্তিতে চাকরি এবং বেকারত্ব দূরীকরণ, সেই আন্দোলনের সুবিধাভোগী হয়েও তিনি চাকরির মূল দাবিটি পূরণের ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলেন। BIDA-তে মাত্র ৪টি পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল, কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার পর একবছর পেরিয়ে গেলেও তিনি সেই ৪টি পদে নিয়োগ দিতে পারেননি।
এই ৪ জনই হতে পারতো তাঁর "তারামাছ" যাদের জীবনে তিনি সরাসরি এবং দ্রুত পার্থক্য আনতে পারতেন। যদি তিনি এই ৪ জনকে চাকরি দিতেন, তবে ৪টি পরিবারে নিয়মিত আয়ের নিশ্চয়তা আসত। সন্তানদের লেখাপড়া, বাবা-মায়ের চিকিৎসা এসবের মধ্য দিয়ে ৪টি পরিবারের মুখে হাসি ফিরত। আর এই ৪ জন হতেন আশিক চৌধুরীর সবচেয়ে শক্তিশালী ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। কিন্তু এখন কী হয়েছে? যখন কোনো সরকারি সংস্থা নিজের অফিসের মাত্র ৪টি শূন্য পদ পূরণ করতে একবছর সময় নেয়, তখন জাতীয় পর্যায়ে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ আকর্ষণের দাবি জনগণের কাছে অর্থহীন মনে হয়। মানুষ বাস্তব পরিবর্তন দেখতে চায়, কথার ফুলঝুরি নয়।
আশিক চৌধুরীর এই ব্যর্থতা তাঁর ব্যক্তিগত দক্ষতার অভাব নয়, বরং বাংলাদেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থার বৃহত্তর সমস্যার প্রতিফলন। আমরা প্রায়শই বড় বড় পরিকল্পনা এবং রিপোর্ট তৈরিতে যতটা গুরুত্ব দিই, দৈনন্দিন প্রশাসনিক কাজ এবং ছোট ছোট সমস্যার সমাধানে ততটা গুরুত্ব দিই না। তাঁর মতো একজন আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তি যখন একটি সহজ কাজ সম্পন্ন করতে পারছেন না, তখন বুঝতে হবে সমস্যাটি আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, সিদ্ধান্তহীনতা এবং অগ্রাধিকার নির্ধারণে ভুলের জালে আটকে আছে।
তারামাছের গল্পের শিক্ষা হলো: একসাথে সবাইকে বাঁচাতে না পারলেও, যাকে পারো তাকে বাঁচাও। প্রতিটি জীবনেরই মূল্য আছে। জনগণের আস্থাই সবচেয়ে বড় পুঁজি এবং সেই আস্থা অর্জিত হয় ছোট ছোট সাফল্যের মধ্য দিয়ে। আশিক চৌধুরী হয়তো মনে করেছেন বড় বিনিয়োগ আনাই একমাত্র কাজ, কিন্তু তিনি ভুলে গেছেন যে প্রশাসনিক দক্ষতা ছাড়া বড় প্রকল্প পরিচালনা অসম্ভব। ৪ জন মানুষকে চাকরি দিতে না পারার ব্যর্থতা তাঁর ৩০০ মিলিয়ন ডলারের সব অর্জনের ঔজ্জ্বল্য ম্লান করে দিল। এটিই প্রমাণ করে যে, ছোট কাজগুলো করতে পারাটাই প্রকৃত নেতৃত্বের পরীক্ষা।
তথ্যসূত্র: Bangla Mirror News. (2025, June 6). BIDA chief publishes 8-month performance report / /BIDA নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২৪, আবেদনের শেষ তারিখ: ৪ জুলাই ২০২৪ ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


