somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসকন নিষিদ্ধ করতে অপহরণ নাটক সাজাতে হবে ?

২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মহান ধর্মপ্রচারক মুফতি সাহেব একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ভাবলেন, আজ একটা কিছু করা দরকার। সাধারণ মানুষ তো আর সকালে হাঁটতে বের হয় না, কিন্তু উনি বের হলেন। ষোল বছর ধরে একই মসজিদে খতিবের দায়িত্ব পালন করছেন, মুয়াজ্জিন সাক্ষ্য দিচ্ছেন মাত্র দুই-তিনবার সকালে হাঁটতে দেখেছেন, কিন্তু সেদিন হঠাৎ প্রাতঃভ্রমণের এমন তীব্র ইচ্ছা জাগলো যে থামানো গেল না। ভাগ্যিস সিসিটিভি ক্যামেরা আগে থেকেই বসানো ছিল, নইলে এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত ধরা পড়তো না।

সাতটা ক্যামেরা তাকে একা হাঁটতে দেখলো। একটা অ্যাম্বুলেন্স দেখলো না। চার-পাঁচজন অপহরণকারী দেখলো না। কিন্তু ক্যামেরার তো চোখ নেই, মানুষের মতো দেখার ক্ষমতা নেই। ক্যামেরা কি বুঝবে যে একজন মহান খতিবকে অদৃশ্য শক্তি দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? ক্যামেরা তো শুধু যা দেখে তাই রেকর্ড করে, কল্পনা করতে পারে না।

মুফতি সাহেব দাবি করলেন কাচের বোতলে পানি ভরে তাকে পেটানো হয়েছে। সিভিল সার্জন অবশ্য কোনো আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেলেন না, কিন্তু উনি তো ডাক্তার, ভেতরের ব্যথা বোঝার ক্ষমতা তার নেই। দাড়ি কেটে দেওয়ার কথা বললেন, কিন্তু সামান্য একটু কাটা। অপহরণকারীরা নিশ্চয়ই খুব ভদ্র ছিল, ভাবলো পুরো দাড়ি কাটলে হুজুরের কষ্ট হবে, তাই সামান্য কেটে ছেড়ে দিলো। কি দয়ালু অপহরণকারী!

চিঠির ব্যাপারটা আরো মজার। এগারোটা চিঠি নাকি আগে পেয়েছেন, কিন্তু কাউকে দেখাননি। মুয়াজ্জিন বলছেন শেষ দুটো ছাড়া আর কোনো চিঠি তিনি দেখেননি। এগারো মাস ধরে চিঠি আসছে, কিন্তু শুধু শেষের দুটো সবাইকে দেখানো হলো। বাকি চিঠিগুলো নিশ্চয়ই খুব ব্যক্তিগত ছিল, তাই লুকিয়ে রেখেছিলেন। চিঠিতে "আধিকারিক" শব্দ লেখা, যা নাকি প্রমাণ করে ভারত থেকে এসেছে। কারণ বাংলাদেশে তো কেউ ভুল বানান লেখে না।

মসজিদের পেছনের জানালা দিয়ে চিঠি ফেলার ঘটনাটাও চমৎকার। সামনে সিসিটিভি আছে জেনেও কেউ পেছন দিয়ে চিঠি দিতে আসবে। সেদিন বিকেল পাঁচটা থেকে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত মসজিদের এসি মেরামতের লোক ছিল, দোকানদার সারাক্ষণ বসে ছিল, কিন্তু কেউ কাউকে দেয়াল টপকাতে দেখেনি। চিঠি নিশ্চয়ই আকাশ থেকে উড়ে এসে জানালা দিয়ে ঢুকেছে।

পঞ্চগড় পর্যন্ত যাত্রাটা আরো রোমাঞ্চকর। টানা একদিন একরাত গাড়িতে চোখ বাঁধা অবস্থায়, নির্যাতন চলছে, কিন্তু মোবাইল ফোন দুপুর বারোটা পর্যন্ত চালু ছিল। অপহরণকারীরা নিশ্চয়ই ভুলে গিয়েছিল ফোন বন্ধ করতে। তারপর পঞ্চগড়ে শিকল দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রেখে গেল। শিকল এমনভাবে লাগানো ছিল যে নিজেই খুলতে পারতেন, কিন্তু নাটকীয়তার খাতিরে স্থানীয়দের ডাকার জন্য অপেক্ষা করলেন।

পঞ্চগড় থেকে ফিরে এসে সেদিনই জুমার নামাজে খুতবা দিলেন। এত কষ্ট, এত নির্যাতন, কিন্তু খুতবা তো মিস করা যায় না। পরদিন অবশ্য হাসপাতালে ভর্তি হতে হলো, নিশ্চয়ই আগের দিনের খুতবার ক্লান্তিতে। সিআইডি জিজ্ঞাসাবাদ করার পর হঠাৎ শরীর খারাপ হয়ে গেল, কাকতালীয় ঘটনা বলতে হবে। পুলিশ এখন বলছে উনি নিজেই সব সাজিয়েছেন। যে কোনো সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। যে মানুষটা "ইসলামের খিদমত" করার কথা বলতেন, তিনি নিজেই ইসলামের নাম ব্যবহার করে মিথ্যা নাটক সাজালেন। এর চেয়ে বড় বিড়ম্বনা আর কী হতে পারে?

এই নাটক করে কী লাভ হলো? ইসকন নিষিদ্ধ হলো না, বরং মুফতি সাহেব নিজেই সন্দেহের মুখে পড়লেন। যারা প্রকৃত নির্যাতনের শিকার হন, তাদের কথা এখন কেউ বিশ্বাস করবে না। সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়লো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সময় নষ্ট হলো। সব মিলিয়ে যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই নাটক সাজানো হয়েছিল, তার বিপরীত ফল হলো। ইসকন নিষিদ্ধ করতে হলে আইনি পথে, যুক্তি-প্রমাণ দিয়ে করা উচিত। অপহরণ নাটক সাজানোর দরকার নেই। কারণ এই যুগে নাটক করা সহজ, কিন্তু ধরা পড়াটা আরো সহজ। মুফতি সাহেব তা বুঝতে পারেননি, এখন তার মূল্য দিতে হচ্ছে। বড়ো মিডিয়া হাউজগুলোর এই বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করা জরুরি ।

দেশকাল নিউজ ডটকম- মুফতি মুহিব্বুল্লাহ কি সত্যিই অপহৃত হয়েছিলেন?
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:২৮
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×