somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উন্নয়নের হাত ধরে নয়া মৃত্যু ফাদ !

২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আবুল কালাম আজাদ ঢাকা শহরে এসেছিলেন তাঁর পরিবারের জন্য সচ্ছলতা ফেরানোর স্বপ্ন নিয়ে। বাড়ি শরীয়তপুরে হলেও স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে তিনি নারায়ণগঞ্জে থাকতেন এবং ঢাকার মতিঝিলের একটি ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে যুক্ত হয়ে কঠোর পরিশ্রম করতেন। সকালে নারায়ণগঞ্জ থেকে এসে তিনি প্রতিদিনের মতো মতিঝিলে কাজে যোগ দেন। দুপুরবেলা ফার্মগেটের এক টংদোকানে বসে চা খেতে খেতে হয়তো পকেটে থাকা পাসপোর্টটির কথা ভাবছিলেন, যা একদিন প্রবাসে থাকার পর এখন তাঁকে নতুন কোনো যাত্রার ইঙ্গিত দিচ্ছিল কিন্তু সেই নতুন সম্ভাবনা বা যাত্রার কোনো খবর আমাদের আর জানা হলো না। মুহূর্তের মধ্যেই মেট্রোরেলের পিলারের একটি ভারী যন্ত্রাংশ, একটি বিয়ারিং প্যাড, ছিটকে এসে তাঁর মাথায় পড়ে। সঙ্গে সঙ্গেই নিথর দেহে টাইলসের ফুটপাতে লাল রক্তের সঙ্গে মিশে গেল তাঁর সব স্বপ্ন। মাত্র ৩৫ বছর বয়সে, অপ্রত্যাশিতভাবে, আচমকা এক আঘাতে থেমে গেল তাঁর জীবন। তাঁর দুই শিশু আজ বাবা হারা হলো, যেমন তিনি শৈশবে মা-বাবাকে হারিয়ে এতিম হয়েছিলেন।

মেট্রোরেল, যা যানজটের এই দম বন্ধ শহরে এক টুকরো স্বস্তি ও আশীর্বাদ হিসেবে এসেছিল, আজ সেই আবেগে রক্তের দাগ লেগে গেল। গরিব-ছিন্নমূল মানুষ বাদে এই শহরের প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষই মেট্রোরেলের যাত্রী, তাই আবুল কালামের এই মৃত্যু আমাদের আরও বেশি স্পর্শ করে, ক্ষুব্ধ করে তোলে। তাঁর এই আকস্মিক মৃত্যু শুধুই কি এক নিছক দুর্ঘটনা নাকি কাঠামোগত হত্যা? সরকার তাঁর পরিবারকে তাৎক্ষণিক ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দিলেও কোটি টাকাও একটি প্রাণের মূল্য হতে পারে না। আসল প্রশ্ন হলো, এই মৃত্যুর জন্য দায়ী যারা, তাদের কোনো শাস্তি হবে কি?

আবুল কালামের প্রাণ কেড়ে নেওয়া সেই বিয়ারিং প্যাড হলো মেট্রোরেলের উড়ালপথ ও পিলারের মাঝখানে ব্যবহৃত এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা ঝাঁকুনি প্রতিরোধের পাশাপাশি স্থাপনার সুরক্ষায় কাজ করে। কিন্তু এই বিয়ারিং প্যাডের মান নিয়ে বহু আগে থেকেই প্রশ্ন ছিল। ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি একটি প্রতিবেদনে জানা গিয়েছিল যে উত্তরা-আগারগাঁও অংশের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতাল-থাই কর্তৃক সরবরাহ করা কিছু বিয়ারিং প্যাডের মান বুয়েটের ল্যাব পরীক্ষায় খারাপ পাওয়া গিয়েছিল। বসানো হয়ে যাওয়া নিম্নমানের প্যাডগুলো খুলে ফেলা হয়েছিল কি না, তা আজও পরিষ্কার নয় ।

গত বছরও ফার্মগেটে একই ধরনের ঘটনায় বিয়ারিং প্যাড ছিটকে পড়েছিল, যদিও সেবার কেউ হতাহত হননি, কিন্তু এই সতর্কতা সংকেতও কর্তৃপক্ষ আমলে নেয়নি। দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও, এ দেশে তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখে না কিংবা সুপারিশ আমলে নেওয়া হয় না এটাই যেন চিরায়ত নিয়ম। বুয়েটের অধ্যাপক ড. সামছুল হকের মতে, যদি নিরাপদ চলাচল ও স্থায়িত্বের জন্য বসানো জিনিস নিচে পড়ে মানুষ মারে, তবে এর নকশাগত ত্রুটি থাকতে পারে। মেট্রোরেলের মতো মেগাপ্রকল্পে উচ্চ ব্যয়েও যদি নির্মাণসামগ্রীর মান এবং সুরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে এমন গাফিলতি থাকে, তবে তা কেবলই দুর্ঘটনা নয়, বরং মানহীন নির্মাণ ও দুর্বল নজরদারির ফল, যা মানুষের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলছে। এই ঘটনা প্রশ্ন তোলে, আর কত নিরীহ পথচারীর প্রাণ গেলে আমাদের হুঁশ ফিরবে?

তথ্যসূত্র / References:

১. মেট্রো-মৃত্যুর বিয়ারিং প্যাড কিংবা থান ইট - দৈনিক সমকাল।
২. শৈশবে বাবা-মা হারানো আবুল কালামের এমন মৃত্যু মানতে পারছেন না স্বজনেরা- দৈনিক প্রথম আলো।
৩. মানহীন বিয়ারিং প্যাড সরবরাহ ইতাল-থাইয়ের- বণিক বার্তা।



সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:৪২
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×