
নাহিদ ইসলাম অবশেষে বুঝে গেছেন জামায়াত আসলে কী জিনিস। জুলাই সনদে স্বাক্ষরের পর জামায়াতের আচরণ দেখে তিনি উপলব্ধি করলেন যে এতদিন ধরে কারা তাদের ব্যবহার করে গেছে। যে মানুষটা জেলে বসে স্বপ্ন দেখেছিলেন নতুন বাংলাদেশের, তিনি এখন বুঝছেন সেই স্বপ্নে কারা সত্যিকারের সাথী আর কারা শুধু সুযোগসন্ধানী। যারা ভেবেছিল জামায়াতও সংস্কার চায়, তারা এখন বুঝছে সেটা ছিল বিশাল ভুল হিসাব।
আজকে ফেসবুকে জামায়াতকে নিয়ে নাহিদ ইসলাম যা লিখেছেন, তা রীতিমতো রাজনৈতিক বোমা। তার মূল বক্তব্য: জামায়াতের PR আন্দোলনটি ছিল একটি পরিকল্পিত 'রাজনৈতিক প্রতারণা'। এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার প্রক্রিয়াকে ভেস্তে দেওয়া এবং জাতীয় সংলাপকে প্রকৃত প্রশ্ন থেকে সরিয়ে দেওয়া। প্রকৃত প্রশ্ন ছিল জনগণের গণঅভ্যুত্থানের আলোকে রাষ্ট্র ও সংবিধানের পুনর্গঠন।
আনুপাতিক ভোট প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে একটি উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠার মূল সংস্কার দাবিটি ছিল একটি সাংবিধানিক সুরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে চিন্তা করা। অনেকে এই মৌলিক সংস্কারগুলোর চারপাশে একটি গণআন্দোলন গড়ে তুলতে চেয়েছিল এবং বিস্তৃত জাতীয় ঐকমত্যের মাধ্যমে জুলাই চার্টারের আইনি কাঠামো প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। কিন্তু জামায়াত ও তার মিত্ররা এই এজেন্ডাকে হাইজ্যাক করে সেটিকে শুধুমাত্র একটি কারিগরি পিআর ইস্যুতে পরিণত করে এবং তা তাদের সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থে দরকষাকষির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। তাদের উদ্দেশ্য কখনোই সংস্কার ছিল না, ছিল কেবল কৌশলী রাজনৈতিক চাল।
জামায়াতে ইসলামি কখনোই সংস্কারমূলক আলোচনায় যুক্ত হয়নি, না জুলাই অভ্যুত্থানের আগে, না পরে। তারা কোনো কার্যকর প্রস্তাব দেয়নি, কোনো সাংবিধানিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেনি, কিংবা গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের প্রতি কোনো অঙ্গীকারও দেখায়নি। কমিশনের ভেতরে তাদের আকস্মিক সংস্কারসমর্থন ছিল কোনো আদর্শগত বিশ্বাস নয়, বরং কৌশলগত অনুপ্রবেশ। এক ধরনের রাজনৈতিক নাশকতা, যা সংস্কারবাদের মুখোশে লুকানো ছিল। এখন বাংলাদেশের জনগণ এই প্রতারণা বুঝে ফেলেছে। তারা জেগে উঠেছে সত্যের আলোকে এবং আর কোনো মিথ্যা সংস্কারবাদী বা ছলনাময় রাজনৈতিক শক্তির দ্বারা প্রতারিত হবে না। এই দেশ ও জনগণের উপর আর কখনোই অসৎ, সুযোগসন্ধানী ও নৈতিকভাবে দেউলিয়া কোনো শক্তি শাসন করতে পারবে না। না সর্বশক্তিমান আল্লাহর অনুমতিতে, না জনগণের ইচ্ছায় ।
এনসিপি ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল উচ্চকক্ষে PR পদ্ধতি চালু করা, যা একটি স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের জন্য সহায়ক হতে পারত। কিন্তু জামায়াত সবসময়ই এই PR-কে ব্যবহার করে এসেছে তাদের দীর্ঘদিনের মিত্র বিএনপির কাছ থেকে রাজনৈতিক লেভারেজ আদায়ের জন্য। জামায়াত কখনোই বিএনপির বিপক্ষে বর্তমানে যাওয়ার সামর্থ্য রাখে না। তাদের অস্তিত্বের বড় অংশই নির্ভর করে বৃহত্তর জোটের সমর্থনের ওপর। বিএনপি হলো তাদের রাজনৈতিক ছাতা, যার নিচে না থাকলে জামায়াতের অস্তিত্ব বিপন্ন।
তাই জামায়াত যখন পিআর নিয়ে আন্দোলন করছিল, তখন তাদের আসল টার্গেট ছিল বিএনপিকে চাপে রাখা, নিজেদের দরকষাকষির ক্ষমতা বাড়ানো। কিন্তু এনসিপি এই সত্যটা বুঝতে পারেনি। এদিকে বিএনপি শুরু থেকেই PR পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনের বিরোধিতা করে রেখেছিল। জামায়াতের 'স্ট্যান্ডবাজি'-র কারণে পুরো সংস্কার প্রক্রিয়া যেমন জটিল হলো, তেমনি ধরা খেল এনসিপি এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যারা হয়তো জামায়াতের এই কৌশল বুঝতে পারেনি। জামায়াত এখন উচ্চকক্ষের PR নিয়ে আর উচ্চবাচ্য করছে না, যা প্রমাণ করে তাদের উদ্দেশ্য সংস্কার ছিল না, ছিল কৌশলী রাজনৈতিক সুবিধা আদায়। বিএনপি হয়তো কিছু আসন ছাড়ার কথা বলেছে, জাময়াত তাই নাচতে নাচতে তাদের দাবি থেকে সরে এসে জুলাই সনদে সাইন করেছে ।
এই রাজনৈতিক দাবার চালে শেষ হাসি কে হাসবে সেটা বলার সময় এখনো আসেনি । জামায়াত বিএনপিকে 'ট্রাম্প' করতে গিয়েও পিছু হটতে বাধ্য হলো, কারণ তাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বিএনপির ছাতাটি অপরিহার্য। অন্যদিকে, জামায়াতের কৌশলগত অনুপ্রবেশের কাছে এনসিপি ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একরকম ওভার ট্রাম্পড হয়েছে, যারা একটি কৌশলগত ভুল হিসাবের কারণে সংস্কারের মূল গতিপথটিকে স্রেফ একটি দর কষাকষির পণ্যে পরিণত করার সুযোগ করে দিয়েছিল। এই খেলায় শেষ পর্যন্ত জয়ী হলো সেই সুযোগসন্ধানী রাজনীতি, যা আদর্শের চেয়ে ক্ষমতাকে বেশি প্রাধান্য দেয়।
মুল লেখা : পিআর নিয়ে জামায়াতের আন্দোলন রাজনৈতিক প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়: নাহিদ
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৮:৫৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




